Saturday, August 13, 2016

আমাদের বীর

আমাদের বীরদেরকে চিনি- ‪#‎KnowYourHeroes‬ ‪#‎AbuUbaidaRA‬ -শেষ পর্ব
===================================
আবু বকর(রাঃ) যেমন নরম স্বভাবের ছিলেন তাঁর জন্য দরকার ছিল গরম স্বভাবের খালিদ(রাঃ), আর কড়া উমরের(রাঃ) জন্য দরকার ছিল একটু নরম স্বভাবের আবু উবাইদা(রাঃ) কে। আবু বকর(রাঃ) ছিলেন ম্যাক্রো ম্যানেজার আর উমর(রাঃ) ছিলেন উল্টা।
উমর(রাঃ) চাইতেন তাঁর নিযুক্ত গভর্নররা তাঁরই মত সাদাসিদা একটা জীবন যাপন করবেন। তাঁর গভর্নররা যতই যোগ্য আর সুখ্যাতি সম্পন্ন হোক না কেন, সময়ে সময়ে তিনি ঠিকই তাঁদের সরেজমিনে দেখে নিশ্চিত হতেন তাঁরা তাঁর গাইডলাইন মত চলছে কিনা।
জেরুজালেম বিজয়ের পথে; আবু উবাইদা(রাঃ) তখন সিরিয়ার গভর্নর; উমর(রাঃ) দেখতে চাইলেন উনি কি রকম থাকেন।
আবু উবাইদা(রাঃ) বললেন, কি দরকার যাওয়ার, আপনি কিন্তু আমার জন্য কাঁদবেন। বাড়িতে ঢুকে এদিক ওদিক সব ফাঁকা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ও আবু উবাইদা, আপনার সব আসবাবপত্র কই গেল? আমি তো এই ঘোড়ার জিন, এই থালা, পানি রাখার চামড়ার এই ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই দেখি না! আপনি না গভর্নর! আপনার খাবার দাবার আছে তো?”
আবু উবাইদা(রাঃ) একটা বাক্স থেকে কিছু রুটির টুকরা বের করলেন। উমর(রাঃ) নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। কেঁদে ফেললেন। আবু উবাইদা(রাঃ) বললেন, আমি বলেছিলাম আপনি আমার জন্য কাঁদবেন, ও আমিরুল মু’মিনীন, যতটুকু আপনার গন্তব্যে পৌঁছাই দেয় সেইটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।“ সে সময়টায় মুসলিমদের অঢেল সম্পদ ছিল। উমর(রাঃ) বললেন, ও আবু উবাইদা, এই পৃথিবীটা আমাদের সবাইকে বদলে দিছে খালি আপনি ছাড়া।
এমনি করে যে আবু উবাইদা(রাঃ) খলিফা উমরের(রাঃ) আদেশ গুলো মেনে চলতেন বিনা তর্কে প্রতিটি ক্ষেত্রে, সারাজীবন উদাহরণ হয়ে; সেই তিনিই একটা আদেশ অমান্য করে বসলেন।
সিরিয়া জুড়ে তখন প্লেগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরেছে। উমর(রাঃ) একজন বার্তাবাহক পাঠালেন। লিখে দিলেন, “ আপনাকে আমার জরুরী প্রয়োজন। আমার এই চিঠি যদি রাতে পৌঁছায় তবে আমি চাই আপনি সকাল হওয়ার আগেই রওয়ানা দেন, আর এই চিঠি যদি দিনে পৌঁছায় আমি চাই আপনি সন্ধ্যার আগেই দ্রুত রওয়ানা দেন।“
যখন চিঠিটা পৌঁছল, আবু উবাইদা(রাঃ) বললেন, আমি জানি কেন আমিরুল মু’মিনীন আমাকে যেতে বলেছেন, তিনি একজন মানুষের বেঁচে থাকা চান যে কিনা আসলে চিরঞ্জীব না।“ তিনি উমর(রাঃ) কে লিখে দিলেন,
“আমি জানি আমাকে আপনার দরকার, কিন্তু আমি এখন মুসলিম আর্মির মাঝে আর যে মুসিবতে তাঁদের সবাই আক্রান্ত সেই মুসিবত থেকে আমাকে নিজেকে বাঁচানোর কামনা আমার নাই। যতক্ষণ না আল্লাহ্‌ চান ততক্ষণ আমি তাঁদের থেকে আমাকে আলাদা করতে চাই না। তাই এই চিঠি যখন আপনার হাতে পৌঁছবে তখন আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দয়া করে আমাকে এখানে থেকে যাওয়ার অনুমতি দিন।“
চিঠিটা পড়ে উমরের(রাঃ) চোখ ভরে পানি আসল। আশেপাশের সবাই জানতে চাইল, আবু উবাইদা(রাঃ) কি মারা গেছেন। উমর(রাঃ) বললেন, না তবে মৃত্যু থেকে তিনি খুব দূরে না।
উমরের(রাঃ) এর অনুমান ভুল ছিল না। খুব বেশীদিন না, আবু উবাইদা(রাঃ) প্লেগে আক্রান্ত হলেন। মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তিনি তাঁর আর্মির উদ্দেশ্যে বললেন, “ আমায় তোমাদেরকে কিছু উপদেশ দিতে দাও যা কিনা তোমাদের সব সময় সুপথে রাখতে সাহায্য করবে”। বললেন, “নামাজ কায়েম কর, রমযানের রোযা রাখ, সাদাকাহ দাও, হজ্ব আর উমরা পালন কর। একতাবদ্ধ থাক আর একে অন্যের সহায়ক হও। তোমাদের কমান্ডারের প্রতি আন্তরিক হও আর তাঁদের কাছ থেকে কোন কিছু গোপন কর না। আর এই দুনিয়াকে তোমাদের ধ্বংস করতে দিও না। কেউ যদি হাজার বছরও বাঁচে মৃত্যুর সময় তাঁর অবস্থা কিন্তু আমার এই অবস্থার মতই হবে। তোমাদের উপর শান্তি আর আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হোক”
এরপর তিনি মুয়াজ ইবনে জাবালের(রাঃ) দিকে ঘুরলেন, বললেন, “ও মুয়াজ, সবাইকে নিয়ে নামাজ পড়।“
এমনি করে, তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন। মুয়াজ(রাঃ) দাঁড়ালেন আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমরা আজ এমন একজনের মৃত্যু দ্বারা জর্জরিত হলে, আল্লাহ্‌র কসম, আমি এমন কাউকে চিনি না যে কিনা তাঁর থেকে সত্যনিষ্ঠ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন, যিনি কিনা সব ধরণের খারাপ থেকে যোজন যোজন দূরে ছিলেন, যিনি কিনা মানুষের প্রতি নিজের থেকেও বেশী আন্তরিক ছিলেন। আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর রহমতের জন্য দোয়া কর, আল্লাহও তোমাদের প্রতি দয়াশীল হবেন।“

No comments:

Post a Comment