Friday, August 19, 2016

ক্যাট স্টিভেন্স থেকে ইউসুফ ইসলাম: একটি আলোকিত জীবনের ইতিকথা

 ক্যাট স্টিভেন্স থেকে ইউসুফ ইসলাম: একটি আলোকিত জীবনের ইতিকথা



পড়ুন এখান থেকে।
 ক্যাট স্টিভেন্স থেকে ইউসুফ ইসলাম: একটি আলোকিত জীবনের ইতিকথা

ইসলামিক সফটওয়ার Islamic software


ইসলামিক সফটওয়ার Islamic software

এখানে   ক্লিক  করুন  বা 

লিংকে যানঃhttp://www.quraneralo.com/category/multimedia/islamic-software/

তাফসীর ইবনে কাসীর – Tafsir Ibn Kasir – [1 to 18 Parts]

তাফসীর ইবনে কাসীর – Tafsir Ibn Kasir – [1 to 18 Parts]

 


                               ক্লিক DOWNLOAD 

 

 from quraneralo.com

মুলঃ হাফেজ আল্লামা ইমাম্মুদিন ইবনু কাসীর (রহঃ)

আনুবাদঃ ডঃ মুহাম্মাদ মুজীবুর রহমান
সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: Tafsir Ibn Kathir (তাফসীর ইবনে কাসীর ) is one of the Most Comprehensive and Complete Explanation of The Noble Quran. Translated in to the Bangla language for the First time in the History of Islam! You can find more information inside the book.

বইঃ ফিকহুল আকবর -ড। খন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাংগীর

বইঃ ফিকহুল আকবর

 প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না


রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-



  http://www.quraneralo.com/fiqh-al-akbar/
click    DOWNLOAD 

 সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ চারজন প্রসিদ্ধ ইমামের মধ্যে একজন ইমাম আবু হানীফা (রহ)’র লিখিত কিতাব হিসেবে প্রসিদ্ধ “আল-ফিকহুল আকবার”। এটি ছোট বই হলেও ঈমান ও আকীদার উপর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য বহন করে। আমাদের সমাজে ফিকহে হানাফীর অনেক অনুসারী হলেও আক্বীদা বিষয়ে আমরা তাঁর মতের সাংঘর্ষিক মত পোষণ করে থাকি। এমনকি অনেকে বিভিন্ন তরীকা অবলম্বন করে থাকি। অথচ ইমাম আবু হানীফার (রহ) ঈমান, আকীদা, সুন্নাত, বিদআত সম্পর্কে কি ধারণা ছিলো তা জানি না। অথচ ইমাম আবু হানীফা (রহ) এই বইটিতে ফিকহ সম্পর্কে আলোচনাই করেননি। বরং তিনি আকীদা সম্পর্কে লিখেছেন। অথচ নাম দিয়েছেন সবচেয়ে বড় ফিকহ অর্থ্যাৎ “আল-ফিকহুল আকবার”। এতে বোঝা যায়, ফিকহের চেয়ে বড় হলো আকীদা। আর আকীদাই সবচেয়ে বড় ফিকহ। এই গ্রন্থে অনুবাদ ও ব্যাখ্যাকারী ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর আরও কয়েকটি বইয়ের সাহায্য নিয়ে বঙ্গানুবাদের পাশাপাশি ব্যাখ্যাও সংকলন করেছেন। তিনি আল-আকীদাহ আত-তাহাব্যিয়াহ, আল-ই’তিকাদ গ্রন্থে ইমাম আবু হানীফার আকীদা বিষয়ক বক্তব্যগুলোও যুক্ত করেছেন। এছাড়া তারাবীহ, রিয়া, উজব, কিয়ামতের আলামত, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সন্তানদের পরিচয় ইত্যাদি অনেক বিষয় তিনি আলোচনা করেছেন।
বইটি দুটি পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্ব তিনটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। প্রথম পরিচ্ছেদে ইমাম আবু হানীফার জীবনী ও মূল্যায়ন, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ইমাম আবু হানীফার রচনাবলি ও তৃতীয় পরিচ্ছেদে ইলমুল আকীদা ও ইলমুল কালাম বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বে আল-ফিকহুল আকবার গ্রন্থের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই গ্রন্থের বক্তব্যগুলোকে ধারাবাহিকভাবে বিন্যস্ত করে পাঁচটি পরিচ্ছেদে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিচ্ছেদে ইমাম আযমের বক্তব্যের ধারাবাহিতায় আলোচ্য বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
collected by quraneralo.com



 

Saturday, August 13, 2016

ইসলামের প্রাথমিক অবস্থা

ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মক্কায় রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর অনুসারীর সংখ্যা যখন ৩৮এ গিয়ে পৌঁছালো, তখন আবু বকর(রা) রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে তাঁর নবুয়ত লাভের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
কিন্তু রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বললেন, “আবু বকর, আমরা এখনো সংখ্যায় অল্প।”
এবারও রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাঁকে নিরস্ত করলেন।কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্মত হয়ে গেলেন। এ উদ্যেশ্যে সকল মুসলিম মসজিদুল হারামে এসে জমায়েত হলেন।
.
এ সময় আবু বকর(রা) বললেন, “কুরাইশদের ক্রোধ ও একগুঁয়েমী এখন এমন চরমে পৌঁছেছে যে, আপনার মুখে তাওহিদের বাণী শোনামাত্রই তারা আপনার উপর লাফিয়ে পড়বে এবং আপনাকে হত্যা করার চেষ্টা করবে।আপনি আমাকে আদেশ করুন, আমি আপনার কথাগুলো ঘোষণা করে দেই। অবশেষে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর অনুমতি পেয়ে আবু বকর(রা) খুতবা দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন এবং রাসুলুল্লাহ(ﷺ) সেখানে উপবিষ্ট ছিলেন।”
.
আয়িশাহ(রা) বলেন, “আবু বকর(রা)ই ছিলেন ইসলামের প্রথম খতীব(ভাষণ দানকারী)। আল্লাহ তাঁর রাসুলের দিকে আহ্বান জানিয়ে তিনিই সর্বপ্রথম খুতবা প্রদান করেন।” ইতোমধ্যে মুশরিকদের নিকট এ সংবাদ পৌঁছে গিয়েছিল।তারা উত্তেজিত হয়ে মসজিদে এসে মুসলিমদেরকে নির্মমভাবে মারধোর করতে লাগলো।আবু বকর(রা)কে পদদলিত করল।উতবা ইবন রাবি’আহ একজন জালিম ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক ছিল।সে আবু বকর(রা) এর দিকে এগিয়ে আসল এবন চপ্পল দিয়ে তাঁর চেহারায় আঘাত করতে লাগল এবং তাঁর পেটের উপর উঠে নাচতে লাগল।তাঁকে সে এত নিষ্ঠুরভাবে মারধর করল যে, তাঁর নাক চেপ্টা হয়ে তাঁর চেহারার সাথে মিশে গেল।আবু বকর(রা) এর নিজ গোত্র বনু তায়িম যখন এ খবর পেল তখন তারা দৌঁড়ে মসজিদে এল এবং মুশরিকদের সেখান থেকে তাঁড়িয়ে দিয়ে আবু বকর(রা)কে সাথে নিয়ে তাঁর ঘরের দিকে গেল।
.
এ সময় আবু বকর(রা) এর মৃত্যুর ব্যাপারে ঐসমস্ত লোক প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।আবু বকর(রা) অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন।তাঁরা ফিরে মসজিদুল হারামে গেল এবং বললো, “যদি আবু বকর মারা যায়, তাহলে আমরা অবশ্যই উতবাকে হত্যা করব।” অতঃপর তারা আবার আবু বকর(রা) এর ঘরে আসলো। ইতোমধ্যে আবু বকর(রা) এর জ্ঞান ফিরে এলে বনু তায়িমের লোকেরা এবং তাঁর পিতা আবু কুহাফা(রা) তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন।
.
তখন তিনি প্রথম যে কথা বললেন, তা হল— “রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর অবস্থা কী? ”
এটা শুনে বনু তায়িমের লোকেরা ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁকে তিরস্কার করে চলে গেল এবং তাঁর আম্মাকে তাঁর দেখাশুনা করতে বলল।
এরপর আবু বকর(রা) নিজের আম্মাকেও একান্তে একই প্রশ্ন করলেন, “রাসুলুল্লাহ(ﷺ) কেমন আছেন?” কিন্তু তিনিও এ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।
.
ইত্যবসরে উমার(রা) এর বোন উম্মু জামিল(রা) সেখানে এসে পৌঁছালেন এবং তাঁর নিকট থেকে আবু বকর(রা) অবগত হলেন যে, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) সুস্থ ও নিরাপদে আছেন এবং আরকাম(রা) এর ঘরে অবস্থান করছেন, তখন তিনি শান্ত হলেন। কিন্তু সাথে সাথে এ কথাও বললেন, “আল্লাহর শপথ, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নিজে গিয়ে স্বচক্ষে রাসুলুল্লাহ(ﷺ)কে না দেখব, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন পানাহার করব না।”
.
তাই আবু বকর(রা) উম্মু জামিল ও নিজের মাতার সহযোগিতায় তাঁদের উপর ভর করে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর কাছে উপস্থিত হন।রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাঁকে দেখেই এগিয়ে এসে চুমু খেলেন। মুসলিমরাও সমবেদনা জানানোর জন্য তাঁর দিকে এগিয়ে এলেন।
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাঁর এ অবস্থা দেখে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন।এ সময় আবু বকর(রা) বললেন,
.
“হে আল্লাহর রাসুল, আমার কোন অসুবিধা হয়নি।দুরাচারী ব্যক্তিটি আমার চেহারায় যা আঘাত করেছে তা ছাড়া।ইনি হলেন আমার স্নেহপরায়না মা। আপনি একজন বরকতময় সত্তা। আপনি তাঁকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিন এবং তাঁর জন্য দু’আ করুন।আশা করা যায় যে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে আপনার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।”
.
এরপর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাঁর জন্য দু’আ করলেন এবং তাঁকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানালেন।ঐ দিনেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর আবু বকর(রা) এক মাস দারুল আরকামে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর সাথে অবস্থান করলেন। আবু বকর(রা) প্রহৃত হবার দিন রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর চাচা হামজাহ(রা) ইসলাম গ্রহণ করেন।
.
[ইবন কাসির, সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৩৯-৪৪১
আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪০
ইবন আসাকির, তারিখু দিমাশক, খণ্ড ৩০, পৃষ্ঠা ৪৬-৫৩
আস সলিহী আশ শামি, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩১৯-৩২০]
.
.
Collected from brother :
Muhammad Mushfiqur Rahman Minar

আমাদের বীর

আমাদের বীরদেরকে চিনি- ‪#‎KnowYourHeroes‬ ‪#‎AbuUbaidaRA‬ -শেষ পর্ব
===================================
আবু বকর(রাঃ) যেমন নরম স্বভাবের ছিলেন তাঁর জন্য দরকার ছিল গরম স্বভাবের খালিদ(রাঃ), আর কড়া উমরের(রাঃ) জন্য দরকার ছিল একটু নরম স্বভাবের আবু উবাইদা(রাঃ) কে। আবু বকর(রাঃ) ছিলেন ম্যাক্রো ম্যানেজার আর উমর(রাঃ) ছিলেন উল্টা।
উমর(রাঃ) চাইতেন তাঁর নিযুক্ত গভর্নররা তাঁরই মত সাদাসিদা একটা জীবন যাপন করবেন। তাঁর গভর্নররা যতই যোগ্য আর সুখ্যাতি সম্পন্ন হোক না কেন, সময়ে সময়ে তিনি ঠিকই তাঁদের সরেজমিনে দেখে নিশ্চিত হতেন তাঁরা তাঁর গাইডলাইন মত চলছে কিনা।
জেরুজালেম বিজয়ের পথে; আবু উবাইদা(রাঃ) তখন সিরিয়ার গভর্নর; উমর(রাঃ) দেখতে চাইলেন উনি কি রকম থাকেন।
আবু উবাইদা(রাঃ) বললেন, কি দরকার যাওয়ার, আপনি কিন্তু আমার জন্য কাঁদবেন। বাড়িতে ঢুকে এদিক ওদিক সব ফাঁকা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ও আবু উবাইদা, আপনার সব আসবাবপত্র কই গেল? আমি তো এই ঘোড়ার জিন, এই থালা, পানি রাখার চামড়ার এই ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই দেখি না! আপনি না গভর্নর! আপনার খাবার দাবার আছে তো?”
আবু উবাইদা(রাঃ) একটা বাক্স থেকে কিছু রুটির টুকরা বের করলেন। উমর(রাঃ) নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। কেঁদে ফেললেন। আবু উবাইদা(রাঃ) বললেন, আমি বলেছিলাম আপনি আমার জন্য কাঁদবেন, ও আমিরুল মু’মিনীন, যতটুকু আপনার গন্তব্যে পৌঁছাই দেয় সেইটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।“ সে সময়টায় মুসলিমদের অঢেল সম্পদ ছিল। উমর(রাঃ) বললেন, ও আবু উবাইদা, এই পৃথিবীটা আমাদের সবাইকে বদলে দিছে খালি আপনি ছাড়া।
এমনি করে যে আবু উবাইদা(রাঃ) খলিফা উমরের(রাঃ) আদেশ গুলো মেনে চলতেন বিনা তর্কে প্রতিটি ক্ষেত্রে, সারাজীবন উদাহরণ হয়ে; সেই তিনিই একটা আদেশ অমান্য করে বসলেন।
সিরিয়া জুড়ে তখন প্লেগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরেছে। উমর(রাঃ) একজন বার্তাবাহক পাঠালেন। লিখে দিলেন, “ আপনাকে আমার জরুরী প্রয়োজন। আমার এই চিঠি যদি রাতে পৌঁছায় তবে আমি চাই আপনি সকাল হওয়ার আগেই রওয়ানা দেন, আর এই চিঠি যদি দিনে পৌঁছায় আমি চাই আপনি সন্ধ্যার আগেই দ্রুত রওয়ানা দেন।“
যখন চিঠিটা পৌঁছল, আবু উবাইদা(রাঃ) বললেন, আমি জানি কেন আমিরুল মু’মিনীন আমাকে যেতে বলেছেন, তিনি একজন মানুষের বেঁচে থাকা চান যে কিনা আসলে চিরঞ্জীব না।“ তিনি উমর(রাঃ) কে লিখে দিলেন,
“আমি জানি আমাকে আপনার দরকার, কিন্তু আমি এখন মুসলিম আর্মির মাঝে আর যে মুসিবতে তাঁদের সবাই আক্রান্ত সেই মুসিবত থেকে আমাকে নিজেকে বাঁচানোর কামনা আমার নাই। যতক্ষণ না আল্লাহ্‌ চান ততক্ষণ আমি তাঁদের থেকে আমাকে আলাদা করতে চাই না। তাই এই চিঠি যখন আপনার হাতে পৌঁছবে তখন আমাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দয়া করে আমাকে এখানে থেকে যাওয়ার অনুমতি দিন।“
চিঠিটা পড়ে উমরের(রাঃ) চোখ ভরে পানি আসল। আশেপাশের সবাই জানতে চাইল, আবু উবাইদা(রাঃ) কি মারা গেছেন। উমর(রাঃ) বললেন, না তবে মৃত্যু থেকে তিনি খুব দূরে না।
উমরের(রাঃ) এর অনুমান ভুল ছিল না। খুব বেশীদিন না, আবু উবাইদা(রাঃ) প্লেগে আক্রান্ত হলেন। মৃত্যু ঘনিয়ে এলে তিনি তাঁর আর্মির উদ্দেশ্যে বললেন, “ আমায় তোমাদেরকে কিছু উপদেশ দিতে দাও যা কিনা তোমাদের সব সময় সুপথে রাখতে সাহায্য করবে”। বললেন, “নামাজ কায়েম কর, রমযানের রোযা রাখ, সাদাকাহ দাও, হজ্ব আর উমরা পালন কর। একতাবদ্ধ থাক আর একে অন্যের সহায়ক হও। তোমাদের কমান্ডারের প্রতি আন্তরিক হও আর তাঁদের কাছ থেকে কোন কিছু গোপন কর না। আর এই দুনিয়াকে তোমাদের ধ্বংস করতে দিও না। কেউ যদি হাজার বছরও বাঁচে মৃত্যুর সময় তাঁর অবস্থা কিন্তু আমার এই অবস্থার মতই হবে। তোমাদের উপর শান্তি আর আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হোক”
এরপর তিনি মুয়াজ ইবনে জাবালের(রাঃ) দিকে ঘুরলেন, বললেন, “ও মুয়াজ, সবাইকে নিয়ে নামাজ পড়।“
এমনি করে, তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন। মুয়াজ(রাঃ) দাঁড়ালেন আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমরা আজ এমন একজনের মৃত্যু দ্বারা জর্জরিত হলে, আল্লাহ্‌র কসম, আমি এমন কাউকে চিনি না যে কিনা তাঁর থেকে সত্যনিষ্ঠ হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন, যিনি কিনা সব ধরণের খারাপ থেকে যোজন যোজন দূরে ছিলেন, যিনি কিনা মানুষের প্রতি নিজের থেকেও বেশী আন্তরিক ছিলেন। আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর রহমতের জন্য দোয়া কর, আল্লাহও তোমাদের প্রতি দয়াশীল হবেন।“

জ্ঞান

একজন তালিবুল ইলমের একটি শিক্ষণীয় ঘটনা
একজন আলেম একটি সুন্দর ও শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তা হচ্ছে, কোন একজন ‘তালিবুল ইলম’, বা দ্বীনের ছাত্র দীর্ঘদিন তার উস্তাদের কাছে ইলম অর্জন করার পর যখন বিদায় নিয়ে দেশে চলে যাচ্ছিল তখন উস্তাদ ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি আমার কাছে কত বছর অবস্থান করেছ?” ছাত্রটি বললো, “৩৩ বছর!” উস্তাদ বললেন, “এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তুমি আমার কাছ থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছো?” ছাত্রটি বলল, “আমি আপনার নিকট থেকে মাত্র ছয়টি মাসআলা শিখেছি।” উস্তাদ বললেন, “এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তুমি মাত্র ছয়টি মাসআলা শিখেছো? ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ’ন। আমি মনে করি, তোমার মধ্যে আল্লাহর ভয় বলতে কিছু নেই?” ছাত্র বলল, “আমি সত্য বলছি, মিথ্যা নয়।” উস্তাদ এবার বললেন, “আচ্ছা বলো তো শুনি, কী সেই ছয়টি মাসআলা?” এবার ছাত্রটি বলতে লাগলঃ
(১) আমি দেখলাম দুনিয়ার মানুষের মধ্যে শুধু হিংসা আর হিংসা। একজন আরেকজনের সাথে হিংসা করে। কেউ কাউকে ভালবাসেনা। আর আমি যখন আল্লাহর এই বাণী পাঠ করলাম,
“আমি জান্নাতীদের অন্তর থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ও মনোমালিন্য সম্পূর্ণরূপে বের করে দেবো, তারা পরস্পর ভাই ভাইয়ে পরিণত হয়ে মুখোমুখি আসনে (আরাম করে) বসবে।” [সুরা হিজরঃ ৪৭]
তখন দুনিয়ার সুখ-সামগ্রী বর্জন করে আমি জান্নাত যাওয়াকেই প্রাধান্য দিলাম। উস্তাদ তখন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন আমলের বিনিময়ে জান্নাতে যেতে চাও? ছাত্র বললঃ আমি আল্লাহ তাআ’লার এই বাণী পাঠ করেছি, “আর যারা তাদের রব্বের সামনে হাজির হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে তাদের প্রত্যেকের জন্যে (পুরষ্কার হিসেবে) দুইটি করে জান্নাত রয়েছে৷” [সুরা আর-রাহমানঃ ৪৬]
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “আর যে ব্যক্তি নিজের রব্বের সামনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ভীত হলো এবং নিজের নফসকে খারাপ কামনা থেকে বিরত রাখলো, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।” [সুরা নাযিয়াতঃ ৪০-৪১]
সুতরাং, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই সাথে জান্নাতের আশা নিয়ে আল্লাহর ভয়েই আমি নেক আমল করি। আর আমি আমার নফস থেকে খারাপ চিন্তা ও কুপ্রবৃত্তি বের করে ফেলেছি এবং নফসকে একদম সোজা করে ফেলেছি।
(২) আমি দেখলামঃ দুনিয়ার প্রত্যেকেই একজন করে খাস বন্ধু গ্রহণ করে। আমিও একজন বন্ধু খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু দেখলাম, সেই বন্ধুও এক সময় আলাদা হয়ে যাবে। কারণ মৃত্যুর সময় কারো বন্ধুই সাথে যায়না। একমাত্র তার আমলই সাথে যায়। তাই আমি দুনিয়ার কোন মানুষকে বন্ধু না বানিয়ে, শুধুমাত্র আখেরাতের জন্যে নেক আমলকেই বন্ধু বানালাম। উস্তাদ বললেন, “তুমি খুব ভাল করেছ।”
(৩) আমি দুনিয়ার মানুষের মধ্যে দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম, তাদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু জিনিষ আছে, যা সে লুকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু আমি দেখলাম, সেই লুকায়িত জিনিসটিও কখনো দুনিয়ার চোর-ডাকাতেরা নিয়ে চলে যায়। তাই আমি যখন দেখলাম, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য নেক আমল করে, সেই আমল কখনো নষ্ট হয়না, কোন চোর-ডাকাত তা চুরি করতে পারেনা। আল্লাহ তাআ’লা তার বিনিময় পুরাপুরি দান করেন। তাই আল্লাহর জন্য আমল করাকেই সর্বাধিক প্রিয় মনে করলাম।
(৪) আমি যখন দেখলাম দুনিয়ার মানুষেরা রিযিকের জন্য মারামারি, কাটাকাটি করছে এবং পরস্পর হিংসা করছে। আর আমি যখন আল্লাহর এই বাণী পেলাম,
“তারা কি তোমার রব্বের রহমত (রিযিক) বণ্টন করে? দুনিয়ার জীবনে এদের মধ্যে জীবন যাপনের উপায় উপকরণ আমি বণ্টন করে দিয়েছি এবং এদের মধ্য থেকে কিছু লোককে অপর কিছু লোকের উপর অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছি।” [সুরা যুখরুফঃ ৩২]
তখন থেকে রিযিকের জন্য বেশি হাহুতাশ করা এবং দুঃশ্চিন্তা করা সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দিয়েছি।
(৫) আমি যখন দেখলাম, দুনিয়ার মানুষেরা পরস্পরকে শত্রু মনে করে এবং তাদের কেউ অন্য কাউকে দেখতে পারেনা এবং যখন আল্লাহ তাআলার এই বাণী পাঠ করলাম, “আসলে শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তোমরাও তাকে নিজেদের শত্রু মনে করো। সেতো নিজের অনুসারীদেরকে নিজের পথে এজন্য ডাকছে, যাতে তারা জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।” [সুরা ফাতিরঃ ৬]
আল্লাহর এই বাণী উপলব্ধি করার পর আমি মানুষের সাথে শত্রুতা পোষণ করা বাদ দিয়ে কেবল শয়তানকেই আমার একমাত্র শত্রু বলে মনে করলাম।
(৬) আমি দেখলাম দুনিয়ার মানুষেরা টাকা-পয়সা, গাড়ি-ঘোড়া, দুনিয়ার মানুষ ও অন্যান্য সম্পদের উপর নির্ভর করে এবং দুনিয়ার বিপদ-আপদকে ভয় করে। আর আমি যখন দেখলাম এগুলো চিরস্থায়ী নয় এবং যখন দেখলাম, “যে ব্যক্তিই আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য কঠিন অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন এবং এমন পন্থায় তাকে রিযিক দেবেন, যা সে কখনো কল্পনাও করতে পারে না৷ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করে থাকেন।” [সুরা তালাকঃ ২]
তখন আমি দুনিয়ার সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল আল্লাহর উপরেই ভরসা করতে লাগলাম। তখন উস্তাদ বললেন, “সত্যিই তুমি অত্যন্ত উত্তম শিক্ষা গ্রহণ করেছ। আল্লাহই ভাল জানেন।”
কৃতজ্ঞতাঃ শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী।

ধোঁকা

"শহরে কাফেরদের চাল-চলন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয়। এটা হলো সামান্য অর্জন-এরপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট অবস্থান।" - সুরা আলে-ইমরান, ১৯৬-১৯৭।

মনস্তাত্বিক যুদ্ধ

র্তমানে মনস্তাত্বিক যুদ্ধে পরাজিত মুসলিমজাতি!আর এই যুদ্ধের প্রধান মিলিটারি হল পশ্চিমা মদদপুষ্ট মিডিয়া যা ইয়াহুদিদের মিশন বাস্তাবায়ন করতে 24/7 যুদ্ধ করে যাচ্ছে এবং তারা এ ক্ষেত্রে সফল !এই মিডিয়া এমনভাবে মানুষের ব্রেনওয়াসড করছে যার ফলে মানুষ তাদের প্রচারিত সত্যকে মিথ্যা ,এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করছে !

শিশুপর্ন ও পেডোফাইলদের ভয়ংকর তথয!!!

১.

অপ্রত্যাশিতভাবে অনির্ধারিত কালের জন্য ছুটি পাওয়া গেছে। নানা কারনে নজরদারী নেই, জবাবদিহিতা নেই। চিন্তাহীন এবং আনন্দময় একটা সময়। আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগের কথা। সকাল ন’টার মতো বাজছে। রোদ মাথায় নিয়ে হাকডাক করতে করতে ওয়ার্কাররা বাসার সামনের আন্ডার-কন্সট্রাকশান বিল্ডিং-এর ছাদ ঢালাই –এর কাজ করছে। নাস্তা শেষে এক তলার সামনের বারান্দাতে গল্পের বই নিয়ে বসলেও পুরোটা মনোযোগ বইয়ের দিকে নেই। পড়া ফেলে মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। পাহাড়ী এলাকায় বাসা। কিংবা বলা যায় পাহাড় কেটে বানানো আবাসিক এলাকা। বারান্দার ডান দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের খন্ডিত ছিটেফোঁটা।

.
বিক্ষিপ্ত ভাবে এদিক ওদিক তাকাবার সময় খেয়াল হল বারান্দার পাশে পাহাড়ের খন্ডিত ছিটেফোটার অংশে দাড়ানো কেউ একজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বই থেকে পুরোপুরি মাথা না উঠিয়ে আড়চোখে তাকালাম। সমবয়েসী একটা ছেলে। জীর্ন-মলিন পোশাক। সম্ভবত পাতা কুড়োতে এই দিকে আসা। মনে হল আমার চাইতে হাতে ধরা বইয়ের প্রতিই দর্শনার্থীর মনোযোগ বেশি। আড়চোখে ছেলেটাকে বার দুয়েক দেখে নিয়ে কায়দা করে বইটাকে ঘুরিয়ে ধরলাম যাতে ছেলেটা পুরো প্রচ্ছদটা দেখতে পায়। মনে মনে এক গাল হেসে নিলাম। স্বাভাবিক। কেনার সময়ই বইটার প্রচ্ছদে চোখ আটকে গিয়েছিল। বইটার গল্প নিয়ে আমি সন্দিহান ছিলাম। তবুও বলা যায় প্রচ্ছদের আকর্ষনেই অন্যান্য বইগুলোকে ফেলে এ বইটাকে বেছে নেওয়া। মনে মনে বারকয়েক নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম। কাজ ফেলে সমবয়েসী একটা ছেলে আমার বইয়ের প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে থাকা নিঃসন্দেহে আমার সিদ্ধান্তের যথার্থতার অকাট্য প্রমান।
.
বইটা ছিল সেবা প্রকাশনীর জনপ্রিয় কিশোর হরর সিরিযের। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে এক্স-ফাইলস, গুসবাম্পস, রসওয়েল সহ হরর/থ্রিলার/সায়েন্স ফিকশান জাতীয় বিভিন ওয়েস্টার্ন টিভি সিরিয ও সিনেমার জনপ্রিয়তার সময়ে শুরু হয়েছিল “কিশোর হরর” সিরিযের। সেবা প্রকাশনীর নিয়মিত পাঠকদের কাছে, বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া “তিন গোয়েন্দা” পাঠকদের কাছে খুব দ্রুতই জনপ্রিয় ওঠে কিশোর হরর সিরিয। হরর সিরিযের জনপ্রিয়তার প্রভাবে কিছুদিন তিন গোয়েন্দা সিরিয থেকেও “কিশোর চিলার” নামে কিছু বই প্রকাশ করা হয়। আমার হাতে ধরা বইটার নাম ছিল বৃক্ষমানব। প্রচ্ছদে ছিল সবুজ রঙের বিকৃত বিকট এক মুখের ছবি। ৯৭ এ প্রকাশিত “বৃক্ষমানব” ছিল সেবা-র কিশোর হরর সিরিযের প্রথম দিকের বই এবং আমাদের (আমার ও আপুর জয়েন্ট ভেনচার) কেনা কিশোর হরর সিরিযের প্রথম বই। লেখকের নাম, টিপু কিবরিয়া।
.
.

২.
সেবার কিশোর হরর সিরিয আর সিরিযের লেখকের নাম নানা কারন প্রায় ভুলতে বসেছিলাম। বই পড়ার নেশা দীর্ঘদিন ভোগালেও ইংরেজি গল্প আর টিভি-শোর মধ্যম মানের নকল পড়ার চাইতে সোর্স ম্যাটেরিয়াল পড়াটাই বেশি লজিকাল মনে হত। এছাড়া স্কুলের দিনগুলোতে সম্পূর্ণ অবসর সময়টা বইয়ের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে বইয়ের জন্য বরাদ্দটা কমতে থাকে। টিপু কিবরিয়ার বিস্মৃতপ্রায় নামটা মনে করিয়ে দেয় ২০১৪ এর জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত প্রকাশিত বেশ কিছু নিউয রিপোর্ট। প্রায় দু’মাস ধরে প্রকাশিত এসব রিপোর্টের সারসংক্ষেপ পাঠকের জন্য এখানে তুলে ধরছি।
.
আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির ভয়ঙ্কর একটি চক্র বাংলাদেশে বসেই দীর্ঘ নয় বছর পথশিশুদের ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও তৈরি করে আসছিল। আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দেশের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ২০১৪ এর ১০ জুন ইন্টারপোলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশু পর্ণোগ্রাফি তৈরির দায়ে সিআইডি গ্রেফতার করে টি আই এম ফখরুজ্জামান ও তার দুই সহযোগীকে। সিআইডির পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম জানান, এ চক্র আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ছেলেশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি তৈরি করতো। এ চক্রের মূল হোতা টি আই এম ফখরুজ্জামান টিপু কিবরিয়া নামে অধিক পরিচিত। তার বাইরের পরিচয় তিনি দেশের একটি খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থার কিশোর থ্রিলার ও হরর সিরিজের লেখক। এছাড়া তার বেশ কিছু শিশুতোষ গল্প উপন্যাসের বইও রয়েছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে এখন তার অন্ধকার জগতের পরিচয়ই সামনে চলে এসেছে।
.
১৯৯১ সাল থেকে ১০ বছর টিপু সেবা প্রকাশনীর কিশোর পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে ফ্রি-ল্যান্স আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গড়ে তোলেন একটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটিও। রাজধানীর মুগদায় তার একটি স্টুডিও রয়েছে। এ সময় তার তোলা ছেলে পথশিশুদের স্থির ছবি ইন্টারনেটে বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটারম ফ্লিকারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতেন। এই ছবি দেখে সুইজারল্যান্ড ও জার্মানির পর্নো ছবির ব্যবসায়ীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে নগ্ন ছবি পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে টাকারও প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবে রাজি হয় টিপু। ফুঁসলিয়ে ও টাকার বিনিময়ে পথশিশুদের সংগ্রহ করে নগ্ন ছবি তুলে পাঠাতে শুরু করেন।
.
কিছু ছবি পাঠানোর পরই পর্নো ছবি পাঠানোর প্রস্তাব দেয়া হয় তাকে। শুরু হয় এই পর্নো ছবি (ভিডিও) তৈরির কাজ। সময়টা ২০০৫ সাল। নুরুল আমিন ওরফে নুরু মিয়া, নুরুল ইসলাম, সাহারুলসহ কয়েকজনের মাধ্যমে বস্তিসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ছিন্নমূল ছেলে শিশুদের সংগ্রহ করেন টিপু। মুগদার মানিকনগরের ওয়াসা রোডের ৫৭/এল/২ নম্বর বাড়ির নিচতলায় দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে জমে ওঠে ফ্রি-ল্যান্স ফটোগ্রাফির আড়ালে পথশিশুদের দিয়ে পর্নো ছবি নির্মাণ ও ইন্টারনেটে বিদেশে পাঠানোর রমরমা ব্যবসা। নয় বছরে কমপক্ষে ৫০০ শিশুর পর্ণোগ্রাফিক ভিডিও তৈরি করে টিপু ও তার সহযোগীরা। ৮-১৩ বছরের এসব পথশিশুদের ৩০০-৪০০ টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে এ কাজে ব্যবহার করা হতো।
.
টিপু এবং তার ওই সহযোগীরা শিশুদের সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতেন। আর বেশির ভাগই এসব ভিডিও করতেন টিপু নিজেই। একপর্যায়ে এই জঘন্য অপরাধ টিপুর নেশা ও পেশায় পরিণত হয়ে যায়। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে টিপু বলেছেন, তিনি পর্নো ছবি তৈরি করে জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডের তিন ব্যক্তির কাছে পাঠাতেন। এঁদের একেকজনের কাছ থেকে প্রতি মাসে তিনি ৫০ হাজার করে দেড় লাখ টাকা পেতেন। তবে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি জানিয়েছে, টিপু কিবরিয়া তাঁর তৈরি পর্নো ছবি ১৩টি দেশের ১৩ জন নাগরিকের কাছে পাঠাতেন। এসব দেশের মধ্যে আছে কানাডা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, মধ্য ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। তদন্তে আরো জানা গেছে বেশির ভাগ ছবি ও ভিডিও পাঠানো হতো জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে। এরপর সেখানকার ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব পর্নো ছবি বিক্রি করতো। প্রতিটি সিডির জন্য ৩শ’ থেকে ৫শ’ ডলার পেতেন টিপু। এই টাকা অনলাইন ব্যাংকিং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টিপুর কাছে পাঠানো হতো।
.
টিপুর মাধ্যমে শিশু পর্নো ছবি বিক্রির দুই হোতা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে জার্মানির এক পর্নো ছবি বিক্রেতা বাংলাদেশে এসেছিলেন। আর ২০১২ সালে আসেন সুইজারল্যান্ডের আরেক পর্নো বিক্রেতা। তারা ওঠেন ঢাকার আবাসিক হোটেলে। সে সময় টিপু তাদের কাছে ছেলে শিশু পাঠান। তারা ওই শিশুদের নিয়ে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হন। এজন্য টিপু এবং তার সহযোগীরা পেয়েছেন ৮ হাজার ডলার।
.
ইন্টারপোলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ১০ ও ১১ জুন খিলগাঁও, মুগদা এবং গোড়ানে অভিযান চালিয়ে টিপু কিবরিয়া এবং তার তিন সহযোগী নুরুল আমিন, নুরুল ইসলাম ও সাহারুলকে গ্রেফতার করে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম টিম। স্টুডিওতে আপত্তিকর অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৩ বছরের এক শিশুর সাথে টিপুর সহযোগী নুরুল ইসলানকে। টিপুর খিলগাঁওয়ের তারাবাগের ১৫১/২/৪২ নম্বর বাড়ির বাসা ও স্টুডিও থেকে শতাধিক পর্নো সিডি, আপত্তিকর শতাধিক স্থির ছবি, ৭০টি লুব্রিকেটিং জেল, ৪৮ পিস আন্ডারওয়ার, স্টিল ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক, সিপিইউ, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
.
http://bit.ly/2atUZJi
http://bit.ly/2aQzPe9
http://bit.ly/2atZg5N
http://bit.ly/2aPjZjN
http://bit.ly/2aPjTsf
http://bit.ly/2aPkiuM
http://bit.ly/2auZpmn
http://bit.ly/2atZFVN
.
টিপু কিবরিয়ার ফ্লিকার লিঙ্ক - http://bit.ly/2b1ZXiu
টিপু কিবরিয়ার ব্লগ (সামওয়্যার ইন ব্লগ) লিঙ্ক - http://bit.ly/2aHYxuv
.
উপরের তথ্যগুলো ভয়ঙ্কর। তবে বাস্তব অবস্থা এর চেয়ে লক্ষগুন বেশি ভয়ঙ্কর। টিপু কিবরিয়ারা একটা বিশাল নেটওয়ার্কের ছোট একটা অংশ মাত্র। বিশ্বব্যাপী চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি ও পেডোফাইল নেটওয়ার্কের ব্যাপ্তি, ক্ষমতা ও অবিশ্বাস্য অসুস্থ অমানুষিক নৃশংসতার প্রকৃত চিত্র এতোটাই ভয়াবহ যে প্রথম প্রথম এটা বিশ্বাস করাটা একজন ব্যাক্তির জন্য কঠিন হয়ে যায়। আর একবার এ অসুস্থতা ও বিকৃতির বাস্তবতা, মাত্রা, প্রসার, ও নাগাল সম্পর্কে একবার জানার পর এ ভয়াবহতাকে মাথা থেকে দূর করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের চারপাশের বিকৃত অসুস্থ পৃথিবীটার এ এমন এক বাস্তবতা যা সম্পর্কে জানাটাই একজন মানুষের মনকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এ এমন এক অন্ধকার জগত যাতে মূহুর্তের জন্য উকি দেওয়া একজন মানুষকে আমৃত্যু তাড়া করে বেড়াতে পারে।
.
টিপু কিবরিয়ার লেখা কিশোর হরর সিরিযের বইগুলোর ব্যাক কাভারে সবসময় দুটা লাইন দেয়া থাকতো – “পাঠক, সাবধান! ভয়ের জগতে প্রবেশ করছ তুমি!!” এ লাইনদুটো কিশোর হরর সিরিযের ট্যাগলাইনের মতো ছিল। সেবার বইগুলোর পাতায় উঠে আসা অন্ধকারের কল্পিত গল্পগুলোর জন্য লাইনদুটোকে অতিশয়োক্তি মনে হলেও, যে অন্ধকারে বাস্তবর জগতের চিত্র তুলে ধরতে যাচ্ছি তার জন্য এ লাইনদুটোকে কোনক্রমেই অত্যুক্তি বলা যায় না। তাই টিপু কিবরিয়াকে দিয়ে যে গল্পের শুরু সে গল্পের গভীরে ঢোকার আগে টিপুর ভাষাতেই সতর্ক করছি–
.
“পাঠক, সাবধান!
ভয়ের জগতে প্রবেশ করছ তুমি!!”
.
.
৩.
টিপু কিবরিয়াকে যদি ম্যানুফ্যাকচারার হিসেবে চিন্তা করেন তবে তার বানানো শিশু পর্ণোগ্রাফির মূল ডিস্ট্রিবিউটার এবং ব্যবহারকারীরা হল পশ্চিমা বিশেষ করে ইউরোপিয়ানরা। শুধুমাত্র চোখের ক্ষুধা মেটানোয় তৃপ্ত না হয়ে টিপুর এ ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশে ঘুরে গেছে। কিছু ডলারের বিনিময়ে টিপু কিবরিয়া তার ইউরোপিয়ান ক্রেতাদের জন্য তৃপ্তির ব্যবস্থা করেছে। দুঃখজনক সত্য হল, পেডোফিলিয়া নেটওয়ার্ক ও চাইল্ড পর্ণোগ্রাফির বিশ্বব্যাপী ধারা এটাই। ঠিক যেভাবে নাইকি-র মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো কম খরচে তাদের পোশাকের চাহিদা মেটানোর জন্য ম্যানুফাকচারিং এর কাজটা “তৃতীয় বিশ্বের” দেশগুলোর কাছে আউটসোর্স করে, ঠিক তেমনিভাবে পশ্চিমারা বিকৃতকামীরা শিশু পর্নোগ্রাফি তৈরি এবং শিশুকামের জন্য শিশু সংগ্রহের কাজটা আউটসোর্স করে। টিপু কিবরিয়ার মতো এরকম এ ইন্ডাস্ট্রির আরো অনেক ম্যানুফ্যাকচারার ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। তিনটি উদাহরন তুলে ধরছি-
.
.
রিচার্ড হাকল – ১৯৮৬ তে ব্রিটেনে জন্মানো হাকল তার “নেশা ও পেশার” বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয় দক্ষিন পূর্ব এশিয়াকে। লাওস, ক্যাম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইন্ডিয়াতে পদচারনা থাকলেও হাকল তার মূল বেইস হিসেবে বেছে নেয় মালয়শিয়াকে। কুয়ালামপুরের আশেপাশে বিভিন্ন দারিদ্র দারিদ্রকবলিত অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীর মাঝে সক্রিয় খ্রিষ্টান মিশনারীদের সাথে সম্পর্কের কারনে সহজেই হাকল মালয়শিয়াতে নিজের জন্য জায়গা করে নেয়। কখনো ফ্রি-ল্যান্সিং ফটোগ্রাফার, কখনো ডকুমেন্টারি পরিচালক, কখনো ইংরেজী শিক্ষক, আর কখনো নিছক খ্রিষ্টান মিশনারী হিসেবে মালয়শিয়া সহ দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুদের কাছাকাছি পৌছুতে সক্ষম হয় হাকল।
.
২০০৬ থেকে শুরু করে প্রায় ৮ বছরের বেশি সময় ধরে দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দরিদ্র শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন চালায় হাকল। তার নির্যাতনের শিকার হয় ৬ মাস থেকে ১৩ বছর বয়সী দুইশ’র বেশি শিশু। গ্রেফতারের সময় তার ল্যাপটপে পাওয়া যায় বিশ হাজারের বেশি পর্ণোগ্রাফিক ছবি। শিশু ধর্ষনের ভিডি এবং ছবি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি করতো হাকল। ছবি ও ভিডিওর সাথে যোগ করতো বিভিন্ন মন্তব্য, ক্যাপশান। এরকম একটি ওয়েবপোষ্টে হাকল লেখে –
“পশ্চিমা মধ্যবিত্ত ঘরের শিশুদের চাইতে দরিদ্রদের শিশুদের পটানো অনেক, অনেক বেশি সহজ।“
.
তিন বছর বয়েসী একটি মেয়ে শিশুকে ধর্ষনরত অবস্থা ছবির নিচে গর্বিত হাকলের মন্তব্য ছিল – “আমি টেক্কা পেয়ে গেছি! আমার কাছে এখন একটা ৩ বছরের বাচ্চা আছে যে কুকুরের মতো আমার আনুগত্য করে। আর এ নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো কেউ এখানে নেই!”
.
অন্যান্য শিশুকামীদের জন্য পরামর্শ এবং বিভিন্ন গাইডলাইন সম্বলিত "Paedophiles And Poverty: Child Lover Guide"” নামে একটি বইও লিখেছিল রিচার্ড হাকল। হাকলের স্বপ্ন ছিল দক্ষিন এশীয় গরীব কোন মেয়েকে বিয়ে করে একটি অনাথ আশ্রম খোলা যাতে করে নিয়মিত নতুন দরিদ্র শিশুদের সাপ্লাই পাওয়া যায় কোন ঝামেলা ছাড়াই। ২০১৪ সালে রিচার্ড হাকলকে গ্রেফতার করা হয়।
.
http://bit.ly/2ahsaVd
http://bit.ly/2azfNjo
http://bit.ly/2aMBJeb
http://bit.ly/2auZWEM
http://bit.ly/2aAOeXx
.
.
ফ্রেডি পিটস – হাকলের জন্মের আগেই হাকলের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছিল ফ্রেডি পিটস। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ১৯৯১ পর্যন্ত প্রায় ১৭ বছর, গোয়াতে গুরুকুল নামে একটি অনাথ আশ্রম পরিচালনা করে ফ্রেডি। হাকলের মতো ফ্রেডিও ছিল ক্যাথলিক চার্চের সাথে যুক্ত। এলাকায় মানুষ তাকে চিনতো লায়ন ক্লাবের সিনিয়র সদস্য, নির্বিবাদী সমাজসেবক ‘ফাদার ফ্রেডি’ হিসেবে। টিপু কিবরিয়া এবং রিচার্ড হাকলের মতোই ফাদার ফ্রেডির আয়ের উৎস ছিল পেডোফিলিয়া এবং চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি। তার সাথে সম্পর্ক ছিল ব্রিটেন, হল্যান্ড, অ্যামেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের শিশুকামী সংগঠনের। ফাদার ফ্রেডি তার আশ্রমের শিশুদের ইউরোপিয়ান টুরিস্ট, বিশেষ করে সমকামী ইউরোপিয়ান পুরুষদের কাছে ভাড়া দিতেন। শিশুদের ধর্ষনের বিভিন্ন অবস্থার ছবি তুলে ইউরোপীয়ান ক্রেতাদের কাছে বিক্রিও করতো ফ্রেডি। নিজেও অংশগ্রহন করতো ধর্ষনে। বিশেষ “ক্লায়েন্টদের” মনমতো শিশু সংগ্রহ করে তাদের ইউরোপে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হতো ফ্রেডির “গুরুকুল” থেকে। এভাবে প্রায় দুই দশক ধরে ফাদার ফ্রেডি গোয়াতে গড়ে তোলে এক বিশাল ইন্ডাস্ট্রি।
.
ফ্রেডির এসব কার্যকলাপের সাথে বিভিন্ন বিদেশী ব্যাক্তি এবং আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত এমন প্রমান থাকা সত্ত্বেও গোয়ার রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার সর্বাত্বক চেষ্টা করে এ বিষয়গুলো চাপা দেয়ার। এমনকি প্রথম পর্যায়ে চেষ্টা করা হয়েছিল দুর্বল মামলা দিয়ে ফ্রেডিকে খালাস দেয়ার। খোদ রাজ্যের এটর্নী জেনারেল এবং ট্রায়াল জাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ফ্রেডির বিরুদ্ধে পাওয়া প্রমান ও নথিপত্র ধ্বংস করার চেষ্টার।
.
উচু মহলের এসব কূটকৌশলের সামনে রুখে দাড়ায় কিছু শিশু অধিকার সংস্থার এবং কর্মী। তাদের একজন শিলা বারসি। রাজ্য সরকার, মন্ত্রী, বিচারবিভাগ এবং মিডিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে ফ্রেডি পিটসের মামলার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন শিলা। গ্রেফতারকালীন রেইডে ফাদার ফ্রেডির ফ্ল্যাটে পাওয়া যায় ড্রাগস, পেইন কিলার, এবং সিরিঞ্জের এক বিশাল কালেকশান। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ২৩০৫ টি পর্ণোগ্রাফিক ছবি। মামলার কারনে শিলা বাধ্য প্রতিটি ছবি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে। ফাদার ফ্রেডির ফ্ল্যাটে পাওয়া ২৩০৫ টি ছবিতে যে অন্ধকার অমানুষিক পৈশাচিকতার জগতকে তিনি দেখেছিলেন তার ভয়াবহ স্মৃতি আমৃত্যু তাকে তাড়া করে বেড়াবে বলেই শিলার বিশ্বাস।
.
ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে শিলা বলেন -
“সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছবিটি ছিলে আড়াই বছর বয়েসী একটি মেয়ের। মেয়েটিকে ছোট ছোট হাত আর পা গুলো ধরে তাকে চ্যাংদোলা করে অনেকটা হ্যামকের মতো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল...একটা বিশালদেহী লোক...লোকটাকে...লোকটার শরীরের আংশিক দেখা যাচ্ছিল...বাচ্চাটাকে ধর্ষন করছিল। বাচ্চাটার কুঁচকানো চেহারায় ফুটে ছিল প্রচন্ড ব্যাথা আর শকের ছাপ। ছবি দেখেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল বাচ্চাটা সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করছিল। “
.
ছবিগুলো দেখার পর শিলা সিদ্ধান্ত নেন যেকোন মূল্যে ফ্রেডির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার। ১৯৯২ সালে ফ্রেডি পিটসের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়, এবং ৯৬ এর মার্চে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাভগ্রত অবস্থায় ২০০- সালে ফ্রেডি পিটস মারা যায়।
.
http://bit.ly/2aQxJuW
http://ind.pn/2atVuD3
http://bit.ly/2atZDgG
http://bit.ly/2aN0QxZ
.
.
পিটার স্কালি – পিটার স্কালির গল্পের মতো এতো বিকৃত, নৃশংস, এতোটা বিশুদ্ধ পৈশাচিকতার কাহিনী খুব সম্ভবত আমাদের এ বিকৃতির যুগেও খুব বেশি খুজে পাওয়া যাবে না। স্কালি অস্ট্রেলিয়ান। নিজ দেশে ব্যাবসায়িক ফ্রডের পর নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে চলে আসে ফিলিপাইনে। কিছুদিন রিয়েল এস্টেট ব্যবসার চেষ্টার পর মনোযোগ দেয় আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি বানানোয়। বেইস হিসেবে বেছে নেয় দারিদ্র কবলিত মিন্দানাওকে। গড়ে তোলে এক চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি সাম্রাজ্য।
.
টিপু কিবরিয়া, হাকল আর ফাদার ফ্রেডির মতো স্কালিও নিজেই ছিল, অভিনেতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার ও পরিচালক। তবে বাকিরা শুধুমাত্র শিশুকামের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও, স্কালির বিকৃতিকে নিজে যায় আরেকটি পর্যায়ে। সে শিশুকামের সাথে মিশ্রণ ঘটায় টর্চারের। স্ক্লাইরর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভিডিওতে ধর্ষনের পাশাপাশি মারাত্বক পর্যায়ের টর্চার করা হয়, ১৮ মাস বয়েসী একটি মেয়েশিশুকে। ১২ ও ৯ বছরের দুটি মেয়েকে বাধ্য করা হয় ধর্ষন ও নির্যাতনে অংশগ্রহন করতে। যখন ভিডিও বন্ধ থাকতো তখন বন্দী এ মেয়ে দুটিকে স্কালি তার বাসায় বিবস্ত্র অবস্থায় কুকুরের চেইন পড়িয়ে রাখতো এবং তাদের বাধ্য করতো বাসার আঙ্গিনাতে নিজেদের কবর খুড়তে। পরবর্তীতে এদের একজনকে স্কালি হত্যা করে, এবং নিজের রান্নাঘরের টাইলসের নিচে মেয়েটির লাশ লুকিয়ে রাখে। মেয়েটিকে হত্যা করার ভিডিও স্কালি ধারন করে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভিডিওটি বিক্রি করা হয়।
.
স্ক্লালির ভিডিওগুলো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপিয়ান পেডোফাইল এবং চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি নেটওয়ার্কে। রাতারাতি স্কালি এবং তার সাইট পরিণত হয় “সেলেব্রিটি কাল্ট-হিরোতে”। শুরুতে তার ভিডিওগুলোর জন্য Pay-Per View Streaming অফার করলেও, চাহিদা ওবং জনপ্রিয়তা বাড়ার ফলে এক পর্যায়ে স্কালি লাইভ স্ট্রিমিং করা শুরু করে। ২০১৫ এর ফেব্রুয়াত্রিতে স্ক্লালি ও তার সহযোগী দুই ফিলিপিনী তরুণীকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারী অস্ট্রেলিয়ান ও ফিলিপিনো পুলিশের ধারনা বিভিন্ন সময়ে পিটার কমপক্ষে ৮ জন শিশুর উপর যৌন ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর ভিডিও ধারন করেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে।
.
http://bit.ly/2ax6AuF
http://bit.ly/2ahqlHI
http://bit.ly/2aPkydq
http://bit.ly/2aMByzz
http://bit.ly/2azf9Co
.
.
.
৪.
টিপু কিবরিয়া, রিচার্ড হাকল, ফ্রেডি পিটস, পিটার স্কালি। ভিন্ন ভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে, তাদের অপরাধ এবং বিকৃতির মধ্যে বেশ কিছু যোগসূত্র বিদ্যমান। এরা সবাই শিকারের জন্য বেছে নিয়েছিল দারিদ্রপীড়িত এশিয়ান শিশুদের। এদের মূল অডিয়েন্স এবং ক্লায়েন্ট বেইস ছিল পশ্চিমা, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান। আর এরা চারজনই চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি এবং গ্লোবাল পেডোফিলিয়া নেটওয়ার্কের সাপ্লাই চেইনের খুব ক্ষুদ্র একটা অংশ। খুব অল্প পুজিতে, এবং অল্প সময় এরা সক্ষম হয়েছিল বিশাল গ্লোবাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে কিংবা এধরনের নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হতে। এ দৃষ্টিকোন থেকে এ চারজনকে সফল উদ্যোক্তাও বলা যায়।
.
এ চার জন ধরা পড়েছে এটা মনে করে আমরা আত্বতৃপ্তি ভোগ করতেই পারি, কিন্তু বাস্তবতা হল একটা বিশাল মার্কেট, একটা বিপুল চাহিদা ছিল বলে, আছে বলেই এতো সহজে এ লোকগুলো তারা যা করেছে তা করতে সক্ষম হয়েছিল। আমাদের কাছে এ লোকগুলোর কাজ, তাদের বিকৃতি, তাদের পৈশাচিকতা যতোই অচিন্তনীয় মনে হোক না কেন বাস্তবতা হল পিটার স্কালি কিংবা টিপু কিবরিয়ারা এ অন্ধকার জগতের গডফাদার না, তারা বড়জোড় রাস্তার মোড়ের মাদকবিক্রেতা। একজন গ্রেফতার হলে তার জায়গায় আরেকজন আসবে।
.
২০১৪ তে রিচার্ড হাকলের গ্রেফতারের পর ২০১৫, সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হয় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা শিশুকামী ও শিশুনির্যাতনকারী নেটওয়ার্কের হোতা ৭ ব্রিটিশ । ভয়ঙ্কর অসুস্থতায় মেতে ওঠা এই লোকেরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুদের উপর তাদের পৈশাচিক নির্যাতনে লাইভ স্ট্রিমিং বা সরাসরি সম্প্রচার করতো। বিশেষ অফার হিসেবে তারা লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে অন্যান্য শিশুকামীদের সুযোগ দিতো ঠিক কিভাবে শিশুদেরকে নির্যাতন ও ধর্ষন করা হবে তার ইন্সট্রাকশান দেবার। এভাবে তারা অর্থের বিনিময়ে নিজেদের সহ-মুক্তচিন্তকদের আনন্দের ব্যবস্থা করতেন। ব্রিটেন জুড়ে এরকম আরো অনেক সক্রিয় নেটওয়ার্কের অস্তিত্বের প্রমান মিলেছে।
http://bit.ly/26aoSXO
.
ফ্রেডি পিটসের গ্রেফতারের পরও গোয়ার শিশুকাম ভিত্তিক টুরিস্ট ইন্ডাস্ট্রির প্রসার থেমে থাকেনি। ফাদার ফ্রেডির শূন্যস্থান পুরন করেছে অন্য আরো অনেক ফ্রেডি। তেহেলকা.কমের ২০০৪ এর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় ১০,০০০ পেডোফাইল গোয়া থেকে ঘুড়ে যায়। গোয়ায় অবস্থানকালীন সময়ে প্রতিটি পেডোফাইল গড়ে আটজন শিশুর উপর যৌন নির্যাতন চালায়।
http://bit.ly/2aPkH0u
http://bit.ly/2aQxpfC
.
২০১৫ তে অস্ট্রেলিয়াতে গ্রেফতার হয় ম্যাথিউ গ্র্যাহ্যাম। ২২ বছর বয়েসী ন্যানোটেকনোলজির ছাত্র ম্যাথিউ নিজের বাসা থেকে গড়ে তোলে এক অনলাইন চাইল্ড পর্ণগ্রাফি এবং পেডোফিলিয়া সাম্রাজ্য। ম্যাথিউ নিজে কখনো সরাসরি যৌন নির্যাতনে অংশগ্রহন না করলেও সক্রিয় পেডোফাইলদের জন্য সে অসংখ্যা সাইট এবং ফোরাম হোস্ট করত। বিশেষভাবে শিশুদের উপর ধর্ষনের সাথেসাথে চরম মাত্রার শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও প্রমোট করা ছিল ম্যাথিউর স্পেশালিটি। ম্যাথিউর নেটয়ার্কের সাথে সম্পর্ক ছিল আরেক অস্ট্রেলিয়ান পিটার স্কালির।
http://bit.ly/2aSy25e
.
১৫-তেই গ্রেফতার হয় আরেক অস্ট্রেলিয়ান শ্যানন ম্যাককুল। সরকারী কর্মচারী শ্যানন কাজ করত সরকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাডিলেইড চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে। এ সেন্টারের বিভিন্ন শিশুরা ছিল শ্যাননের ভিকটিম, এবং তাদের অধিকাংশ ছিল ৩-৪ বছর কিংবা বয়সী কিংবা তার চেয়েও ছোট। শ্যানন যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের ভিডিও নিজের সাইট ও ফোরামের মাধ্যমে আপলোড ও বিক্রি করতো। খুব কম সময়েই শ্যাননের সাইট ও ফোরাম কুখ্যাতি অর্জন করে।
.
http://bit.ly/2ax9gbW
http://bit.ly/2aSBdtP
http://ab.co/1UpMm3Q
.
এভাবে প্রতিটি শূন্যস্থানই কেউ না কেউ পূরন করে নিয়েছে। টিপু কিবরিয়ার রেখে যাওয়া স্থানও যে অন্য কেউ দখল করে নেয় নি এটা মনে করাটা বোকামি। আমরা জানতে পারছি না হয়তো, কিন্তু যতোক্ষন পর্যন্ত চাহিদা থাকবে ততোক্ষন যোগান আসবেই। সহজ সমীকরণ। ইকোনমিক্স ১০১। ২০০৬ এ প্রকাশিত ওয়ালস্ট্রীট জার্নালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী চাইল্ড পর্ণোগ্রাফিতে প্রতিবছর লেনদেন হয় ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটা ২০০৬ এর তথ্য। গত দশ বছরে মার্কেটে এসেছে হাকল, স্কালি, শ্যানন, গ্র্যাহামের মতো আরো অনেক “উদ্যাোক্তা”, বেড়েছে মার্কেটের আকার। ২০১১ সালের একটি রিসার্চ অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১১, এ তিনবছরে অনলাইনে চাইল্ড পর্ণোগ্রাফি সংক্রান্ত ইমেজ এবং ভিডিও বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭৭৪%।
http://on.wsj.com/2aAOh5I
http://bit.ly/2aPkxpT
.
ইন্ডেক্সড ইন্টারনেট বা সাধারনভাবে ইন্টারনেট বলতে আমরা যা বুঝি তার তুলনায় ডিপওয়েব প্রায় ৫০০ গুন বড়। এ ডিপওয়েবের ৮০% বেশি ভিযিট হয় শিশুকাম, শিশু পর্ণোগ্রাফি এবং শিশুদের উপর টর্চারের ভিডিও ইমেজের খোজে।
http://bit.ly/2aQyq7p
.
.
বিষয়টার ব্যাপকতা একবার চিন্তা করুন। এ বিকৃতির প্রসারের মাত্রাটা অনুধাবনের চেষ্টা করুন। পৃথিবীতে আর কখনো এধরনের বিকৃতি দেখা যায় নি এটা বলাটা ভুল হবে। পম্পেই, বা গ্রীসের কামবিকৃতির কথা আমরা জানি, আমরা জানি সডোম আর গমোরাহর ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্প্রদায় কওমে লূতের কথা। কিন্তু বর্তমানে আমর যা দেখছি এ মাত্রার বিকৃতি ও তার বিশ্বায়ন, এ মাত্রার ব্যবসায়ন, এ ব্যাপ্তি মানব ইতিহাসের আগে কখনো দেখা গেছে বলে আমার জানা নেই। কেন এতো মানুষ এতে আগ্রহী হচ্ছে? কেন জ্যামিতিক হারে এ ইন্ডাস্ট্রি প্রসারিত হচ্ছে? কেন এতোটা মৌলিক পর্যায়ে মানুষের অবিশ্বাস্য বিকৃতি ঘটছে এ হারে? কেন মানুষের ফিতরাতের বিকৃতি ঘটছে? আর কেনই এরকম পৈশাচিক ঘটনার পরও এধরনের ইন্ডাস্ট্রি শুধু টিকেই থাকছে না বরং আরো বড় হচ্ছে? শ্যানন-স্কালি-টিপু কিরিয়াদের এ নেটওয়ার্কের গডফাদার কারা? কোন খুঁটির জোরে তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে?
.
একে কি শুধুমাত্র বিচ্ছিন কোন ঘটনা, কিংবা অসুস্থতা বলে দায় এড়ানো সম্ভব? সমস্যাটা কি চিরাচরিত কাল থেকেই ছিল এবং বর্তমান আধুনিক সভ্যতার যুগে এসে এর প্রসার বৃদ্ধি পেয়েছে? নাকি এর পেছনে ভূমিকা রয়েছে মিডিয়া ও পপুলার কালচারের? বিষয়টি কি মৌলিক ভাবে মানুষের যৌনতার মাঝে বিরাজমান কোন বিকৃতির সাথে যুক্ত? নাকি এ বিকৃতি আধুনিক পশ্চিমা দর্শনের যৌনচিন্তা এবং আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতার মৌলিক অংশ?
[ইন শা আল্লাহ চলবে]
আসিফ আদনান

দায়িত্বজ্ঞান

একবার একটা লঞ্চ দূর্ঘটনায় পড়লো। লঞ্চের এক দম্পত্তি একটা লাইফবোট পেল। কিন্তু স্বামীটা বুঝে ফেললো সেখানে একজনের বেশি উঠতে পারবে না। লোকটা তার স্ত্রীকে পিছনে ঠেলে দিয়ে নিজে লাফিয়ে উঠে পড়লো। ডুবন্ত লঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা স্বামীর উদ্দেশ্যে একটাই মাত্র বাক্য চিৎকার করে বলেছিলো।
শিক্ষক এটুকু বলে থামলেন, চারদিকে তাকিয়ে ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া বুঝতে চাইলেন, “তোমাদের কি মনে হয়? কি বলেছিলো মহিলা!”
-“তুমি একটা ইতর, আমি কি অন্ধই না ছিলাম!” অধিকাংশ ছাত্রই এ ধরনের জবাব দিলো।
শিক্ষক খেয়াল করলেন একটা ছেলে পুরোটা সময় ধরেই চুপ, তার মতামত জানতে চাইলে সে বললো, “স্যার, আমার বিশ্বাস, মহিলাটি বলেছিল, আমাদের বাচ্চাটার যত্ন নিও, ওকে দেখে রেখ।”
বিস্মিত হয়ে শিক্ষক জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি এই গল্প আগে শুনেছ, তাই না!”
ছেলেটি মাথা নেড়ে জবাব দিলো, “ আমার মাও অসুখে মারা যাওয়ার পূর্বমূহূর্তে বাবাকে একথাই বলেছিলো।”
শিক্ষক একমত হলেন, তুমিই ঠিক।
লঞ্চটা ডুবে গেলো এবং বাড়ি ফিরে লোকটা একাকী মেয়েকে যত্ন করে বড় করলো।
লোকটি মারা যাওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে তাদের কন্যা বাবার একটি ডায়েরী পেল। সেখানে সে আবিষ্কার করলো, লঞ্চযাত্রায় যাওয়ার আগেই মায়ের দুরারোগ্য অসুখ ধরা পড়েছিলো, চরম মূহূর্তে তার বাবা তাই বাঁচার একমাত্র উপায়ের সদ্ব্যবহার করেছে।
ডায়েরীতে তার বাবা লিখেছে, “আমারও তোমার সাথে সাগরের তলে ডুবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, কিন্তু শুধু মেয়ের কথা ভেবে তোমাকে একাই সাগর তলে চিরদিনের জন্য ছেড়ে আসতে হলো।”
গল্প শেষ হলো, ক্লাস একদম চুপ।
শিক্ষক বুঝলেন, ছাত্রেরা গল্পের শিক্ষাটা ধরতে পেরেছে। ভালো এবং মন্দ, পৃথিবীর সব কিছুর পেছনেই অনেক জটিলতা আছে যা সব সময় বোঝা যায় না।
-----------------------------------------------
আমাদের কখনোই শুধুমাত্র উপরের তল দেখেই যাচাই করা উচিত না, অন্যকে না বুঝেই বিচার করে ফেলাটা বেশ বোকামি।
‪#‎যারা‬ খাবারের বিলটা সবসময়ই নিজে দিতে চায়, তার মানে এই নয় যে তার টাকা উপচে পড়ছে, এর কারন সে টাকার চেয়ে বন্ধুত্বকে বড় করে দেখে।
যারা আগে ভাগেই কাজ করে ফেলে, এর মানে সে বোকা না, আসলে তার দায়িত্বজ্ঞান রয়েছে।
যারা ঝগড়া বা বাকবিতন্ডার পরে আগে মাফ চেয়ে নেয়, সেই ভুল ছিলো এমনটা নয়, বরঞ্চ সে চারপাশের মানুষকে মূল্যায়ন করে।
তোমাকে যে সাহায্য করতে চায় সে তোমার কাছে কোন কিছু আশা করে না, বরং একজন প্রকৃত বন্ধু মনে করে...
সংগৃহিত

'একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাস'/ আরিফ আজাদ

আমি রুমে ঢুকেই দেখি সাজিদ কম্পিউটারের সামনে উবুঁ হয়ে বসে আছে।খটাখট কি যেন টাইপ করছে হয়তো। আমি জগ থেকে পানি ঢালতে লাগলাম। প্রচন্ড রকম তৃষ্ণার্ত।তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাবার জোগাড়।সাজিদ কম্পিউটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,- 'কি রে, কিছু হইলো?'
আমি হতাশ গলায় বললাম,- 'নাহ।'
- 'তার মানে তোকে একবছর ড্রপ দিতেই হবে?'- সাজিদ জিজ্ঞেস করলো।
আমি বললাম,- 'কি আর করা। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।'
সাজিদ বললো,- 'তোদের এই এক দোষ,বুঝলি? দেখছিস পুওর এ্যাটেন্ডেন্সের জন্য এক বছর ড্রপ খাওয়াচ্ছে, তার মধ্যেও বলছিস, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ভাই, এইখানে কোন ভালোটা তুই পাইলি,বলতো?'
-
সাজিদ সম্পর্কে কিছু বলে নেওয়া দরকার।আমি আর সাজিদ রুমমেট। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইক্রো বায়োলজিতে পড়ে।প্রথম জীবনে খুব ধার্মিক ছিলো।নামাজ-কালাম করতো।বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কিভাবে কিভাবে যেন এগনোষ্টিক হয়ে পড়ে। আস্তে আস্তে স্রষ্টার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে এখন পুরোপুরি নাস্তিক হয়ে গেছে।ধর্মকে এখন সে আবর্জনা জ্ঞান করে।তার মতে পৃথিবীতে ধর্ম এনেছে মানুষ।আর 'ইশ্বর' ধারনাটাই এইরকম স্বার্থান্বেষী কোন মহলের মস্তিষ্কপ্রসূত।
সাজিদের সাথে এই মূহুর্তে তর্কে জড়াবার কোন ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু তাকে একদম ইগনোর করেও যাওয়া যায়না।
আমি বললাম,- 'আমার সাথে তো এর থেকেও খারাপ কিছু হতে পারতো,ঠিক না?'
- 'আরে, খারাপ হবার আর কিছু বাকি আছে কি?'
-- 'হয়তো।'
- 'যেমন?'
- 'এরকমও তো হতে পারতো,ধর, আমি সারাবছর একদমই পড়াশুনা করলাম না।পরীক্ষায় ফেইল মারলাম।এখন ফেইল করলে আমার এক বছর ড্রপ যেতো।হয়তো ফেইলের অপমানটা আমি নিতে পারতাম না।আত্মহত্যা করে বসতাম।'
সাজিদ হা হা হা হা করে হাসা শুরু করলো। বললো,- 'কি বিদঘুটে বিশ্বাস নিয়ে চলিস রে ভাই।'
এই বলে সে আবার হাসা শুরু করলো।বিদ্রুপাত্মক হাসি।
-
রাতে সাজিদের সাথে আমার আরো একদফা তর্ক হোলো।
সে বললো,- 'আচ্ছা, তোরা যে স্রষ্টায় বিশ্বাস করিস, কিসের ভিত্তিতে?'
আমি বললাম,- 'বিশ্বাস দু ধরনের। একটা হোলো, প্রমানের ভিত্তিতে বিশ্বাস।অনেকটা,শর্তারোপে বিশ্বাস বলা যায়। অন্যটি হোলো প্রমান ছাড়াই বিশ্বাস।'
সাজিদ হাসলো। সে বললো,- 'দ্বিতীয় ক্যাটাগরিকে সোজা বাঙলায় অন্ধ বিশ্বাস বলে রে আবুল,বুঝলি?'
আমি তার কথায় কান দিলাম না। বলে যেতে লাগলাম-
'প্রমানের ভিত্তিতে যে বিশ্বাস, সেটা মূলত বিশ্বাসের মধ্যে পড়েনা।পড়লেও, খুবই ট্যাম্পোরেরি। এই বিশ্বাস এতই দূর্বল যে, এটা হঠাৎ হঠাৎ পালটায়।'
সাজিদ এবার নড়েচড়ে বসলো। সে বললো,- 'কি রকম?'
আমি বললাম,- 'এই যেমন ধর,সূর্য আর পৃথিবীকে নিয়ে মানুষের একটি আদিম কৌতূহল আছে। আমরা আদিকাল থেকেই এদের নিয়ে জানতে চেয়েছি, ঠিক না?'
- 'হু, ঠিক।'
- 'আমাদের কৌতূহল মেটাতে বিজ্ঞান আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে, ঠিক?'
- 'হ্যাঁ।'
- 'আমরা একাট্টা ছিলাম। আমরা নির্ভুলভাবে জানতে চাইতাম যে, সূর্য আর পৃথিবীর রহস্যটা আসলে কি। সেই সুবাধে, পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা নানান সময়ে নানান তত্ব আমাদের সামনে এনেছেন। পৃথিবী আর সূর্য নিয়ে প্রথম ধারনা দিয়েছিলেন গ্রিক জ্যোতির বিজ্ঞানি টলেমি।টলেমি কি বলেছিলো সেটা নিশ্চয় তুই জানিস?'
সাজিদ বললো,- 'হ্যাঁ। সে বলেছিলো সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে।'
- 'একদম তাই। কিন্তু বিজ্ঞান কি আজও টলেমির থিওরিতে বসে আছে? নেই। কিন্তু কি জানিস, এই টলেমির থিওরিটা বিজ্ঞান মহলে টিকে ছিলো পুরো ২৫০ বছর। ভাবতে পারিস? ২৫০ বছর পৃথিবীর মানুষ, যাদের মধ্যে আবার বড় বড় বিজ্ঞানি, ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার ছিলো, তারাও বিশ্বাস করতো যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে।এই ২৫০ বছরে তাদের মধ্যে যারা যারা মারা গেছে, তারা এই বিশ্বাস নিয়েই মারা গেছে যে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে।'
সাজিদ সিগারেট ধরালো। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললো,- 'তাতে কি? তখন তো আর টেলিস্কোপ ছিলো না, তাই ভুল মতবাদ দিয়েছে আর কি। পরে নিকোলাস কোপারনিকাস এসে তার থিওরিকে ভুল প্রমান করলো না?'
- 'হ্যাঁ। কিন্তু কোপারনিকাসও একটা মস্তবড় ভুল করে গেছে।'
সাজিদ প্রশ্ন করলো,- 'কি রকম?'
- 'অদ্ভুত! এটা তো তোর জানার কথা। যদিও কোপারনিকাস টলেমির থিওরির বিপরীত থিওরি দিয়ে প্রমান করে দেখিয়েছিলেন যে, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে নয়, পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘোরে।কিন্তু, তিনি এক জায়গায় ভুল করেন।এবং সেই ভুলটাও বিজ্ঞান মহলে বীরদর্পে টিকে ছিলো গোটা ৫০ বছর।'
- 'কোন ভুল?'
- 'উনি বলেছিলেন, পৃথিবীই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে, কিন্তু সূর্য ঘোরে না। সূর্য স্থির। কিন্তু আজকের বিজ্ঞান বলে, - নাহ, সূর্য স্থির নয়। সূর্যও নিজের কক্ষপথে অবিরাম ঘূর্ণনরত অবস্থায়।'
সাজিদ বললো,- 'সেটা ঠিক বলেছিস। কিন্তু বিজ্ঞানের এটাই নিয়ম যে, এটা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হবে। এখানে শেষ বা ফাইনাল বলে কিছুই নেই।'
- 'একদম তাই। বিজ্ঞানে শেষ/ফাইনাল বলে কিছু নেই। একটা বৈজ্ঞানিক থিওরি ২ সেকেন্ডও টেকে না, আবার আরেকটা ২০০ বছরও টিকে যায়। তাই, প্রমান বা দলিল দিয়ে যা বিশ্বাস করা হয় তাকে আমরা বিশ্বাস বলিনা।এটাকে আমরা বড়জোর চুক্তি বলতে পারি। চুক্তিটা এরকম,- 'তোমায় ততোক্ষণ বিশ্বাস করবো, যতক্ষণ তোমার চেয়ে অথেনটিক কিছু আমাদের সামনে না আসছে।'
সাজিদ আবার নড়েচড়ে বসলো। সে কিছুটা একমত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
আমি বললাম,- 'ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তার ধারনা/অস্তিত্ব হচ্ছে ঠিক এর বিপরীত। দ্যাখ, বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মধ্যকার এই গূঢ় পার্থক্য আছে বলেই আমাদের ধর্মগ্রন্থের শুরুতেই বিশ্বাসের কথা বলা আছে। বলা আছে- 'এটা তাদের জন্য যারা বিশ্বাস করে।' (সূরা বাকারা,০২)।
যদি বিজ্ঞানে শেষ বা ফাইনাল কিছু থাকতো, তাহলে হয়তো ধর্মগ্রন্থের শুরুতে বিশ্বাসের বদলে বিজ্ঞানের কথাই বলা হতো। হয়তো বলা হতো,- 'এটা তাদের জন্যই যারা বিজ্ঞানমনষ্ক।'
কিন্তু যে বিজ্ঞান সদা পরিবর্তনশীল, যে বিজ্ঞানের নিজের উপর নিজেরই বিশ্বাস নেই, তাকে কিভাবে অন্যরা বিশ্বাস করবে?'
সাজিদ বললো,- 'কিন্তু যাকে দেখিনা, যার পক্ষে কোন প্রমান নেই, তাকে কি করে আমরা বিশ্বাস করতে পারি?'
- 'সৃষ্টিকর্তার পক্ষে অনেক প্রমান আছে, কিন্তু সেটা বিজ্ঞান পুরোপুরি দিতে পারেনা।এটা বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, সৃষ্টিকর্তার নয়।বিজ্ঞান অনেক কিছুরই উত্তর দিতে পারেনা। লিষ্ট করতে গেলে অনেক লম্বা একটা লিষ্ট করা যাবে।'
সাজিদ রাগি রাগি গলায় বললো,- 'ফাইজলামো করিস আমার সাথে?'
আমি হাসতে লাগলাম। বললাম,- 'আচ্ছা শোন, বলছি। তোর প্রেমিকার নাম মিতু না?'
- 'এইখানে প্রেমিকার ব্যাপার আসছে কেনো?'
- 'আরে বল না আগে।'
- 'হ্যাঁ।'
- 'কিছু মনে করিস না। কথার কথা বলছি। ধর, আমি মিতুকে ধর্ষণ করলাম। রক্তাক্ত অবস্থায় মিতু তার বেডে পড়ে আছে। আরো ধর, তুই কোনভাবে ব্যাপারটা জেনে গেছিস।'
- 'হু।'
- 'এখন বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা কর দেখি, মিতুকে ধর্ষণ করায় কেনো আমার শাস্তি হওয়া দরকার?'
সাজিদ বললো,- 'ক্রিটিক্যাল কোয়েশ্চান। এটাকে বিজ্ঞান দিয়ে কিভাবে ব্যাখ্যা করবো?'
- 'হা হা হা। আগেই বলেছি। এমন অনেক ব্যাপার আছে, যার উত্তর বিজ্ঞানে নেই।'
- 'কিন্তু এর সাথে স্রষ্টায় বিশ্বাসের সম্পর্ক কি?'
- 'সম্পর্ক আছে। স্রষ্টায় বিশ্বাসটাও এমন একটা বিষয়, যেটা আমরা, মানে মানুষেরা, আমাদের ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য প্রমানাদি দিয়ে প্রমান করতে পারবো না। স্রষ্টা কোন টেলিষ্কোপে ধরা পড়েন না।উনাকে অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়েও খুঁজে বের করা যায়না। উনাকে জাষ্ট 'বিশ্বাস করে নিতে হয়।'
সাজিদ এবার ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে বেঁকে বসলো। সে বললো,- 'ধুর! কিসব বাল ছাল বুঝালি। যা দেখিনা, তাকে বিশ্বাস করে নেবো?'
আমি বললাম,- 'হ্যাঁ। পৃথিবীতে অবিশ্বাসী বলে কেউই নেই। সবাই বিশ্বাসী। সবাই এমন কিছু না কিছুতে ঠিক বিশ্বাস করে, যা তারা আদৌ দেখেনি বা দেখার কোন সুযোগও নেই।কিন্তু এটা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলে না। তারা নির্বিঘ্নে তাতে বিশ্বাস করে যায়। তুইও সেরকম।'
সাজিদ বললো,- 'আমি? পাগল হয়েছিস? আমি না দেখে কোন কিছুতেই বিশ্বাস করিনা, করবোও না।'
- 'তুই করিস।এবং, এটা নিয়ে তোর মধ্যে কোনদিন কোন প্রশ্ন জাগে নি।এবং, আজকে এই আলোচনা না করলে হয়তো জাগতোও না।'
সে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বললাম,- 'জানতে চাস?'
- 'হু।'
- 'আবার বলছি, কিছু মনে করিস না। যুক্তির খাতিরে বলছি।'
- 'বল।'
- 'আচ্ছা, তোর বাবা-মা'র মিলনেই যে তোর জন্ম হয়েছে, সেটা তুই দেখেছিলি? বা,এই মূহুর্তে কোন এভিডেন্স আছে তোর কাছে? হতে পারে তোর মা তোর বাবা ছাড়া অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছে তোর জন্মের আগে। হতে পারে, তুই অই ব্যক্তিরই জৈব ক্রিয়ার ফল।তুই এটা দেখিস নি। কিন্তু কোনদিনও কি তোর মা'কে এটা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলি? করিস নি। সেই ছোটবেলা থেকে যাকে বাবা হিসেবে দেখে আসছিস, এখনো তাকে বাবা ডাকছিস। যাকে ভাই হিসেবে জেনে আসছিস, তাকে ভাই।বোনকে বোন। তুই না দেখেই এসবে বিশ্বাস করিস না? কোনদিন জানতে চেয়েছিস তুই এখন যাকে বাবা ডাকছিস, তুই আসলেই তার ঔরসজাত কিনা? জানতে চাস নি। বিশ্বাস করে গেছিস।এখনো করছিস। ভবিষ্যতেও করবি। স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসটাও ঠিক এমনই রে।এটাকে প্রশ্ন করা যায়না। সন্দেহ করা যায়না। এটাকে হৃদয়ের গভীরে ধারন করতে হয়। এটার নামই বিশ্বাস।'
-
সাজিদ উঠে বাইরে চলে গেলো। ভাবলাম, সে আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে হয়তো।
পরেরদিন ভোরে আমি যখন ফজরের নামাজের জন্য অযূ করতে যাবো, দেখলাম, আমার পাশে সাজিদ এসে দাঁড়িয়েছে।আমি তার মুখের দিকে তাকালাম।সে আমার চাহনির প্রশ্নটা বুঝতে পেরেছে। সে বললো,- 'নামাজ পড়তে উঠেছি।'
'একজন অবিশ্বাসীর বিশ্বাস'/ আরিফ আজাদ

শূন্যস্থান থেকে স্রষ্টার দূরত্ব'/ আরিফ আজাদ

সাজিদের কাছে একটি মেইল এসেছে সকালবেলা।মেইলটি পাঠিয়েছে তার নাস্তিক বন্ধু বিপ্লব ধর। বিপ্লব দা'কে আমিও চিনি। সদা হাস্য এই লোকটার সাথে মাঝে মাঝেই টি.এস.সিতে দেখা হতো।দেখা হলেই উনি একটি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন,- 'তুই কি এখনো রাতের বেলা ভূত দেখিস?'

বিপ্লব দা মনে হয় হাসিটি প্রস্তুত করেই রাখতো।দেখা হওয়া মাত্রই প্রদর্শন। বিপ্লব দা'কে চিনতাম সাজিদের মাধ্যমে। সাজিদ আর বিপ্লব দা একই ডিপার্টমেণ্টের। বিপ্লব দা সাজিদের চেয়ে দু ব্যাচ সিনিয়র।
সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যে প্রথমে নাস্তিক হয়ে গিয়েছিলো, তার পুরো ক্রেডিটটাই বিপ্লব দা'র। বিপ্লব দা তাকে বিভিন্ন নাস্তিক, এ্যাগনোষ্টিকদের বই-টই পড়িয়ে নাস্তিক বানিয়ে ফেলেছিলো। সাজিদ এখন আর নাস্তিক নেই।
আমি ক্লাশ শেষে রুমে ঢুকে দেখলাম সাজিদ বরাবরের মতোই কম্পিউটার গুতাচ্ছে।আমাকে দেখামাত্রই বললো,- 'তোর দাওয়াত আছে।'
- 'কোথায়?'- আমি জিজ্ঞেস করলাম।
সাজিদ বললো,- 'বিপ্লব দা দেখা করতে বলেছেন।'
আমার সাথে উনার কোন লেনদেন নেই।আমাকে এভাবে দেখা করতে বলার হেতু কি বুঝলাম না।সাজিদ বললো,- 'ঘাবড়ে গেলি নাকি? তোকে একা না, সাথে আমাকেও।'
এই বলে সাজিদ বিপ্লব দা'র মেইলটি ওপেন করে দেখালো।মেইলটি হুবহু এরকম-
'সাজিদ,
আমি তোমাকে একজন প্রগতিশীল, উদারমন সম্পন্ন, মুক্তোমনা ভাবতাম।পড়াশুনা করে তুমি কথিত ধর্মীয় গোঁড়ামি আর অন্ধ বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এসেছিলে।কিন্তু তুমি যে আবার সেই অন্ধ বিশ্বাসের জগতে ফিরে যাবে- সেটা কল্পনাও করিনি আমি।আজ বিকেলে বাসায় এসো। তোমার সাথে আলাপ আছে।'
আমরা খাওয়া-দাওয়া করে, দুপুরের নামাজ পড়ে বিপ্লব দা'র সাথে দেখা করার জন্য বের হলাম।বিপ্লব দা আগে থাকতেন বনানী, এখন থাকেন কাঁটাবন। জ্যাম-ট্যাম কাটিয়ে আমরা যখন বিপ্লব দা'র বাসায় পৌঁছি, তখন আসরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে।বিপ্লব দা'র সাথে হ্যান্ডশেক করে আমরা বসলাম না। সাজিদ বললো,- 'দাদা, আলাপ একটু পরে হবে। আসরের নামাজটা পড়ে আসি আগে।'
বিপ্লব দা না করলেন না।আমরা বেরিয়ে গেলাম।পার্শ্ববর্তী মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে ব্যাক করলাম উনার বাসায়।
বিপ্লব দা ইতোমধ্যেই কফি তৈরি করে রেখেছেন।খুবই উন্নতমানের কফি।কফির গন্ধটা পুরো ঘরময় ছড়িয়ে পড়লো মূহুর্তেই।
সাজিদ কফি হাতে নিতে নিতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,- 'জানিস, বিপ্লব দা'র এই কফি বিশ্ববিখ্যাত।ভূ-মধ্য সাগরীয় অঞ্চলের কফি।এইটা কানাডা ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। বিপ্লব দা কানাডা থেকে অর্ডার করিয়ে আনেন।'
কফির কাপে চুমুক দিয়ে মনে হলো আসলেই সত্যি।এত ভালো কফি হতে পারে-ভাবাই যায় না।
সাজিদ এবার বিপ্লব দা'র দিকে তাকিয়ে বললো,- 'আলাপ শুরু হোক।'
বিপ্লব দা'র মুখে সদা হাস্য ভাবটা আজকে নেই। উনার পরম শিষ্যের এরকম অধঃপতনে সম্ভবত উনার মন কিছুটা বিষন্ন। তিনি বললেন,- 'তোমার সিদ্ধান্তের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে। তবে, তোমাকে একটি বিষয়ে বলার জন্যই আসতে বলেছি। হয়তো তুমি ব্যাপারটি জেনে থাকবে-তবুও।'
সাজিদ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,- 'জানা বিষয়টাও আপনার মুখ থেকে শুনলে মনে হয় নতুন জানছি। আমি আপনাকে কতোটা পছন্দ করি তা তো আপনি জানেনই।'
বিপ্লব দা কোন ভূমিকায় গেলেন না।সরাসরি বললেন,- 'ওই যে, তোমার সৃষ্টিকর্তা, উনার ব্যাপারে বলতে চাই। তুমি বিজ্ঞানের ছাত্র, তুমি হয়তো এ ব্যাপারে জানো। সম্প্রতি বিজ্ঞান প্রমান করেছে, এই মহাবিশ্ব সৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্তার কোন দরকার নেই।মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে শুন্য থেকেই।আগে তোমরা, মানে বিশ্বাসীরা বলতে, একটা সামান্য সুঁচও যখন কোন কারিগর ছাড়া এমনি এমনি তৈরি হতে পারেনা, তাহলে এই গোটা মহাবিশ্ব কিভাবে তৈরি হবে আপনাআপনি? কিন্তু বিজ্ঞান এখন বলছে, এই মহাবিশ্ব শুন্য থেকে আপনাআপনিই তৈরি হয়েছে।কারো সাহায্য ছাড়াই।'
এই কথাগুলো বিপ্লব দা এক নাগাড়ে বলে গেলেন।মনে হয়েছে তিনি কোন নিঃশ্বাসই নেন নি এতক্ষণ।
সাজিদ বললো,- 'অদ্ভুত তো। তাহলে তো আমাকে আবার নাস্তিক হয়ে যেতে হবে দেখছি। হা হা হা হা।'
সাজিদ চমৎকার একটা হাসি দিলো। সাজিদ এইভাবে হাসতে পারে, তা আমি আজই প্রথম দেখলাম। বিপ্লব দা সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন বলে মনে হলো না। উনি মোটামুটি একটা লেকচার শুরু করেছেন।আমি আর সাজিদ খুব মনোযোগি ছাত্রের মতো উনার বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা শুনছিলাম। তিনি যা বোঝালেন, বা বললেন, তার সার সংক্ষেপ এরকম।-
'পদার্থ বিজ্ঞানে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে কোয়াণ্টাম মেকানিক্স। এই কোয়ান্টাম মেকানিক্সে একটি থিওরি আছে, সেটি হলো- 'কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশান। এই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের মূল কথা হলো,- 'মহাবিশ্বে পরম শুন্য স্থান বলে আদতে কিছু নেই। মানে, আমরা যেটাকে 'Nothing' বলে এতদিন জেনে এসেছি, বিজ্ঞান বলছে, আদতে 'Nothing' বলতে কিছুই নেই।প্রকৃতি শূন্য স্থান পছন্দ করেনা। তাই, যখনই কোন শুন্যস্থান (Nothing) তৈরি হয়, সেখানে এক সেকেন্ডের বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যে কণা এবং প্রতিকণা (Matter & anti-matter) তৈরি হচ্ছে, এবং একটির সাথে অন্যটির ঘর্ষণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তোমরা জানো কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের ধারনা কোথা হতে এসেছে?'
আমি বললাম,- 'না।'
বিপ্লব দা আবার বলতে শুরু করলেন,- ' এই ধারনা এসেছে হাইজেনবার্গের বিখ্যাত 'অনিশ্চয়তা নীতি' থেকে। হাইজেনবার্গের সেই বিখ্যাত সূত্রটা তোমরা জানো নিশ্চয়?'
সাজিদ বললো,- 'হ্যাঁ। হাইজেনবার্গ বলেছেন, আমরা কখনও একটি কণার অবস্থান এবং এর ভরবেগের সঠিক পরিমাণ একসাথে একুরেইটলি জানতে পারবো না। যদি অবস্থান সঠিকভাবে জানতে পারি, তাহলে এর ভরবেগের মধ্যে গলদ থাকবে।আবার যদি ভরবেগ সঠিকভাবে জানতে পারি, তাহলে এর অবস্থানের মধ্যে গলদ থাকবে।দুটো একইসাথে সঠিকভাবে জানা কখনোই সম্ভব না। এইটা যে সম্ভব না, এটা বিজ্ঞানের অসারতা না, আসলে এটা হলো কণার ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য। '
বিপ্লব দা বললেন,- 'এক্সাক্টলি। একদম তাই।হাইজেনবার্গের এই নীতিকে শক্তি আর সময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।হাইজেনবার্গের এই নীতি যদি সত্যি হয়, তাহলে মহাবিশ্বে 'শূন্যস্থান' বলে কিছু থাকতে পারেনা। যদি থাকে, তাহলে তার অবস্থান ও ভরবেগ দুটোই শূন্য চলে আসে, যা হাইজেনবার্গের নীতি বিরুদ্ধ।'
এইটুকু বলে বিপ্লব দা একটু থামলো। কফির পট থেকে কফি ঢালতে ঢালতে বললেন,- 'বুঝতেছো তোমরা?'
সাজিদ বুঝছে কিনা জানিনা, তবে আমার কাছে ব্যাপারটি দূর্বোধ্য মনে হলেও, বিপ্লব দা'র উপস্থাপন ভঙ্গিমা সেটাকে অনেকটাই প্রাঞ্জল করে তুলছে।ভালো লাগছে।
বিপ্লব দা কফিতে চুমুক দিলেন। এরপর আবার বলতে শুরু করলেন,- 'তাহলে তোমরা বলো না, যে বিগ ব্যাং এর আগে তো কিছুই ছিলো না।না সময়, না শক্তি, না অন্যকিছু।তাহলে বিগ ব্যাং এর বিস্ফোরনটি হলো কিভাবে? এর জন্য নিশ্চয় কোন শক্তি দরকার? কোন বাহ্যিক বল দরকার,তাই না? এইটা বলে তোমরা স্রষ্টার ধারনাকে জায়েজ করতে।তোমরা বলতে, এই বাহ্যিক বলটা এসেছে স্রষ্টার কাছ থেকে। কিন্তু দেখো, বিজ্ঞান বলছে, এইখানে স্রষ্টার কোন হাত নেই। বিগ ব্যাং হবার জন্য যে শক্তি দরকার ছিলো, সেটা এসেছে এই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশান থেকে।সুতরাং, মহাবিশ্ব তৈরিতে স্রষ্টার অস্তিত্বকে বিজ্ঞান ডাইরেক্ট 'না' বলে দিয়েছে।আর, তোমরা এখনো স্রষ্টা স্রষ্টা করে কোথায় যে পড়ে আছো।'
এতটুকু বলে বিপ্লব দা'র চোখমুখ ঝলমলিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে, উনি যে উদ্দেশ্যে আমাদের ডেকেছেন তা সফল হয়ে গেছে। আমরা হয়তো উনার বিজ্ঞানের উপর এই জ্ঞানগর্ভ লেকচার শুনে এক্ষুনি নাস্তিকতার উপর ঈমান নিয়ে আসবো।
যাহোক, ইতোমধ্যে সাজিদ দু কাপ কফি গিলে ফেলেছে। নতুন এক কাপ ঢালতে ঢালতে সে বললো,- 'এই ব্যাপারে ষ্টিফেন হকিংয়ের বই আছে।নাম- 'The grand design'। এটা আমি পড়েছি।'
সাজিদের কথা শুনে বিপ্লব দা'কে খুব খুশি মনে হলো।তিনি বললেন,- 'বাহ, তুমি তাহলে পড়াশুনা ষ্টপ করোনি? বেশ বেশ! পড়াশুনা করবে।বেশি বেশি পড়বে।'
সাজিদ হাসলো। হেসে সে বললো, - 'কিন্তু দাদা, এই ব্যাপারে আমার কনফিউশান আছে।'
- 'কোন ব্যাপারে?'- বিপ্লব দা'র প্রশ্ন।
- 'ষ্টিফেন হকিং আর লিওনার্ড ম্লোদিনোর বই The grand design এর ব্যাপারে।'
বিপ্লব দা একটু থতমত খেলো মনে হলো। মনে হয় উনি মনে মনে বলছে- এই ছেলে দেখছি খোদার উপর খোদাগিরি করছে।
তিনি বললেন,- 'ক্লিয়ার করো।'
সাজিদ বললো,- আমি দুইটা দিক থেকেই এটার ব্যাখ্যা করবো।বিজ্ঞান এবং ধর্ম। যদি অনুমতি দেন।'
- 'অবশ্যই।'- বিপ্লব দা বললেন।
আমি মুগ্ধ শ্রোতা। গুরু এবং এক্স-শিষ্যের তর্ক জমে উঠেছে।
সাজিদ বললো,- 'প্রথম কথা হচ্ছে, ষ্টিফেন হকিংয়ের এই থিওরিটা এখনো 'থিওরি', সেটা 'ফ্যাক্ট' নয়।এই ব্যাপারে প্রথম কথা বলেন বিজ্ঞানি লরেন্স ক্রাউস।তিনি এইটা নিয়ে একটি বিশাল সাইজের বই লিখেছিলেন।বইটার নাম ছিলো- 'A Universe from nothing'।
অনেক পরে, এখন ষ্টিফেন এটা নিয়ে উনার The grand design এ কথা বলেছেন। উনার এই বইটা প্রকাশ হবার পর সি এন এনের এক সাংবাদিক হকিংকে জিজ্ঞেস করেছিলো,- 'আপনি কি ইশ্বরে বিশ্বাস করেন?'
হকিং বলেছিলো,- 'ইশ্বর থাকলেও থাকতে পারে, তবে, মহাবিশ্ব তৈরিতে তার প্রয়োজন নেই।'
বিপ্লব দা বললো,- 'সেটাই।উনি বোঝালেন যে, ইশ্বর মূলত ধার্মিকদের একটি অকার্যকর বিশ্বাস।'
- 'হকিং কি বুঝিয়েছেন জানিনা, কিন্তু হকিংয়ের অই বইটি অসম্পূর্ণ।কিছু গলদ আছে।'
বিপ্লব দা কফির কাপ রাখতে রাখতে বললেন,- 'গলদ? মানে?'
- 'দাঁড়ান, বলছি। গলদ মানে, উনি কিছু বিষয় বইতে ক্লিয়ার করেন নি। যেহেতু এটা বিজ্ঞান মহলে প্রমানিত সত্য নয়, তাই এটা বিজ্ঞান মহলে প্রচুর বিতর্কিত হয়েছে।
উনার বইতে যে গলদগুলো আছে, সেগুলো সিরিয়ালি বলছি।
গলদ নাম্বার ০১-
হকিং বলেছেন, শূন্য থেকেই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের মাধ্যমে বস্তু কণা তৈরি হয়েছে,এবং সেটা মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে নিউট্রালাইজ হয়েছে।
এখানে প্রশ্ন হলো,- 'শূন্য বলতে হকিং কি একদম Nothing (কোনকিছুই নেই) বুঝিয়েছেন, নাকি Quantum Vaccum (বস্তুর অনুপস্থিতি) বুঝিয়েছেন সেটা ক্লিয়ার করেন নি।হকিং বলেছেন, শূন্যস্থানে বস্তু কণার মাঝে কোয়াণ্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশান হতে হলে সেখানে মহাকর্ষ বল প্রয়োজন। কিন্তু অই শূন্যস্থানে (যখন সময় আর স্থানও তৈরি হয়নি) ঠিক কোথা থেকে এবং কিভাবে মহাকর্ষ বল এলো, তার কোন ব্যাখ্যা হকিং দেয় নি।
গলদ নাম্বার- ০২
হকিং তার বইতে বলেছেন, মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে একদম শূন্য থেকে, কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের মাধ্যমে। তখন 'সময়' (Time) এর আচরন আজকের সময়ের মতো ছিলো না। তখন সময়ের আচরন ছিলো 'স্থান' (Space) এর মতো। কারন, এই ফ্ল্যাকচুয়েশান হবার জন্য প্রাথমিকভাবে সময়ের দরকার ছিলো না, স্থানের দরকার ছিলো।কিন্তু হকিং তার বইতে এই কথা বলেন নি যে,যে সময় (Time) মহাবিশ্বের একদম শুরুতে 'স্থান' এর মতো আচরন করেছে, সেই 'সময়' পরবর্তীতে ঠিক কবে আর কখন থেকে আবার Time এর মতো আচরন শুরু করলো এবং কেনো?'
আমি বিপ্লব দা'র মুখের দিকে তাকালাম। তার চেহারার উৎফুল্ল ভাবটা চলে গেছে।
সাজিদ বলে যাচ্ছে-
গলদ নাম্বার- ০৩
পদার্থবিদ্যার যে সূত্র মেনে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশান হয়ে মহাবিশ্ব তৈরি হলো, তখন শূন্যাবস্থায় পদার্থবিদ্যার এই সূত্রগুলো বলবৎ থাকে কি করে? এইটার ব্যাখ্যা হকিং দেয়নি।
গলদ নাম্বার - ০৪
আপনি বলেছেন, প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করেনা। তাই, শূন্যস্থান পূরণ করতে আপনা আপনি কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশান হয়ে মহাবিশ্ব তৈরি হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো- যেখানে আপনি শূন্যস্থান নিয়ে কথা বলছেন, যখম সময় ছিলো না,স্থান ছিলো না, তখন আপনি প্রকৃতি কোথায় পেলেন?'
সাজিদ হকিংয়ের বইয়ের পাঁচ নাম্বার গলদের কথা বলতে যাচ্ছিলো। তাকে থামিয়ে দিয়ে বিপ্লব দা বললেন,- 'ওকে ওকে। বুঝলাম। আমি বলছি না যে এই জিনিসটা একেবারে সত্যি। এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে।আলোচনা-সমালোচনা হবে।আরো পরীক্ষা-নীরিক্ষা হবে।তারপর ডিসাইড হবে যে এটা ঠিক না ভুল।'
সাজিদের কাছে বিপ্লব দা'র এরকম মৌন পরাজয় আমাকে খুব তৃপ্তি দিলো।মনে মনে বললাম,- 'ইয়েস সাজিদ, ইউ ক্যান।'
সাজিদ বললো,- 'হ্যাঁ, সে পরীক্ষা চলতে থাকুক। যদি কোনদিন এই থিওরি সত্যিও হয়ে যায়, তাহলে আমাকে ডাক দিয়েন না দাদা। কারন, আমি কোরান দিয়েই প্রমান করে দিতে পারবো।'
সাজিদের এই কথা শুনে আমার হেঁচকি উঠে গেলো। কি বলে রে? এতক্ষন যেটাকে গলদপূর্ণ বলেছে, সেটাকে আবার কোরান দিয়ে প্রমান করবে বলছে? ক্যামনে কি?'
বিপ্লব দা'ও বুঝলো না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,- 'কি রকম?'
সাজিদ হাসলো। বললো,- 'শূন্য থেকেই মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা আল কোরানে বলা আছে দাদা।'
আমি আরো অবাক। কি বলে এই ছেলে?
সে বললো,- 'আমি বলছি না যে কোরান কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের কথাই বলেছে।কোরান যার কাছ থেকে এসেছে, তিনি তার সৃষ্টি জগতের সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন।এখন সেটা বিগ ব্যাং আসলেও পাল্টাবে না, কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশান থিওরি আসলেও পাল্টাবে না। একই থাকবে।'
বিপ্লব দা বললো,- 'কোরানে কি আছে বললে যেন?'
- 'সূরা বাকারার ১১৭ নাম্বার আয়াতে আছে-
'যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্বে আনায়ন করেন (এখানে মূল শব্দ 'বাদিয়্যু'/Originator- সেখান থেকেই অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের ধারনা) এবং যখন তিনি কিছু করবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন শুধু বলেন হও, আর তা হয়ে যায়।'
'Creator of the heavens and the earth from nothingness, He has only to say when He wills a thing, “Be,” and it is'....
দেখুন, আমি আবারো বলছি, আমি এটা বলছি না যে, আল্লাহ তা'লা এখানে কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের কথাই বলেছেন। তিনি তার সৃষ্টির কথা বলেছেন। তিনি 'অনস্তিত্ব' (Nothing) থেকে 'অস্তিত্বে' (Something) এ এনেছেন।এমন না যে, আল্লাহ তার হাত দিয়ে প্রথমে মহাবিশ্বের ছাদ বানালেন। তারপর তাতে সূর্য, চাঁদ, গ্যালাক্সি এগুলা একটা একটা বসিয়ে দিয়েছেন। তিনি কেবল নির্দেশ দিয়েছেন।
হকিংও একই কথা বলছে। কিন্তু তারা বলছে এটা এমনি এমনি হয়ে গেছে, শূন্য থেকেই। আল্লাহ বলছেন, না, এমনি হয়নি। আমি যখন নির্দেশ করেছি 'হও' (কুন), তখন তা হয়ে গেলো।
হকিং ব্যাখ্যা দিতে পারছে না এই কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের জন্য মহাকর্ষ বল কোথা থেকে এলো, 'সময়' কেন, কিভাবে 'স্থান 'হলো, পরে আবার সেটা 'সময়' হলো।
কিন্তু আমাদের স্রষ্টা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন 'হতে', আর তা হয়ে গেলো।
ধরুন একটা ম্যাজিশিয়ান ম্যাজিক দেখাচ্ছে। ম্যাজিশিয়ান বসে আছে ষ্টেজের এক কোণায়।কিন্তু সে তার চোখের ইশারায় ম্যাজিক দেখাচ্ছে।দর্শক দেখছে, খালি টেবিলের উপরে হঠাৎ একটা কবুতর তৈরি হয়ে গেল,এবং সেটা উড়েও গেলো।
দর্শক কি বলবে এটা কোয়ান্টাম ফ্ল্যাকচুয়েশানের মাধ্যমে হয়ে গেছে? না, বলবে না।
এর পেছনে ম্যাজিশিয়ানের কারসাজি আছে।সে ষ্টেজের এক কোণা থেকে চোখ দিয়ে ইশারা করেছে বলেই এটা হয়েছে।
স্রষ্টাও সেরকম।তিনি শুধু বলেছেন, 'হও', আর মহাবিশ্ব আপনা আপনিই হয়ে গেলো।.....
আপনাদের সেই শূন্যস্থান থেকে স্রষ্টার দূরত্ব কেবল অই 'হও' পর্যন্তই।
মাগরিবের আজান পড়তে শুরু করেছে। বিপ্লব দা'কে অনেকটাই হতাশ দেখলাম। আমরা বললাম,- 'আজ তাহলে উঠি?'
উনি একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,- 'এসো।'
আমরা বেরিয়ে পড়লাম। আমি অবাক হয়ে সাজিদের দিকে তাকিয়ে আছি। কে বলবে এই ছেলেটা গত ছ'মাস আগেও নাস্তিক ছিলো। নিজের গুরুকেই কি রকম কুপোকাত করে দিয়ে আসলো।কোরানের সূরা বাকারার ১১৭ নাম্বার আয়াতটি কতো হাজার বার পড়েছি, কিন্তু এভাবে কোনদিন ভাবিনি।আজকে এটা সাজিদ যখন বিপ্লব দা কে বুঝাচ্ছে, মনে হচ্ছে আজকেই নতুন শুনছি এই আয়াতের কথা। গর্ব হতে লাগলো আমার।
'শূন্যস্থান থেকে স্রষ্টার দূরত্ব'/ আরিফ আজাদ
(গত পর্বের পর)

সুউচ্চ বিল্ডিং নির্মান বনাম কিয়ামাতের আলামত

নগ্নপদ নগ্নদেহ রাখালদের সুউচ্চ বিল্ডিং নির্মান ।
এই নগ্নপদ নগ্নদেহ রাখাল কারা জানেন ?
আরবরা । নবী করীম সা. কেয়ামতের নিদর্শন বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-
নগ্নপদ নগ্নদেহ রাখালদের -সুউচ্চ বাড়ীঘর নির্মাণে প্রতিযোগিতায় মত্ত দেখবে।-” (মুসলিম)
হাদিসে উদ্দেশ্য হচ্ছে, পাহাড় পর্বত এবং সুদূর মরু প্রান্তরের রাখালেরা ছাগলের রাখালি ছেড়ে উঁচু উঁচু টাওয়ার নির্মাণে মত্ত হয়ে উঠবে। সকলেই চাইবে আমার-টা সবার চেয়ে উঁচুতে থাকুক!
বর্তমান আরব দেশগুলোতে এটা ব্যাপক মহামারীর আকার ধারণ করেছে।
প্রত্যেকটি দেশ-ই চাইছে, বিশ্বের সবচে’ দীর্ঘতম টাওয়ারটি তার দেশে হোক! এর জন্য যত টাকা দরকার হয়, খরচ করতে রাজী।
কে কার চেয়ে উচু করে বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারে.. কে কার চেয়ে বেশি ডিজাইন/ষ্টাইল করে বাংলো বানাতে পারে আজ সেই প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত আরবরা । অথচ এইতো কিছুদিন পূর্বেই তারা ছিল মেষপালের রাখাল। গায়ে ছিল না বস্ত্র, পায়ে ছিল না জুতো।
আমরা হাদিসের প্রমান আজ বাস্তবেই দেখতে পাচ্ছি দুবাই এর বিল্ডিং গুলো আজ মেঘের সাথে মিশে যাচ্ছে !
পৃথিবীর সবচেয়ে উচু বিল্ডিং হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত এর বুর্জ আল খলিফা । ১৬০ তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারটির উচ্চতা ৮২৮ মিটার বা ২৭১৬ ফিট ।
সৌদি আরব ইতিমধ্যেই এটাকে চ্যালেঞ্জ করে কিংডম টাওয়ার বানানো শুরু করে দিয়েছে যেটি হবে ৩০০ তলা বিশিষ্ট যার উচ্চতা হবে ১০০০ মিটার বা ৩২৮০ ফিট ।
এবার বুঝুন মুসলমানরা কেন আজ পরাজিত ? কেন আজ নির্যাতিত ?
কেননা যারা তাদের নেতৃত্ব দিবে সেই আরবরাই আজ আখেরাতের প্রতিযোগীতা
না করে দুনিয়ার প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত !
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুক,আমিন।
-Rashed Ibn Adam

'সকল প্রশংসা কেনো স্রষ্টার?'

ক্লাশে নতুন একজন স্যার এসেছেন।নাম- মফিজুর রহমান।

হ্যাংলা-পাতলা গড়ন।বাতাস আসলেই যেনো ঢলে পড়বে মতন অবস্থা শরীরের।ভদ্রলোকের চেহারার চেয়ে চোখ দুটি অস্বাভাবিক রকম বড়।দেখলেই মনে হয় যেন বড় বড় সাইজের দুটি জলপাই, কেউ খোদাই করে বসিয়ে দিয়েছে।
ভদ্রলোক খুবই ভালো মানুষ।উনার সমস্যা একটিই- ক্লাসে উনি যতোটা না বায়োলজি পড়ান, তারচেয়ে বেশি দর্শন চর্চা করেন।ধর্ম কোথা থেকে আসলো, ঠিক কবে থেকে মানুষ ধার্মিক হওয়া শুরু করলো, 'ধর্ম আদতে কি' আর, 'কি নয়' তার গল্প করেন।
-
আজকে উনার চতুর্থ ক্লাশ। পড়াবেন Analytical techniques & bio-informatics। চতুর্থ সেমিষ্টারে এটা পড়ানো হয়।
স্যার এসে প্রথমে বললেন,- 'Good morning, guys....'
সবাই সমস্বরে বললো,- 'Good morning, sir...'
এরপর স্যার জিজ্ঞেস করলেন,- 'সবাই কেমন আছো? '
স্যারের আরো একটি ভালো দিক হলো- উনি ক্লাশে এলে এভাবেই সবার কুশলাদি জিজ্ঞেস করেন।সাধারণত হায়ার লেভেলে যেটা সব শিক্ষক করেন না। তারা রোবটের মতো ক্লাশে আসেন,যন্ত্রের মতো করে লেকচারটা পড়িয়ে বেরিয়ে যান।সেদিক থেকে মফিজুর রহমান নামের এই ভদ্রলোক অনেকটা অন্যরকম।
আবারো সবাই সমস্বরে উত্তর দিলো।কিন্তু গোলমাল বাঁধলো এক জায়গায়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন উত্তর দিয়েছে এভাবে- 'আলহামমমমদুলিল্লাহ ভালো।'
স্যার কপালের ভাঁজ একটু দীর্ঘ করে বললেন,- 'আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো বলেছো কে কে?'
অদ্ভুত প্রশ্ন। সবাই থতমত খেলো।
একটু আগেই বলেছি স্যার একটু অন্যরকম। প্রাইমারি লেভেলের টিচারদের মতো ক্লাশে এসে বিকট চিৎকার করে Good Morning বলেন, সবাই কেমন আছে জানতে চান।এখন 'আলহামদুলিল্লাহ্‌' বলার জন্য কি প্রাইমারি লেভেলের শিক্ষকদের মতো বেত দিয়ে পিটাবেন নাকি?
সাজিদের তখন তার প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক বাবুল চন্দ্র দাশের কথা মনে পড়ে গেলো।এই লোকটা ক্লাশে কেউ দুটোর বেশি হাঁচি দিলেই বেত দিয়ে আচ্ছামতন পিটাতেন। উনার কথা হলো- 'হাঁচির সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে দু'টি। দু'টির বেশি হাঁচি দেওয়া মানে ইচ্ছে করেই বেয়াদবি করা।'
যাহোক, বাবুল চন্দ্রের পাঠ তো কবেই চুকেছে, এবার মফিজ চন্দ্রের হাতেই না গণ পিটুনি খাওয়া লাগে।
ক্লাশের সর্বমোট সাতজন দাঁড়ালো। এরা সবাই 'আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো' বলেছে। এরা হচ্ছে- রাকিব, আদনান, জুনায়েদ, সাকিব, মরিয়ম,রিতা এবং সাজিদ।
স্যার সবার চেহারাটা একটু ভালোমতো পরখ করে নিলেন। এরপর পিক করে হেসে দিয়ে বললেন,- 'বসো।'
সবাই বসলো। আজকে আর মনে হয় এ্যাকাডেমিক পড়াশুনা হবেনা। দর্শনের তাত্বিক আলাপ হবে।
ঠিক তাই হলো। মফিজুর রহমান স্যার আদনানকে দাঁড় করালো। বললেন,- 'তুমিও বলেছিলে সেটা, না?'
- 'জ্বি স্যার।'- আদনান উত্তর দিলো।
স্যার বললেন,- 'আলহামদুলিল্লাহ্‌'র অর্থ কি জানো?'
আদনান মনে হয় একটু ভয় পাচ্ছে। সে ঢোঁক গিলতে গিলতে বললো,- 'জ্বি স্যার, আলহামদুলিল্লাহ্‌ অর্থ হলো- সকল প্রশংসা কেবলি আল্লাহর।'
স্যার বললেন,- ' সকল প্রশংসা কেবলি আল্লাহর।'
স্যার এই বাক্যটি দু'বার উচ্চারণ করলেন।এরপর আদনানের দিকে তাকিয়ে বললেন,- 'বসো।'
আদনান বসলো। এবার স্যার রিতাকে দাঁড় করালেন। স্যার রিতার কাছে জিজ্ঞেস করলেন,- 'আচ্ছা, পৃথিবীতে চুরি-ডাকাতি আছে?'
রিতা বললো,- 'আছে।'
- 'খুন-খারাবি, রাহাজানি, ধর্ষণ?'
-- 'জ্বি,আছে।'
- 'কথা দিয়ে কথা না রাখা, মানুষকে ঠকানো,লোভ-লালসা এসব?'
- 'জ্বি, আছে।'
- 'এগুলো কি প্রশংসাযোগ্য?'
- 'না।'
'তাহলে মানুষ একটি ভালো কাজ করার পর তার সব প্রশংসা যদি আল্লাহর হয়, মানুষ যখন চুরি-ডাকাতি করে, লোক ঠকায়, খুন-খারাবি করে,ধর্ষণ করে, তখন সব মন্দের ক্রেডিট আল্লাহকে দেওয়া হয়না কেনো? উনি প্রশংসার ভাগ পাবেন, কিন্তু দূর্নামের ভাগ নিবেন না, তা কেমন হয়ে গেলো না?'
রিতা মাথা নিঁচু করে চুপ করে আছে।স্যার বললেন,- 'এখানেই ধর্মের ভেল্কিবাজি। ইশ্বর সব ভালোটা বুঝেন, কিন্তু মন্দটা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। আদতে, ইশ্বর বলে কেউ নেই।যদি থাকতো, তাহলে তিনি এরকম একচোখা হতেন না। বান্দার ভালো কাজের ক্রেডিটটা নিজে নিয়ে নিবেন, কিন্তু বান্দার মন্দ কাজের বেলায় বলবেন- 'উহু, অইটা থেকে আমি পবিত্র। অইটা তোমার ভাগ।'
স্যারের কথা শুনে ক্লাশে যে ক'জন নাস্তিক আছে, তারা হাত তালি দেওয়া শুরু করলো। সাজিদের পাশে যে নাস্তিকটা বসেছে, সে তো বলেই বসলো,- 'মফিজ স্যার হলেন আমাদের বাঙলার প্লেটো।'
স্যার বলেই যাচ্ছেন ধর্ম আর স্রষ্টার অসারতা নিয়ে।
-
এবার সাজিদ দাঁড়ালো। স্যারের কথার মাঝে সে বললো,- 'স্যার, সৃষ্টিকর্তা একচোখা নন। তিনি মানুষের ভালো কাজের ক্রেডিট নেন না। তিনি ততোটুকুই নেন, যতোটুকু তিনি পাবেন।ইশ্বর আছেন।'
স্যার সাজিদের দিকে একটু ভালোমতো তাকালেন।বললেন,- 'শিওর?'
- 'জ্বি।'
- 'তাহলে মানুষের মন্দ কাজের জন্য কে দায়ী?'
- 'মানুষই দায়ী।- সাজিদ বললো।
- 'ভালো কাজের জন্য?'
- 'তাও মানুষ।'
স্যার এবার চিৎকার করে বললেন,- 'এক্সাক্টলি, এটাই বলতে চাচ্ছি। ভালো/মন্দ এসব মানুষেরই কাজ।সো, এর সব ক্রেডিটই মানুষের।এখানে স্রষ্টার কোন হাত নেই। সো, তিনি এখান থেকে না প্রশংসা পেতে পারেন, না তিরস্কার।সোজা কথায়, স্রষ্টা বলতে কেউই নেই।'
ক্লাশে পিনপতন নিরবতা। সাজিদ বললো,- 'মানুষের ভালো কাজের জন্য স্রষ্টা অবশ্যই প্রশংসা পাবেন, কারন, মানুষকে স্রষ্টা ভালো কাজ করার জন্য দুটি হাত দিয়েছেন, ভালো জিনিস দেখার জন্য দুটি চোখ দিয়েছেন, চিন্তা করার জন্য মস্তিষ্ক দিয়েছেন, দুটি পা দিয়েছেন। এসবকিছুই স্রষ্টার দান।তাই ভালো কাজের জন্য তিনি অবশ্যই প্রশংসা পাবেন।'
স্যার বললেন,- 'এই গুলো দিয়ে তো মানুষ খারাপ কাজও করে, তখন?'
- 'এর দায় স্রষ্টার নয়।'
- 'হা হা হা হা। তুমি খুব মজার মানুষ দেখছি।হা হা হা হা।'
সাজিদ বললো,- 'স্যার, স্রষ্টা মানুষকে একটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন।এটা দিয়ে সে নিজেই নিজের কাজ ঠিক করে নেয়। সে কি ভালো করবে, না মন্দ।'
স্যার তিরস্কারের সুরে বললেন, - 'ধর্মীয় কিতাবাদির কথা বাদ দাও,ম্যান। কাম টু দ্য পয়েণ্ট এন্ড বি লজিক্যাল।'
সাজিদ বললো, - 'স্যার, আমি কি উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে পারি ব্যাপারটা?'
- 'অবশ্যই।'- স্যার বললেন।
সাজিদ বলতে শুরু করলো-
'ধরুন, খুব গভীর সাগরে একটি জাহাজ ডুবে গেলো। ধরুন, সেটা বার্মুডা ট্রায়াঙ্গাল। এখন কোন ডুবুরিই সেখানে ডুব দিয়ে জাহাজের মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে পারছে না।বার্মুডা ট্রায়াঙ্গালে তো নয়ই। এই মূহুর্তে ধরুন সেখানে আপনার আবির্ভাব ঘটলো। আপনি সবাইকে বললেন,- 'আমি এমন একটি যন্ত্র বানিয়ে দিতে পারি, যেটা গায়ে লাগিয়ে যেকোন মানুষ খুব সহজেই ডুবে যাওয়া জাহাজের মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে পারবে।ডুবুরির কোনরকম ক্ষতি হবে না।'
স্যার বললেন,- 'হুম, তো?'
- 'ধরুন, আপনি যন্ত্রটি তৎক্ষণাৎ বানালেন, এবং একজন ডুবুরি সেই যন্ত্র গায়ে লাগিয়ে সাগরে নেমে পড়লো ডুবে যাওয়া মানুষগুলোকে উদ্ধার করতে।'
ক্লাশে তখন একদম পিনপতন নিরবতা। সবাই মুগ্ধ শ্রোতা।কারো চোখের পলকই যেনো পড়ছেনা।
সাজিদ বলে যেতে লাগলো-
'ধরুন, ডুবুরিটা ডুব দিয়ে ডুবে যাওয়া জাহাজে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে সে দেখলো, মানুষগুলো হাঁসপাশ করছে।সে একে একে সবাইকে একটি করে অক্সিজেনের সিলিন্ডার দিয়ে দিলো। এবং তাদের একজন একজন করে উদ্ধার করতে লাগলো।'
স্যার বললেন,- 'হুম।'
- 'ধরুন, সব যাত্রীকে উদ্ধার করা শেষ।বাকি আছে মাত্র একজন। ডুবুরিটা যখন শেষ লোকটাকে উদ্ধার করতে গেলো, তখন ডুবুরিটা দেখলো- এই লোকটাকে সে আগে থেকেই চিনে।'
এতটুকু বলে সাজিদ স্যারের কাছে প্রশ্ন করলো,- 'স্যার, এরকম কি হতে পারেনা?'
স্যার বললেন,- 'অবশ্যই হতে পারে। লোকটা ডুবুরির আত্মীয় বা পরিচিত হয়ে যেতেই পারে। অস্বাভাবিক কিছু নয়।'
সাজিদ বললো,- 'জ্বি। ডুবুরিটা লোকটাকে চিনতে পারলো। সে দেখলো,- এটা হচ্ছে তার চরম শত্রু।এই লোকের সাথে তার দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলছে।এরকম হতে পারেনা,স্যার?
- 'হ্যাঁ, হতে পারে।'
সাজিদ বললো,- 'ধরুন, ডুবুরির মধ্যে ব্যক্তিগত হিংসাবোধ জেগে উঠলো।সে শত্রুতাবশঃত ঠিক করলো যে, এই লোকটাকে সে বাঁচাবেনা। কারন, লোকটা তার দীর্ঘদিনের শত্রু। সে একটা চরম সুযোগ পেলো এবং প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠলো। ধরুন, ডুবুরি অই লোকটাকে অক্সিজেনের সিলিন্ডার তো দিলোই না, উল্টো উঠে আসার সময় লোকটাকে পেটে একটা জোরে লাথি দিয়ে আসলো।'
ক্লাশে তখনও পিনপতন নিরবতা। সবাই সাজিদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
স্যার বললেন,- 'তো, তাতে কি প্রমান হয়,সাজিদ?'
সাজিদ স্যারের দিকে ফিরলো। ফিরে বললো,- 'Let me finish my beloved sir....'
- 'Okey, you are permitted. carry on'- স্যার বললেন।
সাজিদ এবার স্যারকে প্রশ্ন করলো,- 'স্যার, বলুন তো, এই যে, এতগুলো ডুবে যাওয়া লোককে ডুবুরিটা উদ্ধার করে আনলো, এর জন্য আপনি কি কোন ক্রেডিট পাবেন?'
স্যার বললেন,- 'অবশ্যই আমি ক্রেডিট পাবো। কারন, আমি যদি অই বিশেষ যন্ত্রটি না বানিয়ে দিতাম, তাহলে তো এই লোকগুলোর কেউই বাঁচতো না।'
সাজিদ বললো,- 'একদম ঠিক স্যার। আপনি অবশ্যই এরজন্য ক্রেডিট পাবেন।কিন্তু, আমার পরবর্তী প্রশ্ন হচ্ছে- 'ডুবুরিটা সবাইকে উদ্ধার করলেও, একজন লোককে সে শত্রুতা বশঃত উদ্ধার না করে মৃত্যুকূপে ফেলে রেখে এসেছে। আসার সময় তার পেটে একটি জোরে লাথিও দিয়ে এসেছে। ঠিক?'
- 'হুম।'
- 'এখন স্যার, ডুবুরির এহেন অন্যায়ের জন্য কি আপনি দায়ী হবেন? ডুবুরির এই অন্যায়ের ভাগটা কি সমানভাবে আপনিও ভাগ করে নেবেন?'
স্যার বললেন,- 'অবশ্যই না। ওর দোষের ভাগ আমি কেনো নেবো? আমি তো তাকে এরকম অন্যায় কাজ করতে বলিনি।সেটা সে নিজে করেছে।সুতরাং, এর পুরো দায় তার।'
সাজিদ এবার হাসলো। হেসে সে বললো,- 'স্যার, ঠিক একইভাবে, আল্লাহ তা'য়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ভালো কাজ করার জন্য। আপনি যেরকম ডুবুরিকে একটা বিশেষ যন্ত্র বানিয়ে দিয়েছেন, সেরকম সৃষ্টিকর্তাও মানুষকে অনুগ্রহ করে হাত,পা,চোখ,নাক,কান,মুখ,মস্তিষ্ক এসব দিয়ে দিয়েছেন। সাথে দিয়েছেন একটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি।এখন এসব ব্যবহার করে সে যদি কোন ভালো কাজ করে, তার ক্রেডিট স্রষ্টাও পাবেন, যেরকম বিশেষ যন্ত্রটি বানিয়ে আপনি ক্রেডিট পাচ্ছেন।আবার, সে যদি এগুলো ব্যবহার করে কোন খারাপ কাজ করে, গর্হিত কাজ করে, তাহলে এর দায়ভার স্রষ্টা নেবেন না।যেরকম, ডুবুরির অই অন্যায়ের দায় আপনার উপর বর্তায় না। আমি কি বোঝাতে পেরেছি,স্যার?'
ক্লাশে এতক্ষণ ধরে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছিলো। এবার ক্লাশের সকল আস্তিকেরা মিলে একসাথে জোরে জোরে হাত তালি দেওয়া শুরু করলো।
স্যারের জবাবের আশায় সাজিদ স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে। স্যার বললেন,- 'হুম। আই গট দ্য পয়েণ্ট।'- এই বলে স্যার সেদিনের মতো ক্লাশ শেষ করে চলে যান।
'সকল প্রশংসা কেনো স্রষ্টার?'/ আরিফ আজাদ
(তৃতীয় পর্ব)
(কিছুদিন আগে বিশিষ্ট নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দীন 'আলহামদুলিল্লাহ্‌' বলা নিয়ে ব্যঙ্গ করে, এবং গল্পে উল্লিখিত প্রশ্নগুলো করে একটি লেখা লিখেছিলো। এটা তার লেখার একটি পাল্টা জবাব হিসেবে লেখা)

তাকদির বনাম স্বাধীন ইচ্ছা'- স্রষ্টা কি এখানে বিতর্কিত?

সাজিদের ব্যাগে ইয়া মোটা একটি ডায়েরি থাকে সবসময়।
ডায়েরিটা প্রাগৈতিহাসিক আমলের কোন নিদর্শনের মতো। জায়গায় জায়গায় ছেঁড়া।ছেঁড়া জায়গার কোনটাতে সূতো দিয়ে সেলাই করা, কোন জায়গায় আঁটা দিয়ে প্রলেপ লাগানো, কোন জায়গায় ট্যাপ করা।
এই ডায়েরিতে সে তার জীবনের নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো লিখে রাখে।এই ডায়েরির মাঝামাঝি কোন এক জায়গায় সাজিদ আমার সাথে প্রথম সাক্ষাতের ঘটনাটিও লিখে রেখেছে।তার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় টি.এস.সি তে।
সে আমার সম্পর্কে লিখে রেখেছে,-
'ভ্যাবলা টাইপের এক ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হলো আজ।দেখলেই মনে হবে, জগতের কঠিন বিষয়ের কোনকিছুই সে বুঝেনা।কথা বলার পরে বুঝলাম, এই ছেলে অত্যন্ত বুদ্ধিমান,কিন্তু বোকা।ছেলেটার নাম- আরিফ।'
নিচে তারিখ দেওয়া- '০৫/০৩/০৯
এই ডায়েরিতে নানান বিখ্যাত ব্যক্তিদের কথাও লিখা আছে।
একবার কানাডার টরেণ্টোতে সাজিদ তার বাবার সাথে একটি অফিসিয়াল ট্যুরে গিয়েছিলো।সেখানে অনেক সেলেব্রিটির সাথে বিলগেটসও আমন্ত্রিত ছিলেন।বিলগেটস সেখানে দশ মিনিটের জন্য বক্তৃতা রেখেছিলেন।সে ঘটনাটি লিখা আছে।
জাফর ইকবালের সাথে সাজিদের একবার বই মেলায় দেখা হয়ে যায়। সেবারের বইমেলায় জাফর স্যারের বই 'একটুখানি বিজ্ঞান' এর দ্বিতীয় কিস্তি 'আরো একটুখানি বিজ্ঞান' প্রকাশিত হয়। সাজিদ জাফর স্যারের বই কিনে বের হওয়ার পথে জাফর স্যারের সাথে তার দেখা হয়ে যায়।সাজিদ স্যারের একটি অটোগ্রাফ নিয়ে, স্যারের কাছে হেসে জানতে চাইলো,- 'স্যার, 'একটুখানি বিজ্ঞান' পাইলাম।এরপর পাইলাম 'আরো একটুখানি বিজ্ঞান'।এটার পরে, 'আরো আরো একটুখানি বিজ্ঞান' কবে পাচ্ছি?'
সেদিন নাকি জাফর স্যার মিষ্টি হেসে বলেছিলেন,- 'পাবে।'
নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এরকম অনেক ঘটনাই ঠাঁই পেয়েছে সাজিদের ডায়েরিটাতে।
সাজিদের ডায়েরির আদ্যোপান্ত আমার পড়া ছিলো। কিন্তু, সেমিষ্টার ফাইনাল সামনে চলে আসায় গত বেশ কিছুদিন তার ডায়েরিটা আমার আর পড়া হয়নি।অবশ্য, ডায়েরিটা আমি লুকিয়ে লুকিয়েই পড়ি।
সেদিন থার্ড সেমিষ্টারের শেষ পরীক্ষাটি দিয়ে রুমে আসলাম। এসে দেখি সাজিদ ঘরে নেই।তার টেবিলের উপরে তার ডায়েরিটা পড়ে আছে খোলা অবস্থায়।
ঘর্মাক্ত শরীর। কাঠফাটা রোদের মধ্যে ক্যাম্পাস থেকে হেঁটে বাসায় ফিরেছি।এই মূহুর্তে বসে ডায়েরিটা উল্টোবো, সে শক্তি বা ইচ্ছে কোনটাই নেই।কিন্তু ডায়েরিটা বন্ধ করতে গিয়ে একটি শিরোনামে আমার চোখ আটকে যায়। আমি সাজিদের টেবিলেই বসে পড়ি। লেখাটির শিরোনাম ছিলো,-
'ভাগ্য বনাম স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি- স্রষ্টা কি এখানে বিতর্কিত?'
বেশ লোভনীয় শিরোনাম।শারীরিক ক্লান্তি ভুলেই আমি ঘটনাটির প্রথম থেকে পড়া শুরু করলাম।ঘটনাটি সাজিদের ডায়েরিতে যেভাবে লেখা, ঠিক সেভাবেই আমি পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি-
'কয়েকদিন আগে ক্লাশের থার্ড পিরিয়ডে মফিজুর রহমান স্যার এসে আমাকে দাঁড় করালেন।বললেন,- 'তুমি ভাগ্যে,আই মিন তাকদিরে বিশ্বাস করো?'
আমি আচমকা অবাক হলাম। আসলে এই আলাপগুলো হলো ধর্মীয় আলাপ। মাইক্রোবায়োলজির একজন শিক্ষক যখন ক্লাশে এসে এসব জিজ্ঞেস করেন, তখন খানিকটা বিব্রত বোধ করাই স্বাভাবিক। স্যার আমার উত্তরের আশায় আমার মুখের দিকে চেয়ে আছেন।
আমি বললাম,- 'জ্বি, স্যার।এ্যাজ এ্যা মুসলিম, আমি তাকদিরে বিশ্বাস করি।এটি আমার ঈমানের মূল সাতটি বিষয়ের মধ্যে একটি।'
স্যার বললেন,- 'তুমি কি বিশ্বাস করো যে, মানুষ জীবনে যা যা করবে তার সবকিছুই তার জন্মের অনেক অনেক বছর আগে তার তাকদিরে লিখে দেওয়া হয়েছে?'
- 'জ্বি স্যার'- আমি উত্তর দিলাম।
- 'বলা হয়, স্রষ্টার ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটি ক্ষুদ্র পাতাও নড়েনা, তাই না?'
- 'জ্বি স্যার।'
- 'ধরো, আজ সকালে আমি একজন লোককে খুন করলাম। এটা কি আমার তাকদিরে পূর্ব নির্ধারিত ছিলো না?'
- 'জ্বি, ছিলো।'
- 'আমার তাকদির যখন লেখা হচ্ছিলো, তখন কি আমি জীবিত ছিলাম?'
- 'না, ছিলেন না।'
- 'আমার তাকদির কে লিখেছে? বা, কার নির্দেশে লিখিত হয়েছে?'
- 'স্রষ্টার।'
- 'তাহলে, সোজা এবং সরল লজিক এটাই বলে- 'আজ সকালে যে খুনটি আমি করেছি, সেটি মূলত আমি করি নি।আমি এখানে একটি রোবট মাত্র।আমার ভেতরে একটি প্রোগ্রাম সেট করে দিয়েছেন স্রষ্টা।সেই প্রোগ্রামে লেখা ছিলো যে, আজ সকালে আমি একজন লোককে খুন করবো।সুতরাং, আমি ঠিক তাই-ই করেছি, যা আমার জন্য স্রষ্টা পূর্বে ঠিক করে রেখেছেন।এতে আমার কোন হাত নেই।ডু ইউ এগ্রি,সাজিদ?'
- 'কিছুটা'- আমি উত্তর দিলাম।
স্যার এবার হাসলেন।হেসে বললেন,- 'আমি জানতাম তুমি কিছুটাই একমত হবে,পুরোটা নয়।এখন তুমি আমাকে নিশ্চই যুক্তি দেখিয়ে বলবে,- স্যার, স্রষ্টা আমাদের একটি স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন।আমরা এটা দিয়ে ভালো-মন্দ বিচার করে চলি,রাইট?'
- 'জ্বি স্যার।'
- 'কিন্তু সাজিদ, এটা খুবই লেইম লজিক,ইউ নো? ধরো, আমি তোমার হাতে বাজারের একটি লিষ্ট দিলাম।লিষ্টে যা যা কিনতে হবে, তার সবকিছু লেখা আছে।এখন তুমি বাজার করে ফিরলে।তুমি ঠিক তাই তাই কিনলে যা আমি লিষ্টে লিখে দিয়েছি।এবং তুমি এটা করতে বাধ্য।'
এতটুকু বলে স্যার আমার কাছে জানতে চাইলেন,- 'বুঝতে পারছো?'
আমি বললাম,- 'জ্বি স্যার।'
- 'ভেরি গুড! ধরো, তুমি বাজার করে আসার পর, একজন জিজ্ঞেস করলো, সাজিদ কি কি বাজার করেছো? তখন আমি উত্তর দিলাম,- 'ওর যা যা খেতে মন চেয়েছে, তা-ই তা-ই কিনেছে। বলতো, আমি সত্য বলেছি কিনা?'
আমি বললাম,- 'নাহ, আপনি মিথ্যা বলেছেন।'
স্যার চিৎকার করে বলে উঠলেন,- 'এক্সাক্টলি। ইউ হ্যাভ গট দ্য পয়েণ্ট,মাই ডিয়ার।আমি মিথ্যা বলেছি।আমি লিষ্টে বলেই দিয়েছি তোমাকে কি কি কিনতে হবে।তুমি ঠিক তা-ই তা-ই কিনেছো যা আমি কিনতে বলেছি।যা কিনেছো সব আমার পছন্দের জিনিস। এখন আমি যদি বলি,- 'ওর যা যা খেতে মন চেয়েছে,সে তা-ই তা-ই কিনেছে', তাহলে এটা একটা ডাহা মিথ্যা কথা,না?'
- 'জ্বি,স্যার।'
- 'ঠিক স্রষ্টাও এভাবে মিথ্যা বলেছেন।দুই নাম্বারি করেছেন। তিনি অনেক আগে আমাদের তাকদির লিখে তা আমাদের গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন।এখন আমরা সেটাই করি, যা স্রষ্টা সেখানে লিখে রেখেছেন।আবার, এ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য ডে, এই কাজের জন্য কেউ জান্নাতে যাচ্ছে, কেউ জাহান্নামে।কিন্তু কেনো? এখানে মানুষের তো কোন হাত নেই।ম্যানুয়ালটা স্রষ্টার তৈরি। আমরা তো জাষ্ট পারফর্মার।স্ক্রিপ্ট রাইটার তো স্রষ্টা।স্রষ্টা এরজন্য আমাদের কাউকে জান্নাত,কাউকে জাহান্নাম দিতে পারেন না। যুক্তি তাই বলে,ঠিক?'
আমি চুপ করে রইলাম। পুরো ক্লাশে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে তখন।
স্যার বললেন,- 'হ্যাভ ইউ এ্যানি প্রপার লজিক অন দ্যাট টিপিক্যাল কোয়েশ্চান,ডিয়ার?'
আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম।
স্যার মুচকি হাসলেন। মনে হলো- উনি ধরেই নিয়েছেন যে, উনি আমাকে এবার সত্যি সত্যিই কুপোকাত করে দিয়েছেন।বিজয়ীর হাসি।
আমাকে যারা চিনে তারা জানে, আমি কখনো কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে সময় নিই না।আজকে যেহেতু তার ব্যতিক্রম ঘটলো, আমার বন্ধুরা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব চোখ করে তাকালো।তাদের চাহনি দেখে মনে হচ্ছিলো, এই সাজিদকে তারা চিনেই না।কোনদিন দেখে নি।
আর, ক্লাশে আমার বিরুদ্ধ মতের যারা আছে, তাদের চেহারা তখন মূহুর্তেই উজ্জ্বল বর্ণ ধারন করলো।তারা হয়তো মনে মনে বলতে লাগলো,- 'মোল্লার দৌঁড় অই মসজিদ পর্যন্তই।হা হা হা'।
আমি মুখ তুলে স্যারের দিকে তাকালাম।মুচকি হাসিটা স্যারের মুখে তখনও বিরাজমান।
আমি বললাম,- 'স্যার, এই ক্লাশে কার সম্পর্কে আপনার কি অভিমত?'
স্যার ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন। স্যার জিজ্ঞেস করেছেন কি আর আমি বলছি কি।
স্যার বললেন,- 'বুঝলাম না।'
- 'মানে, আমাদের ক্লাশের কার মেধা কি রকম, সে বিষয়ে আপনার কি ধারনা?'
- 'ভালো ধারনা। ছাত্রদের সম্পর্কে একজন শিক্ষকেরই তো সবচেয়ে ভালো জ্ঞান থাকে।'
আমি বললাম,- 'স্যার, আপনি বলুন তো, এই ক্লাশের কারা কারা ফাষ্ট ক্লাশ আর কারা কারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে?'
স্যার কিছুটা বিস্মিত হলেন। বললেন,- 'আমি তোমাকে অন্য বিষয়ে প্রশ্ন করেছি।তুমি 'আউট অফ কনটেক্সট' এ গিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করছো,সাজিদ।'
- 'না স্যার, আমি কনটেক্সটেই আছি। আপনি উত্তর দিন।'
স্যার বললেন,- 'এই ক্লাশ থেকে রায়হান, মমতাজ, ফারহানা, সজীব, ওয়ারেশ, ইফতি, সুমন,জাবেদ এবং তুমি ফাষ্ট ক্লাশ পাবে। আর বাকিরা সেকেন্ড ক্লাশ।'
স্যার যাদের নাম বলেছেন, তারা সবাই ক্লাশের ব্রিলিয়্যাণ্ট ষ্টুডেণ্ট।সুতরাং, স্যারের অনুমান খুব একটা ভুল না।
আমি বললাম,- 'স্যার, আপনি এটা লিখে দিতে পারেন?'
- 'Why not'- স্যার বললেন।
এই বলে তিনি খচখচ করে একটা কাগজের একপাশে যারা ফাষ্ট ক্লাশ পাবে তাদের নাম, অন্যপাশে যারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে,তাদের নাম লিখে আমার হাতে দিলেন।
আমি বললাম,- 'স্যার, ধরে নিলাম যে আপনার ভবিষ্যৎবাণী সম্পূর্ণ সত্য হয়েছে।মানে, আপনি ফাষ্ট ক্লাশ পাবে বলে যাদের নাম লিখেছেন,তারা সবাই ফাষ্ট ক্লাশ পেয়েছে,আর যারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে লিখেছেন, তাদের সবাই সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে।'
- 'হুম, তো?'
- 'এখন, স্যার বলুন তো, যারা ফাষ্ট ক্লাশ পেয়েছে, আপনি এই কাগজে তাদের নাম লিখেছেন বলেই কি তারা ফাষ্ট ক্লাশ পেয়েছে?'
- 'নাহ তো।'
- 'যারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে, তারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে বলে আপনি এই কাগজে লিখেছেন বলেই কি তারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে?'
স্যার বললেন,- 'একদম না।'
- 'তাহলে মূল ব্যাপারটি কি স্যার?'
স্যার বললেন,- 'মূল ব্যাপার হলো, আমি তোমাদের শিক্ষক।আমি খুব ভালো জানি পড়াশুনায় তোমাদের কে কেমন।আমি খুব ভালো করেই জানি, কার কেমন মেধা। সুতরাং, আমি চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারি কে কেমন রেজাল্ট করবে।'
আমি হাসলাম। বললাম,- 'স্যার, যারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে, তারা যদি আপনাকে দোষ দেয়? যদি বলে, আপনি 'সেকেন্ড ক্লাশ' ক্যাটাগরিতে তাদের নাম লিখেছেন বলেই তারা সেকেন্ড ক্লাশ পেয়েছে?'
স্যার কপালের ভাঁজ লম্বা করে বললেন,- 'ইট উড বি টোট্যালি বুলশিট! আমি কেন এর জন্য দায়ী হবো? এটা তো সম্পূর্ণ তাদের দায়। আমি শুধু তাদের মেধা,যোগ্যতা সম্পর্কে ধারনা রাখি বলেই অগ্রিম বলে দিতে পেরেছি যে কে কেমন রেজাল্ট করবে।'
আমি আবার জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। পুরো ক্লাশ আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
আমি থামলাম।বললাম,- 'স্যার, তাকদির তথা ভাগ্যটাও ঠিক এরকম। আপনি যেমন আমাদের মেধা, যোগ্যতা,ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো ধারনা রাখেন, স্রষ্টাও তেমনি তার সৃষ্টি সম্পর্কে ধারনা রাখেন।আপনার ধারনা মাঝে মাঝে ভুল হতে পারে, কিন্তু স্রষ্টার ধারনায় কোন ভুল নেই।স্রষ্টা হলেন আলিমুল গায়েব।তিনি ভূত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সব জানেন।
আপনি যেরকম আমাদের সম্পর্কে পূর্বানুমান করে লিখে দিয়েছেন যে, আমাদের মধ্যে কারা কারা ফাষ্ট ক্লাশ পাবে, আর কারা সেকেন্ড ক্লাশ।এর মানে কিন্তু এই না যে, আপনি বলেছেন বলে আমাদের কেউ ফাষ্ট ক্লাশ পাচ্ছি, কেউ সেকেন্ড ক্লাশ।
স্রষ্টাও সেরকম পূর্বানুমান করে আমাদের তাকদির লিখে রেখেছেন।তাতে লেখা আছে দুনিয়ায় আমরা কে কি করবো।এর মানেও কিন্তু এই না যে, তিনি লিখে দিয়েছেন বলেই আমরা কাজগুলো করছি।বরং, এর মানে হলো এই- তিনি জানেন যে, আমরা দুনিয়ায় এই এই কাজগুলো করবো।তাই তিনি তা অগ্রিম লিখে রেখেছেন তাকদির হিসেবে।
আমাদের মধ্যে কেউ ফাষ্ট ক্লাশ আর কেউ সেকেন্ড ক্লাশ পাবার জন্য যেমন কোনভাবেই আপনি দায়ী নন, ঠিক সেভাবে, মানুষের মধ্যে কেউ ভালো কাজ করে জান্নাতে, আর কেউ খারাপ কাজ করে জাহান্নামে যাবার জন্যও স্রষ্টা দায়ী নন।স্রষ্টা জানেন যে, আপনি আজ সকালে একজনকে খুন করবেন।তাই তিনি সেটা আগেই আপনার তাকদিরে লিখে রেখেছেন।এটার মানে এই না যে- স্রষ্টা লিখে রেখেছে বলেই আপনি খুনটি করেছেন।এর মানে হলো- স্রষ্টা জানেন যে,আপনি আজ খুনটি করবেন।তাই সেটা অগ্রিম লিখে রেখেছেন আপনার তাকদির হিসেবে।
স্যার, ব্যাপারটা কি এখন পরিষ্কার?
স্যারের চেহারাটা কিছুটা ফ্যাকাশে মনে হলো। তিনি বললেন,- 'হুম।'
এরপর স্যার কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।তারপর বললেন,- 'আমি শুনেছিলাম তুমি ক'দিন আগেও নাস্তিক ছিলে।তুমি আবার আস্তিক হলে কবে?'
আমি হা হা হা করে হাসলাম। বললাম,- 'এই প্রশ্নটা কিন্তু স্যার আউট অফ কনটেক্সট।'
এটা শুনে পুরো ক্লাশ হাসিতে ফেঁটে পড়লো।
পিরিওডের একদম শেষদিকে, স্যার আবার আমাকে দাঁড় করালেন।বললেন,- 'বুঝলাম স্রষ্টা আগে থেকে জানেন বলেই লিখে রেখেছেন।তিনি যেহেতু আগে থেকেই জানেন কে ভালো কাজ করবে আর কে খারাপ কাজ করবে, তাহলে পরীক্ষা নেওয়ার কি দরকার? যারা জান্নাতে যাওয়ার তাদের জান্নাতে, যারা জাহান্নামে যাওয়ার তাদের জাহান্নামে পাঠিয়ে দিলেই তো হতো,তাই না?'
আমি আবার হাসলাম। আমার হাতে স্যারের লিখে দেওয়া কাগজটি তখনও ধরা ছিলো।আমি সেটা স্যারকে দেখিয়ে বললাম,- 'স্যার, এই কাগজে কারা কারা ফাষ্ট ক্লাশ পাবে, আর কারা কারা সেকেন্ড ক্লাশ পাবে, তাদের নাম লেখা আছে। তাহলে এই কাগজটির ভিত্তিতেই রেজাল্ট দিয়ে দিন।বাড়তি করে পরীক্ষা নিচ্ছেন কেনো?'
স্যার বললেন,- 'পরীক্ষা না নিলে কেউ হয়তো এই বলে অভিযোগ করতে পারে যে,- 'স্যার আমাকে ইচ্ছা করেই সেকেন্ড ক্লাশ দিয়েছে।পরীক্ষা দিলে আমি হয়তো ঠিকই ফাষ্ট ক্লাশ পেতাম।'
আমি বললাম,- 'একদম তাই,স্যার। স্রষ্টাও এইজন্য পরীক্ষা নিচ্ছেন,যাতে কেউ বলতে না পারে- দুনিয়ায় পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলে আমি অবশ্যই আজকে জান্নাতে থাকতাম। স্রষ্টা ইচ্ছা করেই আমাকে জাহান্নামে পাঠিয়েছে।'
ক্লাশের সবাই হাত তালি দিতে শুরু করলো। স্যার বললেন,- 'সাজিদ, আই হ্যাভ এ্যা লাষ্ট কোয়েশ্চান।'
- 'ডেফিনেইটলি, স্যার।'- আমি বললাম।
- 'আচ্ছা, যে মানুষ পুরো জীবনে খারাপ কাজ বেশি করে,সে অন্তত কিছু না কিছু ভালো কাজ তো করে,তাই না?'
- 'জ্বি স্যার।'
- 'তাহলে, এই ভালো কাজগুলোর জন্য হলেও তো তার জান্নাতে যাওয়া দরকার,তাই না?'
আমি বললাম,- 'স্যার, পানি কিভাবে তৈরি হয়?'
স্যার আবার অবাক হলেন। হয়তো বলতে যাচ্ছিলেন যে, এই প্রশ্নটাও আউট অফ কনটেক্সট, কিন্তু কি ভেবে যেন চুপসে গেলেন।বললেন,- 'দুই ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেনের সংমিশ্রণে।'
আমি বললাম,- 'আপনি এক ভাগ হাইড্রোজেন আর এক ভাগ অক্সিজেন দিয়ে পানি তৈরি করতে পারবেন?'
- 'কখনোই না।'
- 'ঠিক সেভাবে, এক ভাগ ভালো কাজ আর এক ভাগ মন্দ কাজে জান্নাত পাওয়া যায়না। জান্নাত পেতে হলে হয় তিন ভাগই ভালো কাজ হতে হবে, নতুবা দুই ভাগ ভালো কাজ, এক ভাগ মন্দ কাজ হতে হবে। অর্থাৎ, ভালো কাজের পাল্লা ভারি হওয়া আবশ্যক।'
সেদিন আর কোন প্রশ্ন স্যার আমাকে করেন নি।'
-
এক নিশ্বাঃসে পুরোটা পড়ে ফেললাম।কোথাও একটুও থামিনি। পড়া শেষে যেই মাত্র সাজিদের ডায়েরিটা বন্ধ করতে যাবো, অমনি দেখলাম, পেছন থেকে সাজিদ এসে আমার কান মলে ধরেছে।সে বললো,- 'তুই তো সাংঘাতিক লেভেলের চোর।'
আমি হেসে বললাম,- 'হা হা হা। স্যারকে তো ভালো জব্দ করেছিস ব্যাটা।'
কথাটা সে কানে নিলো বলে মনে হলো না।নিজের সম্পর্কে কোন কমপ্লিমেন্টই সে আমলে নেয় না। গামছায় মুখ মুছতে মুছতে সে খাটের উপর শুয়ে পড়লো।
আমি তার কাঁধে হাত রাখলাম। বললাম,- 'সাজিদ......'
- 'হু'
- 'একটা কথা বলবো?'
- 'বল।'
- 'জানিস, একসময় যুবকেরা হিমু হতে চাইতো।হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে, মরুভূমিতে গর্ত খুঁড়ে জ্যোৎস্না দেখার স্বপ্ন দেখতো।দেখিস,এমন একদিন আসবে, যেদিন যুবকেরা সাজিদ হতে চাইবে। ঠিক তোর মতো......'
এই বলে আমি সাজিদের দিকে তাকালাম।দেখলাম, ততক্ষণে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। অঘোর ঘুম........
'তাকদির বনাম স্বাধীন ইচ্ছা'- স্রষ্টা কি এখানে বিতর্কিত?'/ আরিফ আজাদ
(চতুর্থ পর্ব)

আল্লাহর হুকুম

সারাজীবন আল্লাহর হুকুম মানতে গিয়ে আমরা চিন্তা করি, "লোকে কি বলবে!"

ফাইনালি লোকে বলে, "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন"

From Arif Faisal Auni bhai's timeline

পুনরুত্থান কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা!

এক বিকট, কান ফাটানো শব্দ
চোখের পাতায় ধুলোর আস্তরণ
ধুলো মুছতে মুছতে আপনি উঠে বসলেন
নিজেকে সামলে নিয়ে চারপাশে তাকালেন

টলতে টলতে উঠে দাঁড়িয়ে...

ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন

চারপাশে যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ

আদিগন্ত বিস্তৃত

.
সবাই দলবেঁধে ছুটছে একই দিকে
আপনিও তাদের সাথে ছোটা শুরু করলেন
কেউ কোন কথা বলছে না
শুধু পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে
সবাই শব্দ লক্ষ্য করে ছুটে চলেছে অবিরাম
আপনার শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে
প্রতি মিনিটে বুকের ভেতরের ভয়টা বেড়েই চলছে।
.
হঠাৎ আবিষ্কার করলেন শুধু মানুষ না
বিভিন্ন জন্তুও ছুটে চলছে…বন্য এবং গৃহপালিত,
হিংস্র ও গর্বিত
আগে হয়তো আপনি এদের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করতেন
কিন্তু প্রচণ্ড ভয় এখন আপনাকে নড়তে দিচ্ছে না।
চারপাশের মানুষগুলোর উপস্থিতির দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ ছাড়াই
জন্তুগুলো নতমস্তকে, নতদৃষ্টিতে এগিয়ে চলেছে।
.
এক জনসমুদ্রের মাঝে
নগ্ন দেহগুলো একে অপরের সাথে লেপ্টে আছে
সবাই হাসফাঁস করছে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম,
কারো সময় নেই সৌজন্যতার কিংবা দুঃখ প্রকাশ করার
কারো সময় নেই অন্য কারো দিকে তাকাবার
আজ সবাই নেশাগ্রস্তের ন্যায়,
আতংকে ও উৎকন্ঠায় নিশ্চল...
আজ এক ভারী বোঝা আপনার উপর চেপে বসেছে,
যা বইবার সামর্থ্য আপনার নেই।
.
নতুন এক দলের আগমন ঘটছে
তাদের মতো কোন কিছুই এর আগে দেখেন নি
চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত ওদের অবয়ব বীভৎস, ভয়ংকর!
জ্বীন...
কুৎসিত, অপার্থিব!
বিভিন্ন আকারের
বাকিদের মতোই তারা দাঁড়িয়ে...ভীতসন্ত্রস্ত ও কম্পমান
.
ওদের মাথার ওপর দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন...
একটি তারা খসে পড়ছে
তারপর আরেকটা, তারপর আরও একটা
তীব্র আতঙ্ক নিয়ে আপনি উপলব্ধি করলেন
আকাশ থেকে নক্ষত্ররাজি খুলে পড়ছে!
.
আপনার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে,
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলে
বহু আগেই হয়তো আপনার হৃৎস্পন্দন থেমে যেত।
.
অসংখ্য মানুষগুলো একসাথে আর্তচিৎকার করছে,
কোথাও আর পালাবার রাস্তা নেই,
আজ আর কোন সাহায্যকারী নেই।
.
চির পরিচিত আকাশ আর পৃথিবী আজ অপরিচিত।
শুধুমাত্র আলো বিলিয়ে চলা
মাথার ওপরের চাঁদ আর সূর্যটাই চেনা।
.
যেন যুগ যুগ ধরে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন
সমস্ত শরীর জুড়ে ব্যাথা,
ক্ষুধা-তৃষ্ণায় আপনি কাতর
এই যন্ত্রণা আপনাকে অবসন্ন, নিস্তেজ করে ফেলতো
যদি সর্বগ্রাসী এ আতংক আপনাকে ঘিরে না রাখতো
এক মূহুর্তের জন্য এ ভয় আপনাকে ছেড়ে যায় নি
আর ক্রমশই তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
.
আর তারপর
এক নিমেষে
মূহুর্তের মধ্যে
সূর্য আর চাঁদের আলো নিভে গেল।
.
পুরো পৃথিবী গভীর অন্ধকারে ডুবে গেল।
মাথার ওপরের আকাশটাও এখন বদলাতে শুরু করেছে
সবকিছু ছাপিয়ে অসহায়ত্বের অনুভুতি আপনাকে গ্রাস করছে
“হায় ! কখনো যদি এ ঘুম না ভাঙ্গতো!”
ভাবতে না ভাবতেই...
তীব্র গর্জনে পৃথিবী প্রকম্পিত হয়ে উঠলো
.
কিন্তু না, পৃথিবী না
আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে
টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে
আর রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।
মানুষের আর্তচিৎকারে চারপাশ ভারী হয়ে উঠছে, সবাই ভয়ে উন্মাদ প্রায়...
আকাশের প্রান্তসীমায় দেখা গেল নতুন একশ্রেণীর প্রানী
ফেরেশতা।
বিশালাকার, প্রকান্ড
সকল কল্পনাকে হার মানানো
তারা একে একে জমীনে অবতরণ করলেন ।
প্রবল, রাজকীয়, ভীতিকর, ভয়ঙ্কর
তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাদের রবের প্রশংসায়
.
ভীড়ের মধ্য থেকে
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে একটি প্রশ্ন ভেসে এল
যা ফেরেশতাদের ভীতসন্ত্রস্ত করে তুললো
“তোমাদের মাঝে কি আমাদের রব আছেন?”
.
ত্রস্তস্বরে তারা জবাব দিলেন "মহিমান্বিত আমাদের রব!"
"না, তিনি আমাদের মাঝে নেই।
তবে...
তিনি আসছেন..."
.
.
সেদিন ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।
সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।
এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আট জন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের উর্ধ্বে বহন করবে।
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোন কিছু গোপন থাকবে না।
[সূরা আল-হাক্বা, ১৫-১৮]
.

‪#‎KnowYourDeen‬