Tuesday, May 17, 2016

আমাদের অন্ধত্ব ও সত্যের ব্যাপারে সত্য(২)

আমাদের অন্ধত্ব ও সত্যের ব্যাপারে সত্য (২)

আমাদের_অন্ধত্ব

Truth_PartTwo

সত্যের_ব্যাপারে_সত্য

.

সত্য কী?

“যেটা যেরকম, সেটাকে ঠিক সেভাবেই বলা” অথবা “যা কোনকিছুর প্রকৃত অবস্থাকে বর্ণণা করে” সেটাই সত্য।

.

আমাদের সমাজে ইদানীং সত্যকে আপেক্ষিক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়, অথচ যা সত্য, তা সবসময়েই সত্য। সত্য কারো মতামতের উপরে নির্ভরশীল নয়। কোন বিষয়ে একজন জ্ঞানী মানুষের মতামত মিথ্যে হতে পারে, আবার একজন অজ্ঞের মতামতও সত্য হয়ে যেতে পারে। মতামত আর চলতি বিশ্বাস যাই হোক না কেনো, সত্য সত্যই থাকে। বিশ্বাস পরিবর্তনশীল হতে পারে, মতামত আর দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যেতে পারে, কিন্তু সত্য অপরিবর্তনশীল।

.

মানুষ একসময় বিশ্বাস করতো পৃথিবী একটা বিছানো সমতল ভূমি। সত্যটা প্রকাশ পাওয়ার পর দেখা গেলো মানুষের বিশ্বাসে ভুল ছিলো। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাস, মতামত আর বিশ্লেষণের ক্যানভাসে পৃথিবীর ছবি চারকোণা সমতল হলেও, আসলেই কি পৃথিবী চারকোণা সমতল ছিলো? মোটেও না। পৃথিবী গোলাকারই ছিলো সবসময়। দৃঢ়বিশ্বাস আর ব্যক্তিগত মতামত সত্যের উপরে কোন প্রভাবই ফেলে না, তা যতো লক্ষ বছরের বিশ্বাস আর প্রতিষ্ঠিত মতামতই হোক না কেনো।

.

সত্যের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা সবসময়ের জন্যেই সত্য। সত্য আপেক্ষিক না। সত্য সবসময়েই পরম (absolute)। আর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সত্যের উল্টোটা সবসময়েই মিথ্যা। ঠান্ডা মাথা নিয়ে একটু ভেবে দেখা যাক তাহলে। ধরা যাক, “সূর্য গোল” এই কথাটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এর উল্টো কথা হচ্ছে “সূর্য গোল না”। প্রথম কথাটা সত্যি হলে, সেটা সবসময়ের জন্যেই সত্যি, এবং সেইক্ষেত্রে দ্বিতীয় কথাটা সবসময়েই মিথ্যা। এটাই ফ্যাক্ট। সব সত্যের উল্টো কথাই মিথ্যা। এটা ধর্মীয় সত্যের ক্ষেত্রেও সত্যি। আশা করি বুঝা গেছে। তাও গোলমেলে মনে হচ্ছে? তাহলে পড়তে থাকুন। একটু পরে একদমই ফকফকা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

.

অনেকক্ষণতো ভারী ভারী কথা হলো। এখন একটা হালকা গল্প কল্পনা করি। আজাদ আর হামজা। দুই ত্যাঁদড় টাইপের বন্ধু গলার সবকটা রগ ফুলিয়ে তর্ক করছে। চায়ের কাপে সুনামি চলছে। আড্ডার অন্যান্য বন্ধুরা হা করে চুপচাপ এই দুই ট্যালেন্টের তর্ক শুনছে গালে হাত দিয়ে। কারো মুখে কোন কথা নেই। এক পর্যায়ে আজাদ দাঁড়িয়ে শ্রোতা বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলোঃ

.

“তোরা দ্যাখ, এই মুসলিমগুলা কত্তো সংকীর্ণমনা! আমি হামজার সব কথা শুনলাম। তোরা জানিস হামজা কী বিশ্বাস করে? ও বিশ্বাস করে যে ইসলামই সত্য আর যেটা ইসলামের উল্টা কিংবা সাংঘর্ষিক সেটা মিথ্যা। এই মুসলিমগুলা সব আসলেই সংকীর্ণমনা!”

.

হামজা মিটিমিটি হাসছিলো আজাদের কথা শুনে। আজাদের কথা শেষ হবার পর সে উঠে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস একটা মুখ বানিয়ে বললোঃ

.

“তোরা দ্যাখ, এই এথিইস্টরা (atheists) কত্তো সংকীর্ণমনা! আমি আজাদের সব কথা শুনলাম। তোরা জানিস আজাদ কী বিশ্বাস করে? ও বিশ্বাস করে যে এথিইজমই (atheism) সত্য আর যেটা এথিইজমের উল্টা কিংবা সাংঘর্ষিক সেটা মিথ্যা। এই এথিইস্টগুলা সব আসলেই সংকীর্ণমনা!”

.

আড্ডার বন্ধুরা প্রথমে একটু চমকে উঠলো, তারপরেই বুঝতে পেরে ঠাঠা করে হাসতে শুরু করলো। আসলেইতো! এথিইস্টদের সত্যের দাবীটাওতো মুসলিমদের সত্যের দাবীর মতোই সংকীর্ণ! যদি মুসলিমদের কথা সত্য হয়, তাহলে উল্টো হবার কারণে এথিইস্টদের দাবী মিথ্যে। একইভাবে, এথিইস্টদের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে মুসলিমদের দাবীটা মিথ্যে হতে হবে। মজা না?

.

সত্যের ব্যাপারে আরো কিছু সত্য এখানে দেয়া হলোঃ

.

১. কেউ জানুক বা না জানুক সত্য সত্য হিসেবেই অস্তিত্বে থাকে। সত্যকে খুঁজে বের করতে হয়, সত্যকে তৈরী যায় না। যেমনঃ নিউটন সাহেবের আগেও গ্র্যাভিটি ছিলো।

.

২. সত্য টাইম-স্পেসের উপরে নির্ভর করে না। যা সত্য, তা সকল সময়ের সকল স্থানের জন্যেই সত্য। যেমনঃ ২ আর ৩ এ যোগ করলে ৫ হয়, এটা সকল সময়ের সব জায়গার সব মানুষের জন্যেই সত্য।

.

৩. সত্যের ব্যাপারে আমাদের “বিশ্বাস” বদলাতে পারে, “বিশ্বাসে” ভুল থাকতে পারে, কিন্তু সত্য সবসময়েই অপরিবর্তনশীল। সত্য বদলায় না। যেমনঃ মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবীকে কেন্দ্রে রেখে সূর্য ঘুরছে। এতে কিন্তু সত্যটা বদলে যায়নি, বরং সত্যটা বুঝতে পারার পর মানুষের বিশ্বাস বদলেছে।

.

৪. বিশ্বাস কখনো সত্যকে বদলে দিতে পারে না, সেটা যতোই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা হোক না কেনো! একজন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর চারপাশে সূর্য ঘুরছে। তার এই মনেপ্রাণে বিশ্বাসের কারণে সত্যটা বদলে যাবে না।

.

৫. কারো চরিত্র বা আচার-আচরণের কারণেও সত্য বদলে যায় না। আচার-আচরণে ভালো একজন মানুষ যেমন ভুল করতে পারেন, আবার একজন অহংকারী মানুষের কথাও সত্যি হতে পারে। সত্য কারো ব্যক্তিগত চরিত্রের উপরে নির্ভরশীল নয়।

.

৬. সকল সত্যই পরম সত্য। এমনকি যেগুলোকে আপেক্ষিক সত্য বলে ভ্রম হয়, সেগুলোও আসলে সত্য। উদাহরণস্বরুপ, “আমি, মোহাম্মদ তোয়াহা আকবর, আজ ১৩ই জানুয়ারী, ২০১৬ তে বড্ড মন খারাপ অনুভব করছি” কথাটাকে আপাতদৃষ্টিতে খুবই আপেক্ষিক অর্থাৎ শুধু আমার জন্যেই সত্য বলে মনে হলেও, এটা আসলে সব জায়গার সব সময়ের সব মানুষের জন্যেই পরম সত্য যে মোহাম্মদ তোয়াহা আকবরের ঐ নির্দিষ্ট দিনে আসলেই মন খারাপ ছিলো।

.

সারকথা হলো, ভুল বিশ্বাস থাকা সম্ভব, কিন্তু ভুল বা আপেক্ষিক সত্য থাকা সম্ভব না। আমরা বিশ্বাস করতেই পারি যে আমাদের চোখের আকৃতি কলার মতো, কিন্তু আমাদের সেই বিশ্বাস চোখের সত্যিকার আকৃতিকে কখনোই বদলে দেবে না। চোখের আকৃতির সত্যটা সত্যই থেকে যাবে।

.

এতোক্ষণে ফকফকা ক্লিয়ার হয়েছে, তাই না? কিন্তু আধুনিক সেক্যুলার, লিবারেলিস্ট, এগনস্টিক আর এথিইস্টরা “সত্য বলে কিছু নাই” বলে যখন দাবী করে তখন আমরা কী করবো?

.

এই ব্যাপারে পরবর্তী পর্বটা হেল্প করবে ইন শা আল্লাহ। [যদি কখনো লিখতে পারি আর কি!]

লিখেছেন :-mohammed touahaakbat

No comments:

Post a Comment