Saturday, August 13, 2016

জ্ঞান

একজন তালিবুল ইলমের একটি শিক্ষণীয় ঘটনা
একজন আলেম একটি সুন্দর ও শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তা হচ্ছে, কোন একজন ‘তালিবুল ইলম’, বা দ্বীনের ছাত্র দীর্ঘদিন তার উস্তাদের কাছে ইলম অর্জন করার পর যখন বিদায় নিয়ে দেশে চলে যাচ্ছিল তখন উস্তাদ ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি আমার কাছে কত বছর অবস্থান করেছ?” ছাত্রটি বললো, “৩৩ বছর!” উস্তাদ বললেন, “এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তুমি আমার কাছ থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছো?” ছাত্রটি বলল, “আমি আপনার নিকট থেকে মাত্র ছয়টি মাসআলা শিখেছি।” উস্তাদ বললেন, “এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তুমি মাত্র ছয়টি মাসআলা শিখেছো? ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ’ন। আমি মনে করি, তোমার মধ্যে আল্লাহর ভয় বলতে কিছু নেই?” ছাত্র বলল, “আমি সত্য বলছি, মিথ্যা নয়।” উস্তাদ এবার বললেন, “আচ্ছা বলো তো শুনি, কী সেই ছয়টি মাসআলা?” এবার ছাত্রটি বলতে লাগলঃ
(১) আমি দেখলাম দুনিয়ার মানুষের মধ্যে শুধু হিংসা আর হিংসা। একজন আরেকজনের সাথে হিংসা করে। কেউ কাউকে ভালবাসেনা। আর আমি যখন আল্লাহর এই বাণী পাঠ করলাম,
“আমি জান্নাতীদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ও মনোমালিন্য সম্পূর্ণরূপে বের করে দেবো, তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ে পরিণত হয়ে মুখোমুখি আসনে (আরাম করে) বসবে।” [সুরা হিজরঃ ৪৭]
তখন দুনিয়ার সুখ-সামগ্রী বর্জন করে আমি জান্নাত যাওয়াকেই প্রাধান্য দিলাম। উস্তাদ তখন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যেতে চাও? ছাত্র বললঃ আমি আল্লাহ তাআ’লার এই বাণী পাঠ করেছি, “আর যারা তাদের রব্বের সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে তাদের প্রত্যেকের জন্যে (পুরষ্কার হিসেবে) দুইটি করে জান্নাত রয়েছে৷” [সুরা আর-রাহমানঃ ৪৬]
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “আর যে ব্যক্তি নিজের রব্বের সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভীত হলো এবং নিজের নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রাখলো, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।” [সুরা নাযিয়াতঃ ৪০-৪১]
সুতরাং, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই সাথে জান্নাতের আশা নিয়ে আল্লাহর ভয়েই আমি নেক আমল করি। আর আমি আমার নফস থেকে খারাপ চিন্তা ও কুপ্রবৃত্তি বের করে ফেলেছি এবং নফসকে একদম সোজা করে ফেলেছি।
(২) আমি দেখলামঃ দুনিয়ার প্রত্যেকেই একজন করে খাস বন্ধু গ্রহণ করে। আমিও একজন বন্ধু খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু দেখলাম, সেই বন্ধুও এক সময় আলাদা হয়ে যাবে। কারণ মৃত্যুর সময় কারো বন্ধুই সাথে যায়না। একমাত্র তার আমলই সাথে যায়। তাই আমি দুনিয়ার কোন মানুষকে বন্ধু না বানিয়ে, শুধুমাত্র আখেরাতের জন্যে নেক আমলকেই বন্ধু বানালাম। উস্তাদ বললেন, “তুমি খুব ভাল করেছ।”
(৩) আমি দুনিয়ার মানুষের মধ্যে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম, তাদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু জিনিষ আছে, যা সে লুকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু আমি দেখলাম, সেই লুকায়িত জিনিসটিও কখনো দুনিয়ার চোর-ডাকাতেরা নিয়ে চলে যায়। তাই আমি যখন দেখলাম, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নেক আমল করে, সেই আমল কখনো নষ্ট হয়না, কোন চোর-ডাকাত তা চুরি করতে পারেনা। আল্লাহ তাআ’লা তার বিনিময় পুরাপুরি দান করেন। তাই আল্লাহর জন্য আমল করাকেই সর্বাধিক প্রিয় মনে করলাম।
(৪) আমি যখন দেখলাম দুনিয়ার মানুষেরা রিযিকের জন্য মারামারি, কাটাকাটি করছে এবং পরস্পর হিংসা করছে। আর আমি যখন আল্লাহর এই বাণী পেলাম,
“তারা কি তোমার রব্বের রহমত (রিযিক) বণ্টন করে? দুনিয়ার জীবনে এদের মধ্যে জীবন যাপনের উপায় উপকরণ আমি বণ্টন করে দিয়েছি এবং এদের মধ্য থেকে কিছু লোককে অপর কিছু লোকের উপর অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছি।” [সুরা যুখরুফঃ ৩২]
তখন থেকে রিযিকের জন্য বেশি হাহুতাশ করা এবং দুঃশ্চিন্তা করা সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দিয়েছি।
(৫) আমি যখন দেখলাম, দুনিয়ার মানুষেরা পরস্পরকে শত্রু মনে করে এবং তাদের কেউ অন্য কাউকে দেখতে পারেনা এবং যখন আল্লাহ তাআলার এই বাণী পাঠ করলাম, “আসলে শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তোমরাও তাকে নিজেদের শত্রু মনে করো। সেতো নিজের অনুসারীদেরকে নিজের পথে এজন্য ডাকছে, যাতে তারা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।” [সুরা ফাতিরঃ ৬]
আল্লাহর এই বাণী উপলব্ধি করার পর আমি মানুষের সাথে শত্রুতা পোষণ করা বাদ দিয়ে কেবল শয়তানকেই আমার একমাত্র শত্রু বলে মনে করলাম।
(৬) আমি দেখলাম দুনিয়ার মানুষেরা টাকা-পয়সা, গাড়ি-ঘোড়া, দুনিয়ার মানুষ ও অন্যান্য সম্পদের উপর নির্ভর করে এবং দুনিয়ার বিপদ-আপদকে ভয় করে। আর আমি যখন দেখলাম এগুলো চিরস্থায়ী নয় এবং যখন দেখলাম, “যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন, যা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে না৷ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন।” [সুরা তালাকঃ ২]
তখন আমি দুনিয়ার সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহর উপরেই ভরসা করতে লাগলাম। তখন উস্তাদ বললেন, “সত্যিই তুমি অত্যন্ত উত্তম শিক্ষা গ্রহণ করেছ। আল্লাহই ভাল জানেন।”
কৃতজ্ঞতাঃ শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী।

No comments:

Post a Comment