হুমায়ূন আহমেদের একটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাসে এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের কাহিনী ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে সাহসিকতার জন্য আর কমান্ডার হিসেবে তার নাকি বেশ পরিচিতি ছিল। কিন্তু তার শেষটা ভালো ছিল না। যুদ্ধের সময় এক বাড়ীতে তারা খেতে গিয়েছিল, এলাহি অবস্থা, বাড়ির মালিক মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানোর জন্য খাসি জবাই করলেন, খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কমান্ডার আর তার বাহিনীর কোন হুঁশ ছিল না। শেষে সবাই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। সেই থেকে ইতিহাসে সেই কমান্ডারকে সবাই খাসি অমুক হিসেবে চিনে। তার বীরত্বগাথা সবাই ভুলে গেল, একটা ভুলের কারণে তার নামের আগে খাসি যোগ হল।
.ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরেফীন সিদ্দিকী সাহেব, আওয়ামীপন্থী হিসেবেই তাকে সবাই চিনে। ২০০৮ এ ক্ষমতায় এসেই আওয়ামীলীগ সরকার ভিসি হিসেবে তাকেই বেছে নেয়, এরপর দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি ভিসি নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন দলটির সাবেক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন তিনি। এইতো কয়দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ বছরপূর্তির স্মরণিকায় জিয়াকে প্রথম রাষ্ট্রপতি আর শেখ মজিবুর রহমানকে বিবেচিত জাতির জনক উল্লেখ করায় কি ধকলটায় না গেল তার উপর। গাড়ী ভাংচুর হয়েছে, বাসায় হামলা হয়েছে, ছাত্রলীগ দলবল নিয়ে তার বাসভবনের সামনে পদত্যাগের দাবি তুলে অবস্থান করেছে, রাজাকার, জামাতি, পাকিস্তানি সম্ভাব্য সব ট্যাগ লাগিয়ে গালিগালাজ করেছে।
.
এটাই তো দুনিয়া। যারা দুনিয়ার পূজা করে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার জিম্মায় ছেড়ে দেন। দুনিয়াই তাদেরকে উঠায় আর দুনিয়াই তাদেরকে নামায়। দুনিয়ার কাছে তারা সম্মানিত হয় আবার দুনিয়ার হাতেই তারা লাঞ্ছিত হয়। দিনশেষে দুনিয়া দুনিয়ার জায়গাতেই রয়ে যায়। আল্লাহর সামনে গিয়ে এই মানুষগুলো হয় সত্যিকারের লুজার। পক্ষান্তরে মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চার্যজনক। যাদের সব কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্য থাকে আল্লাহ তাদেরকে সম্মানিত করেন, তারা কিছু অর্জন করুক আর না করুক। দুনিয়ার কাছে একটা ভুলের কারণে সারাজীবনের অর্জন আর মেহনত মূল্যহীন হয়ে গেলেও যারা আল্লাহর দলে থাকে আল্লাহ তাদের ভুলত্রুটিগুলো নিজেই ইসলাহ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিভাবে? আল্লাহ বলেন,
.
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّـهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّـهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا
“হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” [সূরা আহযাবঃ ৭০-৭১]
.
সুতরাং এতে আশ্চার্যের কি আছে যে আল্লাহ তার বান্দাদের মধ্য থেকে কিছু মানুষকে বাছাই করে নিবেন যারা তাকে ভয় করবে, হক্ব কথা বলবে, বিনিময়ে আল্লাহ তাদের ভুলগুলো তো শোধরে দিবেনই বরং বাকি পাপগুলোও মুছে দিবেন। তিনিই আমাদের রব, আর আমরা তো সে মহান রবেরই ইবাদাত করি।
.
উস্তাদ আবু তাওবাহকে গ্রেফতার করেছিল আমেরিকা সরকার। উনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল তার একটি ছিল তিনি মসজিদে একবার শাইখ আবু হামজা আল মিসরির জন্য মসজিদের দরোজা খুলেছিলেন। সেটাকে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার এভিডেন্স হিসেবে দেখানো হয়েছে। তারিক মেহান্নার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর কোন সলিড প্রমাণ দিতে না পেরে কোর্টে বলা হয়েছিল, “what he did isn’t important, what he believes is important!” চিন্তা করুন! কাফেররা আল্লাহর রাস্তায় একটা দরোজা খোলার হিসেবও রাখে, আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আপনার বিশ্বাসের হিসেব রাখে। আর আমরা তো সেই রবের ইবাদাত করি জানেন আমরা যা করি আর যা গোপন করি, যিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান, যিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন, পুরস্কৃত করেন। এবং কোন কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নয় এবং যার হিসেবে কোন গরমিল নেই, তিনি ভুলেও যান না।
.
وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا
….তোমাদের রব কখনো ভুলে যায় না [সূরা মারিয়ামঃ ৬৪]
.
সুতরাং যে জীবন আল্লাহর জন্য বাঁচে সে জীবনে প্রকৃতপক্ষে হারাবার কিছু নেই, সেই জীবনে প্রাপ্তির কোন সমাপ্তিও নেই। আর যে জীবন দুনিয়ার জন্য বাঁচে সেই জীবনের জৌলুস সেই দুনিয়া পর্যন্তই। সুতরাং আমাদের এই বেঁচে থাকা, আমাদের এই কষ্ট, মেহনত, আমাদের চাওয়া পাওয়া সবকিছু হোক আল্লাহর জন্য, শুধু আল্লাহকে খুশী করতে। যাতে আমরা দুনিয়াতে তো বটেই আখিরাতেও যেন বেঁচে যেতে পারি, নিরাপদ থাকতে পারি, সম্মানিত হতে পারি। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ) তাই বলেন, “মৃত্যু তো একবারই আসবে। সুতরাং সেটা যেন আল্লাহর পথে হয়”
No comments:
Post a Comment