Thursday, July 28, 2016

পরীক্ষা

-তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরুপ। আর আল্লাহর কাছে রয়েছে মহা পুরষ্কার
"
[সুরা:তাগাবুন:১৫]

সুসময়

সু সময়

দুই এতিমের সংসার!

লিখেছেন: শায়খ Atik Ullah Atik , এরকম গল্প জীবনে কমই শুনে থাকবেন।
----------
অনেক দিন পর আমরা তিনজন একসাথ হলাম। প্রায় বারো বছর পর। আলাদা ভাবে দুইজন হয়তো একসাথ হয়েছি, কিন্তু ‘তিনটেক্কা’ একসাথ হয়ে সময় কাটানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। দু’জন বিদেশপ্রবাসী, আরেকজন সারাক্ষণ ব্যস্ত। সুযোগ হবে কী করে? ব্যাটে-বলে এক হচ্ছিল না।
.
রামাদানের শুরু থেকেই পরিকল্পনা চলছিল, একদিন যেভাবেই হোক, সময় বের করতে হবে। ইফতারির মজলিসে বসতে হবে। পেছাতে পেছাতে শেষমেষ বসা হলো। একজনের সময় হলে আরেকজন ব্যস্ত। আরেকজন আবার নবপরিণত! নট নড়নচড়ন। একটু ঘর থেকে বের হলেই মান-অভিমানের পালা শুরু হয়ে যায়।
.
বিয়ের পর যা হয় আরকি! স্বামীর বন্ধুদের একদম সহ্য করতে পারে না। নিজের কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী মেনে নিতে পারে না। সারাক্ষণ আঁচলের নিচে বেঁধে রাখতে পারলেই বাঁচে। একটা মধুর ঝামেলা!
তারপরও নতুন জামাই ফাঁকি দিয়ে, ‘তাকে’ ঘুমে রেখে, একপ্রকার পালিয়েই ফেনি চলে এসেছে। এসেও কি দু’দন্ড নিস্তার আছে? ফোনাঘাতের পর ফোনাঘাত! আমরা বাকি দু’জন পর্যন্ত অতিষ্ঠ! আরে বাপু, রামাদান মাসে দিনে তো রোজা! নাও ম্যাও সামলাও!
.
আমিও বহুদিন পর, হুযুরের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ‘স্কুল’ থেকে পালালাম। জোহরের পর থেকে শুরু হলো আড্ডার যাত্রা। মসজিদে বসে বসে। লেখাপড়ার কথা, সংসার জীবনের কথা, বিদেশযাপনের কথা, আমল-আখলাকের কথা। পাশাপাশি নতুন জামাইকে দুই পুরোনো দুই জামাইয়ের বিভিন্ন টিপস-ট্রিক প্রদানও চলছিল। আসর পর্যন্ত চললো। শুয়ে-শুয়ে, বসে-বসে। আধশোয়া হয়ে। কাত হয়ে। চিত হয়ে। উপুড় হওয়াটাই ছিল বাকি। সাইফুল সেটাও বাকি রাখলো না। তার কোমরে ব্যথা! আশপাশ থেকে বিভিন্ন এঙ্গেলে, নানা ভঙ্গির, হরেক-রকমের নাকডাকার আওয়াজ-স্বর-সুর ভেসে আসছিল। বাজখাঁই-হুঙ্কার-হ্রেষা-হাম্বা-ম্যাঁএএ-মিঁয়াও হয়ে। পুরো মসজিদটা যেন আষাঢের খাল-বিল-ডোবা!
.
একটা নতুন জিনিস আবিষ্কার হলো, রামাদানে জোহরের পর, মসজিদে শুয়ে থাকার মতো আরাম আর কিছুতে নেই। সেজন্যই কিনা জানিনা, পুরো মসজিদ জুড়েই ইতিউতি মানুষ শুয়ে আছে। নাকও ডাকাচ্ছে কেউ কেউ।
.
আসর পড়ে শুরু হলো পুরো ফেনি বাজার চষে সেরা সেরা ইফতারির আইটেম কেনা। চিন্তা কি, টাকা দেবে গৌরি সেন! আজ তিনজনের যৌথ আয়োজন হলেও, মূল উদ্যোক্তা হলো সাইফুল! সে এমনিতেই দরাজদিল মানুষ! তায় আবার রামাদানের ‘বাড়ি’!
.
গরু-মুরগ মুসল্লম-খাসি কিছুই বাদ পড়লো না। ফল-পাকুড়ও কেনা হলো এন্তার!। ছ’হাত ভর্তি করে ফাঁপরে পড়া গেল, এবার কোথায় যাই? যাওয়ার জায়গার তো অভাব নেই! কিন্তু প্রাইভেসি? ঠিক হলো পার্কে বসা হবে। খোলা নীল আকাশের নিচে। দিঘীর পাড়ে। বিশাল সরোবর। স্বচ্ছতোয়া টলটলে পানি! আমরা বসলাম উত্তর পাড়ে। দক্ষিণে বিপুল জলরাশি! দখিনা বাতাস ক্লান্তিহীন বয়ে বেড়াচ্ছে। সারাদিনের রোজার ক্লান্তি নিমিষেই উবে হাওয়া! কর্পূর!
.
কিন্তু সত্যিকারে রোযা শুরু হলো তখন। শরীর জুড়িয়ে গেল দখিনা সমিরনে। কিন্তু সামনে এতসব মজার পেটরোচক থাকলে জিবে জল-পানি-ওয়াটার-মা-এর ¯্রােত নামবে নাতো কী?। কোথায় দিঘীর জলে কার ছায়া গো-এর শোভা দেখবো, তা না, চোখ শুধু ঘুরেফিরে খাবারের দিকেই বলে যাচ্ছে।
.
অনেক খুঁজে পেতে যুতসই একটা আসন পাওয়া গেল। ঠিক মাঝ বরাবর। পুরো দিঘীটা এক নজরে দেখা যায়। আশেপাশে কী হচ্ছে না হচ্ছে সেদিকেও চোখ রাখা সহজ। রোযার দিন হওয়াতে তেমন মানুষজন নেই। ফাঁকা। খাঁ-খাঁ। একদম যে নেই, তাও নয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু কপোত-কপোতীর আনাগোনা বিরল নয়।
.
এতক্ষণ চলছিল সবকিছু ঠিকঠাক! অদূরেই বসা ছিল একযুগল। খাঁটি হুযুর-হুযুরনী! আমরা পার্কে প্রবেশের পর থেকেই দেখলাম দু’জনের মধ্যে চাপা একটা অস্বস্তি কাজ করছিল। হুযুর বারবার আড়চোখে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন। ব্যাপারটা প্রথমে চোখে পড়েনি। সাইফুলের জুহুরি-চোখেই ব্যাপারটা ধরা পড়লো। একটু পরে আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে, তারা দু‘জন অন্যদিকে চলে গেল। অন্য পাশে গিয়ে বসলো। আমাদের দৃষ্টির আড়ালে।
ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু ঠেকলো। সন্দেহজনক।
তারা তো আমাদের অবস্থান থেকে বেশ দূরেই ছিল। একটা গাছের আড়ালে। তাদের কথাবার্তা আমাদের শোনার কথা নয়। এমনকি সরাসরি দেখাও যাচ্ছিল না। যাক আমরা গাল-গপ্পে ডুবে গেলাম। বিষয়টা নিয়ে ভাবার সময় পেলাম না।
.
ইফতারির তখনো অনেক সময় বাকি। আমরা তিনজনে সাইফুলের আই-ফোনের বিভিন্ন তেলেসমাতি দেখা নিয়ে ব্যস্ত। সেই তরুন হুযুর এলেন। আমাদের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। কাঁচুমাঁচু ভঙ্গিতে বললেন:
-ভাই! একটু হাম্মামের প্রয়োজন ছিল। কোথায় পাওয়া যায়? পার্কেরটা তো বন্ধ। তালা দেয়া।
তিনজন একযোগে চোখ তুলে তাকালাম। চেহারা দেখেই বোঝা গেল, খুবই গরীব ঘরের মানুষ। শাদা জুব্বা-পায়জামা। কাঁধে খাঁটি হুযুরদের মতো রুমাল ঝোলানো। চাপ দাড়ি। গায়ের রঙ কালোর দিকে। চোখে দু’টোতে কেমন একটা অসহায়-নিরীহ দৃষ্টি। কথা বলার সময় ঠোঁটের কোনে কেমন একটা বিষন্ন হাসি লেপ্টে থাকে। দাঁতের পাটি খুবই বিন্যস্ত। অসম্ভব শাদা। মানুষটার সকরুণ হাসি দেখেই আমাদের তিনজনের মনটা কেমন হয়ে গেল।
.
সাইফুল মানুষটার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পাল্টা বেয়াড়া প্রশ্ন করে বসলো। আসলে তাদের এমন বেমক্কা উঠে যাওয়াটা আমাদের মনে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে:
-আপনারা আমাদের দেখে চলে গেলেন কেন?
-না না, ভাই অন্য কিছু মনে করবেন না। ও আমার স্ত্রী।
-বাথরুম কি আপনার জন্যে?
-জ্বি না। ওর জন্যে।
.
সাইফুল সব কাজের কাযি। সে একদৌড়ে গিয়ে পার্কের অফিসে হম্বিতম্বি করে বাথরূমের চাবি নিয়ে এল। হুযুর এক দৌড়ে গিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে এলেন। আমাদের অবস্থান থেকে একটু দূরেই বাথরুম। অত্যন্ত পুরোনো জীর্ণ একটা বোরখা পরা। হাতমোজা-পা-মোজা পরা। জুতোগুলো ছেঁড়া। না চাইতেই বিষয়গুলো নজরে পড়ে গেল। স্বামীর জুতোগুলোও দেখলাম ছেঁড়া! পা ছেঁচড়ে-ছেঁচড়ে হাঁটছেন।
.
সাইফুল হুযুরকে ডেকে বললো:
-আমাদের সাথে ইফতারি করবেন?
-জ্বি না, ভাই, লাগবে না। ও এনেছে।
কথা আর এগুলো না, স্ত্রী প্রয়োজন সেরে বের হলো। আমরা বলে দিলাম:
-যদি সম্ভব হয়, তাকে রেখে একটু আসবেন।
.
আমরা ভেবেছিলাম হুযুর আসবেন না। আমাদের অবাক করে দিয়ে একটু পরেই চলে এলেন:
-আপনারা এ সময় পার্কে কেন? বাসায় যাবেন না?
প্রশ্নটা শুনে হুযুর একটু থমকে গেলেন। চুপচাপ থেকে যা বললেন, তা শোনার জন্যে আমরা তিনজনের কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। আমাদের মনের মধ্যে, ¯েœহ-করুণা-ভালোবাসা-শ্রদ্ধার এক অবিমিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হলো। হুযুর বললেন:
-বাসা থাকলে তো যাবো!
-মানে?
-আমাদের দু’জনেরই আসলে কোনও বাড়িঘর নেই।
-বলছেন কী! এটা কী করে সম্ভব? খুলে বলুন তো!
হুযুর প্রশ্নটা শুনে একটু যেন বিমনা হয়ে গেলেন। চেহারায় সংকোচ ফুটে উঠলো। শরম-দ্বিধা-জড়তার মিশেলে অন্যরকম একটা অভিব্যক্তি।
-আচ্ছা, সমস্যা থাকলে বলার দরকার নেই। থাক।
-না না, বলছি। কথা তো অনেক লম্বা। দু-এক কথায় আসলে সব কথা বলা যাবে না।
-আপনি খুলেই বলুন। আমরা শুনবো।
-আমার বাবা ছিলেন গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন। খুবই গরীব। আত্মীয় স্বজন থেকেও নেই। জমিজমা বলতে ছোট্ট একটা ভিটে। সেটাও পৈতৃকসূত্রে পাওয়া নয়। আব্বা মসজিদে চাকুরি নিয়ে গ্রামে এলেন। অনেক দিনের চাকুরির সুবাদে, গ্রামের মানুষ ধরাধরি করে, সেখানেরই এক এতীম মেয়ের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন।
সবাই বিয়ে করে স্বামীর বাড়ি গিয়ে ওঠে। আব্বাজান মরহুম বিয়ে করে বউয়ের বাড়ি গিয়ে উঠলেন। আমার দাদাজান আব্বাকে কিছুই দিয়ে যেতে পারেন নি। এমনকি ভিটেটুকুও না।
.
আমার আম্মা থাকতেন তার মায়ের সাথে। খুবই কষ্টে। এ বাড়ি-ও বাড়ি ঝিয়ের কাজ করতেন আামর নানি। কিন্তু মেয়েকে এসবে জড়াতে দেননি। টাকা-পয়সার অভাবে লেখাপড়াও শেখাতে পারেন নি। কিন্তু আমার নানি খুব সুন্দর কুরআন শরীফ পড়তে পারতেন। সেটাই মেয়েকে শিক্ষা দিয়েছেন। যতœ করে। আমার মায়ের শিক্ষা বলতে এটুকুই।
.
বিয়ের কিছুদিন পর আমার নানী মারা গেলেন। আব্বাজান মসজিদ থেকে যা পেতেন, ওটা দিয়েই কোনও রকমে সংসার চলছিল। আমার বয়েস তখন আট বছর। আম্মাজান ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কোনও চিকিৎসাতেই কিছু হচ্ছিল না। এদিকে টাকাপয়সার টানাটানি। আব্বাজান কারও কোনও বারণ না শুনেই আমাদের একমাত্র সম্বল বাড়ির ভিটেটা বন্ধক দিয়ে টাকা আনলেন। আম্মাজানকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করালেন। এক সপ্তাহ পর আম্মাজান জান্নাতবাসী হলেন।
.
আব্বাজান শোকে পাগলের মতো হয়ে গেলেন। শুধু সময় মতো আযানটুকু দেন। এরই মধ্যে আমি পাশের গ্রামে নুরানি শেষ করে হেফযখানায় ভর্তি হয়েছি। আমার হেফয শেষ হওয়ার আগেই, বন্ধকের টাকা শোধ করতে না পারায়, আমার মায়ের শেষ স্মৃতি, বাড়ির ভিটেটা হাতছাড়া হয়ে গেল।
আব্বাজন স্থায়ীভাবে আগের মতো মসজিদে আশ্রয় নিলেন। আমিও মাদরাসার ছুটিছাটায়, আব্বাজানের কাছে মসজিদেই উঠতাম। মসজিদই ছিল আমার বাড়ি-ঘর। মুসল্লিদের বাড়ি থেকে আব্বাজানের জন্যে যে খাবার আসতো, সেটাই বাপবেটা ভাগাভাগি করে খেতাম।
.
খাবারের কষ্টের কারণে, পরের দিকে আমি ছুটি হলেও মাদরাসাতই থেকে যেতাম। আব্বার কাছে বাড়তি টাকা থাকতো না। বাড়ি-বন্ধকের টাকা ছাড়া আরও কিছু ঋণ হয়ে গিয়েছিল, বেতনের টাকা পেয়েই কিছু কিছু শোধ করতেন।
.
মায়ের শোক আব্বাজান বেশিদিন সইতে পারলেন না। আমার খতম হওয়ার বছর ইন্তেকাল করলেন। ছেলেকে হাফেয দেখার কী অসম্ভব আরযু ছিল। পূরণ হলো না। মাদরাসার বার্ষিক মাহফিলে যখন আমাকে পাগড়ি পরানো হচ্ছিল, আব্বাজানের আজন্ম ইচ্ছার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আমাদের বড় হুযুর যখন পাগড়ী পরিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন আব্বাজানের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। আমি হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম। উপস্থিত হাজার-হাজার মানুষের অনেকেই আমার কথা জানতো। তারাও অনেকে কেঁদে ফেললো। এক হৃদয়-বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো। বড় হুযুর আমাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘক্ষণ কাঁদলেন। আব্বাজান মারা যাওয়ার পর তিনিই আমাকে আগলে রাখতেন।
.
হেফযখানা থেকে ফারেগ হলাম। সে-মাদরাসাতেই কাফিয়া জামাত পর্যন্ত পড়লাম। এরপর আর জামাত নেই। হুযুর পরামর্শ দিলেন, হাটহাজারি চলে যেতে। ভাড়া ও সাথে কিছু খরচাপাতি দিলেন।
.
ভাই! কাহিনী তো অনেক লম্বা। হাটহাজারি যাওয়ার পর টাকা ফুরিয়ে গেল। তখন এক ভাইয়ের পরামর্শে অন্যদের খাবার রান্না করে দেয়ার চাকুরি নিলাম। বিনিময়ে কিছু টাকা পওয়া যেত, খাবারটাও ফ্রি। রিকশা চালিয়েছি। ক্ষেতে কাজও করেছি। আমার ইচ্ছে ছিল দেওবন্দ যাবো। আব্বাজান কার কাছে যেন শুনেছিলেন দেওবন্দের কথা। তিনি কয়েকবার বলেছিলেন। তখন তো ছোট ছিলাম, বুঝতে পারিনি। হাটহাজারি এসে বুঝতে পেরেছিলাম। তাই টাকা জমাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেওবন্দ যাওয়া হলো না। দাওরা পাশ করলাম।
.
হাটহাজারীর দীর্ঘ ছাত্রজীবনে কোথাও যাইনি। যাওয়ার জায়গাও তো ছিল না। যাবো কোথায়? একবার খুব খারাপ লাগাতে, চুপিচুপি আমাদের ভিটেটা দেখে এসেছিলাম। আম্মাজান-আব্বাজানের কবর যেয়ারত করে এসেছিলাম।
.
আমার আগের মাদরাসার বড় হুযুরের সাথে একটু যোগাযোগ ছিল। তিনিই পরামর্শ দিলেন, গ্রামের মাদরাসায় গিয়ে শিক্ষকতা শুরু করতে। তার পরামর্শ উপেক্ষা করতে পারলাম না। ছেলেবেলার মাদরাসায় এসে যোগ দিলাম। সুযোগ পেলেই পাশের গ্রামে চলে যেতাম। একজন গৃহহীন-ছন্নছাড়া মানুষ আমি। আম্মাজান-আব্বাজানের স্মৃতিটুকুই আমার সম্বল। আমার এত অসহায়ত্ব সত্বেও আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছেন। এর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না। আমার মাওলানা হওয়াতো দূরের কথা, হাফেয হওয়ারও কথা ছিল না।
.
অনেক ভেবেচিন্তে আমি ঠিক করলাম:
-আল্লাহ তা‘আলা আমাকে অযোগ্যতা সত্বেও এত নেয়ামত দিয়েছেন। এতদূর নিয়ে এসেছেন, এর শুকরিয়া আমি একটু অন্যভাবে আদায় করার চেষ্টা করবো।
-কিভাবে?
-আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম, আমি বিয়ে করবো এমন মেয়েকে, যে আমার চেয়েও অসহায়।
হাটহাজারি পড়াবস্থায় আমাদের ফেনির এক ছাত্রের সাথে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। ফারেগ হওয়ার পরও তার সাথে যোগাযোগ হতো। মাদরাসার কাজে ফেনি এলে তার দোকানে যেতাম। তারা অনেক বড় লোক। অনেক বড় ব্যবসা।
.
আমি জানতাম তার এক বোন মাদরাসায় পড়ে। সময় বুঝে একদিন তার কাছে বিয়ের কথা বললাম। বন্ধু আমার কথা শুনে প্রথমে ভুল বুঝলো। সে মনে করেছিল, আমি তার বোনের ব্যাপারে আগ্রহী। তার ভুল ভাঙতে দেরী হলো না। আমি বললাম:
-ভাই! আপনার বোনের একটু সহযোগিতা লাগবে।
-কেমন?
-আমার এমন একটা পাত্রীর প্রয়োজন, যে মাদরাসায় পড়ে বা পড়ায়। কিন্তু বিয়ে আটকে আছে। গরীব। অসহায়। ইয়াতীম। ভিটেমাটি ছাড়া।
.
বন্ধু ভীষণ অবাক হলেও, আমাকে সাধ্যানুযায়ী সাহায্য করবে বলে আশ্বাস দিল। মাসখানে পরেই কাঙ্খিত সংবাদ মিলল। এর মধ্যে অবশ্য মাদরাসার আশপাশ থেকেও কিছু প্রস্তাব এসেছিল। সেগুলো গ্রহণ করলে, ‘বউয়ের পাশাপাশি, আমার দুনিয়াবী অনেক হালাল চাহিদাও পূরণ হয়ে যেত। এমনকি আমার মা-বাবার ভিটেও পুনরায় কেনার অর্থিক সঙ্গতি হয়ে যেতো। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকলাম। আমার এটুকু দৃঢ় বিশ্বাস আছে, টাকা-পয়সার যোগানদাতা বান্দা নয়, আল্লাহ। আমাদের হাটহাজারির বাবা হুজুরের কাছে এ কথাটা বারবার শুনেছি।
.
বন্ধুর বোনের মারফতই পাত্রীর খবর পেলাম। শেষের দিকে কেন যেন, বন্ধুর মা এবং বোনও আমার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে নিমরাজি হয়ে গিয়েছিল। হাবভাবে বুঝতে পারতাম, বন্ধুও গররাজি ছিল না। আমি আমার ‘শুকরিয়াজ্ঞাপন’-পদ্ধতি থেকে একচুলও নড়লাম না।
.
আমার স্ত্রী হাফেযা। টাকাপয়সার অভাবে সেও পড়ালেখা করতে পারেনি। তারও ইহজনমে কেউ নেই। বাড়িঘর নেই। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, তার অবস্থা আমার চেয়ে হাজারগুণ খারাপ। আমি তো তা-ও-বা মায়ের আদর পেয়েছি। সে তাও পায়নি। তার পুরো ইতিহাস বলতে গেলে রাত ফুরিয়ে যাবে।
.
তার মাদরাসার বড় খালা, দয়া করে তাকে হেফয খানায় শিক্ষিকা হিশেবে নিয়োগ দিয়েছেন। খুবই অল্পবয়েসে। প্রথম প্রথম তো বেতন পেত না। এখন অবশ্য দেড় হাজার টাকা করে পায়। এ সামান্য বেতনেও সে কী যে খুশি! অথচ চব্বিশ ঘণ্টার খেদমত। আমরা দু’জনেই টাকা জমাচ্ছি। আমাদের আগের বাড়িটা কেনার ইচ্ছে। ইনশাআল্লাহ ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
.
বাড়তি কোনও আয়োজন ছাড়াই, আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। কোথাও নিজস্ব ঘর না থাকাতে, বাসর হলো না। পরে বন্ধুটি দয়াপরবশ হয়ে, বিয়ের এক সপ্তাহ পর, তাদের বাড়িতে দু’দিন থাকার সুযোগ করে দিয়েছিল।
.
এখন আমরা শুধু কথা বলি। মাঝেমধ্যে আমি গিয়ে তার মাদরাসায় দেখা করে আসি। আজই প্রথমবারের মতো তাকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছি। এরপর মাদরাসার টাকা কালেকশনে চট্টগ্রামে চলে যাবো। ঈদের আগে তো দেখা হবে না।
.
আপনাদের দাওয়াত গ্রহণ করতে পারলাম না বলে, রাগ করবেন না। ‘ও’ তাদের মাদরাসার ‘রান্নাখালা’-কে অনেক বলেকয়ে, কাকুতি-মিনতি করে, এক ঘণ্টার জন্যে গ্যাসের চুলোটা খালি পেয়েছে। সে নিজ হাতে আমার জন্যে কিছু একটা তৈরী করে এনেছে।
জানেন, সে খুবই ভাল রান্না করতে পারে। হাফেযা হওয়ার পর, কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই দেখে, সে তার মাদরাসায় কয়েক বছর ‘রান্নাআপু’-এর চাকুরি করেছিল। তখনই সে মূলত অনেক রান্না করতে শিখে।
.
আযান হয়ে গেল। হুযুর তড়িঘড়ি চলে গেলেন। আমরা ফেনির বিখ্যাত জিলিপি হাতে বসে রইলাম। স্তব্ধ। নির্বাক। অশ্রুসজল। একজন ইয়াতীম গরীব মেয়ে যে বিয়ের সময় কতোটা অসহায় আর বিপন্ন বোধ করে, সেটা আমার ভালভাবে জানা আছে।
.
ইফতারির পর থেকেই, আমার মনে কিছু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে:
এক: কিছু মানুষের মনে এতটা মহৎ চিন্তা আসে কিভাবে?
.
দুই: অভাবে স্বভাব নষ্ট কথাটা একশ ভাগ সঠিক নয়।
.
তিন: এ মহান মানুষটাকে তার আহলিয়া কতটা ভালোবাসে?
------
মাগরিবের পর, যখন দু’জন বেরিয়ে যাচ্ছিল, যতদূর দৃষ্টি যায় আমরা তাকিয়ে ছিলাম। আমাদের মুখ দিয়ে কোনও কথা সরছিল না। একটা মানুষ কতটা মানবিক হলে, এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পারে?
--
অসম্ভব শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠলো। এমন মানুষের দেখা পাওয়াও পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। আশার কথা হলো, কওমী মাদরাসায় এমন মানুষের সংখ্যা বিরল নয়।
আলহামদুলিল্লাহ।
----
দিনলিপি-২৪৬
(০৪-৭-২০১৫)
দুই এতিমের সংসার!

হায় আফসোস!

সেদিন এমন কোন আত্যা জাগ্রত হবে না "
কিনা বলবে না যে, "হায়! কি আফসোস "
হায় কি আফসোস! যখন আমি রাত জেগে ছিলাম (শুধু মাত্র মজা করার জন্য)
হায় কি আফসোস! জীবনের সেসব সময় নষ্ট করেছি (মজা করে)
হায় কি আফসোস! সেসব সময় এবং মুহূর্তের জন্য যা আমি অপচয় করেছি "
(আল্লাহকে মনে না করে)
হায় কি আফসোস! সেই দিন এবং রাতের জন্য
হায় কি আফসোস! আমার বন্ধুরা (যাদের আমি বাচাই করেছিলাম) আজ কোন কাজে আসবে না "
হায় কি আফসোস! আমি যে জীবনসঙ্গী বাচাই করেছিলাম, সে আমার পক্ষে কথা বলতে পারবে না!
হায় কি আফসোস! আমার জীবন এখন শেষ ;সময় যে শেষ হয়ে গিয়েছে!
হায় কি আফসোস! আমার আমলের বই গূনাহ দিয়ে ভরা থাকবে!
হায় কি আফসোস! সেই দিনের জন্য যেদিন আমি খালি পায়ে ও বস্ত্রহীন অবস্থায় আল্লাহর সামনে দাড়াবো।
হায় কি আফসোস! যখন আমার খারাপ ও ভালো আমল দেখানো হবে।
বান্দার খারাপ ও ভালো আমল দেখানো হবে সমগ্র দুনিয়ার রব আল্লাহর সামনে।
হায় কি আফসোস! একজন মানুষ ৩০, ৪০,৫০ ও ৬০ বছর বাঁচবে তারপর সে সমগ্র দুনিয়ার মালিক আল্লাহর সাথে দেখা করবে।
হায় কি আফসোস! আমি আল্লাহর প্রতি কর্তব্য অবহেলা করেছি।
রাত পার হয়েছে কিন্তু আমার চোঁখ হতে কখনো আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরেনি।
রাত পার হয়েছে কিন্তু আমার পা আল্লাহর সামনে দাড়াতে পারেনি (সালাতের জন্য)
হায় কি আফসোস! কোন ভালো আমল ছাড়া কিভাবে আমার জীবনটি পার হয়ে গেল।
হায় কি আফসোস! যখন সূর্য উঠেছিল এবং রাত শেষ হয় গিয়েছিল,
তখন আমি আল্লাহর কাছে সিজদাহ করে নিজেকে ক্লান্ত করিনি।
হায় কি আফসোস! (ফরজ) সালাত গুলো আমি অবহেলা করেছি।
হায় কি আফসোস! যাকাত আমি কখনোই দেই নি।
হায় কি আফসোস! সেই দিনের জন্য যেদিন রোজার সময় আমি সকালে খেয়েছিলাম।
হায় কি আফসোস! যেসব পাপ আমি করেছি।
হায় কি আফসোস! যেসব পাপের বোঝা আমাকে বহন করতে হবে।
হায় কি আফসোস! যখন কৃতকর্মগুলো দেখানো হবে এবং তা ভারি হতে থাকবে, এবং শুধু আল্লাহই আমার বিচারক থাকবেন।
হায় কি আফসোস! আমার দুঃখ কি এখন কোন লাভ বয়ে আনবে।
হায় কি আফসোস! আমাকে কি এই দুনিয়াতে মৃত্যুর আগে ফিরতে দেয়া হবে?
হায় কি আফসোস! কিভাবে আমি আল্লাহর দেয়া নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনি!
হায় কি আফসোস! ঘৃণা ও খারাপ চিন্তা দুর করানোর জন্য আমি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানায়নি।
হায় কি আফসোস! কিভাবে আমার মূখ সবসময় আল্লাহর নাম নেয়নি।
হায় কি আফসোস! কিভাবে আমার মূখ কখনো আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানোর আনন্দ পায়নি!
হায় কি আফসোস! যেদিন জয়ীদেরকে পুরুষ্কার দেয়া হবে এবং সফল মানুষরা সফল হবে!
এবং আমি আসবো খালি হাতে।
হায় কি আফসোস! যেদিন সৎকর্ম কারীদের পুরুষ্কার দেয়া হবে এবং তারা আল্লাহর নিকট চলে যাবে।
এবং আমি তাদের দিকে তাকাতে পারবো না
হায় কি আফসোস! কিভাবে আমি আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব অবহেলা করেছি যদিও আমি তা করতে সক্ষম ছিলাম!

ক্ষতিগ্রস্ত ও লাভবান!

" নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে করেছে। এমনকি, যখন কিয়ামত তাদের কাছে অকস্মাৎ এসে যাবে, তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এর ব্যাপারে আমরা কতই না ক্রটি করেছি। তার স্বীয় বোঝা স্বীয় পৃষ্ঠে বহন করবে। শুনে রাখ, তারা যে বোঝা বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা।পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। পরকালের আবাস পরহেযগারদের জন্যে শ্রেষ্ঠতর।তোমরা কি বোঝ না ? "
(কুরআন, আন'আম ৬:৩১-৩২)
.
" নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়; এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে। বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,
অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। নিশ্চয়ই এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববতী কিতাবগুলোতে; ইব্রাহীম এবং মূসার কিতাবে।"
(কুরআন, আ'লা ৮৭:১৪-১৯)
.
" যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।"
(কুরআন, রা'দ ১৩:২৮ )
.
" এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাবো। তারাই হচ্ছে সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই সুপথপ্রাপ্ত। "
(কুরআন, বাকারাহ ২:১৫৫-১৫৭)
.
" নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।অবশ্যই কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে।"
(কুরআন, ইনশিরাহ ৩৪:৫-৬)

Monday, July 18, 2016

দুনিয়া ইজ নাথিং!!

-যারা চলে গেছে তাদেরকে দেখে উপদেশ গ্রহণ কর। তারপর চেষ্টা কর, উদাসীন হবে না। কেননা আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে অসতর্ক নন।
.
.
যারা এ পৃথিবীকে আবাদ করেছিল, উৎপাদন করেছিল এবং বহুকাল যাবত এ দুনিয়া থেকে উপকৃত হয়েছিল, দুনিয়া কি তাদেরকে নিক্ষিপ্ত করেনি?
.
.
দুনিয়ার যেখানে আল্লাহ্‌ তা'আলা তোমাদেরকে রেখেছেন সেখানেই থাক, আখিরাতকে অন্বেষণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তা'আলা দুনিয়ার জন্য একটি কল্যাণকর উপমা পেশ করেছেন।
.
.
তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। তিনি তোমাদের পালনকর্তা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃ-পুরুষদেরও পালনকর্তা।(আদ দুখান :৮)
.
.
তাদের কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির ন্যায়, যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি। অতঃপর এর সংমিশ্রণে শ্যামল সবুজ ভূমিজ লতা-পাতা নির্গত হয়; অতঃপর তা এমন শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয় যে, বাতাসে উড়ে যায়। আল্লাহ এ সবকিছুর উপর শক্তিমান।(আল আল কাহাফ:৪৫)

তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন ও জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়, যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও, এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়। আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।
(আল হাদিদ :২০)

বন্ধু নির্বাচন

ইবনে তাইমিয়া (রাহি:)বলেন, আল্লাহ আমাদের সুস্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কোন ঈমানদারই আল্লাহ ও তারা রাসূলেকে চ্যালেঞ্জকারীদের আনুকূল্য প্রত্যাশী হয়না দুটি বিপরীত ধর্মী জিনিস যেমন একে অপরকে তাড়িত করে, মুমিনের ঈমান ও তদ্রুপ মুমিনকে এরুপ কাজ থেকে বিরত রাখে। সুতরাং ঈমান থাকা অবস্থায় আল্লাহর শত্রুদের প্রতি অনুকূল মনোভাব প্রকাশ অসম্ভব। যদি কেও অনুভব করে যে, তার ভিতর এই মনোভাবের ঘাটতি রয়েছে, তাহলে বুঝতে হবে যে, তার ঈমানে গলদ রয়েছে।
.
আল্লাহ (সুবাহানাহু তা'আলা) বলেন,
আপনি এমন কোন সম্প্রদায় খুজে পাবেন না, যে আল্লাহ এবং শেষ দিবসের ভয় করে অথচ আল্লাহ ও তার রাসূলের যারা বিরুধীতা করেতাদের কে বন্ধু রুপে গ্রহন করে, হোক সে তার পিতা,পুত্র,ভ্রাতা,কিংবা তাদের জাতী গোত্র;(সুরাহ মুজাদালা ২২)
.
আল্লাহ (সুব:)আরও বলেন,
হে মুমিনগন তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুদের বন্ধু রুপে গ্রহন করোনা, তোমরা কি তাদের প্রতি মমতা পোষন করছো, অথচ তোমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে "(মুমতাহিনা:১)

পরীক্ষা!!!

এ বছরের রমাদ্বানে আহমাদ ইবন হানবাল পরীক্ষিত হয়েছেন। তাকে বন্দী করা হয় এবং আল-মু’তাসিমের উপস্থিতিতে তাকে চাবুক মারা হয় । ইমাম আহমাদ সত্যের উপর মৃত্যুর ইস্পাতকঠিন সংকল্প করেছিলেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলঃ মৃত্যুর মুখোমুখি করা হলে খালিফাহ যা চাচ্ছেন তার স্বীকৃতি কি আপনি দেবেন?
.
তিনি জবাবে বলেছিলেনঃ না।
.
২১৯ হিজরি, ইবনুল জাওযী [আল মুনতাযিম – সুমা দাখালাত সানাহ তিস’আ আশারাহ ওয়া মা’আতাইন, খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ৪২]
.
.
খালিফাহ মু’তাসিম চাচ্ছিলেন ইমাম আহমাদ যেন আক্বীদ্বার ব্যাপারে, বিশেষ করে ক্বুর’আনের ব্যাপারে মু’তাযিলাদের অবস্থান গ্রহন করেন। যেন তিনি স্বীকার করে নেন যে ক্বুর’আন হল সৃষ্ট। খালিফাহ মু’তাসিমের পূর্বসুরী সপ্তম আব্বাসি খালিফাহ, আল-মামুনের সময় থেকেই “ক্বুর’আন সৃষ্ট” - মু’তাযিলাদের এ কুফরি অবস্থান স্বীকার করা এবং সঠিক অবস্থান হিসেবে ঘোষণা করার জন্য ইমামগনের উপর রাস্ট্রীয়ভাবে চাপ প্রয়োগ করা শুরু হয়। আল-মামুনের পর, আল-মু’তাসিম এবং আল-ওয়াসিকও এই অবস্থান গ্রহন করেন। ইতিহাসে এ ঘটনাটি পরিচিত মিহ্‌নাহ বা পরীক্ষা হিসেবে। সুদীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে চলে মিহ্‌নাহ।
.
২১৯ হিজরির দিকে একে একে অধিকাংশ ‘আলিমগণ চাপ, বন্দীত্ব, নির্যাতন, ও প্রাণভয়ে নতি স্বীকার করে নেন। ইমাম আহমাদ ইবন হানবাল জানতেন এক সময় না এক সময় তাকে এ পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। তার সামনে কঠিন এক সিদ্ধান্ত। যদি তিনি সত্যের উপর অবিচল থাকেন তাহলে শাসক বন্দি করবেন, তার উপর নির্যাতন চালাবেন, হয়তো তাকে হত্যা করা হবে। শাসক যা চাচ্ছেন যদি বাহ্যিকভাবে তিনি তার ঘোষণা দেন তাহলে তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাকিয়্যাহ (নিজের প্রকৃত বিশ্বাস গোপন করা) ইমাম আহমাদের জন্য হারাম ছিল না। বরং আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল এটিই অধিক হিকমাহপূর্ণ সিদ্ধান্ত, অধিক বিচক্ষনতাপুর্ণ অবস্থান। কারন যদি তিনি বেঁচে থাকেন থাকেন তাহলে হয়তো এক সময় সত্যকে তিনি প্রকাশ করতে পারবেন।
.
ইমাম আহমাদ ইবন হানবাল আমাদের মতই রক্তমাংশের মানুষ ছিলেন। আসমানবাসি ফেরেশতা ছিলেন না। তিনি ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ছিলেন, নির্বোধ ছিলেন না। ইমাম আহমাদ অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন, অর্থ-সম্পদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ক্ষমতা তার ছিল না। আবার তিনি ছিলেন সুপরিচিত মুখ, আত্বগোপন করা, কিংবা নিজেকে লুকিয়ে রাখার অবস্থাও তার ছিল না। নিশ্চয় প্রতিটি সম্ভাবনাই, প্রতিটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও ফলাফলের কথা বিবেচনা করেই তিনি তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছিলেন।
.
ইমাম আদ্ব-দ্বাহাবি বলেন, আব্বাস আদ-দুরি আমাদের বলেছেন আবু জাফার আল-আনবারি আমাদের কাছে বর্ননা করেছেনঃ
“যখন আহমদ ইবন হানবালকে আল-মামুনের দরবারে তলব করার খবর পেলাম, আমি (আবু জাফর আল-আনবারি) ইমাম আহমাদের সাথে দেখা করতে গেলাম। আমাকে দেখে ইমাম আহমাদ বললেন – “আপনি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন” (কষ্ট করে আসার প্রয়োজন ছিল না)
.
আমি ইমাম আহমাদকে বললামঃ আজ অনেক মানুষ আপনাকে অনুসরণ করে। যদি আপনি খালিফাহর কথামতো সাক্ষ্য দেন যে ক্বুর’আন সৃষ্ট, তাহলে তারা আপনার এ কথার অনুসরণ করবে। আর যদি আপনি খালিফাহকে প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে মানুষ (মু’তাযিলাদের) এ বিশ্বাস গ্রহণ করবে না। মনে রাখুন, খালিফাহ যদি আপনাকে হত্যা না-ও করে, তবুও একদিন দিন না একদিন আপনাকে মরতেই হবে। মৃত্যু সকলকেই স্পর্শ করবে। সুতরাং মহান আল্লাহকে ভয় করুন, এবং খালিফাহর এ অবস্থানের স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত থাকুন।‘
.
আমার কথা শুনে ইমাম আহমাদ কাঁদতে শুরু করলেন। এবং বললেন – সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর। হে আবু জাফর, আপনি যা বললেন আবার তা আমাকে বলুন।
.
আমি বললাম। আর ইমাম আহমাদ বার বার বলতে থাকলেন – আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ...”
.
.
মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আল-বুশানজি বলেনঃ কিছু লোক আবু আব্দুল্লাহর (ইমাম আহমাদ) সাথে তর্ক করছিল যাতে করে তিনি তাকিয়্যাহ করেন। ইমাম আহমাদ তাদেরকে বলেছিলেনঃ খাব্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নাবী ﷺ এর যে হাদিস বর্ননা করেছেন আপনারা তা স্মরণ করুন - তোমাদের পূর্ববর্তী অনেক লোককে ধরে লোহার চিরুনী দিয়ে তাদের হাড় থেকে গোশত ছড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তবুও তাদের দ্বীন থেকে তারা বিন্দুমাত্র টলেনি।“
[সিয়ারু আ'লাম আন-নুবালা, আহমাদ ইবন হানবান, আল মিহ্‌নাহ খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ২৩৮,২৩৯, তাহযীব আল কামাল বাব আল আলিফ, মিন আসমুহ আহমাদ, খন্ড১, পৃষ্ঠা ৪৬০,৪৬১, তাবাক্বাত আল-শাফি’ইয়াহ আল কুবরা, তর্জমা নং ৭, আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন হানবাল, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৬, ৩৭]
.
.
ইমাম আহমাদের ছেলে সালিহ বর্ননা করেন – আমার পিতা এবং মুহাম্মাদ ইবন নুহকে শেকলে বেধে বাগদাদ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা আনবার পর্যন্ত তাদের অনুসরণ করেছিলাম। আবু বাকর আল-আহওয়াল আমার পিতাকে প্রশ্ন করেছিলেনঃ হে আবু আব্দুল্লাহ, যদি আপনার মাথার উপর তলোয়ারের ছায়া দেখতে পান, তখন কি আপনি খালিফাহ্‌র মত স্বীকার করে নেবেন”?
আমার পিতা জবাব দিয়েছিলেন – না।
[সিয়ারু আ'লাম আন-নুবালা, আহমাদ ইবন হানবান, আল মিহ্‌নাহ খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ২৪১, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া খন্ড ১০, সিরাত আহমাদ ইবন হানবাল]
.
মুহাম্মাদ ইবন নুহের ব্যাপারে ইমাম আহমাদ বলেন – আমি মুহাম্মাদ ইবন নুহের মত অধিক দৃঢ়সংকল্প ব্যক্তি আর দেখি নি, যদিও তিনি ছিলেন বয়সে তরুণ, এবং আলিম হিসেবে অত্যন্ত উচ্চমার্গের ছিলেন না। আমি আশা করি তার অন্তিম গন্তব্য কল্যাণময় হয়েছে। একদিন তিনি আমাকে বললেন –
.
‘আবু আব্দুল্লাহ, আপনি আমার মতো নন। আপনি মানুষের কাছে আদর্শস্বরূপ। সবাই তাকিয়ে আছে আপনি করবেন, আপনি কি বলবেন তা জানার জন্য। আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সত্যের সমর্থনে অবিচল থাকুন।‘ [সিয়ারু আ'লাম আন-নুবালা, আহমাদ ইবন হানবান, আল মিহ্‌নাহ খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ২৪২]
.
ইব্রাহিম বিন হারিস আল-আবাদি ইমাম আহমদ ও আবু মুহাম্মাদ আল তাফাউয়ির মধ্যে কথোপকথন বর্ণনা করেছেন। আবু মুহাম্মাদ আল তাফাউয়ি আহমদ ইবন হানবালের সাথে দেখা করেন এবং তার সামনে একটি হাদিস বর্ননা করেন। অতঃপর ইমাম আহমাদ তাকে বলেন –
.
‘যখন আমাদের শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হল, আমি আমাদের পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তাগ্রস্থ ছিলাম। আর-রাহবাহ্‌তে পৌছানোর পর আমরা কিছু সময়ের জন্য যাত্রা থেকে বিরতি নিলাম। আমি দিগন্তের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। দেখলাম একজন বেদুইন আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। সে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো:
.
আপনি কি আহমাদ ইবন হানবাল? আমি হ্যা-সূচক জবাব দিলাম। সে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো। তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো সে অভিভূত। তারপর সে আবার একই প্রশ্ন করলো এবং আবার চুপ হয়ে গেলো। অতঃপর সে মাটিতে হাটু গেড়ে বসলো এবং প্রশ্ন করলো – আপনি কি আহমাদ ইবন হানবাল? আমি হ্যা-সূচক জবাব দিলাম। তখন বেদুইন বললো:
.
“সহ্য করুন, ধৈর্য ধারন করুন এবং সুসংবাদের জন্য অপেক্ষা করুন। একটাই মাত্র আঘাত, তারপর আপনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।“
.
তারপর বেদুইনটি চলে গেল।‘
.
আল-তাফাউয়ি প্রশ্ন করলেন- তারা আপনার সাথে কিরূপ আচরন করেছিল?
.
ইমাম আহমাদ জবাব দিলেন – “যখন আমাকে চাবুক মারা হচ্ছিল, আমার তখন বেদুইনের এ কথাগুলো বারবার মনে পড়ছিল। উযাইফ নামের লম্বা দাড়িওয়ালা লোকটি তার তলোয়ারের চওড়া দিক দিয়ে আমাকে আঘাত করলো। আমি নিজেকে বললাম – এই তো, মুক্তি সন্নিকটে! এখন সে আমার গলা কেটে ফেলবে আর আমি বিশ্রাম নিতে পারবো।
.
এসময় ইবন সামা’আহ বললো – হে আমীরুল মু’মিনীন, আমাকে অনুমতি দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই, এবং আমার হাত তার রক্তে রঞ্জিত হোক। কিন্তু ইবন আবু দাউদ বললো – না, আমিরুল মু’মিনীন। এমন কাজ করবেন না। যদি আপনি তাকে হত্যা করেন কিংবা আপনার উপস্থিতিতে তার মৃত্যু হয়, মানুষ বলবে সে আমৃত্যু নিজের অবস্থান অটল ছিল এবং তারা তাকে ইমাম গণ্য করবে, তাকে অনুসরণ করবে, এবং তাদের বিশ্বাসে অটল থাকবে। বরং উত্তম হল আপনি তাকে এখন ছেড়ে দিন। যদি সে আপনার দরবারের বাইরে নারা যায়, তাহলে মানুষের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হবে। কেউ বলবে সে খালিফাহর কথা মেনে নিয়েছিল, কেউ বলবে উল্টোটা।“
.
আলা-তাফাউয়ি প্রশ্ন করলেন – যদি আপনি খালিফাহ্‌র কথা মেনেন নিতেন তাহলে কি হতো?
.
ইমাম আহমাদ জবাব দিলেন – তাহলে আমি কাফিরে পরিণত হতাম।
[সিয়ারু আ'লাম আন-নুবালা, আহমাদ ইবন হানবান, আল মিহ্‌নাহ খন্ড ১১, পৃষ্ঠা ২৫৮,২৫৯]
.
.
ইবন হিব্বান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আহমাদ ইবন হানবাল ক্বুর’আন অন্তঃস্থ করেছিলেন, এবং নির্ভুল ভাবে তিলাওয়াত করতেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট ফাক্বীহ, যিনি নির্জনে মুত্তাক্বী ছিলেন...আল্লাহ তাকে উম্মাতে মুহাম্মাদী ﷺ প্রতি সাহায্য হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। নির্যাতনের মুখে তিনি অবিচল ছিলেন এবং যহনব তাকে চাবুক মারা হচ্ছিল তখন (আল্লাহর দ্বীনের জন্য) মৃত্যুবরনের জন্য সম্পূর্ণ ভাবে আল্লাহর প্রতি নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। আল্লাহ তাকে কুফর থেকে সুরক্ষিত করেছেন, এবং মু’মিনদের জন্য এক অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত তার মাধ্যমে স্থাপন করেছেন।“ [আস সুকাত, মান ইবতাদা’হ আমুহ আলা আল-আলিফ, খন্ড ৮, পৃষ্ঠা ১৮, তাহযিব আল তাহযিব, হারফ আল আলিফ, দ্বিকর মিন আসমুহ আহমাদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৬৫]
.
.
আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হানবাল বর্ননা করেন, আমি প্রায়ই আমার পিতাকে বলতে শুনতাম, আবুল হাইসামের উপর আল্লাহ রহম করুন, তার গুনাহ সমূহ আলাহ মাফ করে দিন। আমি একদিন প্রশ্ন করলাম – বাবা, আবুল হাইসাম কে?
তিনি বললেন – যখন আমাকে চাবুক মারার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, একজন যুবক এসে পেছন থেকে আমার কাপড় টেনে ধরলো, এবং প্রশ্ন করলো – তুমি কি জানো আমি কে?
আমি বললাম – না।
সে বললো – ‘আমি আবুল হাইসাম আল-আইয়্যার। চুরির অপরাধে বিভিন্ন সময়ে আমাকে ১৮,০০০ বার চাবুক মারা হয়েছে। শয়তানের প্রতি আনুগত্য করে, দুনিয়ার লোভে আমি ১৮,০০০ আঘাত সহ্য করতে পেরেছি। সুতরাং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য করে, এবং দ্বীনের জন্য সকল আঘাত তুমি সহ্য করো।‘
অতঃপর আমার পিতা বললেন – আবুল হাইসামকে ১৮,০০০ বার চাবুক মারা হয়েছিল, আমাকে ১৮ বার চাবুক দ্বারা আঘাত করা হয়েছিল।“ [সাফওয়াত আল-সাফওয়াহ – দ্বিকর আল মুস্তাফিন আহল বাগদাদ –আহমাদ ইবন হানবাল, খন্ড ২ পৃষ্ঠা ৩৫১ ]
.
.
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আর ইমাম, শায়খুল ইসলাম আবু আবদুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হানবাল বিন বিন হিলাল বিন আসাদ আশ-শায়বানী সিদ্ধান্ত নেন সাহাবাদের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন জামা’আর বিশ্বাসের অবিচল থাকার। ক্বুর’আন ও সুন্নাহ আমৃত্যু আকড়ে থাকার, বাতিলের বিরুদ্ধে মাথা নত না করার, দুনিয়াকে তুচ্ছ করে আখিরাতকে গ্রহন করার। ভূখণ্ডের শাসকের বদলে আসমান ও যমীনের শাসকের সামনে মাথা নত করার। সৃষ্টিকে উপেক্ষা করে স্রষ্টার আনুগত্য করার।
.
.
ইমাম আহমাদ নিজের দারিদ্র্যকে অজুহাত বানাননি, নিজের পরিবারকে অজুহাত বানাননি, অজুহাত বানাননি নিজের ব্যক্তিগত জীবন, কিংবা জাগতিক দুর্দশা। কারন ‘আলিমগণ নবীদের ওয়ারিশ শুধুমাত্র ‘ইলমের ধারন ও প্রচারণার দিক থেকে না, শুধুমাত্র দাওয়াহ এবং নাসীহাহর দিক থেকে না। বরং হাক্ব ও বাতিলের লড়াইয়ে সত্যকে সুস্পষ্টকে ব্যক্ত করা, সত্যের উপর অবস্থানের কারন পরীক্ষিত হওয়া, কুফফার-ত্বগুত-যালিমের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করা, অবিশ্বাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশ্বাসীদের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্বের দিক দিয়েও উলামা নবীদের ওয়ারিশ। জাহিলিয়্যাহর জীবন ছেড়ে দ্বীনে আসা যুবক আর নবীদের একজন ওয়ারিশের কাজকে তাই একই স্কেইলে হিসেব করা হবে না। যদি করা হয় তবে সেটা দুজনের উপরই যুলুম। তারা সাধারণ না, তাদেরকে সাধারণের মানদণ্ডে পরিমাপ করা হবে না। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণরা এ অসাধারন মানুষগুলোর জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেন। যেমন একজন অবিস্মরণীয় ইমাম আহমাদের উপর প্রভাব ফেলেছিলেন একজন আবুল হাইসাম, একজন নাম না জানা বেদুইন।
.
.
ইমাম আহমাদ আজ নেই। নেই মু’তাসিম। কিন্তু নতুন এক মিহ্‌নাহ আজ শুরু হয়েছে। মিম্বার থেকে মিম্বারে তা ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু আজ, এখানে কে আছেন যিনি আহমাদ ইবন হানবালের উত্তরসূরী হবার যোগ্য? যিনি অনুসরন করবেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা’আহর ইমামের দৃষ্টান্ত? এ প্রশ্নের কোন সঙ্গত উত্তর দিতে পারছি না। তাহলে কেন এ লেখা? নিজের হতাশা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য?
.
না। অনেক সময় মাথা নিচু করে থাকতে থাকতে মানুষ আকাশ দেখতে ভুলে যায়। বালুতে মুখ গুজে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে,মানুষ ভুলে যায় ইচ্ছে করলেই আকাশ দেখার ক্ষমতা তার আছে। কূয়োতে আবদ্ধ ব্যাঙ কুয়োকেই সমগ্র বিশ্ব মনে করার কারনে তার চিন্তা কখনো কুয়োর বাইরে যেতে পারে না। কোন জাতির কাছে সর্বোচ্চ সংখ্যা যদি এক হাজার হয় তাহলে এক কোটি কি, এ ধারনাটাই তারা কখনো স্পর্শ করতে পারবে না।
.
আমাদের বর্তমান অবস্থা, বালুতে গুজে রাখা আমাদের লক্ষ লক্ষ মাথা যেন আমাদের ইতিহাস আমাদেরকে ভুলিয়ে না দেয়। আমাদের আতংক, আমাদের ভীতি যেন আমাদের চিন্তাকে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে সংকুচিত করে না দেয়। কোনক্রমে টিকে থাকার জন্য না, অনেকের মধ্যে এক হয়ে পরিচিত হবার জন্য না, এই দ্বীন এসেছে বিশ্বের উপর কতৃত্ব করার জন্য এ সত্য যেন আমরা ভুলে না যাই। কুফফার যে এই উম্মাহর পদাবনত হবে এ সত্য প্রতিশ্রুতি যেন আমরা ভুলে না যাই। সে বিজয়ের অংশীদার হবার স্বপ্ন যেন আমরা ছেড়ে না দেই।
.
ভীতি যেন আমাদের জড়তায় না নিয়ে যায়। যুগে যুগে ইমাম আহমাদরা হয়তো আসেন না, কিন্তু একজন মুহাম্মাদ ইবন নুহের ব্যাপারে আমরা আশা করা বন্ধ করে দেব, এমন যেন না হয়।
‪#‎আমরাসেইজাতি‬

জারজ আমেরিকা !

এই সেই আমেরিকা, যাদের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩% পিতৃপরিচয়হীন।
এই সেই আমেরিকা যেখানে প্রতি ১০৭ সেকেন্ডে একটি করে ধর্ষণ সংঘটিত হয়।
এই সেই আমেরিকা যেখানে বানানো হয় পৃথিবীর মোট পর্নোগ্রাফির শতকরা ৮৫-৮৯ ভাগ। যেখান থেকে প্রতি ৩৯ মিনিটে একটি করে নতুন পর্ণো ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়।
.
এই সেই আমেরিকা যার সেনাবাহিনীতে প্রতি বছর হাজার হাজার নারী ও পুরুষ সেনা সদস্য নিজ সহযোদ্ধাদের দ্বারাই ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।
এই সেই আমেরিকা যারা বিনা প্রয়োজনে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আণবিক বোমা ফেলে হত্যা করেছিল লক্ষ লক্ষ নিরীহ,বেসামরিক জনগণকে।
.
এই সেই আমেরিকা যারা সকল মানবিক বিবেচনাবোধ, মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে উপেক্ষা করে ভিয়েতনামে রাসায়নিক অস্ত্র “এজেন্ট অরেঞ্জ” ব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস করেছিল লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষের জীবন।
এই সেই আমেরিকা যারা উপসাগরীয় যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে হত্যা করেছিল ১৫ লক্ষেরও বেশি ইরাকীকে।
এই সেই আমেরিকা, যারা বিগত বিশ বছরে পানির মত প্রবাহিত করেছে চল্লিশ লক্ষাধিক মুসলমানের রক্ত।
.
এই সেই আমেরিকা, যারা মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখল করে রাখার স্বার্থে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলকে যুগ যুগ ধরে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
এই সেই আমেরিকা যারা কওমে লুতের পাপাচারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের আমেরিকান রাষ্ট্রদূত এ সকল বিকৃতমস্তিষ্কের অধিকারী সমকামীদেরকে তাদের প্রাণের বন্ধু বলে দাবী করেছে। আল্লাহ তা’আলাই ওদের মুখ থেকে সত্যকে প্রকাশ করেছেন।
.
এই আমেরিকানদের নির্লজ্জতা দেখে আমরা হতবাক হই। এরাই ক্রমাগত নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে জঘন্য সব অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এরাই সারা পৃথিবী জুড়ে পাপাচার, অশ্লীলতা, অনৈতিকতা ও বিকৃত যৌনাচারের প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এরাই সমগ্র বিশ্বকে নিজেদের মতোই পাপ-পংকিলতা ও বিকৃতির মধ্যে নিমজ্জিত করার উদ্দেশ্যে অর্থ-সম্পদ ও শ্রম ব্যয় করছে।
আর এরাই আজ নির্লজ্জের মত বাংলাদেশের মুসলিমদেরকে মানবতা ও সঠিক মূল্যবোধ শেখাতে চাচ্ছে?

Monday, July 11, 2016

মহানবীর ﷺ মহাজীবন-১।

মহানবীর ﷺ মহাজীবন – পোষ্ট নং ১
মহানবীর ﷺ বিশেষ বৈশিষ্ট্য – পর্ব ১: অতুলনীয় মর্যাদা প্রাপ্ত একজন মানুষ
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু ‘আলা রসুলিল্লাহ ওয়া ‘আলা আলিহি ওয়াসাহবিহি আজমা’ইন আম্মা বা’দ
মহানবীর মহাজীবন ﷺ আমাদের প্রিয় মানুষটির গল্প, তাঁর ভালবাসার গল্প, তাঁর জীবনের গল্প – সহজ ভাষায় – ড. ইয়াসির কাযির লেকচার ও ড. সাল্লাবির বই অনুসারে।   এই সিরিজে ইনশা আল্লাহ্‌ ধারাবাহিকভাবে আমরা আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর জীবনি ধীরে-ধীরে, ছোট-ছোট পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরব।
কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়ায় – কি বলব রাসূলুল্লাহ ﷺ সম্পর্কে? কিভাবে বলব রাসূলুল্লাহ ﷺ সম্পর্কে? আমাদের জ্ঞানই বা কতটুকু আর আমাদের সামর্থ্যই বা কতটুকু? সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কতটুকুই বা বলা যায় যার খ্যাতিকে সমুন্নত করার মহান দায়িত্ব আল্লাহ্ ﷻ নিজেই নিয়েছেন –
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ (সূরা ইনশিরাহ ৯৪:৪)
উচ্চারণ: ওয়া রফা’না লাকা যিক্রক্
অর্থ: আর আমি আপনার খ্যাতিকে সমুচ্চ করেছি
এই আয়াতের ব্যাখায় ইবনে আব্বাস(রা) বলেন – মহান আল্লাহ্ ﷻ তাঁর রাসূলের ﷺ খ্যাতিকে এমনই সমুন্নত করেছেন যে যখনই আমরা তাঁর ﷻ নাম উচ্চারণ করি, তার প্রায় সাথে সাথেই তাঁর ﷻ রাসূলের ﷺ নামও উচ্চারণ করি। আমাদের শাহাদায় আমরা বলি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, ঠিক তারপরেই পড়ি “মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ”; আযানে যেই পড়ি “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”, ঠিক এর পরেই পড়ি “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ”, নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর ﷻ প্রশংসা করি, আর বসে তাঁর রাসূলের ﷺ প্রশংসা করি; নামাজ শেষে আমরা যেমনি আল্লাহর ﷻ যিকর করি, ঠিক তেমনি তাঁর রাসূলের ﷺ উপর দরূদ পাঠ করি।
আল্লাহ্ ﷻ তাঁর নবীর ﷺ মর্যাদা এতটাই সমুচ্চ করেছেন এমন একটা সেকেন্ড নাই যেখানে পৃথিবীর কোন প্রান্তে কেউ না কেউ বলছে “সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”; আল্লাহ্ ﷻ তাঁর নবীর মর্যাদা এতটাই সমুচ্চ করেছেন তাঁকে ব্যঙ্গ করে একটা কার্টুন ছাপালে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়; আল্লাহ্ ﷻ তাঁর নবীর ﷺ মর্যাদা এতটাই সমুচ্চ করেছেন যে তাঁর ﷺ মৃত্যুর প্রায় ১৫০০ বছর পরেও তাঁকে নিয়েই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী বক্তব্য দেয়া হয়, তাঁকে নিয়েই সবচেয়ে বেশী বই লেখা হয়।
আল্লাহ ﷻ তাঁর রাসূল ﷺ সম্পর্কে আরো বলেছেন –
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ (সূরা আম্বিয়া ২১:১০৭)
উচ্চারণ: ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতাল্লিল ‘আলামিন
অর্থ: আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু রহমত (দয়া) রূপেই পাঠিয়েছি
রাসূল ﷺ নিজে ছিলেন রাহমাহ, আল্লাহ্‌ ﷻ তাঁকে যে বাণী দিয়েছেন তা আমাদের জন্য রাহমাহ, তাঁর ﷺ শিক্ষা আমাদের জন্য রাহমাহ। কিভাবে বুঝব আমি তাঁকে ﷺ ঠিকভাবে অনুসরণ করছি? যখন আমি আমার চারপাশের মানুষের জন্য রাহমাহ হবো বুঝতে হবে শুধু তখনই আমি তাঁকে ﷺ ঠিকমতো অনুসরণ করছি।
(পোষ্ট তারিখ: ১ মে ২০১৬)

Saturday, July 9, 2016

৩০ লক্ষ মানে ৩০ লক্ষই – ২৯,৯৯,৯৯৯ জনও নয়

abu putul.
দেয়ালের লেখা দেখলাম – বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধকল্পে অবিলম্বে জার্মানির হলোকাস্ট ডেনিয়াল অ্যাক্টের মত আইন প্রণয়ন করা হোক।
লেখায়ঃ ছাত্রলীগ, ঢাবি।
.
.
ব্যাপারটা আর কিছুই না। সম্প্রতি বিম্পি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে একটা টান দিয়েছিলো। আর তার ফলশ্রুতিতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাধীনতা স্বপক্ষের ‘একমাত্র শক্তি’ গুলো – লীগ, বাম আর শাহাবাগী। শাহাবাগ ইটসেলফ অবশ্য লীগ আর বামের মিলনমেলা।
.
.
জাতি হিসেবে বাঙালির ধর্মটা কী, সেটা যদি জিজ্ঞেস করি তবে এর উত্তর হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তাবত চেতনার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। পাক্কা বাঙালি হতে চাইলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে একাত্তরে নিহতের সংখ্যা ৩০ লক্ষ। ৩০ লক্ষ মানে ৩০ লক্ষই – ২৯,৯৯,৯৯৯ জনও নয়। প্রমান ছাড়া এগুলোর প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারলেই আপনি খাঁটি বাঙালি। নতুবা আপনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে কুফরি করলেন এবং স্বাধীনতার ‘একমাত্র শক্তি’ গুলোর পক্ষ থেকে শোর উঠবে – পাকিস্তান চলে যান।
.
জার্মানি সহ ১৪ টা দেশে হলোকাস্ট ডেনিয়াল অ্যাক্ট বলবত আছে। আপনি যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান নাৎসিদের হাতে নিহত হওয়া ইহুদিদের ব্যাপারটাকে গণহত্যা মনে না করেন, ১৪ টা দেশের অনেকগুলোতেই আপনি ক্রিমিনাল হিসেবে সাব্যস্ত হবেন।
.
আমার কথাটা অনেক সহজ। তাদের যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নামে একটা ধর্ম আছে, আমাদেরও একটা ধর্ম আছে। মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারটা তাদের কাছে যেমন সেনসিটিভ, ৩০ লক্ষ না বলে ৩ লক্ষ বললে তাদের যেমন বুকে আঘাত লাগে, আমরাও খুব আঘাত প্রাপ্ত হই যখন টেলিভিশন টক-শোতে শাহারিয়ার কবিরের মত মানুষেরা ইসলামের নামে নিজের মন মত যা তা খুশি বলে বেড়ায়, আসিফ মহিউদ্দিনেরা আল্লাহ্‌ আর তাঁর রাসূলকে নিয়ে কুৎসিত কথাগুলো বলে।
.
তারা হলোকাস্ট ডেনিয়াল অ্যাক্টের মত আইন চান বেশ ভালো কথা, কিন্তু মাঝে দিয়ে যখন একবার ব্লাস্ফেমি অ্যাক্টের কথা  তুলেছিলো ‘মোল্লারা’, তখনই তারা বলে উঠলেন – কী বর্বর!
.
সবই বুঝি কিন্তু তালগাছটা আমার।

গনতন্ত্র সেক্যুলারিজমের জারজ প্রোডাক্ট

গনতন্ত্র সেক্যুলারিজমের জারজ প্রোডাক্ট ||গনতন্ত্র কুফফারদের খেজুরের তৈরি মুর্তি

Statement1 : আধুনিক পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র হচ্ছে সেক্যুলারিজমের জারজ প্রোডাক্ট।

Statement 2 : গণতন্ত্র হচ্ছে কুফফারদের ‘খেজুরের তৈরি মূর্তি’।

গণতন্ত্র সম্পর্কে উপরের দুটি Statement এর ১মটি Theoretical এবং ২য়টি Practical..

Justification: ১ নং Statement নিয়ে আগে বলি। Secularism শব্দের বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা‘ যেটা একটা ডাহা মিথ্যা এবং সূক্ষ্ম প্রতারণা। প্রকৃতপক্ষে Secularism এর অর্থ হওয়া উচিত ‘ধর্মহীনতা’।

মূলত Secularism বলতে ২টি Concept কে বুঝায়- 1. Naturalism 2. Rationalism
অর্থাৎ Secularism = Naturalism + Rationalism
নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার প্রসারের সাথে সাথে দুটো প্রশ্ন গাঢ় হতে লাগলো।
প্রথমত, বিশ্বজগত কিভাবে সৃষ্টি হল?? ধর্মতাত্ত্বিকরা ধর্মগ্রন্থের আলোকে ব্যাখ্যা দিলো। কিন্তু নাস্তিক সেক্যুলাররা তো আর তা মেনে নিতে পারে না। তাই তারা প্রস্তাব করলো Naturalism মতবাদের। এই মতবাদের সারকথা হল স্রষ্টা বলে কিছু নেই, Nature নিজে নিজেই পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ।
২য় যে প্রশ্নটি আসলো তা হল সমাজ রাষ্ট্রের আইন কিভাবে তৈরি হবে?? ধার্মিকরা না হয় ধর্মগ্রন্থ ফলো করে। নাস্তিকরা কি করবে?? নাস্তিকরা মীমাংসা দিল যে তারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তি ও যুক্তি কাজে লাগিয়ে আইন তৈরি করবে, কোন Holy Scripture এর ধার ধরবে না। এটাকে বলা হয় Rationalism. এই Rationalism প্রয়োগ করে সমাজের আইন তৈরির কারখানাই হল আধুনিক পার্লামেন্ট, যেখানে MP দের হ্যাঁ-না-সংখ্যাধিক্যই হল আইন তৈরির প্রক্রিয়া। কাজেই বুঝা গেল Secularism হল নাস্তিকতাবাদের জারজ প্রোডাক্ট, আর আধুনিক পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র হল Secularism এর জারজ প্রোডাক্ট।
২নং Statement টি বেশ কৌতূহলীদ্দীপক।
জাহেলী যুগে উমার (রাঃ) একদিন কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর পূজা অর্চনা করার ইচ্ছে হল। কিন্তু আশেপাশে কোন মূর্তি পেলেন না। অগত্যা খেজুর দিয়ে মূর্তি তৈরি করলেন। তারপর অঢেল ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে পূজা-অর্চনা করলেন। কিছুক্ষণ পর ক্ষুধা লাগলো। তখন তিনি সেই মূর্তিটিই (??) ভেঙে খেয়ে ফেললেন!! এটাই হচ্ছে কুফফারদের খেজুরের তৈরি মূর্তি, যখন ইচ্ছা তারা এটাকে ভক্তি করে, পূজা করে, নিজেকে নিবেদন করে আবার যখন ইচ্ছে হয়, যখন প্রবৃত্তি তাড়না দেয়, তখন এটাকে খেয়ে ফেলে!! এবার আসা যাক গণতন্ত্রের ব্যাপারে। এ যমানার কুফফাররা ও তাদের প্রভু আমেরিকা দেশে দেশে গণতন্ত্রের ফেরি করে বেড়ায়। এই গণতন্ত্রকে তারা পূজা করে, অর্চনা করে। এমনকি এই গণতন্ত্রের জন্য তারা যুদ্ধও করে।
আমরা যখন বলি ‘আল্লাহ যেটা দিয়েছেন, সেটাই আইন’, তখন ওরা বলে “না, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যা দিয়েছে তাই আইন।”
[{ আল্লাহ বলেন, “আম লাহুম শুরাকায়ু শারায়ু লাহুম মিনাদ দ্বীন মা লাম ইয়াহযান বিহিল্লাহ” অর্থাৎ “তাদের কি এমন কতগুলো শরীক (উপাস্য/বিধানদাতা) আছে যারা তাদেরকে এমন কতগুলো বিধান দিয়েছে যার নির্দেশ আল্লাহ দেন নি???” (সূরা আশ শূরা : ২১) }]
*** আমাদের বিধানদাতা আল্লাহ আর ওদের বিধানদাতা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা!!
কিন্তু যখন দেখা যায় ওদের ফর্মুলা মেনেই ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় আসে, যখন ওদের পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও ইসলামী শরীআকে সাপোর্ট করে, তখন ওরা তাদের পূজিত গণতন্ত্রকে খেজুরের মূর্তির মতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলে!! তখন ওরা ওদের ব্যালটের উপাস্যকে মনে রাখে না, মনে রাখে না ওদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপাস্যকে!! ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে আলজেরিয়া ও মিশরে। এ কারনেই শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ বলেছেন- “গণতন্ত্র হল কুফফারদের খেজুরের তৈরি মূর্তি, যখন খুশি তারা এটাকে পূজা করে আবার যখন খুশি তারা এটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে!!

তোমাদের রব কখনো ভুলে যায় না [সূরা মারিয়ামঃ ৬৪]

​হুমায়ূন আহমেদের একটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাহিনী ছিল।  যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতার জন্য আর কমান্ডার হিসেবে তার নাকি বেশ পরিচিতি ছিল। কিন্তু তার শেষটা ভালো ছিল না। যুদ্ধের সময় এক বাড়ীতে তারা খেতে গিয়েছিল, এলাহি অবস্থা, বাড়ির মালিক মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানোর জন্য খাসি জবাই  করলেন, খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কমান্ডার আর তার বাহিনীর কোন হুঁশ ছিল না। শেষে সবাই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সেই থেকে ইতিহাসে সেই কমান্ডারকে সবাই খাসি অমুক হিসেবে চিনে। তার বীরত্বগাথা সবাই ভুলে গেল, একটা ভুলের কারণে তার নামের আগে খাসি যোগ হল।

.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরেফীন সিদ্দিকী সাহেব, আওয়ামীপন্থী হিসেবেই তাকে সবাই চিনে। ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসেই আওয়ামীলীগ সরকার ভিসি হিসেবে তাকেই বেছে নেয়, এরপর দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি ভিসি নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন দলটির সাবেক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন তিনি। এইতো কয়দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ বছরপূর্তির স্মরণিকায় জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি আর শেখ মজিবুর রহমানকে বিবেচিত জাতির জনক উল্লেখ করায় কি ধকলটায় না গেল তার উপর। গাড়ী ভাংচুর হয়েছে, বাসায় হামলা হয়েছে, ছাত্রলীগ দলবল নিয়ে তার বাসভবনের সামনে পদত্যাগের দাবি তুলে অবস্থান করেছে, রাজাকার, জামাতি, পাকিস্তানি সম্ভাব্য সব ট্যাগ লাগিয়ে গালিগালাজ করেছে।
.
এটাই তো দুনিয়া। যারা দুনিয়ার পূজা করে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জিম্মায় ছেড়ে দেন। দুনিয়াই তাদেরকে উঠায় আর দুনিয়াই তাদেরকে নামায়। দুনিয়ার কাছে তারা সম্মানিত হয় আবার দুনিয়ার হাতেই তারা লাঞ্ছিত হয়। দিনশেষে দুনিয়া দুনিয়ার জায়গাতেই রয়ে যায়। আল্লাহর সামনে গিয়ে এই মানুষগুলো হয় সত্যিকারের লুজার। পক্ষান্তরে মুমিনের ব্যাপারটাই  আশ্চার্যজনক। যাদের সব কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য থাকে আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেন, তারা কিছু অর্জন করুক আর না করুক। দুনিয়ার কাছে একটা ভুলের কারণে সারাজীবনের অর্জন আর মেহনত মূল্যহীন হয়ে গেলেও যারা আল্লাহর দলে থাকে আল্লাহ তাদের ভুলত্রুটিগুলো নিজেই ইসলাহ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিভাবে? আল্লাহ বলেন,
.
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّـهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا
“হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” [সূরা আহযাবঃ ৭০-৭১]
.
সুতরাং এতে আশ্চার্যের কি আছে যে আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে বাছাই করে নিবেন যারা তাকে ভয় করবে, হক্ব কথা বলবে, বিনিময়ে আল্লাহ তাদের ভুলগুলো তো শোধরে দিবেনই বরং বাকি পাপগুলোও মুছে দিবেন। তিনিই আমাদের রব, আর আমরা তো সে মহান রবেরই ইবাদাত করি।
.
 উস্তাদ আবু তাওবাহকে গ্রেফতার করেছিল আমেরিকা সরকার। উনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল তার একটি ছিল তিনি মসজিদে একবার শাইখ আবু হামজা আল মিসরির জন্য মসজিদের দরোজা খুলেছিলেন। সেটাকে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার এভিডেন্স হিসেবে দেখানো হয়েছে। তারিক মেহান্নার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর কোন সলিড প্রমাণ দিতে না পেরে কোর্টে বলা হয়েছিল, “what he did isn’t important, what he believes is important!” চিন্তা করুন! কাফেররা আল্লাহর রাস্তায় একটা দরোজা খোলার হিসেবও রাখে, আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আপনার বিশ্বাসের হিসেব রাখে। আর আমরা তো সেই রবের ইবাদাত করি জানেন আমরা যা করি আর যা গোপন করি, যিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান, যিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন, পুরস্কৃত করেন। এবং কোন কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নয় এবং যার হিসেবে কোন গরমিল নেই, তিনি ভুলেও যান না।
.
وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
                                    ….তোমাদের রব কখনো ভুলে যায় না [সূরা মারিয়ামঃ ৬৪]
.
সুতরাং যে জীবন আল্লাহর জন্য বাঁচে সে জীবনে প্রকৃতপক্ষে হারাবার কিছু নেই, সেই জীবনে প্রাপ্তির কোন সমাপ্তিও নেই। আর যে জীবন দুনিয়ার জন্য বাঁচে সেই জীবনের জৌলুস সেই দুনিয়া পর্যন্তই। সুতরাং আমাদের এই বেঁচে থাকা, আমাদের এই কষ্ট, মেহনত, আমাদের চাওয়া পাওয়া সবকিছু হোক আল্লাহর জন্য, শুধু আল্লাহকে খুশী করতে। যাতে আমরা দুনিয়াতে তো বটেই আখিরাতেও যেন বেঁচে যেতে পারি, নিরাপদ থাকতে পারি, সম্মানিত হতে পারি। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ) তাই বলেন, “মৃত্যু তো একবারই আসবে। সুতরাং সেটা যেন আল্লাহর পথে হয়”

তোমাদের রব কখনো ভুলে যায় না [সূরা মারিয়ামঃ ৬৪]

​হুমায়ূন আহমেদের একটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাহিনী ছিল।  যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতার জন্য আর কমান্ডার হিসেবে তার নাকি বেশ পরিচিতি ছিল। কিন্তু তার শেষটা ভালো ছিল না। যুদ্ধের সময় এক বাড়ীতে তারা খেতে গিয়েছিল, এলাহি অবস্থা, বাড়ির মালিক মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানোর জন্য খাসি জবাই  করলেন, খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কমান্ডার আর তার বাহিনীর কোন হুঁশ ছিল না। শেষে সবাই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সেই থেকে ইতিহাসে সেই কমান্ডারকে সবাই খাসি অমুক হিসেবে চিনে। তার বীরত্বগাথা সবাই ভুলে গেল, একটা ভুলের কারণে তার নামের আগে খাসি যোগ হল।

.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরেফীন সিদ্দিকী সাহেব, আওয়ামীপন্থী হিসেবেই তাকে সবাই চিনে। ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসেই আওয়ামীলীগ সরকার ভিসি হিসেবে তাকেই বেছে নেয়, এরপর দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি ভিসি নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন দলটির সাবেক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন তিনি। এইতো কয়দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ বছরপূর্তির স্মরণিকায় জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি আর শেখ মজিবুর রহমানকে বিবেচিত জাতির জনক উল্লেখ করায় কি ধকলটায় না গেল তার উপর। গাড়ী ভাংচুর হয়েছে, বাসায় হামলা হয়েছে, ছাত্রলীগ দলবল নিয়ে তার বাসভবনের সামনে পদত্যাগের দাবি তুলে অবস্থান করেছে, রাজাকার, জামাতি, পাকিস্তানি সম্ভাব্য সব ট্যাগ লাগিয়ে গালিগালাজ করেছে।
.
এটাই তো দুনিয়া। যারা দুনিয়ার পূজা করে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জিম্মায় ছেড়ে দেন। দুনিয়াই তাদেরকে উঠায় আর দুনিয়াই তাদেরকে নামায়। দুনিয়ার কাছে তারা সম্মানিত হয় আবার দুনিয়ার হাতেই তারা লাঞ্ছিত হয়। দিনশেষে দুনিয়া দুনিয়ার জায়গাতেই রয়ে যায়। আল্লাহর সামনে গিয়ে এই মানুষগুলো হয় সত্যিকারের লুজার। পক্ষান্তরে মুমিনের ব্যাপারটাই  আশ্চার্যজনক। যাদের সব কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য থাকে আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেন, তারা কিছু অর্জন করুক আর না করুক। দুনিয়ার কাছে একটা ভুলের কারণে সারাজীবনের অর্জন আর মেহনত মূল্যহীন হয়ে গেলেও যারা আল্লাহর দলে থাকে আল্লাহ তাদের ভুলত্রুটিগুলো নিজেই ইসলাহ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিভাবে? আল্লাহ বলেন,
.
 يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّـهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا
“হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” [সূরা আহযাবঃ ৭০-৭১]
.
সুতরাং এতে আশ্চার্যের কি আছে যে আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে বাছাই করে নিবেন যারা তাকে ভয় করবে, হক্ব কথা বলবে, বিনিময়ে আল্লাহ তাদের ভুলগুলো তো শোধরে দিবেনই বরং বাকি পাপগুলোও মুছে দিবেন। তিনিই আমাদের রব, আর আমরা তো সে মহান রবেরই ইবাদাত করি।
.
 উস্তাদ আবু তাওবাহকে গ্রেফতার করেছিল আমেরিকা সরকার। উনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল তার একটি ছিল তিনি মসজিদে একবার শাইখ আবু হামজা আল মিসরির জন্য মসজিদের দরোজা খুলেছিলেন। সেটাকে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার এভিডেন্স হিসেবে দেখানো হয়েছে। তারিক মেহান্নার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর কোন সলিড প্রমাণ দিতে না পেরে কোর্টে বলা হয়েছিল, “what he did isn’t important, what he believes is important!” চিন্তা করুন! কাফেররা আল্লাহর রাস্তায় একটা দরোজা খোলার হিসেবও রাখে, আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আপনার বিশ্বাসের হিসেব রাখে। আর আমরা তো সেই রবের ইবাদাত করি জানেন আমরা যা করি আর যা গোপন করি, যিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান, যিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন, পুরস্কৃত করেন। এবং কোন কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নয় এবং যার হিসেবে কোন গরমিল নেই, তিনি ভুলেও যান না।
.
وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
                                    ….তোমাদের রব কখনো ভুলে যায় না [সূরা মারিয়ামঃ ৬৪]
.
সুতরাং যে জীবন আল্লাহর জন্য বাঁচে সে জীবনে প্রকৃতপক্ষে হারাবার কিছু নেই, সেই জীবনে প্রাপ্তির কোন সমাপ্তিও নেই। আর যে জীবন দুনিয়ার জন্য বাঁচে সেই জীবনের জৌলুস সেই দুনিয়া পর্যন্তই। সুতরাং আমাদের এই বেঁচে থাকা, আমাদের এই কষ্ট, মেহনত, আমাদের চাওয়া পাওয়া সবকিছু হোক আল্লাহর জন্য, শুধু আল্লাহকে খুশী করতে। যাতে আমরা দুনিয়াতে তো বটেই আখিরাতেও যেন বেঁচে যেতে পারি, নিরাপদ থাকতে পারি, সম্মানিত হতে পারি। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ) তাই বলেন, “মৃত্যু তো একবারই আসবে। সুতরাং সেটা যেন আল্লাহর পথে হয়”

Friday, July 8, 2016

দ্বীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা

নিশ্চয় আল্লাহতাআলা সুন্দর, সুন্দরকে ভালবাসেন

আল্লাহতাআলা দ্বীন দিয়েছেন যেন আমাদের জীবন সুন্দর হয়। আর জীবন সুন্দর মানে জীবনে যা কিছু করা হয়, ভাবা হয়, অন্তর-বাহির সবগুলোই সুন্দর। বাহিরও, ভিতরও।

اللَّهُمَّ اجْعَلْ سَرِيرَتِي خَيْرًا مِنْ عَلاَنِيَتِي وَاجْعَلْ عَلاَنِيَتِي صَالِحَةً
হে আল্লাহ, তুমি আমার গোপনকে আমার প্রকাশ্যের চেয়ে বেশি ভাল কর, আর প্রকাশ্যকেও ভাল কর

কিন্তু অন্তর, ঐটার গুরুত্ব প্রকাশ্যের চেয়ে আরও বেশি। আর এটা তো বিভিন্নভাবেই পাওয়া যায়।  إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ এই কথা বলা হয়নি যে إِنَّمَا الأَنِّيَّةِ بِالعْمَالُ আমল দিয়ে ভাল নিয়্যতের বিচার করা হবে – তা নয়। বরং নিয়্যত দিয়ে আমল বিচার করা হবে। নিয়্যত যদি ভাল হয় তাহলে আমল ভাল, নিয়্যাত খারাপ হলে আমল খারাপ। তো উল্টোটা হবে না। আমল যদি ভাল হয় তাহলে নিয়্যাত ভাল – এমনটা হবে না। আর আমল খারাপ হলে নিয়্যাত খারাপ – তাও হবে না। প্রাধান্য নিয়্যাতেরই, যেটা দেখা যায় না। যেটা গোপন, ভিতরে আছে।
তো সব আমলের মধ্যে এই শুদ্ধতার সৌন্দর্য থাকা জরুরী। ঠিকমত করতে পারছে না যে শর্ত আছে সৌন্দর্যের, শুদ্ধতার, তো সেই ক্ষেত্রে কখনো কখনো আমল হয়ত এত বেশি জরুরী যে বাদ দেওয়া যাবে না, আবার মাত্রা আছে এমন যে কোন ক্ষেত্রে ঐ আমল না করাই ভাল যদি ঠিকমত না করতে পারে।
নামায সবচেয়ে বড় আমল। ভাল করে যদি না পড়ে তাহলে পুরনো কাপড়ের মত ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। কিন্তু তার মানে এইটা নয় যে ভাল করে যদি না পড়ি, তাহলে না পড়াই ভাল। পড়তে হবে তবুও। তো ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কি মানে? আল্লাহতাআলা বেহতার জানেন। ওলামারা হয়ত অনেক কিছু বলতে পারবেন। এটাও তার একটা অর্থ হতে পারে যে এই নামাযের দ্বারা তার যে ফায়দা হওয়ার কথা ছিল, প্রত্যাশিত ফায়দা – ঐটা হবে না। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নামায আদায় হয়ে গেল। আর নামায না পড়ার যে গুনাহ, সেটা থেকেও বেঁচে গেল। কিন্তু নামাযের দ্বারা তার বিভিন্ন ফায়দার মধ্যেও এটাও এক ফায়দা যে তার জীবন শুদ্ধ হবে, সুন্দর হবে, তার ঈমানী আমালে তরক্কী হবে, আখলাকিয়্যাতের তরক্কী হবে। যদিও প্রত্যেক মুহুর্তে এটা বুঝা যাবে না। পুকুরে যদি এক বদনা পানি ঢালে, তাহলে পুকুরের পানির লেভেল নিশ্চয় বেড়েছে। যদিও সাধারণ মাপে ধরা পড়ে না। তো ওরকম নামায পড়লে তার একটা তরক্কী হওয়ার কথা, ঐ তরক্কী হবে না, কিন্তু নামায তবুও আদায় হল। কিন্তু এই একই নিয়ম সব জায়গায় প্রযোজ্য নয়।
কোন একজন ওলীআল্লাহ তার ছেলেসহ সফরে ছিলেন। মাঝখানে রাত্রে সরাইখানায় থেমেছেন। তাহাজ্জুদের জন্য উঠেছেন, সাথে উনার ছেলেও উঠেছে। মুসাফিররা ঘুমাচ্ছে। ছেলে এই মুসাফিরদের দিকে তাকিয়ে বলল যে ‘কিরকম গাফেলের মত ঘুমাচ্ছে এরা, তাহাজ্জুদের জন্য উঠল না’। বাপ একজন ওলীআল্লাহ ছিলেন। তো বাপ তাকে বললেন যে ‘বাবা, তোমার এর চেয়ে ঘুমিয়ে থাকাই ভাল ছিল’। অন্যের প্রতি তাচ্ছিল্য এনে আর তাহাজ্জুদ পড়ে তুমি যেটা পেলে, হারাচ্ছো তার চেয়ে বেশি। তার চেয়ে তুমিও ঘুমিয়ে থাকতে। ঐটাই তোমার জন্য লাভজনক বেশি ছিল। কিন্তু এটা ফারায়েযের ব্যাপারে বলা যাবে না। ফযরের নামায পড়ছে না আর বলল যে ‘ঘুমাচ্ছে’; যদিও তাচ্ছিল্য তখনো আনা উচিত নয়, কিন্তু এই কথা বলা যাবে না যে তোমার ফযরের নামায না পড়াই বরং ভাল ছিল। তাহাজ্জুদের ব্যাপারে যদিও বলা যাবে।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দু’আ শিখিয়েছেন
للهم أعني على ذكرك وشكرك، وحسن عبادتك
তোমার যিকির, তোমার শোকরের তৌফিক দাও আর ইবাদত যেন সুন্দরভাবে করতে পারি
তো সব কাজ যেন সুন্দর হয়
فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُون
আল্লাহতাআলা দেখতে চান যে তুমি আমল কেমন করে কর।
আর অন্যান্য আয়াতের মধ্যে একই অর্থ আছে। أَحْسَنُ عَمَلًا বলা হয়েছে। اَخْسَرُعَمَلًا বলা হয়নি। সুন্দর আমল।
لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
তোমাদের মধ্যে কার আমল বেশি সুন্দর হুসুন, আহসান বেশি সুন্দর।
বেশি করা হয় যেটা বড় বড় ওলীআল্লাদের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় যে এত শত রাকাত, এত হাজার রাকাত নামায পড়তেন, তো তারা কি এই আয়াত বুঝলেন না। (আসলে) বেশির জন্য পড়তেন না, সুন্দর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য পড়তেন।
ছেলেকে বলা হল যে একশোবার লিখ ‘সদা সত্য কথা বলিব’। প্রথম কথা হল মাষ্টারও নিয়্যত করেনি, ছাত্রও নিয়্যত করেনি সত্য কথা বলার আর সত্য কথা বলার জন্য সে লিখছেও না। লিখছে হাতের লিখা সুন্দর করবার জন্যে। তো বলল যে পাঁচশবার লিখতে হবে। পাঁচশবার যে লিখছে ঠিকই, পাঁচশবারের জন্য নয়, বরং পাঁচশতম যেটা ঐটার জন্যে। পাঁচশবার লিখার পরে সবশেষ লাইন যেটা, ঐটা গিয়ে সুন্দর হবে। কিন্তু ঐ সুন্দরের জন্যে এর আগে চারশ নিরানব্বই বার দরকার। কেউ যদি বলে যে তাহলে শুধু ঐটাই লিখি আর আগের চারশ নিরানব্বই বার লিখার কি দরকার। না, তা হবে না।
তো একজন তার খুব শখ যে সে সাহিত্যিক হবে, গল্প বই লিখবে। আর বড় বড় লেখকদের নির্বাচিত লিখাও থাকে। তো সে ভাবল যে প্রথমেই আমার নির্বাচিত গল্পগুলো লিখে ফেলি, বাকীগুলো পরে সুযোগ হলে লিখা যাবে। তো সংখ্যার বেশি দরকার, কিন্তু আসলেই একটাই, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ঐ সংখ্যা ছাড়া ঐ একটা হয় না। বাপের সাথে ছেলে ঘোড়দৌড় দেখতে গেছে। বাপ বুঝালো যে একটা ঘোড়া ফার্স্ট হবে, যেটা ফার্স্ট হবে সেটা অনেক টাকা পাবে। অনেকগুলো ছিল ঘোড়া। তো ছেলে বলল যে তাহলে একটা যদি ফার্স্ট হবে তাহলে বাকীগুলো কেন খামোকা দৌড়াচ্ছে। ঐ একটা রাখলেই হয়।
তো আল্লাহতাআলা সুন্দর চান সুন্দরের জন্যে, ওসীলা হিসেবে কখনো বেশির দিকে যেতে হয়। কিন্তু আসলে লক্ষ্য সুন্দর। সুন্দর, শুদ্ধ আমল যেন হয়। সব আমলে মধ্যে এইটাই আল্লাহতাআলা দেখবেন ‘فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُون’। তুমি কেমন করে করলে। আল্লাহতাআলা আমাদেরকে দ্বীনের মেহনত দিয়েছেন। এই দ্বীনের মেহনতকেও সুন্দরভাবে করা। উম্মতের প্রত্যেক ব্যাক্তিকে গোটা মানবজাতির জন্যে পাঠিয়েছেন। মানবজাতির উপকারের জন্যে। উপকার মানে তার শুভকামী হতে হবে। প্রত্যেক ব্যাক্তির শুভকামী। এর মোকাবিলায় অন্যের অমঙ্গলে আনন্দ পাওয়া – এটা আল্লাহতাআলার কাছে চুড়ান্ত মাত্রার অপছন্দের জিনিস। যেখানে আল্লাহতাআলা পাঠিয়েছেন মানুষের শুভকামী হওয়ার জন্যে, সেখানে তার ক্ষতিতে আনন্দিত হওয়া – একেবারে আল্লাহর সৃষ্টির লক্ষ্যের বিরুদ্ধে হল ব্যাপারটা। এইজন্যে কেউ যদি একটু চিন্তাও করে তো বুঝতে পারবে যে গীবত কত খারাপ জিনিস। আর গীবতের বিরুদ্ধে এতগুলো কথা এসেছে – তো খুব যুক্তিসঙ্গত। কারণ আল্লাহতাআলা মানুষকে যে উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন, মানুষের শুভকামী হওয়া। অথচ গীবত মানে হল অন্যের কোন অমঙ্গলে আনন্দবোধ করা।
আড়ালে কারও দোষের আলোচনা করা – শুধু এইটুকুতে গীবত হয় না। অনেক ক্ষেত্রে তার আড়ালে তার কোন দোষের আলোচনা করা ফরয পর্যন্ত হয়। কখনো ফরয হয়, কখনো ওয়াজীব হয়, কখনো সুন্নাত হয়, কখনো মুস্তাহাব হয় ক্ষেত্রবিশেষে। বিভিন্ন ধরনের।
ক্যান্সার রোগী। ডাক্তার তার পরিবারের লোককে আলাদা করে, রোগীর সামনে নয়, ডায়াগনসিসের রিপোর্ট দিল যে রিপোর্ট তো খারাপ, এটা ম্যানিক ডেথ, ক্যান্সার ধরা পড়েছে। তো এই যে ডাক্তার তার আড়ালে বাপ বা ছেলেকে বলল, তো সেই ডাক্তার কি গীবতের গুনাহয় গুনাহগার হবে নাকি। তাহলে গীবত কি? কারো অনুপস্থিতে এমন কোন কথা বলা যে শুনতে পছন্দ করবে না। এটা তো পুরোপুরি সঙ্গার মধ্যে পড়ে। তার উপস্থিতিতে যদি বলে তোমার ক্যান্সার হয়েছে, সে পছন্দ করবে না। তো এমন কথা তার আড়ালে বলা হল, সামনে বললে অসন্তুষ্ট হত। সঙ্গা অনুযায়ী গীবতই তো হল। গীবতের পুরোপুরি ডেফিনেসনের মধ্যে পড়ল। কিন্তু শরীয়তের যেটাকে গীবত বলে, যেটাকে নিষিদ্ধ করা হয়, এটা ঐটার মধ্যে পড়ে না। ওকে আড়ালে করা, আড়ালে বলা তার সাথে শত্রুতা করে নয়, বরং তাকে অতিরিক্ত কষ্ট থেকে বাঁচাবার জন্য। শুনলে তার খারাপ লাগবে, অথচ তার পরিবারকে জানানোর প্রয়োজন। তো সেজন্য ওর যাতে খারাপ না লাগে, এজন্য এটা করল। তার হয়ত খারাপ লাগবে, কিন্তু অন্যের হুকুমের মধ্যে পড়ে।
হাসান বসরী রহঃ এর কথা ‘তোমরা কি ফাযিরদের আলোচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখ নাকি? আত তারা গাইবুনা আন যিকরি ফাযির এই জাতীয়। ফাযিরদের আলোচনা থেকে তুমি বেঁচে থাকতে চাও – এটাকে দোষারোপ করেছেন। নিশ্চয় ফাযিরদের আলোচনা কর, মানুষকে সাবধান করে দাও। শুনে আমরা বলব যে বড় আজীব কথা। এরকম কথাতো কোনদিন শুনিনি। অথচ আমাদের সমাজে এই কথার উপরে আমল বহুত ব্যাপক।
ওলামারা প্রায় বিদআতীদের আলোচনা করেন। আর তাকে সামনে রেখে যে করছেন তাও নয়। আটরশির আলোচনা করে, মাইজভান্ডারীর আলোচনা করে, কুতুববাগীর আলোচনা করেন আর এই আলোচনাগুলো তাদের শরয়ী-দ্বীনি দায়িত্ব হিসেবে করেন। অতএব হাসান বসরী রহঃ এর হুবহু এই কথার সাথে আমরা পরিচিত হতে নাও পারি, কিন্তু এর অর্থের সাথে পরিচিত। আর ওলামারা বিশেষ করে এটার উপর আমলও করে থাকেন। এদের এই খারাপের আলোচনা কেন করছেন? আলোচনা এইজন্য করছেন যে মানুষকে সাবধান করে দাও। কখনো কখনো আলোচনার ধরনের মধ্যে কিছু রসও থাকে। রস থাকে হয়ত মানুষকে বুঝাবার জন্যে বা মানুষের নযর কাড়ার জন্যে। বাকী ওর দোষের জন্যে যে আনন্দবোধ করা – ঐটা জায়েয নাই। আমাদের দেশের খুব উল্লেখযোগ্য আলিম, উনার ওয়াজ শুনছিলাম। উনার কোন অঞ্চলের মধ্যে কার যেন কথা বলছিলেন ‘ন্যাংটা পীর’। কাপড়-চোপড় নাই, উলঙ্গ বসে আছে আর লোকে বলে যে এর মধ্যেও কিছু না কিছু তো আছেই। উনি বলেন, ‘হ্যা,কিছু তো আছেই, দেখাই যাচ্ছে’।
তো আলোচনা করছেন আর এটা করা জরুরী বলে করছেন। আর ঐ যে বললাম – স্তর নির্ভর করে। কখনো কখনো ফরযও হতে পারে, কখনো কখনো এর চেয়ে কম হয় মানে সাবধান করে দেওয়া। কিন্তু সবগুলোর মধ্যে নানান সুরুত আছে।
আমার বাপ বিদাতী পীর। আমি শুদ্ধ আক্বিদার আর আমি জানি উনি বিদাতী এবং উনার কাছে লোকজন গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমার দায়িত্ব হবে মানুষকে সাবধান করে দেওয়া যে আমার বাপের কাছে গিয়ে মুরীদ হবে না। প্রয়োজনে যদি তাকে বুঝাতে হয়, তো বাপের অনেকগুলো দোষের চর্চাও করতে হবে। কে বলল ‘কেন, উনি তো ভালই’। ছেলে বলল ‘না, ভাল না’। হয়ত ‘না,ভাল না’ শুধু বলাতে তার ইতমিনান হল না। তখন আরও খুলে বলতে হবে যেগুলো আমি জানি যাতে উনার থেকে তার আক্বিদা সরে। কিন্তু এই যে আমি আমার বাপের দোষের কথা বলছি, এই বলা আমার জন্য কোন আনন্দের নয়। ঠেকাই পড়ে বলছি। বাপ হিসেবে উনার অপমান, এটা আমার অপমান। এই বোধ আমার আছে। তো এই বোধ বজায় রেখে তার দোষের চর্চা করছি আর এই দোষের চর্চার জন্য সওয়াব পাব। আর এই বোধ থাকার কারণে আমি যে কষ্ট পাচ্ছি, এই কষ্টেরও সওয়াব পাবো। কিন্তু যদি আমার এই বোধ না থাকে আর এই দোষ চর্চাগুলো যদি আনন্দের সাথে করি, লোকে যখন গীবত করে বেশ ফুর্তি করে, মজা করেই করে – তাহলে সে একজন বেহায়া। আর আল্লাহতাআলা এইজন্য বেহায়া লোককে পছন্দ করেন না। আর ছেলে হিসেবে ওর বাপের ওর উপর যে হক্ব আছে, এই হক্বও সে আদায় করেনি। ওর লজ্জা পাওয়া আর এই কথাগুলো বলতে ভাল না লাগা – এটা ওর বাপ হিসেবে তার উপর হক্ব। আর ওর যে খারাপ লাগল না, লজ্জাও পেল না – এতে ওর বাপেরও হক্ব আদায় করল না, আর একজন মানুষে হিসেবে মানুষের বড় একটা বৈশিষ্ট্য যে হায়া থাকা, ঐ বৈশিষ্ট্য প্রকাশেও সে ব্যার্থ হল। বেহায়া।
তো বলতেও হবে যাতে মানুষ ভুল থেকে বেঁচে যায়, কিন্তু ছেলে হিসেবে তার প্রতি যে ভালবাসা – এইটাও রাখতে হবে। বাপ ভন্ড তাই বলে ও আমার বাপ নয় – এই কথা ঠিক নয়। বাপ তবুও। আর বাপ বলে ও ভন্ড নয় – এই কথাও ঠিক নয়। ও যদি ভন্ড হয় তাহলে আমার বাপ হওয়া স্বত্ত্বেও ভন্ড। একটা আরেকটাকে বাতিল করবে না। যেহেতু আমার বাপ, অতএব উনি হক্ব পীর – এইকথা যেমন ঠিক নয়, আর যেহেতু উনি ভন্ড, অতএব উনি আমার বাপই নয় – এই কথাও ঠিক নয়। সবটা তার নিজস্ব সীমানার মধ্যে রাখতে হবে। ভন্ড এই কথাও ঠিক, প্রয়োজন যেখানে বলতে হবে; এই কথাও ঠিক। যদি প্রয়োজন হয় তো মাইক লাগিয়ে বলতে হবে। গোটা গ্রামের লোককে জানাতে হবে। যদি আমি ইচ্ছাকৃত না জানাই, তাহলে ওদের হক্ব নষ্ট করলাম। ঠিক যেরকম একজন অন্ধ ব্যাক্তি আমার চোখের সামনে গর্তের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে আর আমি তাকে বাধা দিলাম না। তো সর্বঅর্থে এই যে দাঁড়িয়ে থাকল, দেখল আর বাধা দিল না, সে দোষী হবে। এইকথা বললে হবে না যে আমি তো কিছুই করিনি। ঐ কিছু না করাটাই ওর দোষ।
ওলামারা যে বিদাতীদের ব্যাপারে ওয়াজ করেন, বই লিখেন; এগুলো না করলে তারা দায়ী হবেন। কিন্তু এর মধ্যে কোন আনন্দ না পাওয়া। ঠেকা তাই করতে হচ্ছে।
একজন অভাবে পড়ে ক্ষুধায় মরার উপক্রম প্রায়। জান বাঁচাবার জন্য পেল শুধু শুকুরের গোস্ত। জান বাঁচাবার জন্যে ঐ শুকুরের গোস্ত খাওয়াও ওর জন্য জায়েয। তো জান বাঁচাবার জন্য খেল ঠিকই, কিন্তু মুখে যখন দিল তখন বেশ মজাও লাগল – ঐ মজা লাগা আবার হারাম। কিন্তু ওর তো এখতিয়ার নাই, ইচ্ছা করে তো আর মজা লাগাচ্ছে না, মজা লেগে যাচ্ছে। তবুও এটাকে নিজের কাছে দোষ মনে করা যে আমার তো মজা লাগা উচিৎ নয়, আমার তো এর প্রতি ঘৃণা থাকা উচিৎ। কিন্তু ঐটা বেএখতিয়ার হিসেবে তবুও মাফ হয়ত হয়ে যাবে যেহেতু আমি ইচ্ছা করে স্বাদ নিচ্ছি না। জান বাঁচাবার জন্য খাচ্ছি কিন্তু মজা লেগে যাচ্ছে, আমি করবো কি। চেষ্টা করা যেন মজা না লাগে। কিন্তু একটা অংশ আছে এখতিয়ারি। খেলাম। এই পরিমাণ খেলে আমার জান বেঁচে যায়। কিন্তু মজা লাগার কারণে এক লোকমা বেশি খেলাম, তো ঐ যে অতিরিক্ত এক লোকমা মজা লাগার কারণে খেয়েছে – ঐটার জন্য সে ধরা পড়বে। জান বাঁচা পর্যন্ত আল্লাহতাআলা জায়েয করেছেন। আর মজা লাগার কারণে ঐটা আবার হারাম। তো ঐ শেষ লোকমার কারণে শুকুরের গোস্ত খাওয়ার দোষে দোষী হবে। এর আগের লোকমা পর্যন্ত মাফ।
আল্লাহতাআলা এই উম্মতের প্রত্যেক ব্যাক্তিকে, মুসলমান তো বটেই, কাফির মুশরিক সবার প্রতি শুভকামী করে পাঠিয়েছেন। সবার খয়ের খা হতে হবে।
যুদ্ধের ময়দানে আসি, ওখানে আবার কঠোরতা অবলম্বন করতে হয়।
قَاتِلُواْ الَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ الْكُفَّارِ وَلِيَجِدُواْ فِيكُمْ غِلْظَةً
বলা হয়েছে তোমার মধ্যে যেন কঠোরতা থাকে
তো ঐটা ক্বিতালের ময়দানে, ক্বিতাল তরবারী চালাবার জন্যে। ঐ কঠোরতা একটা অবস্থা। ঐটা যদি সৃষ্টি না হয়, তাহলে সে এই কাজ করতে পারবে না। কিন্তু ঐ কঠোরতা খুব সীমিত একটা জায়গায়, একটা ঠেকায় পড়ে করা। এজন্য জিহাদের ভিতরে যেসব আহকাম আছে, ঐসব আহকামের অনেকগুলো খাস। বাইরে এগুলো প্রযোজ্য নয়।
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধের ময়দানে। তো উনার চেহারা লাল হয়ে যেত। আর গোঁফ বাইরে ছিল, সামনের অংশ তো ছোট থাকেই, এইটা অংশ লম্বা ছিল। আর চোখও লাল হয়ে যেত। তো যুদ্ধের ময়দান একটা রাগ প্রদর্শনের জায়গা আর ঐটা যুদ্ধের একটা অংশ।
মনে করা যাক, বদরের সময় বা উহুদের সময় মোকাবিলায় এসেছে মক্কার এক গোলাম। তাদের বংশের বা পরিচিত বংশের গোলাম। দেখে চিনতে পারলেন। যেমনি তাকে দেখে চিনতে পারলেন, তেমনি বললেন, এই গোলামের বাচ্চা গোলাম, আয়। এটাও জিহাদের অংশ। এর জন্য সওয়াবও পাবেন। আর এটাকে গাল হিসেবে ধরা হবে না। ঐ তরবারী যেরকম চালাতে হয়। আগের যমানায় শব্দ ছিল না, বর্তমান যমানায় শব্দ আবিষ্কার করেছে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’। ঐ যমানায় একজন গোলাম মালিক বা মালিকের সমপর্যায়ের কাউকে দেখলে, ওর এমনি সব হিম্মত উড়ে যেত। আর হিম্মতই থাকে না। তো তার হিম্মত নষ্ট করবার জন্যে বর্তমানে অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয় প্রোপাগান্ডা ইত্যাদি, তো ঐ যমানায়ও এটা ছিল। তো সেজন্য এটাও যুদ্ধের একটা অংশ। যদি ওখানে আখলাক দেখাতে যায় যে ‘হযরত তশরীফ আনুন’, তো ঐটা আখলাক দেখাবার জায়গা নয়। প্রত্যেকটার ঠিক মওকা-মাহল আছে। কিন্তু ঐ হুকুমগুলো সীমিত।
পুরুষের জন্য সিল্ক পড়া হারাম, মুক্বাতিলের জন্যে হানাফি মাযহাবে সম্বভত নয়, তবে অন্য কোন এক মাযহাবে হালাল। কালো খেযাব লাগানো শুদ্ধ নয়, কিন্তু মুক্বাতিলের জন্যে ঐটা আবার শুদ্ধ। কারণ তাকে জোয়ান দেখলে প্রতিপক্ষ ভয় পাবে। যুদ্ধের ময়দানে ক্বতল হয়, আর না-হক্ব কতলও হয়, কিন্তু ঐটার কিসাস হবে না।
আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলেকে তায়েফবাসী যুদ্ধের মধ্যে হত্যা করলেন। তীর লাগল আর পরবর্তীতে ইন্তেকাল করলেন। পরবর্তীতে আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর সামনে এলেন আর নিজেই বললেন যে আমিই ক্বতল করেছি। আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু কিসাসের ব্যাপারে কোন আলোচনা করলেনই না। এই কথাও বললেন না যে আমি কিসাস নিলাম না, মাফ করলাম। এটা বলারই দরকার নাই। যুদ্ধের ময়দানের ভিতরের ক্বতল, ঐটা কিসাসের হুকুমের মধ্যে আসে না। তো ঐটা সীমিত। ঐ সীমিত অবস্থায় তো তার প্রতি রাগের প্রদর্শনও হবে, কিন্তু আসলে স্থায়ীভাবে তার প্রতি খয়ের খা থাকবে।
বাপ ছেলেকে দুষ্টমি করার জন্যে মারছে। মারের সময় তো রাগই থাকবে। মারের সময় তো আর বলবে না যে ‘বাবা কাছে আয়, তোকে চুমু খাই’। তাহলে তো আর শাসন হবে না। বিপরীত জিনিস। রাগ হবে, রাগের প্রদর্শন হবে, কিন্তু ঐ রাগ খুবই সাময়িক। মূলত ঐ রাগ হয়েওছে মহব্বতের কারণে। ঐ সমান দুষ্টমী যদি পরের ছেলে করতো তাহলে রাগ হত না। যেহেতু ভালবাসে সেহেতু রাগ হচ্ছে। তারপর পিটানোর পরে ডেকে আবার বাপ আদরও করে। ঐটা শেষ। ঐটা খাস অবস্থায় ছিল।
তো আল্লাহতাআলা আমাদের দ্বীনের মেহনত দিয়েছেন। দ্বীন আমাদেরকে প্রত্যেক আমলের শুদ্ধতা যেমন শিখিয়েছে, তেমনি তার সীমানাও শিখিয়েছে।
আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা জঙ্গে জামালে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জামাতের কাছে কয়েদী হলেন। রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় যুদ্ধ হয়েছে, আবুবকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর যমানায় যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু মুসলমানদের ভিতরে হয়নি। যুদ্ধ হয়েছে, কয়েদীরা গোলাম, দাস-দাসী, তাদের সম্পদ গণীমত। আর এখানেও যুদ্ধ হয়েছে, এখানেও সম্পদ পেয়েছেন, এখানেও কয়েদী হয়েছেন, তো এরাও গোলাম। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথীরা বলল যে ‘যারা কয়েদী হয়েছে তারা গোলাম, বন্টন করে দাও আমরা নিব, তাদের মহিলারা আমাদের দাসী হবে’। কিন্তু এখানে ক্ষেত্র তো ভিন্ন, এরা মুসলমান। আর আগের যুদ্ধগুলোতে ওরা ছিল কাফির। কিন্তু এই ব্যাপারে পরিষ্কার কোন আয়াত, হাদীস কিছুই নাই। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা আছে
أكض كمال
বিচারের ব্যাপারে আল্লাহতাআলা উনাকে বড় সুক্ষ্ম বুদ্ধি দিয়েছেন। উনি বেশি তফসীর-দালায়েলে গেলেন না। শুধু বললেন ‘আয়শাকে কে তার দাসী বানিয়ে নিবে’। ঐ এক প্রশ্ন সব মাসআলা হাল করে দিল। তো আল্লাহতাআলা এমন অবস্থা দিয়েছেন আর সেই অবস্থার সাথে সাথে এমন এক কাযীকে দিয়েছেন যে ভবিষ্যতের জন্য, কিয়ামত পর্যন্ত মাসআলা হাল করে দিয়েছেন।
আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা আছেন বলে যুদ্ধ করবো না, তা নয়। যত বড় সম্মানের অধিকারী হোক না কেন, আমি যদি মনে করি এটা অশুদ্ধ তো অশুদ্ধই। আমি যার শাগরেদ, উনি ফতোয়া দিয়েছেন। কিন্তু উনার ফতোয়া আমার দৃষ্টিতে শুদ্ধ নয়। তো উনার এখতেরামের কারণে আমি আমার মত পরিবর্তন করলাম, এটা তোষামদের মাসআলার মধ্যে পড়ে।
আবু হানিফা রহঃ এর নিজস্ব ফতোয়া হচ্ছে এক দিনের কমে এতেকাফ হয় না, আর ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর ফতোয়া হচ্ছে অল্প সময়ও এতেকাফ হয়। তো এমন ‘বেয়াদব’ শাগরেদ যে ওস্তাদের সম্মানই চিনল না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে যে তাঁরাই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন যে ওস্তাদের শাগরেদ কেমন করে হতে হয়। শুদ্ধ যেটা আমার মতও ঐটাই। আমি যদি একটাকে শুদ্ধ মনে করি তাহলে আমি ঐটার উপরেই আমল করবো।
আপবীতিতে আছে। কার কথা ভুলে গেলাম। সম্ভবত ইয়াহইয়া রহঃ বা ঐ পর্যায়ের আলিম, আল্লাহওয়ালা। ঈদের দিন। বাপের ঘর আর ছেলের ঘর পাশাপাশি। চাঁদ সরাসরি দেখা যায়নি। এজন্য ঈদ হবে কিনা – বাপ ও ছেলের মধ্যে ইখতিলাফ হয়ে গেছে। কেউ জিজ্ঞেস করতে এসেছে যে আজকে ঈদ কিনা। বাপ বললেন যে আমার রায় অনুযায়ী আজকে ঈদ, ওর রায় অনুয়ায়ী আজকে নয়। পাশাপাশি ঘর। বাপ ঈদ করছেন, ছেলে ঈদ করছেন না। এখন তোমার এখতিয়ার যেটা তুমি করতে চাও। আর এটার জন্য বাপও মনে করছেন না যে ‘কেমন বেয়াদব, আমার ফতোয়ার উপর সে ফতোয়া দেয়’। আর ছেলেও মনে করছেন না যে বাপ যখন বলে ফেলেছেন, ফতোয়া ফতোয়ার জায়গায় থাকুক, আমি এখন ছেলেগিরি করি। উনার দৃষ্টিতে এই খবরে ঈদ হয় না, অতএব মানি না। আব্বার দৃষ্টিতে হয় কিন্তু আমি মানি না।
তো আল্লাহতাআলা দ্বীনের মেহনত দিয়েছেন। এই মেহনতের কারণে গীবত করা হয় বিদাতিদের। বিদাতিদের আড়ালে তার আলোচনা করা হয়, কিন্তু ওখানেও সীমা আছে। এক তো হল যে ওর দোষের আলোচনা যদিও আমি করছি, কিন্তু এটার জন্য মনে যেন একটা ব্যাথা থাকে। এটা কোন মজার জিনিস নয়। সেই বিদাতি পীর টাকা মারে, কিসব কেলেংকারী করে বা অনেক খারাপ জিনিস। বাধ্য হয়ে মানুষকে সাবধান করে দেওয়ার জন্য তার অনেকগুলো ব্যাক্তিগত দোষের আলোচনাও প্রয়োজন হয়। ধরা যাক আমার ভাই। সে তার জোয়ান মেয়েকে নিয়ে পীরের কাছে চলে যায়। বললাম,
তোমার এই পীর সাহেবের অমুক ঘটনা জান?
কি ঘটনা?
কি ঘটনা একটু ভাল করে জেনে নিও।
চাবি একটা দিয়ে দিল। তারপর সে খোঁজ খবর করে দেখল যে ঘটনাটা কি হয়েছিল। এই কথা না বললে তো সাবধান করা যাচ্ছে না। এর আগেও সাধাসিধাভাবে বলেছি কোন এক মাসআলার মধ্যে ফেলে দিয়ে। কিন্তু ঐ মাসআলা ভাইয়ের মাথায় ঢুকেনি। তো শেষ পর্যন্ত ওকে বলতে হল যে অমুকের সাথে তোমার পীর এই এই করেছে। তো যার সাথে সে এগুলো করেছে সে তোমার মেয়ের চেয়ে কম সুন্দর। তো তোমার মেয়েও ওখান থেকে বাঁচবে না। বলতে হল। কিন্তু বলছে বা ওর দোষের যে আলোচনা করছে, এই দোষের আলোচনা করার সময় ওর মনে যেন ব্যাথা থাকে। এটা কোন আনন্দের বিষয় না। ঠেকায় পড়ে করতে হচ্ছে। আর যেখানে ঠেকা নেই, ওখানে যদি করি তাহলে ঐ অতিরিক্ত শুকুরের গোস্ত খাওয়ার মত হবে। জান বাঁচা পর্যন্ত তো হালাল ছিল, কিন্তু অতিরিক্ত যেটা মজা করে খেলাম, ঐটা হারাম।
তো মানুষকে সাবধান করে দেওয়ার জন্যে যে পরিমাণ দোষের চর্চা করা দরকার, ঐ পরিমাণ চর্চা করলাম মানুষকে সাবধান করে দেওয়ার জন্যে – ঐটা পর্যন্ত হালাল। কিন্তু তারপরে গল্প হিসেবে করলাম, ঐটা হারাম। আর ঐ জায়গায় এসে গীবতের গুনাহের মধ্যে পড়ে যাবে।
তো আল্লাহতাআলা আমাদের দ্বীন দিয়েছেন, কিন্তু দ্বীনের সীমানা বুঝার চেষ্টা করি। সীমানা যেন লঙ্ঘন না হয়।
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
তাদের অনুসরণ করবে না যারা গাফেলতের মধ্যে পড়ে গেছে আর মনের অনুসরণ করে আর তার সব কাজ সীমা লঙ্ঘন করে
যার যে জায়গায় হক্ব, সেই হক্বগুলো রক্ষা করা। তো বাপের যেরকম হক্ব আছে, চাচারও হক্ব আছে চাচা হিসেবে। চাচাত ভাইয়েরও হক্ব আছে চাচাত ভাই হিসেবে। আর এই সিলসিলা চলতে থাকে। পীর হিসেবে পীরের হক্ব আছে, পীরজাদারও হক্ব আছে। হতে পারে ঐ পীরজাদা একজন ফাসেক। ফাসেক হওয়ার কারণে আমি তার কাছে মুরীদ হয়ে যাব না, তার কথামত চলবো না, কিন্তু আমার পীরের ছেলে হিসেবে তার যে হক্ব আছে, ঐটা বাতিলও হবে না। ঐটা ঐটার জায়গায় রয়ে যাবে। বাপ মদ খায়, তো বাপ বলে মদ খাওয়া তো সওয়াবের হয়ে যাবে – না, তাও নয়। আর মদ খায় বলে উনি আমার বাপই নয়, তাও নয়। বাপ বাপের জায়গায় রয়েছে, আর মদ খাওয়া মদ খাওয়ার জায়গায় রয়েছে।
সব যামানায় আল্লাহওয়ালারা আল্লাহওয়ালাদের নেসবতেরও সম্পর্ক রাখেন। মুজাদ্দিদ আলফে সানী রহঃ এর কথা আজকেও হচ্ছিল যে উনার ওয়ারিসদের ওসিয়্যত করে গেছেন যে আহলে বাইতের ইয়াদ করবে। মালফুজাতের মধ্যে এই ব্যাপারে বেশ কিছু কথা আছে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেসবতের কারণে। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেসবতে পরবর্তী যারা আছে, এরা সবাই যে মুত্তাকী, তা মোটেও নয়। অনেক ফাসিক, ফাযির আছে। তো ফাসিক ঠিকই ফাসিক, আর ফাযির ঠিকই ফাযির, কিন্তু যদি ঐ নেসবত থাকে তাহলে ঐ নেসবত এটার জন্য বাতিল হয় না। সেটারও সম্মান আছে। ঐ চাচার সম্মান যেরকম, শশুরের সম্মান যেরকম। আমার শশুর চোর, চুরি করে ঠিকই। চুরি করে বলে ওর জিনিস খাবও না, কিন্তু শশুর হিসেবে মানব না তাও নয়। এই দুই জিনিস রক্ষা করা অনেক সময় খুব সহজ নয়। এই সীমানাগুলো বুঝে চলার জন্য অনেক সুক্ষ্ম বুদ্ধির প্রয়োজন হয়, হিকমতের প্রয়োজন হয়। কিন্তু যে ফিকিরবন্দ হয়, আল্লাহতাআলা তাকে ঐটা দান করেন। চেষ্টা করলে সে ঐ মাঝখানের পথ পেয়ে যাবে।
দ্বীনের এই মেহনত তবলীগের কাজ পেয়েছি মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর মাধ্যমে। ইলিয়াস রহঃ এর যে নেসবত, এই নেসবতেরও আমাদের উপর হক্ব আছে। আর এই হক্বগুলো যে শুধু একটা ওলীআল্লাহদের কাছে একটা প্রচলন, তাই নয়। এটা একটা মুস্তাকীল আর এর সমর্থনে দলীল আছে।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ
দুরুদ শরীফ এভাবেই পড়তে হয়। ঐ آلِ مُحَمَّدٍ এর মধ্যে অনেকেই এসে যায়। সে যমানার, পরবর্তীকালের সব এসে যায়। যাদের কাছে আমরা দ্বীন পেয়েছি তাদের হক্বও আছে। গাঙ্গুহী রহঃ এর সম্ভবত নাতনী এসেছিলেন মাওলানা ইলিয়াস রহঃ এর কাছে। পর্দার আড়ালে কথা বলছেন। কথার মধ্যে বললেন ‘আমি আপনার পরিবারের, গুষ্ঠির গোলাম। অথচ নাতনী। ছেলেও না, মেয়েও না, নাতনী। আর এগুলো যে বলতেন, যেহেতু উনি এসেছেন; তো কৃত্রিমভাবে কিছু একটা বললাম, তা নয়। দ্বীল থেকে, আচরণ থেকে বুঝা যায় যে মন থেকেই বলছেন। সম্মান খাতির করলেন।
তো আবার ঐ কথা যে ধরা যাক পীরের নাতিকে পেলাম। পীরের নাতি কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনেক ভুল কাজ করে। পীরের নাতি হিসেবে তার ভুল কাজের সমর্থন করবো, তাও নয়। আর ভুল করার কারণে তার মান মর্যাদা রক্ষা করবো না, তাও নয়। সবটা তার নিজ জায়গায়। আর এই নিজ জায়গায় প্রত্যেক জিনিসেরই মাপ শুদ্ধ রাখা। এটাই পুরা দুনিয়ার সৌন্দর্যের শর্ত, সব আমলের সৌন্দর্যের শর্ত।
উঁচু নাক আমাদের দেশে খুব সৌন্দর্যের জিনিস মনে করে। বোঁচা নাকের তুলনায়। এখন উঁচু নাক এমন হল যে এক হাত লম্বা। তো সুন্দরী হবে নাকি। একটা নির্দিষ্ট মাপের মধ্যে হতে হবে। হালুয়াতে ভাল ঘি দরকার, কিন্তু ঘি যা দরকার তার চেয়ে যদি অতিরিক্ত হয়ে যায় তো ঐ হালুয়া খাওয়াই যাবে না। মেহমান বেশি হয়েছে, পোলাও কম, ঘি ঢেলে দেয়। তখন আর খাওয়া যায় না। দুই লোকমা খেয়েই বিরক্ত লাগে।
তো ভাল জিনিস যত ভালই হোক, তার শুদ্ধ মাপ আছে। মাপ লঙ্ঘন করলে ঐটা আর টিকবে না।
وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا
প্রত্যেক জিনিসকে আল্লাহতাআলা তার ঠিক মাপমত মেপে দিয়েছেন
মানুষের শরীরে ভিতরে বিভিন্ন ধরনের জিনিসের এত সুক্ষ্ম মাপ আছে যে একটু এদিক সেদিক হয়ে গেলে শরীর খারাপ। কখনো কখনো সেও ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার নানান ধরনের টেস্ট করায়। টেস্টে যে আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে, ওগুলো ইলেকট্রনিক সুক্ষ্মতার সাথে করে। কিন্তু সেই যন্ত্রপাতিগুলো অনেকগুলো ইমব্যালান্স ধরতে পারে না। অল্পটুকো ইমব্যালান্স কিছু একটা হয়েছে যে ঐ ইলেকট্রনিক যন্ত্রে ধরাও পড়ে না। ওর শরীর কিন্তু বুঝে ফেলে। কেমন কেমন লাগছে। আর এই সুক্ষ্ম মাপের উপর চলা। একটু বেশি হয়ে যায় তো বেঠিক, একটু কম হয়ে যায় তো তাও বেঠিক।
তো দ্বীনও আমাদের কাছ থেকে এই সুক্ষ্ম মাপ চায়। বাকী হল যে এত কঠিন মাপ ইলেকট্রনিক যন্ত্রই বুঝতে পারে না, আমি কেমন করে বুঝবো। আমার বুঝার দরকার নেই। আমি আমার মাপ ঠিক করি নাকি। শুদ্ধভাবে আমি যদি চলবার চেষ্টা করি আর যা করণীয়, তা করতে থাকি, তাহলে আমার অজান্তেই আল্লাহতাআলা সব মাপগুলোকে ঠিক রাখবেন। দ্বীনের ক্ষেত্রেও আমি যদি আল্লাহকে ভয় করে চলি, দ্বীনের কাজ করছি আর দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে অনেক লোকের ভুলের আলোচনাও করতে হচ্ছে, খারাপের চর্চাও করতে হচ্ছে, কিন্তু এর সবগুলোই তাক্বওয়ার মেজাজের উপর করার চেষ্টা করছি, এটা আল্লাহর ওয়াস্তে করছি, এটা কোন ফুর্তির জন্য নয়। কিন্তু মানুষের খারাপের আলোচনা করতে বেশ মজা লাগে, মানুষ যেরকম গল্প করে, তো ঐ মজা লাগার জন্য নয়। দ্বীনি কাজ হিসেবে করছি। আমার মধ্যে যদি ঐ অনুভুতি থাকে, আল্লাহতাআলা ইনশাআল্লাহ আমাদের হেফাজত করবেন। আল্লাহ তৌফিক নসীব করুন। দ্বীনের সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে চাওয়া যেন কাজ আমাদের সুন্দর হয়।
اللَّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
ইবাদতের সব কাজ যেন তাআব্বুদান হয়। প্রথমত ঐটা যেন ইবাদত হিসেবে হয়। এমনি ঐটা করলাম – তা নয়। আল্লাহর ধ্যানের সাথে, সুন্নাতের খেয়াল রেখে তবেই ঐতা তাআব্দুয়ান হবে। আল্লাহর ওয়াস্তে করছি, আল্লাহর হুকুম হিসেবে করছি।
إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا
আল্লাহর আদেশ হিসেবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করে। তো এই দুই জিনিস যদি খেয়ালের মধ্যে থাকে তাহলে তার শর্তগুলো চেষ্টা করবো বজায় রাখার। যদি আমার মনের ফুর্তির জন্য করি, তাহলে মন যেভাবে চাইবে সেইভাবে করবো। আর যদি আল্লাহর ওয়াস্তে করি, তাহলে আল্লাহ যেভাবে দাবি করেন, সেইভাবে করার চেষ্টা করবো। আর যে বুঝার চেষ্টা করে, আল্লাহতাআলা তাকে বুঝিয়ে দেন। আল্লাহতাআলা আমাদের বুঝার তৌফিকে নসীব করুন।
سُبْحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهَ
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْك
سُبْحَانَ  رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُون وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينََ



Wednesday, July 6, 2016

জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা উত্তম জিহাদ!

জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা উত্তম জিহাদ!

আবু সাঈদ আল-খুদরী(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ জালেম শাসকের সামনে সত্য কথা বলা অধিক উত্তম জিহাদ।
[তিরমিযী ২১৭৪, সুনান ইবন মাজাহ ৪০১১]
.
আবু সাঈদ(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন নিজেকে অপমানিত না করে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ নিজেকে কিভাবে অপমানিত করতে পারে? তিনি বলেনঃ সে কোন বিষয়ে আল্লাহর বিধান অবহিত থাকা সত্ত্বেও তার পরিপন্থী কিছু হতে দেখেও সে সম্পর্কে কিছুই বললো না। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ অমুক অমুক ব্যাপারে কথা বলতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছিলো? সে বলবে, মানুষের ভয়। তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমাকে তো তোমার ভয় করা উচিত ছিলো।
[মুসনাদ আহমাদ ১১০৪৮, ১১৩০২, ১১৪৫৫, সুনান ইবন মাজাহ ৪০০৮]
.
আয়িশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা সৎকাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজে বাধা দিবে এমন সময় আসার পূর্বে যখন তোমরা দোয়া করবে কিন্তু তা কবুল হবে না।
[মুসনাদ আহমাদ ২৪৭২৭, সুনান ইবন মাজাহ ৪০০৪]
.
কায়েস ইবনে আবূ হাযেম(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু বাকর(রা) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর বলেন, হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তিলাওয়াত করো: ‘‘হে ঈমানদারগণ! আত্মসংশোধন করাই তোমাদের কর্তব্য, তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও, তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’’ (সূরা মায়িদাহ ১০৫)। আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মন্দ কাজ হতে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠান।
[তিরমিযী ২১৬৮, সুনান ইবন মাজাহ ৪০০৫]
.
আবু সাঈদ আল-খুদরী(রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মারওয়ান[উমাইয়া বংশীয় এক খলিফা] ঈদের দিন ঈদের মাঠে মিম্বার বের (স্থাপন) করলো এবং ঈদের নামাযের পূর্বে খুতবা দিলো।
এক ব্যক্তি বললো, হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাতের বিপরীত করেছো, তুমি আজকের এই দিনে মিম্বার বের (স্থাপন) করেছো, অথচ এই দিন তা বের করা (ঈদের মাঠে মিম্বার নেয়া) হতো না। উপরন্তু তুমি নামাযের আগে খুতবা শুরু করেছো, অথচ নামাযের পূর্বে খুতবা দেয়া হতো না। আবু সাঈদ(রা) বলেন, এই ব্যক্তি তার দায়িত্ব পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের মধ্যে কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে এবং তার দৈহিক শক্তি দিয়ে প্রতিহত করার সামর্থ্য থাকলে সে যেন তা সেভাবেই প্রতিহত করে। তার সেই সামর্থ্য না থাকলে সে যেন মুখের কথা দ্বারা তা প্রতিহত করে। তার সেই সামর্থ্যও না থাকলে সে যেন মনে মনে তাকে ঘৃণা করে। তা হলো সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।
[সহীহ বুখারী ৯৫৬, সহীহ মুসলিম ৪৯, তিরমিযী ২১৭২, নাসায়ী ৫০০৮, ৫০০৯, আবু দাউদ ১১৪০, ৪৩৪০, মুসনাদ আহমাদ ১০৬৮৯, ১০৭৬৬, ১১০৬৮, ১১১০০, ১১১২২, ১১৪৬৬, সুনান ইবন মাজাহ ৪০১৩]
.
আবু সাঈদ আল-খুদরী(রা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ ﷺ ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং তাঁর ভাষণে বলেনঃ সাবধান! মানুষের ভয় যেন কোন ব্যক্তিকে সজ্ঞানে সত্য কথা বলতে বিরত না রাখে। রাবী বলেন (এ হাদীস বর্ণনাকালে) আবু সাঈদ(রা) কেঁদে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ! আমরা বহু কিছু লক্ষ্য করেছি কিন্তু বলতে ভয় পাচ্ছি।
[তিরমিযী ২১৯১, সুনান ইবন মাজাহ ৪০০৭]

রুক্ষ ও কাটাযুক্ত পথ (unknown :31)

রুক্ষ ও কাটাযুক্ত পথ

দরবারির নামের শেষে দেওবন্দি থাক আর মাদানি থাক। দরবারি শেষ পর্যন্ত দরবারি। চাটার দল বুট চাটে, এটাই তাদের পরিচয়। আর যে আল্লাহ্‌কে ছেড়ে কোন দলের ভিত্তিতে বন্ধুত্ব বা শত্রুত্ব নির্ধারণ করে, নিশ্চয় সে সিরাতুল মুস্তাক্বিম থেকে বিচ্যুত।

 লিখেছেন asif adnan.

অহংকার ও আদজাতী -(শিক্ষনীয় পোষ্ট)

অহংকার ও আদজাতী -(শিক্ষনীয় পোষ্ট)

.
২। “যারা ছিল আদ, তারা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করল এবং বলল, আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর কে?” [সূরা ফুসসিলাত, ১৫]
.
আর আজ?
.
“আপনি তাদের কোন অস্তিত্ব দেখতে পান কি?” [সূরা আল-হাক্বা, ৮ ]
.
৩। “আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে (ইবলিস) কিসে সিজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট।…” [আল-আরাফ, ১২]
.
৪। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যার মনে একটি অণু পরিমাণ ওজনেরও অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ”  [আল-আলবানীর মতে সাহিহ]
.
৫।রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ইযযত সম্মান আল্লাহ তায়ালার ভূষণ এবং অহংকার তাঁর চাদর। (আল্লাহ তায়ালা বলেন) যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় অবতীর্ণ হবে আমি তাকে অবশ্যই শাস্তি দেবো। [সাহিহ মুসলিম,৬৪৪১]
.
৬। “অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। [সূরা লুকমান ১৮]
.
.
প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া ইনহেরেন্টলি নারসিসিস্টিক। মানুষ এখানে তার ভারচুয়াল প্রতিবিম্ব তৈরি করে, স্বেচ্ছায় কিংবা অজান্তে। তারপর নিজেই নিজসৃস্ট প্রতিবিম্বের মোহে সম্মোহিত হয়ে পরে। অহংকার এমন এক ব্যাধি যা ‘আলেম কিংবা জাহেল, আবেদ কিংবা ফাসেক্ব, মুসলিম কিংবা মুসলিমাহ কাউকেই ছাড় দেয় না। প্রকৃত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যই অহংকার বৈধ না – ইবলিসের মতো ‘আবেদ, আলেমের কাজে তার ইবাদাহ আর ‘ইলম আসে নি। ভারচুয়াল প্রতিবিম্বের কথা বাদই দিলাম। প্রতিটি কাজের, প্রতিটি কথার যাররা-যাররা হিসেবে দিতে হবে। যেভাবে বাস্তব জীবনের কথা আর কাজের হিসেব দিতে হবে, তেমনিভাবে হিসেব দিতে হবে ফেইসবুকের প্রতিটা শব্দ,প্রতিটা অক্ষর, প্রতিটা ক্লিকের জন্যও।  আল্লাহ-র কাছে আশ্রয় চাই। আমাদের চিন্তা করা উচিত কিভাবে আমরা এখানে সময় ব্যয় করছি। তাই যা ইচ্ছে করুন, যা ইচ্ছে বলুন, কিন্তু স্মরণ রাখুনঃ
.
যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে-একটি মাত্র ফুৎকার
এবং পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে ও চুর্ণ-বিচুর্ণ করে দেয়া হবে,
সেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে।
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।
এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন কিছু গোপন থাকবে না। [শুরা আল হাক্বা ১৩-১৮ ]
.
“…তারা বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট বড় কোন কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি যুলুম করবেন না।” [আল-কাহফ, ৪৯]
.
আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহ আর-রাহমান আর-রাহীমের কাছে আশ্রয় চাই।
.
মানুষ আজকাল নাসীহাহ সহজভাবে নিতে পারে না। কে নাসীহাহ করছে, কেন করছে, কি উদ্দেশ্য, কি উপলক্ষ – বিভিন্ন বিশ্লেষণের নিচে মূল বক্তব্য চাপা পড়ে যায়। একারনে শুধু নিচের একটি আয়াত নাসীহাহ হিসেবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য, এতো কিছুর অবতারণা।     
.
পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।”
[সূরা লুকমান ১৯]
 লিখেছেন:-asif aadnan

“Beauty is in the eye of the beholder.

“Beauty is in the eye of the beholder.”

সৌন্দর্য দৃস্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল– বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ। সবার কাছে সুন্দরের সংজ্ঞা এক না। মডার্ন, পোষ্ট-মডার্ন, মেটা মডার্ন ধারার আর্টের শৈল্পিক মূল্য কতটুকু? কোন কোন বৈশিস্ট থাকলে একটি চিত্রকর্ম বা একটি গান শিল্প বলে বিবেচিত হবে? সৌন্দর্য কিংবা শ্রুতিমধুরতা কি শিল্প বলে বিবেচিত হবার আবশ্যিক পূর্বশর্ত নাকি?
এধরণের আলোচনায় অবধারিত ভাবেই শোনা যায় – “Beauty is in the eye of the beholder.”
.
.
তবে সৌন্দর্যের পরিবর্তনশীল সংজ্ঞা, কিংবা ব্যাক্তিভেদে যে সুন্দর-অসুন্দরের ধারণার পার্থক্য হতে পারে, এটা শুধুমাত্র একটা আধুনিক কনসেপ্ট –কিংবা আধুনিকতার অবক্ষয়, এমনটা বলা যাবে না। এধরণের ধারণা আগেও মানুষের মধ্যে ছিল, তবে হয়তো এতোটা ব্যাপকভাবে না। বিখ্যাত আরব কবি আবু নুওয়াস এক মজার ঘটনা বর্ণনা করেছেনঃ
.
একবার এক তাঁতী আমাকে দাওয়াত করলো। তার বাড়িতে আমাকে আপ্যায়ন করার জন্য অত্যন্ত বিনীত আবদার করলো, আর তাকে ‘হ্যাঁ” না বলা পর্যন্ত আমার পেছনে লেগেই থাকলো। শেষমেশ আমি রাজি হয়ে তার সাথে বাড়িতে গেলাম। দেখলাম, তার বাড়িটি ভালোই। দেখলাম, সে মোটামুটি ভালোই আয়োজন করেছে, অন্য তাঁতীদেরও জড়ো করেছে। খাওয়াদাওয়া শেষ হবার পর সে আমাকে বলল-
.
জনাব! আমার একান্ত কামনা, আপনি আমার দাসী সম্পর্কে কিছু কবিতা বলবেন। সে তার এক দাসীর প্রতি প্রবলভাবে আসক্ত ছিল। আমি তাকে বললাম – আমার সামনে নিয়ে এস, আমি তাকে দেখে তার গঠনাকৃতি ও তার রূপ সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা বলব। সে তাকে পর্দার বাইরে নিয়ে এলে আমি দেখলাম আল্লাহ্‌র এক কুশ্রী ও বিদঘুটে সৃষ্টি, কৃষ্ণ, চুলে সাদা-কালোর মিশ্রনে বদ-সুরত, যার মুখের লালা বুকে গড়িয়ে পড়ছিল।
.
আমি তাঁতিকে জিজ্ঞেস করলাম, তার নাম কি? সে বলল, তাসনীম। তখন আমি কবিতা রচনা করলাম-
.
তাসনীমের প্রেম আমার রাতকে বিনিদ্র করে রেখেছে, সে এক কিশোরী বাঁদি সৌন্দর্যে পেঁচার সেরা; তার মুখের ঘ্রাণ যেন ঝাঁঝাল সিরকা কিংবা রসুনের এক গাঁট…
.
কবিতা শুনে তাঁতি আনন্দে আত্বহারা হয়ে নাচতো লাগল, আর সারা দিন হৈ হৈ করে আনন্দ প্রকাশ করলো… [আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দশম খন্ড, পৃ ৩৯৮]
.
.
আবু নূওয়াসের কাছে যে আল্লাহ্‌র এক কুশ্রী সৃষ্টি [বর্ণনা পড়ে, আমার কাছেও!], তাঁতির কাছে সে রোমের রাজকুমারীর চাইতেও সুন্দর। একই সাথে এটাও লক্ষ্যনীয়, আবু নুওয়াসের এই কবিতা – যেটাকে কোন ভাবেই প্রীতিকর বলা যায় না- সেটাই তাঁতির আনন্দে আত্বহারা হবার উপলক্ষ। আপনি চারপাশে তাকালেই দেখবেন শুধু সৌন্দর্য না, এক অর্থে সমস্ত বাস্তবতাই দৃস্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল।
.
.
কোন পরিস্থতিতে আপনার মনের অবস্থা কি রকম, তা অনেকাংশেই আপনার দৃস্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। জাহিলিয়্যাতে কন্যা সন্তানের জন্মকে মানুষ চরম অপমানজনক মনে করতো। অথচ কিন্তু ইসলামে এসে এ মানুষগুলোই একে অমূল্য নিয়ামাহ মনে করছে।
.
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন – দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার স্বরূপ আর কাফিরের জন্য জান্নাত স্বরূপ। [সাহিহ মুসলিম]
.
দুনিয়া তো বদলাচ্ছে না। দুনিয়া তার জায়গায় অপরিবর্তিতই আছে। বদলাচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি। আর এই দৃস্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণেই এক জনের কাছে যে দুনিয়া কারাগার, আরেকজনের কাছে সেটা আনন্দ উদ্যান। অন্য এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ “
.
“তুমি দুনিয়াতে বসবাস কর এমন অবস্থায় যেন তুমি একজন আগন্তুক ব্যক্তি অথবা পথযাত্রী মুসাফির” [আল বুখারি]
.
যে ব্যক্তিকে নিজের হৃদয়কে সম্পূর্ণভাবে আখিরাতের সাথে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয় নি, তার পক্ষে কি সম্ভব দুনিয়াতে একজন মুসাফিরের মত থাকা? যার কাছে জীবনের অর্থ হল, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ভালো রেসাল্ট, ভালো ডিগ্রি, ভালো চাকরি, সুন্দরী স্ত্রী, সামাজিক সম্মান, সম্পদ, প্রভাব প্রতিপত্তি, ইত্যাদির সম্মিলিত যোগফল – তার জন্য দুনিয়া অনন্তকালের যাত্রাপথে একটা স্টপেজ মাত্র না। এটাই তার কাছে অনন্ত কালের সমতুল্য। যা ইচ্ছে আছে, যা আকাঙ্ক্ষা আছে, যা সাধ আছে সব এখানেই মিটিয়ে যেতে হবে।  শব্দ-গন্ধ-কাঠামো-রঙ-আকৃতির যে বাস্তবতা আমার সামনে আছে, কামনা-বাসনার হাতছানি আছে, সেটা আমি ছেড়ে দেবো, এমন এক জীবনের জন্য যা আমি কল্পনা করতে পারি না? এমন একজনের জন্য যাকে আমি দেখছি না? শুনছি না? অনুভব করতে পারছি না? অথচ আমার চারপাশের এই বাস্তবতাকে আমি অনুভব করতে পারছি। কিভাবে একজন বিলিয়েনেয়ার বিযনেস টাইকুন, তার সব সম্পদ ত্যাগ করে পাহাড়ে-পর্বতে আগুনের বৃস্টির নিচে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেন? আর মৃত্যুকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন? কিসের শক্তিতে?
.
.
বিশ্বাসের শক্তিতে। ঈমানের শক্তিতে, যা মানুষের চিন্তার কাঠামো, বাস্তবতাকে দেখার ধাচকেই পালটে দেয়।  নিঃসন্দেহে এটা একমাত্র আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জালের পক্ষ থেকে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের হৃদয়গুলোকে প্রশান্ত করে দেন। এজন্যই যা পুরো বিশ্বের কাছে জীবন নষ্ট করা, যা সমগ্র বিশ্বের কাছে আত্বঘাতি উন্মাদনা, কিছু মানুষের জন্য সেটাই – পরম পাওয়া – শাহাদাহ।
.
দৃস্টিভঙ্গির পার্থক্য বাস্তবতাকে মানুষ কিভাবে অনুভব করে, তা কিভাবে বদলে দিতে পারে –সম্ভবত তাঁর সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ আছে  সূরা আহযাবে। যখন ক্বুরাইশ, বানু গাতাফান, ইহুদী গোত্রদের সম্মিলিত বাহিনী মুসলিমদের ঘিরে ফেললো, তখন সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দু রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা গেল-
.
একদল বললো- আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়। [আল আহযাব, ১২]
.
আরেকদল বললো – আল্লাহ ও তাঁর রসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্য বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্নসমর্পণই বৃদ্ধি পেল। [আল আহযাব, ২২]
.
প্রথম দল সম্পর্কে আল্লাহ্‌ ‘আযযা ওয়া জালা আমদের জানিয়ে দিয়েছেন। তারা ছিল মুনাফিক ও তারা, যাদের অন্তরে ছিল রোগ। আর দ্বিতীয় দলকে আল্লাহ ‘আযযা ওয়া জাল বলেছেন মু’মিন। এখানে এই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য নিছক, চিন্তার কাঠামোগত পার্থক্য না, বরং ইমান ও কুফর, ইমান ও নিফাকের মধ্যে পার্থক্য।
.
.
.
শুধুমাত্র ২০১৫ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর উপর অ্যামেরিকা বোমা ফেলেছে ২৩,১৪৪ টি। [http://tinyurl.com/hr35n2o]। এটা সে অ্যামেরিকা, গত দুই হাজার বছরে যাদের সেনাবাহিনীর মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনী পৃথিবী দেখেনি। এটা সেই অ্যামেরিকা যাদের সামরিক বাজেট বাকি বিশ্বের সম্মিলিত সামরিক বাজেটের প্রায় সমান। এটা সেই অ্যামেরিকা যাদের পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে ৪৮,২৬৯ কিলোমিটারর পরিধির মধ্যে অবস্থিত সব বেসামরিক বিল্ডিং ধ্বংস করে দেয়া যায়। পৃথিবীর পরিধি হল ৪০,০০৮ কিলোমিটার। সেই অ্যামেরিকা যারা ইরাক-আফগানিস্তানে হত্যা করেছে লাখো মুসলিমকে। সেই অ্যামেরিকা যারা ক্রমাগত ইস্রাইলকে সাহায্য করছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে। সেই অ্যামেরিকা যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড শুরু করেছে।
.
.
খন্দকের যুদ্ধের সেদিনে মাদীনাতে দুটি দল দেখা গিয়েছিল। সে বিভক্তি আজো আছে। একদল অ্যামেরিকার এই চোখধাধানো, ক্ষমতা দেখলো, আর তারপর তারা এ উপসংহারে আসলোঃ এই অ্যামেরিকার সাথে পারা সম্ভব না। এদের সাথে লাগতে যেয়ো না, ধ্বংস হয়ে যাবে। এসো তাদের সাথে মৈত্রী করি। তাদের দেয়া গণতন্ত্র অনুসরণ করি, তাদের ধ্যানধারণা, মতাদর্শ গ্রহণ করি। তাদের মতন চিন্তা করি, তাদের মতো পোষাক পরি, তাদের মতো ভাবতে শিখি। তাদের পছন্দমতো ইসলামকে বদলে নেই। তাদের কাছে তেল বিক্রি করি, তাদের গোলামি করি। আর গোলামি করতে করতে ধীরে ধীরে জ্ঞানবিজ্ঞান, অর্থ-সম্পদের দিক দিয়ে শক্তিশালী হবার চেষ্টা করি। তারপর দেখা যাবে। কেউ কেউ এক কাঠি এগিয়ে বলে বসলো রাসূলুল্লাহ ﷺ আজ বেঁচে থাকলে অ্যামেরিকাকে (ন্যাটোকে) সমর্থন করতেন! এটাই হল হিকমাহ !
.
.
আর আরেকদল উত্তর খোজার জন্য কুরআনের কাছে গেল, যা সাত আসমানের উপর থেকে সমগ্র জগতসমূহের অধিপতি, আল আওয়াল ওয়াল আখির আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর রাসূল, আল নাবীউল মালহামা, আল দাহুক আল-ক্বাত্তাল মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ আল আরাবীর ﷺ উপর নাযিল করেছেন। আর তারা কুর’আনে লেখা দেখতে পেলোঃ
.
.
“আল্লাহ কি তাঁর বান্দার পক্ষে যথেষ্ট নন?” [আয যুমার, ৩৬]
.
“হে নবী, আপনার জন্য এবং যেসব মুসলমান আপনার সাথে রয়েছে তাদের সবার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট।“ [আল- আনফাল, ৬৪]
.
“আর বিজয় শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে…” [আলে ইমরান, ১২৬]
.
“…কতো সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্য্যশীল আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। [সূরা বাক্বারাহ, ২৪৯]
.
হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। [সূরা মুহাম্মাদ, ৭]
.
“…আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে।“ [আল-আম্বিয়া, ১০৫]
.
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি অতঃপর দেখেনি যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন এবং কাফিরদের অবস্থা এরূপই হবে। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু এবং কাফেরদের কোন হিতৈষী বন্ধু নাই। [সূরা মুহাম্মাদ, ১০,১১]
.
.
তারা কুর’আনে দেখতে পেলোঃ
.
.
“…আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।“ [আল হাদীদ, ২৫]
.
“…আমি কফিরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।“ [আল-আনফাল, ১২]
.
“অতঃপর যখন তোমরা কাফিরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দানে মারো…” [আল মুহাম্মাদ, ৪]
.
“…হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। “ [আত-তাওবাহ,৫]
.
.
অতঃপর তারা কূর’আনে আরও দেখলোঃ
.
.
যারা মুমিন, তারা বলেঃ একটি সূরা নাযিল হয় না কেন? অতঃপর যখন কোন দ্ব্যর্থহীন সূরা নাযিল হয় এবং তাতে জিহাদের উল্লেখ করা হয়, তখন যাদের অন্তরে রোগ আছে, আপনি তাদেরকে মৃত্যুভয়ে মূর্ছাপ্রাপ্ত মানুষের মত আপনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখবেন। সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্যে। [সূরা মুহাম্মাদ, ২০]
.
আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যে পর্যন্ত না ফুটিয়ে তুলি তোমাদের জিহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থান সমূহ যাচাই করি। [সূরা মুহাম্মাদ ৩১]
.
“আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী!…” [সূরা আন-নিসা, ৭৫]
.
“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, আল্লাহর শুত্রু এবং তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি কর…” [আল-আনফাল,৬০]
.
.
আর তারা তখন বললো, হায়! এতো এমন এক কিতাব যা আমাদের জন্য আর কোন অজুহাতই অবশিষ্ট রাখে নি।
.
.
“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।“ [আত-তাওবাহ ]
.
এবং তারা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এই হাদীস পড়লোঃ
“নিশ্চয় জান্নাত হল তরবারির ছায়াতলে” [আল বুখারি]
.
অতঃপর তারা বললো, “আমরা শুনলাম এবং মানলাম।“ [আল বাকারাহ,২৮৫]
.
.
তারা বললোঃ
.
সেই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর নামে শপথ করছি, যিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন। যতদিন পর্যন্ত না ফিলিস্তিনীরা শান্তি তে বসবাস করতে পারছে এবং কাফির সৈন্যরা মুহাম্মাদ ﷺ  এর পবিত্র ভূমিকে পরিত্যাগ করছে ততদিন পর্যন্ত না আম্রিকা আর না আম্রিকার অধিবাসিরা শান্তিতে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারবে।
.
“আমরা আম্রিকাকে বলি, তোমারা যতোই সীমালঙ্ঘন করো না কেন, তোমরা যতোই ঔদ্ধত্য দেখাও না কেন, তোমরা যতো উচুতেই উড়ো না কেন – জেনে নাও, তোমার প্লেন, তোমাদের জেট, তোমাদের ড্রোন কখনো আল্লাহ-র আরশের নাগাল পাবে না। তোমরা যতো উঁচুতেই ওঠো না কেন, তোমরা আল্লাহ-র আরশের নিচে। উপরে না।
.
… তিনিই পরাক্রান্ত স্বীয় বান্দাদের উপর। তিনিই জ্ঞানময়, সর্বজ্ঞ। [সূরা আল-আন’আম, ১৮]
.
আর তোমাদের আগে ‘আদ জাতি বলেছিলঃ
.
“… আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর কে?
.
আর আল্লাহ্‌ ‘আযযা ওয়া জাল তাদের জবাব দিয়েছিলেনঃ
.
তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর ? বস্তুতঃ তারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করত। [সূরা ফুসসিলাত, ১৫]
.
.
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন এক দল আছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ বলেনঃ
.
“…তারা তোমাদের প্রতি কুন্ঠাবোধ করে। যখন বিপদ আসে, তখন আপনি দেখবেন মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চোখ উল্টিয়ে তারা আপনার প্রতি তাকায়। অতঃপর যখন বিপদ টলে যায় তখন তারা ধন-সম্পদ লাভের আশায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরীতে অবতীর্ণ হয়। তারা মুমিন নয়…” [আল-আহযাব,১৯]
.
আর আল্লাহ-র বান্দাদের মধ্যে এমনো এক দল আছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ আর রাহমান আর-রাহীম বলেনল
.
মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।
.
.
.
তো, যা বলছিলাম…ব্যাপারটা দৃষ্টিভঙ্গির।
লিখেছেন :-asif adnan

তাওবা ও বিলম্বের পরিনাম।


.
. أَأَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْضَ فَإِذَا هِيَ تَمُورُ
  أَمْ أَمِنتُم مَّن فِي السَّمَاءِ أَن يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ۖ فَسَتَعْلَمُونَ كَيْفَ نَذِيرِ
তোমরা কি নিশ্চিত আছো যে  যিনি আকাশের উপরে রয়েছেন, তিনি তোমাদেরকে সহ ভূমিকে ধ্বসিয়ে দেবেন না আর ওটা হঠাৎ করে থর থর করে কাঁপতে থাকবে?
  না তোমরা নিশ্চিন্ত হয়ে গেছ যে, আকাশের উপরে যিনি আছেন, তিনি তোমাদের উপর পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করবেন? এরপর তোমরা জানতে পারবে কেমন ছিল আমার সতর্কবাণী!
(কুরআন, মুলক ৬৭:১৬-১৭)
.
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ
  أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ
  أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ
তবে কি জনপদগুলোর অধিবাসীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েছে, তাদের উপর আমার কঠোর আযাব রাতে আসবে যখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে? নাকি জনপদগুলোর অধিবাসীরা নিশ্চিন্ত হয়ে গিয়েছে, তাদের উপর আমার কঠোর আযাব দিনের বেলায় আসবে যখন তারা খেলায় মগ্ন থাকবে? তারা কি আল্লাহর কৌশল থেকে নিরাপদ হয়ে গিয়েছে? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর কৌশল থেকে আর কেউ (নিজেদেরকে) নিরাপদ মনে করে না।
(কুরআন, আরাফ ৭:৯৭-৯৯)
.
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান।যাতে তারা ফিরে আসে।
(কুরআন, রুম ৩০:৪১)
.
مَا أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَمَن يُؤْمِن بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ ۚ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
  আল্লাহর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোন বিপদ আসে না এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তাঁর অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।
(কুরআন, তাগাবুন ৬৪:১১)
.
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
  أُولَٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্য ধারণকারীদের।
যখন তারা বিপদে পড়ে, তখন বলে— “ নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহরই জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাবো।“
তারাই সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই সুপথপ্রাপ্ত।“
(কুরআন, বাকারাহ ২:১৫৫-১৫৭)
.
فَفِرُّوا إِلَى اللَّهِ ۖ إِنِّي لَكُم مِّنْهُ نَذِيرٌ مُّبِينٌ
অতএব, আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তাঁর তরফ থেকে তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট সতর্ককারী।
(কুরআন, যারিয়াত ৫১:৫০)