Friday, August 5, 2016

কট্টর হিন্দু থেকে মুসলিম ধর্মে ফেরা একজন নওমুসলিম !

***** লেখাটি বেশ বড়,  তাও সবাই কে পড়ার অনুরোধ করছি,  কি কারণে আমার মত একজন উগ্র হিন্দু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলো*******

আমায় অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন যে,  আব্দুল্লাহ ভাই কি জন্যে আপনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন?
যেখানে ইসলাম ধর্ম কে মানুষ এত ভুল বোঝে আবার কেউ কেউ ইসলাম ধর্ম কে টেরোরিস্ট এর ধর্ম বলে।

আজ আমি তাদের আমার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এর কারণ বলতে চাই,  তবে তার আগে যখন আমি বুধাদিত্য গাংুলী ছিলাম তখন আমি কেমন ছিলাম তা বলতে চাই।
------------------------------------------------------------------------------------

সত্যি বলতে আমি একদা খুব উগ্র / বখাটে / স্বেচ্ছাচারী / চন্ডাল প্রকৃতির আর মারাত্মক বদ মেজাজী ছিলাম।
আমার রাগ উঠলে কোন জ্ঞান থাকতোই না,  আর রাগ কে দমানোর জন্য আমি অনেক বার দেওয়ালে নিজের মাথা ঠুকেছি আমার অনেকবার হাত এর কাছে যা পেয়েছি তাই ভেংে দিয়েছিলাম।
আর বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে গেলে মদ পান ও করতাম আবার সিগারেট ও খেয়েছি।
তবে মজার বিশয় আমি আমার অতীত জীবনে স্বেচ্ছাচারী হলেও/ মদ্যপ হলে আমার চরিত্র তখনও আর আজও কোন দাগ বা কালী লাগেনি বা লাগাতে দিওনি।
কেন না আমি বরাবর আমার মা কে ভালবাসতাম।
আর তাই আমার মাথাই এই বিষয়টা ইন্সটল করা ছিল,  যদি আমি কোন মেয়ের সাথে কোন অশ্লীল কাজ করি,  মানে সেক্স / শারীরিক সম্পর্ক বা অন্য কিছু,  তখন আমি ইন্ডায়েরেক্টলি আমি আমার মা কো অসন্মান করবো। কেন না একটা যুবতীর শরীরে যে যে অরগান আছে ঠিক সেই রকম আমার মায়ের শরীরেও সেই সেই অরগান আছে,  তাই আমার চরিত্র এর মধ্যে কোন দিন আচড় লাগতে দেইনি আর ইনশাল্লাহ দেবোও না।
যাই হোক,
এটাও বলে রাখি,  আমি একদা মারাত্মক কট্টর ইসলাম বিরোধী ও ছিলাম অথবা আমি ছুপা আর এস এস ও ভি এইচ পি এর সমর্থক ও ছিলাম।
আর তাই আমার অতীত জীবনে অনেক বার ইসলাম কে গাল মন্দ করেছি ( যার জন্য নিজেকে আমার খুব অপরাধী আজও মনে হয়)।
আসলে যারা ইসলাম বিদ্বেষী তাদের মাথায় ইঞ্জেক্ট করা হয় আল কুরআন মানেই সন্ত্রাসবাদ এর পুস্তক আর ইসলাম মানেই সন্ত্রাসবাদী। তাই হয়তো আমিও আগে ইসলাম বিদ্বেষী ছিলাম।

এইবার আমায় আমার জব এর জন্য কলকাতা থেকে মুম্বাই পাঠানো হলো সেটা ২০১০ সাল এর ঘটনা।
তা আমি মুম্বাই তে এলাম।  এবার আমার যে রুম মেট ছিল তার নাম সার্ফারাজ সিদ্দীকি। তা আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম,  যে আমার রুম মেট কেন মুসলিম হবে,  ওকে আমি আমার রুমে রাখবো না। তারপর আমার তৎকালীন বস তা শোনেন নি।
তাই বাধ্য হয়েই সার্ফারাজ সিদ্দীকি কে আমি আমার রুম মেট করি।
কিন্তু সার্ফারাজ এর উপরে অনেক অত্যাচার করেছিলাম আমি, আমি ইচ্ছাকৃত ভুল কাজ করে সার্ফারাজএর ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিলাম / আবার সার্ফারাজ কে মারতেও গিয়েছিলাম বলা বাহুল্য ওকে খুন করতেও আমি পিছু পা হটিনি।
কারণ যারা উগ্র হিন্দু তাদের এই ভাবে ব্রেণ ওয়াস করা হয়,  আরশোলা দেখলে কি করা উচিত?
উত্তর,  পা দিয়ে পিষে মারা উচিত,
তাহলে মুসলিম দের দেখলে কি করা উচিত?
উত্তর:- হত্যা করা উচিত।

তাই সার্ফারাজ সিদ্দীকি কে আমি মারতেও চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি কেন না,  সেই সময়ে আমি যাকে বিশ্বাস ও ঘেন্না করতাম আল্লাহ কে ( নাউজুবিল্লা)  তিনি সার্ফারাজ কে ভাচিয়ে দিয়েছিলেন।
তবে আমি সার্ফারাজ এর মধ্যে একটা জিনিস নোটিস করতাম,   র এতো ক্ষতি করার চেষ্ঠা করেছি ও কেন আমার প্রতি রিভেঞ্জ নিতো না?
এই প্রশ্ন এর উত্তর টা যে এতো পবিত্র ময় তা হল,  কেবল মাত্র যুদ্ধ ক্ষেত্র ছাড়া ইসলাম টিট ফর ট্যাট পন্থা অবলম্বণ করে না।
কিন্তু যখন আমি উগ্র হিন্দু ছিলাম তখন এই জিনিস টা জানতাম না।
তা যাই হোক , আমি সর্বদা নোটিস করতাম যে,   সার্ফারাজ কে এএতো বাজে ভাবে ফাসাতাম ও ওর ক্ষতি করার জন্য প্রাণ পণ চেষ্ঠা করতাম কেন ও তার রিভেঞ্জ নিতো না আর কেন ও খালি হাসতো আর আমার সাথে এতো ভাল ব্যবহার করতো?
আমি ভাবলাম এর পেছনে কোন রহস্য নেই তো।
তা এর মধ্যে আমার জন্মদিন এলো,  সার্ফারাজ আমায় একটা গিফট দিলো ,আমি টিটকেরী মেরে বললাম,  কি রে আর ডি এক্স দিলি নাকি ?
ও বললো খুলেই দেখো না!!
আমি দেখলাম আমায় ও,  সামারি অফ আল কুরআন দিয়েছে।
তখন আমি এতো রেগে গেলাম আমি সেই বই টা ছুড়ে ফেললাম আর সার্ফারাজ কে খুব খুব অপমান করলাম।
( নাউজুবিল্লা).
আর সেই দিন সার্ফারাজ কে আমি রুমে ঢুকতে দেইনি আর তাই ও সেইদিন সারা রাত বাইরে থাকে।
আর পরের দিন সেই এক উপহার ও আমায় দিলো।
আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,  যে তুমি ( আমি)  ঠিক বলেছো,  ইসলাম সন্ত্রাস বাদ এর ধর্ম তাই একবার হলেও এই বইটা পড়ো।
আর ওর কথা শুনে মনে মনে ভাবি শালা মিষ্ঠি কথা বলে আমায় পটাতে এসেছে (উগ্র হিন্দু দের এটাও মাথায় ইঞ্জেক্ট করা হয়,  যে মুসলিম রা খুব মিষ্ঠি কথা বলে আমাদের ম্যানেজ করবে).
কিন্তু আমি তখন সেই বই টা মানে আল কুরান এর সারাংশ পড়ি, কিন্তু আমার উদ্দ্যেশ্য অন্য ছিল, যে আমি এই কিতাব পড়ে এটাই মার্কিং করবো যে হ্যা  ,ইসলাম টেরোরিস্ট এর ধর্ম।
তাই আমি সেই পড়তে করি।
কিতাব টা পাতলা ছিল মানে ৪০ পেজ এর।
বিশ্বাস করবেন না , ওই কিতাব টা পড়তে পড়তে আমর মনে হচ্ছিল আমার শরীর থেকে প্রাণ বেড়িয়ে যাচ্ছে,  মানে এতো দিন ইসলাম কে নিয়ে যে ভাবে আমাদের ব্রেণ ওয়াস করা হয়েছিল,  ইসলাম ধর্ম একেবারেই তার বিপরীত।
তখন সে সময়ে আমি অনুশোচনায় কাদতে কাদতে প্রায় অজ্ঞান এর মত হয়ে যাই।
আর শুনেছিলাম সার্ফারাজ তখন আমায় সুস্থ করে তোলে,   আর আমার যখন জ্ঞান ফেরে অনেক নিজেকে হাল্কা লাগছিল, তখন সার্ফারাজ বললো ,তুমি চাইলে আরো কাদো,  কেন যত বেশি আমি কাদবো ভেতর এর শয়তান বের হয়ে আসবে।
এট শুনে আমি নিজেকে আর অপরাধী ভাবলাম,, আর আরো মানষিক ভাবে আহত হলাম।

এরপরে সার্ফারাজ কে বলি এবার আলকুরআন ও হাদিশ পড়তে চাই, ও বললো না,   সবার আগে নবী সা: কে পড়ো সেটা এই মুহুর্তে খুব প্রয়োজন আমার।
আমি রাজি রাজি হলাম আর তাই করলাম।
আর সেই সময়ে যত ইসলাম কে জানছি ও বুঝছি নিজেকে ততোটা অপরাধী মনে হচ্ছিল, তারপর ইসলাম ধর্ম নিবো সেটা সার্ফারাজ কে বলি ।
সার্ফারাজ বলে একদম না,  কেন না তুমি এখন অনুশোচনা এর রুগী তাই আবেগে ইসলাম নিতে চাইছো।
কিন্তু ইসলাম অনেক অনেক বড় বিশয় এখানে আবেগ র স্থান আআর প্রকৃত মুসলিম হতে গেলে আগে বেদ বা উপনিষদ পড় তার পড়ে আলকুরান ও হাদিস পড়ো।
তারপরে যেটা ভালো বুঝবে তাই করবে,
তারপর আমি ওর কমমত কাজ করি,  তবে বেদ ও উপনিষদ  এর সারাংশ পড়ি তারপর আল কুরআন পড়ি আর মিথ্য বলবো না হাদিস পড়ার মত জ্ঞান আমার নেই তাই ইমাম সাহেব  থেকে হাদিস  এর মূখ্য বিশয় গুলি পড়ি।
তবে এখন হাদিস পড়ছি আল্লাহ এর রহমতে।
তা এই ভাবেই আমার মন টা  উগ্র হিন্দু  থেকে ইসলামিক হয়ে গেল।
বলতে নেই,  আল্লাহ্‌ এর রহ মতে আজ অনেক প্রাণ রক্ষা কারী দুয়া ও সাধারণ দুয়া শিখেছি ও নামাজ ও পাঠ করি এবং আজকাল রাত্রে আর ঘুম আসে না,  তখন তাহাজ্জুত এর নামাজ পড়ি আর আল্লাহ্‌ এর থেকে অনেক ব্যক্তিগত সাহায্য ভিক্ষা করি।

বি:দ্র: এই পোস্ট  এর আমার অতীত জীবন এর কিছু  কিছু অংশ পাঠক বা পাঠিকা দের রাগ  উঠতে পারে,  তাই দয়া করে আমায় মাফ করে দেবেন, কেন না উমর কে আল্লাহ যদি  মাফ করতে পারেন,  আমাকে ও আশা করি আপনারা ক্ষমা করে দেবেন।
আর শেষ কথা,  আমাকে বিচার করবেন আমার বর্তমান  নাম,
মহম্মদ আব্দুল্লাহ কে দিয়ে আমাকে আমার পুর্ব নাম বুধাদিত্য কে দিয়ে বিচার করবেন না।
এতো বড় লেখাটি পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
from fb collected

No comments:

Post a Comment