Tuesday, June 28, 2016

ব্লাড মুন ও দাজ্জাল এবং বিশ্ব।


লিখেছেন:Asif Adnan
তার সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে সতর্ক করছি। এমন কোন নাবী নেই যিনি তাঁর কাওমকে এ বিষয়ে সতর্ক করেননি। তবে তার সম্পর্কে আমি তোমাদের এমন একটি কথা বলব যা কোন নাবীই তাঁর জাতিকে বলেননি। তা হল যে, সে কানা হবে আর আল্লাহ্ অবশ্যই কানা নন।
[বুখারী শরীফ]
.
.
“দাজ্জাল ততক্ষণ পর্যন্ত বের হবে না, যতক্ষণ না মানুষ তার কথা ভুলে যাবে, মিম্বর থেকে দাজ্জালের আলোচনা উঠে যাবে।”
[মাজমা আল যাওয়াইদী]
.
.
গত সপ্তাহের চাঁদ আসলেই অন্যরকম ছিল। না, আমি শুধু ব্লাড মুনের রক্তাভ আভার কথা বলছি না। ২৮ তারিখের চাঁদটা দেখতে সাধারণের চাইতে একটু বড় ছিল, এজন্যও বলছি না। ব্লাড মুন মোটামুটি রেয়ার একটা ঘটনা হলেও, সেপ্টেম্বর ২৮ এর ব্লাড মুন ছিল গত ১৮ মাসে চতুর্থ ব্লাড মুনের ঘটনা। প্রথম দুটি ছিল, ছিল গত বছরের এপ্রিলের ১৫ ও অক্টোবরের ৮ তারিখ। সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখের আগে, এই বছরেরই এপ্রিলের ৪ তারিখ আবারো ব্লাড মুন দেখা দেয়। ছয় মাস পর পর ৪ টি ব্লাড মুনের এই সাইকেলকে বলা হয় টেট্র্যাড (Tetrad)। টেট্র্যাড ব্লাড মুনের চাইতেও রেয়ার।
.
.
মুসলিমদের মতো ইহুদীরাও বছরকে চান্দ্র মাসে ভাগ করে হিসেব করে। ইহুদীদের কিতাবাদি এবং আলেমদের মতে, ব্লাড মুন ইহুদিদের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনে। তবে, যদি ব্লাড মুনগুলো কোন ইহুদী ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে হয়, তবে সেটা তাদের জন্য কল্যান বয়ে আনবে। গত পাঁচশ বছরে মাত্র চারবার ব্লাড মুন টেট্র্যাড ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব বা অনুষ্ঠানের সাথে মিলে গেছে। এটি প্রথমবার ঘটে ১৪৯২ সালে। ইতিহাস বইগুলোতে ১৪৯২ সাল ক্রিস্টফার কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু অনেকেই জানেন না, স্পেনের রাজা ফারডিন্যান্ড এবং রানী ইসাবেলা, ১৪৯২ সালে স্পেন থেকে প্রায় দুই লক্ষ ইহুদীকে বহিস্কার করেন। রাতারাতি উদ্বাস্তু বনে যাওয়া এই ইহুদীরা একটি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায় নব আবিষ্কৃত আমেরিকায়।সম্ভাব্য একটি ট্র্যাজিডি থেকে বেঁচে যায় ইহুদীরা।
.
.
পরের বার টেট্র্যাড ব্লাড মুনের তারিখ ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসবের দিনের সাথে মিলে যায় ১৯৪৮ সালে। আমাদের মুসলিমদের কাছে ১৯৪৮ সালটা অপমানের এবং পরাজয়ের। ইহুদীদের কাছে ১৯৪৮ এক মহান বিজয়ের বছর। এই বছর পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনে অসংখ্য নিরীহ মুসলিমের রক্ত আর পুরো মুসলিম উম্মাহর স্বপ্নের ধ্বংসাবশেষের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় যায়নিস্ট “স্টেইট অফ ইস্রায়েল”।
.
.
১৯৬৭ ছিল টেট্র্যাড ব্লাড মুন আর বানী ইস্রাইলের উৎসবের দিনক্ষণ মিলে যাবার পরের বছর। এই বছর জুনের ৭ তারিখ, হাজার বছর অপেক্ষার পর, “ছয় দিনের যুদ্ধের” মাধ্যমে ইহুদীরা জেরুসালেম এবং টেম্পল মাউন্টের (ইনক্লুডিং মাসজিদুল আকসা) নিয়ন্ত্রন ফিরে পায়। ইহুদীরা বিশ্বাস করে সুলাইমান আলাহিস সালাম এর বানানো মাসজিদের (তাদের ভাষায় টেম্পল) জায়গাতেই মেসায়াহ তৃতীয় মন্দির পুনঃনির্মাণ করবে।
.
.
টেট্র্যাডের চারটির মধ্যে আর বাকি থাকে একটি। সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫ ছিল সেই চতুর্থ ব্লাড মুন। ১৪৯২, ১৯৪৮, ১৯৬৭ এই তিনটি বছরই বানী ইস্রাইলের জন্য অত্যন্ত কল্যাণময় (অন্তত বাহ্যিক দৃস্টি ও পার্থিব বিচারে) বছর ছিল। কিন্তু বর্তমানে ইস্রাইলের অবস্থাটা কেমন যেন গোলমেলে। সুস্পষ্ট কোন সাফল্যের আভাস এখনো দেখা যাচ্ছে না। বরং এ বছরে কয়েক বার জেরুসালেমেই ইহুদীদের সিন্যাগগে হামলা হয়েছে। ইহুদীদের উপর খোলা রাস্তাতেও ফিলিস্তিনী সিভিলিয়ানরা কিছু আক্রমন চালিয়েছেন। অবশ্য ইস্রাইল এসব কিছুর মধ্যে দিয়েই নিয়মিত মুসলিমদের পাইকারী হারে হত্যা করে যাচ্ছে। হিজাব না খোলার জন্য রাস্তায় গুলি করে মারছে, বাসার ভেতর ঢুকে মুসলিমদের হত্যা করছে, কোলের শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে মারছে, ইত্যাদি। তবে এগুলো নিয়মের ব্যতিক্রম না। ইহুদী নিয়ন্ত্রিত ফীলিস্তিনে, গত প্রায় সত্তর বছর ধরে মুসলিমদের সাথে এরকমই হয়ে আসছে।
.
.
মুসলিমদের এভাবে হত্যা করা, তাদের উপর যুলুম করা এটা ইস্রাইলে ইহুদীদের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ। এখানে কোন মহাসাফল্য আপাতত দেখা যাচ্ছে না। রিসেন্টলি ইহুদীরা আল-আকসার ব্যাপারে কিছুটা হার্ড লাইনে গেছে। বেশ কয়েক বার সশস্ত্র যায়োনিস্টরা পবিত্র আল-আকসার কম্পাউন্ডে ঢুকেছে। মাসজিদের খাদেম এবং মুসল্লীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। আল আকসা নিয়ে তারা আরেকটু অ্যাগ্রেসিভ হয়েছে। কিন্তু এটাকেও ঠিক ঐভাবে বিশাল কোন সাফল্য বলা যায় না। চিন্তা করুন, ১৪৯২ সালে তারা মোটামুটী নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বলা যায় এরকরম “আলৌকিক” ভাবে বেঁচে গেল। ১৯৪৮ এ মিলেনিয়া পর, দেশে দেশে বিতাড়িত জীবন যাপনের পর “এরেটয ইস্রাইল/ল্যান্ড অফ ইস্রাইলে” তারা ফেরত আসলো। ১৯৬৭ সালে হাজার বছরে প্রথম বারের মত জেরুসালেমের উপর তাদের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হল।
.
.
প্রতিবারই টেট্র্যাড ব্লাড মুনের তারিখ মিলে গিয়েছিল তাদের কোন উৎসব বা অনুষ্ঠানের দিনের সাথে। এবছরের সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখেও তাই হয়েছে। ২৮শে সেপ্ট

No comments:

Post a Comment