Wednesday, July 6, 2016

পরীক্ষা যদি নাইবা আসতো তবে আমি এই পথকে সন্দেহ করতাম।


.

.
প্রতি সপ্তাহে জেল সুপার আমার সেলের সামনে দিয়ে হেটে যেত, আর বাইরে দাড়িয়ে আমাকে দেখতো। একদিন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে কেন সলিটারিতে রেখেছো? সুপার বললো, কারন তুমি সন্ত্রাসী আর তুমি অন্যদেরকেও সন্ত্রাসী বানাচ্ছো। আমি বললাম, তোমার প্রমান কি? সে বললো, মুসলিম জেলার তোমার ব্যাপারে একটা লম্বা রিপোর্ট লিখে আমাকে দিয়েছে, সেখানে সে এটা উল্লেখ করেছে।
.
.
মুসলিম জেলার আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছিল। এজন্য উম্মাহর সমস্যা হল মুনাফিকরা। যে মুসলিম জেলার আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিল সে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে পরিচিত মুখ ছিল। নিজেকে সালাফি দাবি করতো। আমি নিজে জেলে যাবার আগে তাকে  চিনতাম না তবে সে নিজেই আমাকে জানিয়েছিল, তার সাবেক স্ত্রী এবং তার মেয়ে নিয়মিত আমার ক্লাসগুলোতে উপস্থিত থাকতো।
.
.
সলিটারি কনফাইনমেন্টের অবস্থা এতোই খারাপ ছিল যে ক’মাস আমি ওখানে ছিলাম, অনেকেই সেখানে মারা গিয়েছিল। এক সময় আমাকে আর আমার বাবাকে একটি সেলে রাখা হয়। বাবা থাকতেন নিচের বাঙ্কে আর আমি উপরেরটাতে। একটা জায়নামায বিছানো মত জায়গা সেলের ভেতরে ছিল না। উপরের বাঙ্কে শুয়ে আমি দেখতাম আমার বাবা সালাহ পড়ছেন, ক্বুর’আন তিলাওয়াত করছেন। সব সময় মুখের হাসি লেগে আছে। শুধুমাত্র রাতের অন্ধকারে সালাতে সিজদায় গিয়ে তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন আর কাঁদতেন।
.
.
একদিন আমি আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, “হে আমার পিতা! আপনার মনে কি কখনো সন্দেহের উদয় হয় না? যে পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, জেল-যুলুম নির্যাতন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন, পুরো দুনিয়া আপনাকে তো বটেই আপনার পরিবারকেও ত্যাগ করেছে, সম্পত্তি হারিয়েছেন, চেনাজানা মানুষরা সব হারিয়ে গেছে, প্রায় সব কিছু হারিয়েছেন – এতো কিছুর পরও আপনার মনে কি সন্দেহের উদয় হয় না?”
.
.
প্রশ্নটা শোনামাত্র বাবার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, তিনি আমার চোখে চোখ রেখে বললেন – “পুত্র! বরং যদি এ পরীক্ষাসমূহ আপতিত না হতো তাহলে আমি এ পথকে সন্দেহ করতাম। যদি এসবকিছু নাহতো তাহলেই আমার মনে সন্দেহের উদয় হতো।“  
.
.
একজন দ্বীনদার ব্যক্তি যে আদর্শের উপর অটল থাকে, তাকে অবশ্যই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, যে আদর্শ প্রচার করবে তার কথা বাদই দিলাম। দুঃখজনক বিষয়টা হল অপরাধী, মাফিয়াসদস্য, খুনী, কমিউনিস্টদের জীবনী পড়ে দেখবেন, যারা উদ্ভট সব আদর্শে বিশ্বাসী – এদের জীবনী পড়ে দেখবেন তাদের অর্থহীন কলুষিত আদর্শের জন্য তারা যতোটুক সাবর করেছে, আজকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ- কালিমাতে বিশ্বাসীরা অতোটুক সাবর করতে রাজি না। বিস্ময়কর।
.
.
জীবনে অনেক পরীক্ষা থাকে যেগুলো অনিবার্য। এগুলোকে এড়ানোর কোন উপায় থাকে না। আপনার সাবর করা ছাড়া অন্য কোন সুযোগ থাকে না। কিন্তু দাওয়াহর ক্ষেত্রে সাবরের ব্যাপারটা আলাদা। কারন এক্ষেত্রে আপনি চাইলে কষ্ট, বিপদ এড়িয়ে যেতে পারেন। আমার দাওয়াহর জন্য আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে, কিংবা আমার বিপদ হবার সম্ভাবনা আছে – “থাক, আমি বাসায় আমার বউ-বাচ্চা নিয়ে বসে থাকি”। এজন্য দাওয়াহর জন্য সাবর করা সবচেয়ে উত্তম সাবরের অন্তর্ভুক্ত। কারন আপনি স্বেচ্ছায় সাবর করছেন। এধরনের পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি করছেন।
.
.
সবসময় এ বিষয়গুলো নিজের চিন্তায় ও হৃদয়ে ধারন করবেন। আমাদের জীবন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। এ পথে কষ্ট আসবেই, পরীক্ষা আসবেই। যখন অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে আপনার মনে হবে আপনি আর পারছেন না, তখন শুধু জান্নাতে প্রথম মূহুর্তটার কথা মনে করবেন। সবসময়। শুধু প্রথম মূহুর্তটা। দুনিয়ার সবচাইতে হতভাগ্য লোকটিকে বিচারের দিনে এক মুহুর্তের জন্য জান্নাতের স্বাদ পাবার পর, এক সেকেন্ড না, এক মিলিসেকেন্ড না, তার চাইতেও কম সময়ের জন্য জান্নাতের স্বাদ পাবার পর আগেকার সবকিছু ভুলে যাবে। দৃশ্যটা শুধু একবার চিন্তা করুন।  
-শায়খ আহমেদ মুসা জিব্রিল হাফিযাহুল্লাহ
Explanation of the Three Fundamental Principles
ঈষৎ সম্পাদিত ও পরিমার্জিত
লিখেছেন :আসিফ আদনান।

No comments:

Post a Comment