Sunday, May 29, 2016

কুরানের দুটি আয়াতের তাৎপর্য

কুরআনের প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি আয়াতের মধ্যে দুটো আয়াত আমাকে বেশ নাড়া দেয়। একই আয়াত, যা পড়লে নিজের যা আছে তা হারিয়ে যাওয়ার ভয় করি আবার সেই সাথে নিজের যা নেই তা পাওয়ারও আশা করি। সেই একই আয়াত, যা পড়লে মনে হয় – without Allah I am nothing… with the help of Allah I can do everything।
.
আয়াতের মর্মার্থের কথা বাদ দিলেও, আল্লাহ্‌র আরবি শব্দ চয়নগুলোই এমন যে আয়াত দুটো পড়লে আপনার মনে হবে - নাহ, আয়াতগুলোতে আসলেই খুব গুরুত্বপুর্ন কিছু বলা হয়েছে। প্রথম আয়াতটা তুলে ধরলামঃ
.
“কুলিল্লাহুম্মা মালিকাল মুলকি তু’তিল মুলকা মানতাশা উ ওয়া তানযিউল মুলকা মিম্মানতাশা উ ওয়াতু ইযযু মানতাশা উ ওয়াতু যিল্লু মানতাশা উ বিয়াদি কাল খাইর। ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।”
.  
“বলুন, ইয়া আল্লাহ, তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।”
[আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:২৬]
.
.
তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান কর।”
[আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:২৭]
.
.
খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে রোম ও ইরান সাম্রাজ্য মুসলিমদের করতলগত হবে। কুফফাররা এটা শুনে ঠাট্টা করতে লাগলো যে, নিজেদের রক্ষা করার জন্য যাদের গর্ত খুঁড়তে হচ্ছে এবং না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা কিনা দাবী করছে রোম ও ইরান জয় করে ফেলবে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। এতে মুসলিমদের দু’আ শিক্ষাদানের মাধ্যমে এক সূক্ষ্ম পন্থায় তাদের ঠাট্টার জবাব দেওয়া হয়েছে।
(তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন)
.
প্রথম আয়াতে রয়েছে মহান আল্লাহ্‌র সীমাহীন শক্তি ও কুদরতের প্রকাশ। তিনি বাদশাহকে ফকির করেন আর ফকিরকে বাদশা। তিনিই সমস্ত কর্তৃত্বের মালিক। আয়াতে “যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে” না বলে “তোমারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ” বলা হয়েছে অর্থাৎ বিধেয় পদকে আগে আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্দিষ্টীকরণ। অর্থাৎ সমস্ত কল্যাণ কেবল তোমারই হাতে, তুমি ছাড়া কল্যাণদাতা আর কেউ নেই। অকল্যাণের স্রষ্টা যদিও মহান আল্লাহই, তবুও এখানে কেবল কল্যাণের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে, অকল্যাণের নয়। কারণ কল্যাণ আল্লাহ্‌র নিছক অনুগ্রহ। পক্ষান্তরে অকল্যাণ হল মানুষের কর্মের ফল যা তাদের ভুগতে হয়। অথবা অকল্যাণও যেহেতু তাঁরই নির্ধারিত নিয়তির অংশ সুতরাং তাতেও কোন না কোন প্রকার মঙ্গল আছে। এই দিক দিয়ে তার সমস্ত কাজই কল্যাণময়।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
.
রাতকে দিনের ভেতর এবং দিনকে রাতের ভেতর প্রবেশ করানোর অর্থ হল ঋতু পরিবর্তন। শীতকালে রাত লম্বা হয় এবং দিন ছোট হয়ে যায়। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মে দিন বড় হয় আর রাত ছোট হয়ে যায়। অর্থাৎ কখনো রাতের অংশকে দিনের মধ্যে এবং দিনের অংশকে রাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। যার কারণে রাত এবং দিন ছোট-বড় হয়।
.
জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আনা এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের আনা ঠিক সেরকমই যেমনিভাবে মৃত ডিম থেকে প্রাণী বের হয় এবং জীবন্ত প্রাণীর দেহ থেকে নিষ্প্রাণ ডিম বের হয়। অনেক মুফাসসির বলেন, এর অর্থ হল কাফেরের ঘর থেকে মুমিন বের হওয়া কিংবা মুমিনের  ঘর থেকে কাফের বের হওয়া।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
--
আয়াত দুটো মুখস্ত করে ফেলবেন যারা পারেন।

No comments:

Post a Comment