আমাদের অন্ধত্ব সত্যের ব্যাপারে সত্য (১)
#আমাদের_অন্ধত্ব
.
#Truth_PartOne
.
“সত্যি করে বলো, আজ তোমাকে বলতেই হবে, তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসো না?”
জীবনসাথীর কাছ থেকে আসা উত্তরটা যেনো অবশ্যই সত্য হয়- এই চাওয়ার পেছনের দাবীটা আর বুকের ধুকপুকানিটা একদমই নিখাঁদ।
.
সত্যকে জানতে চাওয়ার এই তীব্র আকুতিটা আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই একেবারে লতাপাতায় জড়ানো। ডাক্তার সাহেব সত্যি কথা বলবেন, চাকুরীর নিয়োগদাতা মিথ্যা বলবেন না, বই আর প্রবন্ধে সত্যি কথা লেখা থাকবে এই চাওয়াগুলো কার ভেতরে নেই? সংবাদ সংস্থা থেকে শুরু করে বিচারালয়, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, পরিবহন ব্যবস্থা, ওষুধের বোতল, বিজ্ঞাপনদাতা কিংবা খাবারের প্যাকেটের গায়ে উপাদানের পরিমাণেও যেনো সত্য কথা লেখা থাকে এটাই আমাদের চাওয়া। টাকা-পয়সার লেনদেন, সম্পর্ক, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষা প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমাদের দাবী, আমাদের চাওয়া একটাই। সেটা হলো “সত্য”। এইসব ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার, আপোষ করার প্রশ্নই আসে না। কক্ষনো না।
.
সত্যের প্রতি আমাদের এই সুতীব্র দাবী আর সুন্দর ভালোবাসাটাই কেমন যেনো ম্যাটম্যাটে, নিরস, মেরুদন্ডহীন আর অসৎ হয়ে পড়ে, যখন নৈতিকতা আর ধর্মের সত্যের বিষয়টা সামনে এসে দাঁড়ায়। আমরা তখন আনমনা হয়ে মুখ উদাস করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কেটে পড়ার ধান্দা করি, কিংবা চুপ মেরে যাই। নিজের ভেতরটাকেও “চোওওপ” বলে একটা কড়া ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতে চাই।
.
ধর্ম বা নৈতিকতার ব্যাপারে আমাদের ভেতরের এই নেতিবাচক মনোভাবটা খুব কম মানুষই স্বীকার করে। এই নেতিবাচক মনোভাবের ভিত্তিটা যে যৌক্তিক আর বুদ্ধিবৃত্তিক নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যাওয়া- এটা বলার মতো সাহসী আর সৎ মানুষ খুব কমই দেখা যায়। এইসব ক্ষেত্রে আমরা কিছু না বুঝেই ঝটাপট রেডিমেইড উত্তর ঝেড়ে দিই। “সামাজিক জীব” হিসেবে আমরা প্রায় সবসময়ই কিছু স্ববিরোধী তথা আত্মঘাতী বক্তব্যকে অন্ধভাবে অনুসরণ করি, যেমনঃ
.
“আরে ধম্মো-টম্মো এইসব মানুষের বানানো ব্যাপার, এর মাঝে সত্যের কিছু নেই।”
“এটা তোমার জন্যে সত্যি, আমার জন্যে নারে ভাই।”
“সত্য বলে কিছু নাই।”
“আরে, সবকিছুই আপেক্ষিক।”
“বুঝলা মিয়া, পরম সত্য বলে কিছু নাই।”
“হুম, এইসব আসলে দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপার।”
“এইটা তুমি জাজ করার কে?”
“ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যাপার। এখানে কোন ফ্যাক্টের ব্যাপার নাই।”
দিনশেষে আমরা আসলে ঐ সত্যটাকেই পছন্দ করি, যেটা আমাদেরকে আলোকিত করে, স্বস্তি দেয়। কোন সত্য যখনই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে আমরা দোষী, তখন আমরা সেই সত্যকে আর পছন্দ করি না। দূরে দূরে থাকতে চাই। যেনো দূরে থাকলেই সত্যটা পাল্টে যাবে। মিথ্যে হয়ে যাবে। সম্ভবত এটাই সত্য যে, সত্যকে হজম করবার মতো শক্তি আমাদের নেই।
.
আমাদের হৃদয় আর মননে গেঁথে যাওয়া এই অশুভ সাংস্কৃতিক অসততা সমাধানের জন্যে সত্যের ব্যাপারে কয়েকটা প্রশ্নের সমাধান করা অতীব জরুরী। কী সেগুলোঃ
.
১. সত্য কী?
২. সত্যকে কি জানা সম্ভব?
৩. ঈশ্বর সম্পর্কিত সত্যকে জানা সম্ভব?
৪. এসবে কী আসে যায়? সত্য নিয়ে এতো প্যানপ্যানানির কী আছে?
.
পরবর্তী লেখাগুলোতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই কথা বলা হবে (যদি লিখতে পারি)।
.
likhechen ঃ-
#MohammedTouahaAkbar
No comments:
Post a Comment