Wednesday, July 6, 2016

জ্ঞান

আমরা জানি যে কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন সময়ে ‘ইলম’ বা ‘জ্ঞান’ এর কথা বলা হয়েছে। জ্ঞানার্জন বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? অনেক সময়ে গুরুজনরা কিছু কিছু আয়াত ও হাদিস উল্লেখ করে ছোটদেরকে বলেন— ভালো করে পড়াশুনা কর।এটা কুরআন-হাদিসে বলা আছে।

“জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজনে চীনদেশে যাও”—  এমন জাল হাদিসও অনেক সময়ে ব্যবহার হয়।ইসলাম আসলে কোন জ্ঞানটির প্রতি জোর দিয়েছে? কোন বিষয়ে জানবার জন্য কুরআন-হাদিসে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে?

.

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল(র) বলেছেনঃ-  “আবশ্যক হল এমন জ্ঞান অর্জন করা যার উপর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত এবং যা পরিত্যাগ করা তার[একজন মুসলিমের] জন্য  উচিত না।” তাঁকে বলা হল— “দ্বীন তো সকল জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত”। তিনি বললেনঃ- “ফরয, যেগুলো তার উপর ব্যক্তিগতভাবে বাধ্যতামূলক – এসব ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন ফরয হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।”
[আল আদাবুশ শারিয়াহ (২/৩৩-৩৪), ইবন মুকলিফ]
.
ইবন রজব হাম্বলী(র) আরো বিস্তারিত বলেছেন— “নিশ্চয়ই প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বীনের ঐসব ব্যাপারে জ্ঞান অর্জন ফরয—যেগুলো তার প্রয়োজন।যেমনঃ পবিত্রতা, নামায, রোজা।আর যার সম্পদ আছে তার জন্য ঐ জ্ঞান অর্জন ফরয যা ঐ সম্পদের কারণে তার উপর দায়িত্ব তৈরি করে যেমনঃ যাকাত, সদকাহ, হজ এবং জিহাদ।এ  কারণে যারা বেচা-কেনা করেন, তাদের উপরে ক্রয়-বিক্রয়ে হালাল-হারাম শিক্ষা করা ফরয।”
[মাজমু আর রাসাইল, অধ্যায়” ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া, শারহু হাদিস আবি দারদা, পৃষ্ঠা ২২-২৩]
.
পূর্বযুগের এই উলামাগণের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল মানুষের জন্য কোন জ্ঞান অর্জন করা সর্বাপেক্ষা জরুরী এবং কোন কোন দিকে এই জ্ঞান অর্জন করতে হবে। দুনিয়াবী জ্ঞান অর্জন করা অবশ্যই জায়েজ, বরং প্রয়োজনের জন্য উপকারী দুনিয়াবী জ্ঞান [যেমন লেখাপড়া, বৈজ্ঞানিক গবেষণা] চর্চা করা উত্তম। তবে এর আগে অবশ্যই আমাদেরকে প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
.
যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করার জন্য পথ অতিক্রম করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে যাবার পথ সহজ করে দেন। আর ফেরেশতারা তালিবে ইলমদের(জ্ঞান অর্জনরত ছাত্রদের) জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেয়। আর আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যা কিছু আছে এমনকি পানির মাছও আলিমের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করে। আর আবিদের (ইবাদতকারীর) ওপর আলিমের শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে সমগ্র তারকামণ্ডলীর ওপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। অবশ্য আলিমগণ হচ্ছেন, নবীদের উত্তরাধিকারী। আর নবীগণ তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে দিরহাম ও দীনার রেখে যান না। তাঁদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ইলম (জ্ঞান) রেখে যান। কাজেই যে ব্যক্তি তা আহরণ করেছে সে পুরো অংশই লাভ করেছে।
[আবু দাউদ ও তিরমিজী;  রিয়াদুস সলিহীন, বই ১৩, ইলম-জ্ঞান-প্রজ্ঞার মর্যাদা ও গুরুত্ব অধ্যায়,  হাদিস ১৩৮৮]
.
“   দৃষ্টিবান আর দৃষ্টিহীন সমান নয়।সমান নয় অন্ধকার ও আলো। সমান নয় ছায়া ও তপ্তরোদ।আরও সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহ শ্রবণ করান যাকে ইচ্ছা। তুমি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নও।তুমি তো কেবল একজন সতর্ককারী। আমি তোমাকে[মুহাম্মাদ(ﷺ)] সত্য ধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসেনি। তারা যদি তোমার প্রতি মিথ্যারোপ করে—তাদের পূর্ববর্তীরাও তো মিথ্যারোপ করেছিল। তাদের কাছে তাদের রাসুলগণ স্পষ্ট নিদর্শন, সহীফা এবং উজ্জল কিতাবসহ এসেছিলেন।অতঃপর আমি অবিশ্বাসীদের পাকড়াও করেছিলাম। কেমন ছিল আমার শাস্তি!
তুমি কি দেখোনি, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন, অতঃপর এর দ্বারা আমি বিভিন্ন বর্ণের ফল-মূল উদগত করি। পর্বতসমূহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ-সাদা, লাল ও নিকষ কালো।অনুরূপভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু, চতুস্পদ প্রাণী রয়েছে।
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।“
(কুরআন, ফাতির ৩৫:১৯-২৮)

No comments:

Post a Comment