Monday, May 30, 2016
SOME ATYPICAL CRIMES AND THEIR PUNISHMENTS (ইসলামে কিছু শাস্তির প্রয়োগ)
SOME ATYPICAL CRIMES AND THEIR PUNISHMENTS (ইসলামে কিছু শাস্তির প্রয়োগ)
ইসলামী রাষ্ট্র কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি ইসলামী রাষ্ট্রের প্রকৃতি এবং শরীআতের দন্ডবিধি সম্পর্কে পূর্বের পর্বগুলোতে কিছুটা আভাস দিয়েছি। আজকে আমরা কিছু ATYPICAL CRIMES এর শাস্তি নিয়ে আলোচনা করবোঃ১. সমকামিতা (HOMOSEXUALITY) :
সমকামের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদন্ড অর্থাৎ তাকে হত্যা করা হবে। এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই।
আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন-
“তোমরা যে ব্যক্তিকে লূতের কওমের মত সমকামে লিপ্ত পাবে সে ব্যক্তি ও তার সহকর্মীকে হত্যা করো।”
[আহমাদ, আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ]
এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল উভয়কেই হত্যা করা হবে, হোক সে ACTIVE PARTNER কিংবা PASSIVE PARTNER. তবে কাউকে বল প্রয়োগে বাধ্য করা হলে ভিন্ন কথা।
রাসূল (সঃ) এর যুগে এধরনের কেস পাওয়া যায় নি, যার কারনে মৃত্যুদন্ডের পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে মোটামোটিভাবে সকল আলেমই রজমের চেয়ে কষ্টদায়ক পদ্ধতিতে (এটলিস্ট রজমের মাধ্যমে) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পক্ষপাতী।
অনুরূপভাবে নারীর মলদ্বার দিয়ে সঙ্গম করাটাও জঘন্য অপরাধ।
রাসূল (সঃ) বলেন-
“আল্লাহ কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির দিকে চেয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে বা কোন স্ত্রীর পায়খানা দ্বারে সঙ্গম করে।”
[তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ]
দুটি নারীর সমকামিতা তথা লেসবিয়ানিজমের ক্ষেত্রেও অনুরূপ শাস্তি প্রযোজ্য।
২. পশুগমন (BESTIALITY) :
রাসূল (সঃ) বলেছেন-
“যে ব্যক্তিকে কোন পশুর সাথে সঙ্গমে লিপ্ত পাবে সে ব্যক্তি ও ঐ পশুকে তোমরা হত্যা করো।”
[তিরমিযী, হাকেম]
৩. মাহরাম নারীদের সাথে যিনাঃ
অনেক আলেম এটাকে যিনা হিসেবেই গণ্য করেছেন এবং যিনার শাস্তিই প্রয়োগের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে অধিকাংশ আলেম এটাকে যিনার চেয়ে গুরুতর অপরাধ হিসেবে দেখেছেন এবং শাস্তির মাত্রাও বৃদ্ধি করেছেন।
৪. আল্লাহর রাসূল (সঃ) কে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল কথা বলা বা কটূক্তি করাঃ
ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) তাঁর ‘আস সারিমিল মাসলুল আলা শাতিমির রাসূল’ (অর্থাৎ রাসূলের সঃ বিদ্রূপকারীর জন্য উন্মুক্ত তরবারী) গ্রন্থে প্রমাণ করেছেন যে এ জাতীয় কাজের শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড আর এ ব্যাপারে উম্মাহর ইজমা প্রতিষ্ঠিত আছে। এবং তিনিসহ অনেক আলেম মনে করেন যে এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের এবং সরকার যদি তা বাস্তবায়ন না করে তাহলে এ দায়িত্ব জনগণের উপর বর্তাবে। এদিক এ অপরাধের শাস্তি একটা বিশেষ ধরনের শাস্তি বলেই প্রতীয়মান হয়। এ ধরনের আরো একটি বিষয় হল ফিতনার প্রসার প্রতিরোধ, যেটা আমরা পরে আলোচনা করবো।
(সংগ্রাহক amiমূল kaizenseries.wordpress.com)
সংযুক্তিঃ
শাতিমির রাসূল সঃ বিষয়ে বাংলা বই-
১) ইমাম আনোয়ার আল আওলাকির Dust Will Never Settle Down লেকচারের বাংলা pdf ভার্সন-http://myallbooks.weebly.com/books/july-09th-20132
২) শাইখুল হাদীস মুফতি জসীম উদ্দীন রহমানী হাফিঃ এর লেখা ‘উন্মুক্ত তরবারী’- http://islamicpdfebook.blogspot.com/2014/03/jasim-uddin-rahmani.html
আল্লাহর সাথে সত্যনিষ্ঠ হওয়া।
আল্লাহর সাথে সত্যনিষ্ঠ হওয়া।
"আল্লাহ’র সাথে সত্যনিষ্ঠ হওয়া: Being true with Allaah: [“الصدق مع الله”]
بسم الله الرحمن الرحيم
وَمَا
أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء
وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ
الْقَيِّمَةِ
”তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি
মনেএকনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবংযাকাত দেবে। এটাই
সঠিক ধর্ম।“ [সুরা বাইয়্যিনাহ্: ০৫]
সালাফরা সকল কাজ যা মহৎ তাতে
আমাদের ছাড়িয়ে গেছেন,তবে একটি সর্বোত্তম মহৎ গুণ যার শীর্ষে তারা
আরোহনকরেছিলেন, আর তা হলো ‘আল্লাহ’র সাথে সত্যনিষ্ঠ হওয়া’ [“الصدق مع
الله”] আর এই গুণটির ঘাটতিই আমাদের মাঝেসবচেয়ে বেশী।
সালাফরা বলতেন, “ও আল্লাহ্! আমাদের অন্তঃকরনকে আমাদের বাহ্যিক অবস্থার চেয়ে উত্তম কর এবং আমাদের বাহ্যিক অবস্থা ভাল কর।”
.
.
“ইমাম আহমাদ [رحمة الله عليه] যখন পথ ধরে হাটতেন , তখন তিনি শ্রমিকদের
মধ্যে হাঁটতেন যাতে কেউ তাকে শ্রদ্ধাবশতঃ নির্দেশ না করে এবং যাতে লোকজন
মনে করে তিনিও একজন শ্রমিক বৈ আর কেউ নয়; আর তাকে শ্রদ্ধাবশতঃ নির্দেশ করা
থেকে বিরত থাকে।
তাদের মধ্যে কেউ যখন জিহাদে প্রবেশ করতেন , নিজেকে ছদ্মাবেশে ঢেকে নিতেন আর
তিনি যদি প্রচুর গণীমাহ্ লাভ করতেন তবে তিনি তার পরিচয় গোপন করতেন আর তা
পরিত্যক্ত রেখে চলে যেতেন যাতে লোকজন জানতে না পারে, কে তা অর্জন করেছে।“
মাসলামাহ্
বিন আবদ আল-মালিক [رضي الله عنه] একটি দুর্গ দীর্ঘ সময় ধরে অবরুদ্ধ
রেখেছিলেন। একদিন রাত্রিকালীন সময়ে, একজন মুজাহিদীন খুব ধীরে ধীরে
নিঃশব্দে দুর্গের দেয়াল বেয়ে উঠে পড়লেন আর প্রহরীদের উপর ঝাঁপিয়ে
পড়লেন, তাদের সবাইকে হত্যা করলেন এবং দুর্গে একটি গর্ত খনন করলেন যার ভিতর
দিয়ে মুসলিম সৈন্যরা প্রবেশ করলো এবং দুর্গের কতৃত্ব লাভ করলো।
অতঃপর, মাসলামাহ্ [رضي الله عنه] বেশ কিছু সময় ধরে জানতে চাইলেন: “তোমাদের মধ্যে কে এই গর্ত খুড়েছ”?
কেউ এগিয়ে এল না। একদিন রাতে, একজন আবিষ্ট অশ্বারোহী মাসলামা’র তাবুতে প্রবেশ করে বললো: “তুমি কি জানতে চাও কে গর্তটি খুড়েছিলো?”
মাসলামা বললেন: “হ্যা”।
অশ্বারোহী
উত্তর দিলেন: “আমি আপনাকে এই শর্তে বলতে পারি যে আপনি কাউকে তার নাম বলবেন
না আর তাকে এইজন্য কোন পুরষ্কার কিংবা ক্ষতিপূরণ দিবেন না।”
তিনি বললেন: “হ্যা”।
সে বললো: “আমিই সে যে গর্তটি খুড়েছিল” এবং তার নাম উন্মোচন না করেই দ্রুত সওয়ার হলো।
অতঃপর, যখনই কিবলামুখী হয়ে দুআ করতেন তখনই তিনি বলতেন:
“ও আল্লাহ্! আমাকে পুনরুত্থানের দিন একত্রিত করো তার সাথে যে গর্ত খুড়েছিলো। ”
.
.
আবদুল্লাহ্ ইবন মাস’ঊদের [رضي الله عنه] উক্তি হতে ইবনুল কায়্যিম [ رحمة الله عليه] বর্ণনা করেন:
আবদুল্লাহ্ ইবন মাস’ঊদের [رضي الله عنه] সাহচর্যে এক ব্যক্তি বলেন:
”আমি ডানহস্তের সঙ্গীদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই না, আমি আল্লাহ’র নিকটবর্তীদের [মুকাররাবুন] অন্তর্ভুক্ত হতে চাই ।“
তখন আবদুল্লাহ্ বললেন:
“কিন্তু, এ ব্যক্তি যে আশা করে মৃত্যুর পরে সে পুনরূত্থিত না হোক [আল্লাহ’র ভয়ে]”। [নিজের কথা বুঝালেন।]
একদিন তিনি ঘর থেকে বের হলেন এবং লোকজন তাকে অনুসরন করলো, তখন তিনি বললেন: ”তোমাদের কি কিছু প্রয়োজন আছে?”
তারা বললো: “না, কিন্তু আমরা আপনার সাথে হাটতে চাই।”
তিনি বললেন: “ফিরে যাও, কেননা তা অনুসরনকারীর জন্য অসম্মানের আর অনুসৃতের জন্য ফিতনাহ্।”
তিনি আরো বললেন:”তোমরা যদি তা জানতে যা আমি নিজের সন্মন্ধে জানি, তবে তোমরা আমার মাথায় ধুলি নিক্ষেপ করতে।”
“তোমরা
দ্বীনের ব্যাপারে অন্য ব্যক্তির তাকলীদ [অন্ধ অনুসরন] করবে না, কেননা সে
[যার অনুসরন করা হয়] যদি বিশ্বাস করে তবে সে [অনুসারী] বিশ্বাস করে আর সে
যদি অবিশ্বাস করে, তবে সে অবিশ্বাস করে। যদি তোমাদের কাউকে অনুসরন করতে হয়
তবে তাদের অনুসরন কর যারা উদাহরন হিসেবে মৃত্যুবরন করেছেন, নিশ্চয়ই যারা
জীবিত তারা ফিতনাহ্ থেকে নিরাপদ নয়।“
নিজের অন্তরকে এই তিন জায়গায় পর্যবেক্ষন কর:
–যখন তুমি কুরআন শ্রবন কর,
–যেখানে আল্লাহ’র নাম স্মরণ করা হয়,
- –যখন তুমি একাকী থাক।
যদি তুমি এইসব জায়গায় একে [ বিনম্র ] না পাও, তবে আল্লাহ’র কাছে
প্রার্থনা কর যেনো তিনি তোমাকে অন্তর দান করেন; নিশ্চয়ই তোমার কোন অন্তর
নেই।
[আল ফাওয়ায়িদ: পৃ:১৬২]
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
‘নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত,
যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে,
যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না
এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণেদান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে,
তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।“
[সুরা মু’মিনুন: ৫৭-৬২]
আয়িশা [رضي الله عنه] হতে বর্ণিত , তিনি বলেন : রাসূল (صلى الله عليه وسلم)
কে
জিজ্ঞেস করেছিলাম এ আয়াতটি কি মদপানকারী, ব্যভিচারী ও চোরদের সম্পর্কে
নাযিল হয়েছে? তিনি বলেন: না, হে সিদ্দিকের মেয়ে! বরং তারা হলো রোজাদার,
ছ্বলাত কায়েমকারী ও দানকারীগণ, কিন্তু তারা ভয় করে যে হয়তো বা কবুল করা
হবে না ! তারাই তো কল্যাণের প্রতি অগ্রগামী। [সহীহ তিরমিযী]
আর সালাফদের এই ধরনের সত্যনিষ্ঠতার উদাহরণ টানতে গেলে বৃহদাকার পুস্তকের সমারোহ হবে।
আল্লাহ্
তা’আলা আমাদের সালাফদের এই অনন্য গুণাবলী রপ্ত করার তাওফীক দিন। আর
দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে তার জন্য নির্দিষ্ট করার তাওফীক দিন। আমীন।
হক্ব বাতিল সাব্যস্ত
রাসুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় তের বৎসর দাওয়াত দিয়েছেন মহৎ চরিত্র নিয়ে, তার সাথে সেই সাবিকুন আওয়ালুন, তাদের মমতা, হিতাকাঙ্খিতা, ইমান, তাক্বওয়া, ইখলাছ, আত্ন বিসর্জন তৎপড়তা আর আমল আখলাক সব কিছুর পরও ইসলাম সেখানে আসন পায়নি, বিস্তার লাভ করেনি বরং নিজেদেরকেই সেখান থেকে প্রস্থান ও বিতাড়নের স্বীকার হতে হয়েছে। কিন্তু কেন?
.
.
কারন একমাত্র এটাই যে শক্তিহীনের বিনয়কে মানুষ দুর্বলতা হিসাবে নেয়, সে বিনয় কারো নজর কাড়তে পারেনা। এর ফলেই যখন মক্কা বিজয় হলো, পুর্নশক্তি হাতে আসলো সবায় কে ক্ষমা ঘোষনা করে দিলেন, তারা আখলাক দেখতে সক্ষম হলো, দলে দলে মুসলমান হওয়া শুরু হলো, ইসলাম আরবে ছড়িয়ে পরলো। কথাটি অনেকটা এমন- খাবারের দ্বারা নয়, খাদ্যপ্রান দিয়ে মানুষের মানুষের শরীর পুষ্টিপায়।
.
.
অস্ত্র ছাড়া দুর্বলের কোন চরিত্র নেই, আমেরিকা বৃটেন রাশিয়া এসব পরা শক্তি কোটিকোটি বনি আদম কে হত্যা, বন্দি করার পরও শান্তি ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ, মানবতার কোরাসে বড় গলাবাজ। পক্ষান্তরে নিজভুমিতে আক্রান্ত মুসলিম মর্যাদাবোধসম্পন্ন আত্নরক্ষাকারীগন সন্ত্রাসি। এটাই শান্তি ও সন্ত্রাসের বাস্তব কার্যকরী চূড়ান্ত সংজ্ঞা।
.
.
ইউনিভার্সিটি, কলেজ ইত্যাদিতে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চলে আর র্যাব পুলিশ মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় বোমা সন্ত্রাসী খোঁজে, ক্ষমতাসীন সরকার যাকে যেভাবে ইচ্ছা আইন করে ফাঁসি দিবে, কিন্তু এর প্রতিবাদ করলে গুলি খেয়ে মরতে হবে, এরই নাম আইন শৃঙ্খলা রক্ষা। ক্ষমতাসীনরা কাউকে পিটিয়ে হত্যা করলে সেটা হবে বরজোর দুষ্টুমি, সরকারি বাহিনী গুম করে দিলে এটা উল্লেখ করার মত উল্লেখযোগ্য কিছু নয়, পুর্ব বাংলাকমিউনিষ্ট পার্টি বা লাল বাহিনী ... দশকের পর দশক হত্যা সন্ত্রাস চাদাবাজিতে জনজীবন অতিষ্টকরে করে তুললেও ভাবতে হবে সব কিছুই স্বাভাবিক আছে, ঠিক আছে।
.
.
কিন্তু যখনি আল্লাহর নামে কিছু মুসল্লির শরয়ী তরিকায় কিছু পদেক্ষেপের ফলে নাস্তিক মুরতাদদের মরন ঘন্টা বেজে উঠে তখনই জানোয়ারগুলোর জিঘাংসা জেগে উঠে। গনতান্ত্রিক রাজনীতির বলি বা নির্বাচনী সহংসতায় প্রতিনিয়ত হত্যা গুম খুবই স্বাভাবিক বিষয়, পক্ষান্তরে আল্লাহর রাজ্যের বিদ্রোহী বজ্জাত জঘন্যচরিত্র কিছু কুলাংগার আগাছা আবর্জনা কে ভাগারে নিক্ষেপের দরুন তাবৎ দুনিয়া চিৎকারে অস্থীর। আমেরিকা বয়ান দেয়, বৃটেন নিন্দা জানায়, জাতিসংঘ প্রতিকার চায়...
.
.
তাই হক্ব আজ বাতিল সাব্যস্ত। সত্য আজ মিথ্যা। জালিম আজ জননেতা। মজলুম আজ সন্ত্রাসী। খুনীরা আজ মানবতার ধবজাধরি। এটাই হচ্ছে তরবারী ছাড়া ইসলামের স্বাভাবিক পরিণতি।
.
Ustadh Ahmad Nabil Hafizahullah
.
.
কারন একমাত্র এটাই যে শক্তিহীনের বিনয়কে মানুষ দুর্বলতা হিসাবে নেয়, সে বিনয় কারো নজর কাড়তে পারেনা। এর ফলেই যখন মক্কা বিজয় হলো, পুর্নশক্তি হাতে আসলো সবায় কে ক্ষমা ঘোষনা করে দিলেন, তারা আখলাক দেখতে সক্ষম হলো, দলে দলে মুসলমান হওয়া শুরু হলো, ইসলাম আরবে ছড়িয়ে পরলো। কথাটি অনেকটা এমন- খাবারের দ্বারা নয়, খাদ্যপ্রান দিয়ে মানুষের মানুষের শরীর পুষ্টিপায়।
.
.
অস্ত্র ছাড়া দুর্বলের কোন চরিত্র নেই, আমেরিকা বৃটেন রাশিয়া এসব পরা শক্তি কোটিকোটি বনি আদম কে হত্যা, বন্দি করার পরও শান্তি ও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ, মানবতার কোরাসে বড় গলাবাজ। পক্ষান্তরে নিজভুমিতে আক্রান্ত মুসলিম মর্যাদাবোধসম্পন্ন আত্নরক্ষাকারীগন সন্ত্রাসি। এটাই শান্তি ও সন্ত্রাসের বাস্তব কার্যকরী চূড়ান্ত সংজ্ঞা।
.
.
ইউনিভার্সিটি, কলেজ ইত্যাদিতে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চলে আর র্যাব পুলিশ মাদ্রাসায় মাদ্রাসায় বোমা সন্ত্রাসী খোঁজে, ক্ষমতাসীন সরকার যাকে যেভাবে ইচ্ছা আইন করে ফাঁসি দিবে, কিন্তু এর প্রতিবাদ করলে গুলি খেয়ে মরতে হবে, এরই নাম আইন শৃঙ্খলা রক্ষা। ক্ষমতাসীনরা কাউকে পিটিয়ে হত্যা করলে সেটা হবে বরজোর দুষ্টুমি, সরকারি বাহিনী গুম করে দিলে এটা উল্লেখ করার মত উল্লেখযোগ্য কিছু নয়, পুর্ব বাংলাকমিউনিষ্ট পার্টি বা লাল বাহিনী ... দশকের পর দশক হত্যা সন্ত্রাস চাদাবাজিতে জনজীবন অতিষ্টকরে করে তুললেও ভাবতে হবে সব কিছুই স্বাভাবিক আছে, ঠিক আছে।
.
.
কিন্তু যখনি আল্লাহর নামে কিছু মুসল্লির শরয়ী তরিকায় কিছু পদেক্ষেপের ফলে নাস্তিক মুরতাদদের মরন ঘন্টা বেজে উঠে তখনই জানোয়ারগুলোর জিঘাংসা জেগে উঠে। গনতান্ত্রিক রাজনীতির বলি বা নির্বাচনী সহংসতায় প্রতিনিয়ত হত্যা গুম খুবই স্বাভাবিক বিষয়, পক্ষান্তরে আল্লাহর রাজ্যের বিদ্রোহী বজ্জাত জঘন্যচরিত্র কিছু কুলাংগার আগাছা আবর্জনা কে ভাগারে নিক্ষেপের দরুন তাবৎ দুনিয়া চিৎকারে অস্থীর। আমেরিকা বয়ান দেয়, বৃটেন নিন্দা জানায়, জাতিসংঘ প্রতিকার চায়...
.
.
তাই হক্ব আজ বাতিল সাব্যস্ত। সত্য আজ মিথ্যা। জালিম আজ জননেতা। মজলুম আজ সন্ত্রাসী। খুনীরা আজ মানবতার ধবজাধরি। এটাই হচ্ছে তরবারী ছাড়া ইসলামের স্বাভাবিক পরিণতি।
.
Ustadh Ahmad Nabil Hafizahullah
Sunday, May 29, 2016
শয়তানের ধোকা ও আমাদের পদস্থলন
ইউসুফ (আঃ) এর ভাইদের কাহিনী আমরা অনেকেই জানি। তাদের পিতা ইউসুফ (আঃ) কে সবচেয়ে বেশি আদর করতেন, ব্যাপারটা তাদের কাছে ভালো ঠেকেনি, তাই তারা পরিকল্পনা করেছিলেন ইউসুফকে হত্যা করে ফেলবেন অথবা তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দেবেন, জানে মারবেন না।
.
ইন্টারেস্টিং বিষয়টা হল, তারা যখন এই অপকর্মের নিয়ত করছিলেন, তখন তারা মনে মনে এটাও ঠিক করেছিলেন যে, এই কাজ করার পরে তারা আবার তওবা করে "ভাল" হয়ে যাবেন ! কুরআনে এসেছে এভাবে,
.
"(তাই শয়তান তাদেরকে পরামর্শ দিল) ইউসুফকে মেরে ফেলো অথবা তাকে কোন এক (অজানা) জায়গায় নির্বাসনে দিয়ে এসো, (এরপর দেখবে) তোমাদের পিতার দৃষ্টি তোমাদের দিকেই নিবিষ্ট হবে, অতঃপর তোমরা (আবার) সবাই ভালো মানুষ হয়ে যেও।" [সূরা ইউসুফ: ৯]
.
আমাদের মধ্যে এরকম একটা প্রবণতা কাজ করে। "আগে আকাম সব করে নিই তারপরে বুড়া বয়সে নামায-হজ্জ করে ভাল বনে যাব" - এই চিন্তাটা মুখ ফুটে না বললেও বহু মানুষের অন্তরে অন্তরে। অনেকে আছে এমন যারা বোঝেন দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে অনেক রিস্ক আর জান-মালের ক্ষতি হতে পারে, তারা অনেক সময় এভাবে চিন্তা করে বা তাদেরকে তাদের বাবা-মায়েরা বোঝায়, "আগে পড়াশোনা করে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর আরামছে দ্বীনের কাজ কর"।
.
আগে নিজের দুনিয়াবী স্বার্থ নিশ্চিত করে, সেটা হারাম পথে হোক, কিংবা ফরয বাদ দিয়ে হোক, তারপরে দ্বীনের পথে আসা বা দ্বীনের কাজ করা, এটা সাহাবাদের অনুসৃত পথ নয়। এ ধরণের চিন্তাভাবনার দুটো সমস্যা আছে।
.
১) আপনি নিশ্চিতভাবে জানেন না, আপনি যে আকামগুলো করে রাখছেন বা যে কাজটা এখন আপনার করা উচিত কিন্তু আপনি সেগুলো করছেন না, এমন করার জন্য আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করবে কিনা, আপনি কখনই তা নিশ্চিত হতে পারবেন না। এটা একটা উচ্চ মানের শয়তানি, আল্লাহর সাথে লুকোচুরি খেলার মত।
.
২) আপনি যদি এভাবে চিন্তা করেন যে আগে আপনি প্রতিষ্ঠা লাভ করে একটা নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছে তার পর দ্বীনের কাজ করবেন, সেক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে, আপনি নিশ্চিত নন যে আপনার এই প্ল্যান আসলেই কাজ করবে কিনা। বিপদ যেকোন সময় আসতে পারে, মৃত্যু যেকোন সময়ে চলে আসতে পারে। প্রতিটা কাজেরও একটা সময় আছে। আপনি কালকে ভালো কাজ করার সুযোগ পাবেন, এই গ্যারান্টি আপনাকে কে দিল? আপনি আজকে দ্বীনের পথে আছেন, কালকেও থাকবেন, এ ব্যাপারে আপনি এতটা কনফিডেন্ট কিভাবে হলেন?
.
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমাদের উপর যেকোন সময় ফিতনা আপতিত হতে পারে, যেকোন সময় আমাদের মৃত্যু চলে আসতে পারে। এরকম হতেই পারে আপনি তওবা করার কোন সুযোগই পেলেন না। আপনি ভালো হবার জন্য যথেষ্ট সময় পেলেন না। আর বাস্তবতা থেকে আমরা দেখি, "সময় হোক, আমি আস্তে ধীরে ভাল হয়ে যাব" চিন্তাধারী ব্যাক্তিদের বেশিরভাগেরই ভাল হয়ে ওঠা হয়ে না। ভালো হতে চাইলে, এখনই চেষ্টাটা শুরু করে দিন, ঠিক এখনই। নিয়ত করে ফেলুন এই মুহূর্তেই যে আপনি দ্বীনের পথে চলবেন। একটু দেরি করে ফেললে হয়তো অনেক কিছু মিস করে ফেলবেন, যেটা কখনই আর পূরণ হবার নয়!
.
.
Collected From
Brother
Zim Tanvir
.
ইন্টারেস্টিং বিষয়টা হল, তারা যখন এই অপকর্মের নিয়ত করছিলেন, তখন তারা মনে মনে এটাও ঠিক করেছিলেন যে, এই কাজ করার পরে তারা আবার তওবা করে "ভাল" হয়ে যাবেন ! কুরআনে এসেছে এভাবে,
.
"(তাই শয়তান তাদেরকে পরামর্শ দিল) ইউসুফকে মেরে ফেলো অথবা তাকে কোন এক (অজানা) জায়গায় নির্বাসনে দিয়ে এসো, (এরপর দেখবে) তোমাদের পিতার দৃষ্টি তোমাদের দিকেই নিবিষ্ট হবে, অতঃপর তোমরা (আবার) সবাই ভালো মানুষ হয়ে যেও।" [সূরা ইউসুফ: ৯]
.
আমাদের মধ্যে এরকম একটা প্রবণতা কাজ করে। "আগে আকাম সব করে নিই তারপরে বুড়া বয়সে নামায-হজ্জ করে ভাল বনে যাব" - এই চিন্তাটা মুখ ফুটে না বললেও বহু মানুষের অন্তরে অন্তরে। অনেকে আছে এমন যারা বোঝেন দ্বীনের কাজ করতে গিয়ে অনেক রিস্ক আর জান-মালের ক্ষতি হতে পারে, তারা অনেক সময় এভাবে চিন্তা করে বা তাদেরকে তাদের বাবা-মায়েরা বোঝায়, "আগে পড়াশোনা করে ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর আরামছে দ্বীনের কাজ কর"।
.
আগে নিজের দুনিয়াবী স্বার্থ নিশ্চিত করে, সেটা হারাম পথে হোক, কিংবা ফরয বাদ দিয়ে হোক, তারপরে দ্বীনের পথে আসা বা দ্বীনের কাজ করা, এটা সাহাবাদের অনুসৃত পথ নয়। এ ধরণের চিন্তাভাবনার দুটো সমস্যা আছে।
.
১) আপনি নিশ্চিতভাবে জানেন না, আপনি যে আকামগুলো করে রাখছেন বা যে কাজটা এখন আপনার করা উচিত কিন্তু আপনি সেগুলো করছেন না, এমন করার জন্য আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করবে কিনা, আপনি কখনই তা নিশ্চিত হতে পারবেন না। এটা একটা উচ্চ মানের শয়তানি, আল্লাহর সাথে লুকোচুরি খেলার মত।
.
২) আপনি যদি এভাবে চিন্তা করেন যে আগে আপনি প্রতিষ্ঠা লাভ করে একটা নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছে তার পর দ্বীনের কাজ করবেন, সেক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে, আপনি নিশ্চিত নন যে আপনার এই প্ল্যান আসলেই কাজ করবে কিনা। বিপদ যেকোন সময় আসতে পারে, মৃত্যু যেকোন সময়ে চলে আসতে পারে। প্রতিটা কাজেরও একটা সময় আছে। আপনি কালকে ভালো কাজ করার সুযোগ পাবেন, এই গ্যারান্টি আপনাকে কে দিল? আপনি আজকে দ্বীনের পথে আছেন, কালকেও থাকবেন, এ ব্যাপারে আপনি এতটা কনফিডেন্ট কিভাবে হলেন?
.
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমাদের উপর যেকোন সময় ফিতনা আপতিত হতে পারে, যেকোন সময় আমাদের মৃত্যু চলে আসতে পারে। এরকম হতেই পারে আপনি তওবা করার কোন সুযোগই পেলেন না। আপনি ভালো হবার জন্য যথেষ্ট সময় পেলেন না। আর বাস্তবতা থেকে আমরা দেখি, "সময় হোক, আমি আস্তে ধীরে ভাল হয়ে যাব" চিন্তাধারী ব্যাক্তিদের বেশিরভাগেরই ভাল হয়ে ওঠা হয়ে না। ভালো হতে চাইলে, এখনই চেষ্টাটা শুরু করে দিন, ঠিক এখনই। নিয়ত করে ফেলুন এই মুহূর্তেই যে আপনি দ্বীনের পথে চলবেন। একটু দেরি করে ফেললে হয়তো অনেক কিছু মিস করে ফেলবেন, যেটা কখনই আর পূরণ হবার নয়!
.
.
Collected From
Brother
Zim Tanvir
কুরানের দুটি আয়াতের তাৎপর্য
কুরআনের প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি আয়াতের মধ্যে দুটো আয়াত আমাকে বেশ নাড়া দেয়। একই আয়াত, যা পড়লে নিজের যা আছে তা হারিয়ে যাওয়ার ভয় করি আবার সেই সাথে নিজের যা নেই তা পাওয়ারও আশা করি। সেই একই আয়াত, যা পড়লে মনে হয় – without Allah I am nothing… with the help of Allah I can do everything।
.
আয়াতের মর্মার্থের কথা বাদ দিলেও, আল্লাহ্র আরবি শব্দ চয়নগুলোই এমন যে আয়াত দুটো পড়লে আপনার মনে হবে - নাহ, আয়াতগুলোতে আসলেই খুব গুরুত্বপুর্ন কিছু বলা হয়েছে। প্রথম আয়াতটা তুলে ধরলামঃ
.
“কুলিল্লাহুম্মা মালিকাল মুলকি তু’তিল মুলকা মানতাশা উ ওয়া তানযিউল মুলকা মিম্মানতাশা উ ওয়াতু ইযযু মানতাশা উ ওয়াতু যিল্লু মানতাশা উ বিয়াদি কাল খাইর। ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।”
.
“বলুন, ইয়া আল্লাহ, তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।”
[আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:২৬]
.
.
তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান কর।”
[আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:২৭]
.
.
খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে রোম ও ইরান সাম্রাজ্য মুসলিমদের করতলগত হবে। কুফফাররা এটা শুনে ঠাট্টা করতে লাগলো যে, নিজেদের রক্ষা করার জন্য যাদের গর্ত খুঁড়তে হচ্ছে এবং না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা কিনা দাবী করছে রোম ও ইরান জয় করে ফেলবে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। এতে মুসলিমদের দু’আ শিক্ষাদানের মাধ্যমে এক সূক্ষ্ম পন্থায় তাদের ঠাট্টার জবাব দেওয়া হয়েছে।
(তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন)
.
প্রথম আয়াতে রয়েছে মহান আল্লাহ্র সীমাহীন শক্তি ও কুদরতের প্রকাশ। তিনি বাদশাহকে ফকির করেন আর ফকিরকে বাদশা। তিনিই সমস্ত কর্তৃত্বের মালিক। আয়াতে “যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে” না বলে “তোমারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ” বলা হয়েছে অর্থাৎ বিধেয় পদকে আগে আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্দিষ্টীকরণ। অর্থাৎ সমস্ত কল্যাণ কেবল তোমারই হাতে, তুমি ছাড়া কল্যাণদাতা আর কেউ নেই। অকল্যাণের স্রষ্টা যদিও মহান আল্লাহই, তবুও এখানে কেবল কল্যাণের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে, অকল্যাণের নয়। কারণ কল্যাণ আল্লাহ্র নিছক অনুগ্রহ। পক্ষান্তরে অকল্যাণ হল মানুষের কর্মের ফল যা তাদের ভুগতে হয়। অথবা অকল্যাণও যেহেতু তাঁরই নির্ধারিত নিয়তির অংশ সুতরাং তাতেও কোন না কোন প্রকার মঙ্গল আছে। এই দিক দিয়ে তার সমস্ত কাজই কল্যাণময়।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
.
রাতকে দিনের ভেতর এবং দিনকে রাতের ভেতর প্রবেশ করানোর অর্থ হল ঋতু পরিবর্তন। শীতকালে রাত লম্বা হয় এবং দিন ছোট হয়ে যায়। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মে দিন বড় হয় আর রাত ছোট হয়ে যায়। অর্থাৎ কখনো রাতের অংশকে দিনের মধ্যে এবং দিনের অংশকে রাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। যার কারণে রাত এবং দিন ছোট-বড় হয়।
.
জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আনা এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের আনা ঠিক সেরকমই যেমনিভাবে মৃত ডিম থেকে প্রাণী বের হয় এবং জীবন্ত প্রাণীর দেহ থেকে নিষ্প্রাণ ডিম বের হয়। অনেক মুফাসসির বলেন, এর অর্থ হল কাফেরের ঘর থেকে মুমিন বের হওয়া কিংবা মুমিনের ঘর থেকে কাফের বের হওয়া।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
--
আয়াত দুটো মুখস্ত করে ফেলবেন যারা পারেন।
.
আয়াতের মর্মার্থের কথা বাদ দিলেও, আল্লাহ্র আরবি শব্দ চয়নগুলোই এমন যে আয়াত দুটো পড়লে আপনার মনে হবে - নাহ, আয়াতগুলোতে আসলেই খুব গুরুত্বপুর্ন কিছু বলা হয়েছে। প্রথম আয়াতটা তুলে ধরলামঃ
.
“কুলিল্লাহুম্মা মালিকাল মুলকি তু’তিল মুলকা মানতাশা উ ওয়া তানযিউল মুলকা মিম্মানতাশা উ ওয়াতু ইযযু মানতাশা উ ওয়াতু যিল্লু মানতাশা উ বিয়াদি কাল খাইর। ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।”
.
“বলুন, ইয়া আল্লাহ, তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।”
[আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:২৬]
.
.
তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান কর।”
[আল-কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩:২৭]
.
.
খন্দকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে রোম ও ইরান সাম্রাজ্য মুসলিমদের করতলগত হবে। কুফফাররা এটা শুনে ঠাট্টা করতে লাগলো যে, নিজেদের রক্ষা করার জন্য যাদের গর্ত খুঁড়তে হচ্ছে এবং না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তারা কিনা দাবী করছে রোম ও ইরান জয় করে ফেলবে। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। এতে মুসলিমদের দু’আ শিক্ষাদানের মাধ্যমে এক সূক্ষ্ম পন্থায় তাদের ঠাট্টার জবাব দেওয়া হয়েছে।
(তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন)
.
প্রথম আয়াতে রয়েছে মহান আল্লাহ্র সীমাহীন শক্তি ও কুদরতের প্রকাশ। তিনি বাদশাহকে ফকির করেন আর ফকিরকে বাদশা। তিনিই সমস্ত কর্তৃত্বের মালিক। আয়াতে “যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে” না বলে “তোমারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ” বলা হয়েছে অর্থাৎ বিধেয় পদকে আগে আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্দিষ্টীকরণ। অর্থাৎ সমস্ত কল্যাণ কেবল তোমারই হাতে, তুমি ছাড়া কল্যাণদাতা আর কেউ নেই। অকল্যাণের স্রষ্টা যদিও মহান আল্লাহই, তবুও এখানে কেবল কল্যাণের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে, অকল্যাণের নয়। কারণ কল্যাণ আল্লাহ্র নিছক অনুগ্রহ। পক্ষান্তরে অকল্যাণ হল মানুষের কর্মের ফল যা তাদের ভুগতে হয়। অথবা অকল্যাণও যেহেতু তাঁরই নির্ধারিত নিয়তির অংশ সুতরাং তাতেও কোন না কোন প্রকার মঙ্গল আছে। এই দিক দিয়ে তার সমস্ত কাজই কল্যাণময়।
(ফাতহুল ক্বাদীর)
.
রাতকে দিনের ভেতর এবং দিনকে রাতের ভেতর প্রবেশ করানোর অর্থ হল ঋতু পরিবর্তন। শীতকালে রাত লম্বা হয় এবং দিন ছোট হয়ে যায়। পক্ষান্তরে গ্রীষ্মে দিন বড় হয় আর রাত ছোট হয়ে যায়। অর্থাৎ কখনো রাতের অংশকে দিনের মধ্যে এবং দিনের অংশকে রাতের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। যার কারণে রাত এবং দিন ছোট-বড় হয়।
.
জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আনা এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের আনা ঠিক সেরকমই যেমনিভাবে মৃত ডিম থেকে প্রাণী বের হয় এবং জীবন্ত প্রাণীর দেহ থেকে নিষ্প্রাণ ডিম বের হয়। অনেক মুফাসসির বলেন, এর অর্থ হল কাফেরের ঘর থেকে মুমিন বের হওয়া কিংবা মুমিনের ঘর থেকে কাফের বের হওয়া।
(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)
--
আয়াত দুটো মুখস্ত করে ফেলবেন যারা পারেন।
Friday, May 27, 2016
ওমর (রাঃ)এর গুরুপ্তপুর্ন নাসিহা ইরাক অভিজানের সময় মুজাহিদ্দের প্রতি।
মহান আল্লাহ্ আপনাদের জন্য উদাহরণ বর্ণনা করেছেন এবং আপনাদের জন্য বাণী প্রদান করেছেন যাতে অন্তরগুলো জীবন্ত হয়। কারণ মহান আল্লাহ্ যতক্ষণ পর্যন্ত বুকের ভেতরের অন্তরকে জীবিত না করেন ততোক্ষণ পর্যন্ত তা মৃতই থাকে।
.
যে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে তা দ্বারা কল্যাণ অর্জন করা দরকার। কারণ ন্যায়পরায়ণতার কিছু চিহ্ন আর কিছু সৌন্দর্য রয়েছে।
.
চিহ্নগুলো হল লজ্জা, দানশীলতা, বিনয় ও নম্রতা, আর সৌন্দর্য হলো দয়া ও করুণা।
.
মহান আল্লাহ্ সকল বিষয়ের জন্য দরজা সৃষ্টি করেছেন। সকল দরজা খোলার চাবি সহজলভ্য করে দিয়েছেন। ন্যায়পরায়ণতার দরজা হলো বিবেচনা-শক্তি ও শিক্ষা গ্রহণ, আর তার চাবি হল সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ।
.
শিক্ষা গ্রহণ হল মৃত্যুর কথা স্মরণ করা এবং ধন-সম্পদ প্রেরণ করে তার জন্য প্রস্তুতি নেয়া।
.
সংযম হলো সত্য গ্রহণকারীর নিকট হতে সত্য অর্জন করা এবং সংসারধর্ম পালনের জন্য ঠিক যতটুকু পার্থিব বস্তু দরকার ততটুকুতে তুষ্ট থাকা। প্রয়োজন পরিমাণ বস্তু যাকে তুষ্ট করতে পারে না কোন কিছুই তাকে তৃপ্ত করতে পারবে না।
.
আমি আপনাদের মাঝে ও আল্লাহ্র মাঝে দূত ও প্রতিনিধি। আমার মাঝে ও আল্লাহ-র মাঝে কোন দূত নেই। মহান আল্লাহ্ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে তাঁর নিকট কারো আহাজারি করতে না হয়। সুতরাং আপনাদের দুঃখ-কষ্টের কথা আমাকে জানাবেন।
কেউ যদি সরাসরি আমার নিকট আসতে সক্ষম না হয় তাহলে এমন কারো নিকটয় পেশ করবে যে তা আমার নিকট পৌঁছিয়ে দিবে। তাহলে বিনাকষ্টে আমরা তার অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিব।
.
ইরাক অভিযানের প্রারম্ভে মুজাহিদিনের প্রতি আমীরুল মু’মীনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ভাষণ।
[সূত্রঃ ইবন কাসীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৭১,৭২]
#UmarRA
#KnowYourHeroes
.
যে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে তা দ্বারা কল্যাণ অর্জন করা দরকার। কারণ ন্যায়পরায়ণতার কিছু চিহ্ন আর কিছু সৌন্দর্য রয়েছে।
.
চিহ্নগুলো হল লজ্জা, দানশীলতা, বিনয় ও নম্রতা, আর সৌন্দর্য হলো দয়া ও করুণা।
.
মহান আল্লাহ্ সকল বিষয়ের জন্য দরজা সৃষ্টি করেছেন। সকল দরজা খোলার চাবি সহজলভ্য করে দিয়েছেন। ন্যায়পরায়ণতার দরজা হলো বিবেচনা-শক্তি ও শিক্ষা গ্রহণ, আর তার চাবি হল সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ।
.
শিক্ষা গ্রহণ হল মৃত্যুর কথা স্মরণ করা এবং ধন-সম্পদ প্রেরণ করে তার জন্য প্রস্তুতি নেয়া।
.
সংযম হলো সত্য গ্রহণকারীর নিকট হতে সত্য অর্জন করা এবং সংসারধর্ম পালনের জন্য ঠিক যতটুকু পার্থিব বস্তু দরকার ততটুকুতে তুষ্ট থাকা। প্রয়োজন পরিমাণ বস্তু যাকে তুষ্ট করতে পারে না কোন কিছুই তাকে তৃপ্ত করতে পারবে না।
.
আমি আপনাদের মাঝে ও আল্লাহ্র মাঝে দূত ও প্রতিনিধি। আমার মাঝে ও আল্লাহ-র মাঝে কোন দূত নেই। মহান আল্লাহ্ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে তাঁর নিকট কারো আহাজারি করতে না হয়। সুতরাং আপনাদের দুঃখ-কষ্টের কথা আমাকে জানাবেন।
কেউ যদি সরাসরি আমার নিকট আসতে সক্ষম না হয় তাহলে এমন কারো নিকটয় পেশ করবে যে তা আমার নিকট পৌঁছিয়ে দিবে। তাহলে বিনাকষ্টে আমরা তার অধিকার তাকে ফিরিয়ে দিব।
.
ইরাক অভিযানের প্রারম্ভে মুজাহিদিনের প্রতি আমীরুল মু’মীনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ভাষণ।
[সূত্রঃ ইবন কাসীর, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ৭১,৭২]
#UmarRA
#KnowYourHeroes
Saturday, May 21, 2016
আঁধার আলো
অন্ধকার থেকে আলোর পথে ...।
লিখেছেন anika touba
[১]
পেটের মধ্যে হঠাৎ একটা গুঁতো খেয়ে চমকে উঠলাম, কদিন ধরেই দেখছি পেটের মধ্যে লাগে কী যেন মোচড়ামুচড়ি করছে। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বড়ো কোনো অসুখ হলো না তো! কিছু একটা হলেই আমার প্রথমে মরার চিন্তা মাথায় আসে। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু ভীতু প্রকৃতির। একবার জ্বর হলো ছোটবেলায়, সাথে দুইবার হড়হড় করে বমি করলাম, বমির সাথে রক্ত দেখে আমি ভয়ে শেষ! মনে মনে ভাবলাম ব্লাড ক্যান্সার, আমি বুঝি মারা যাচ্ছি। চোখ ঠেলে পানি বেরিয়ে এলো, যতোটা না অসুখের প্রকোপে, তারচেয়ে অনেক বেশি আশু মৃত্যুচিন্তায়। এই পৃথিবী থেকে এতো ছোট বয়সেই চলে যাবো? সে যাত্রা অবশ্য বেঁচে গেছিলাম… কিন্তু এবার কী হলো?
চিন্তায় ক্লিষ্ট হয়ে বসে আছি, এদিকে মিতু ফোন দিলো। মিতু আমার সাথেই পড়ে, এক নম্বরের বদ মেয়ে। দুনিয়ার সব ছেলেকে এক হাতে কিনে আরেক হাতে বেঁচতে পারবে। ছেলে পটাতেও সেরা, ছেলে নাচাতেও সেরা। ওর সামনে দুনিয়ার সকল প্লেবয় শিশু। তবে প্রেমিকা হিসেবে যেমনই হোক, বন্ধু হিসেবে অসাধারণ। এমন কোনো বিপদ-আপদ নাই যখন ওকে পাশে পাওয়া যায় না। একটা ডাক দিলে দিন নাই রাত নাই হাজির হবে। বাসা থেকেও প্রচুর স্বাধীনতা পায়। ধনীর ঘরের আদরের দুলালি, আমাদের মতো এতো রেস্ট্রিকশন নাই তাই বাপ-মায়ের সাথে অতো লুকোছাপা করতে হয় না।
- হ্যালো, হ্যাঁ বল।
- কীরে এতোক্ষণ লাগে ফোন ধরতে?
- একটু টেনশনে ছিলাম….
- ক্যান কী অইসে?
- মনে হয় বড়ো কোনো অসুখ। ফট কইরা মরে যাবো..
- ঢং করস? কী হইসে ঠিক করে বল
- পেটের মধ্যে কয়দিন ধরে কেমন জানি করতেসে,
- হাগু পাইসে ডারলিং? হি হি হি…
- আমি সিরিয়াস দোস্ত। একটু আগেই হঠাৎ মনে হইলো একটা শিং মাছ গুঁতা মারলো, এই যে এইমাত্র আবার!! খুবই টেনশনে আছি মিতু, অসুখ-টসুখ কী যে হইলো…
- ওহ নো! তুই এতো টেনশন করিস না, তোর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা আছে তো? না করে থাকলে টেস্ট করে আমাকে একটা কল দে।
আমার বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠলো! মিতুর মুখে কিচ্ছু আটকায় না। প্রেগনেন্সি টেস্ট ওর জন্য ছেলেখেলা। আমার তো কথাটা মাথাতেই আসে নাই।
আচ্ছা রাখি এখন, বলে কোনোমতে ফোনটা রেখেই দৌড় দিলাম। ড্রয়ারের মধ্যে কাপড়চোপড়ের তলে রাখা স্ট্রিপগুলো থেকে একটা স্ট্রিপ টেনে বের করে হাতে নিলাম। মাথা দপদপ করছে। সত্যিই যদি এমন কিছু হয়! কী করবো, কোথায় যাবো! সুমন! সুমনকে একটা ফোন দিতে হবে এক্ষুণি!
ফোনটা তুলে নিজের অজান্তেই আবার মিতুকেই লাগালাম।
- করেছিস?
- সাহস পাচ্ছি না। যদি সত্যি প্রেগন্যান্ট হই? আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম।
- তুই এখনও দাঁড়ায় আছিস স্টুপিড!! যা তুই, আগে হোক তারপর বাকি চিন্তা। আমি ফোন ধরেই আছি, তুই এক্ষুণি করে আয়।
- ওকে!
একটা দাগ একটু একটু করে ভেসে উঠছে। একটা মানে নেগেটিভ… মাথা কাজ করছে না। রাথরুমে বসেই মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি! “হে আল্লাহ, নেগেটিভ দাও, নেগেটিভ দাও…” একটা রেখা এখন পুরোটা ভেসে উঠেছে। আরেকটা রেখা না ভাসলেই হলো। “ওহ আল্লাহ! আমি ভালো হয়ে যাবো, নামাজ পড়বো পাঁচ ওয়াক্ত, আরেকটা দাগ যেন না উঠে… প্লীজ প্লীজ প্লীজ…” একি! আরেকটা দাগ.. আস্তে আস্তে দ্বিতীয় দাগটাও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। না, এ হতে পারে না। আমি আর সুমন সব সময় প্রোটেকশন ব্যবহার করেছি। তাহলে, কীভাবে!
[২]
ঠোঁট-মুখ শুকিয়ে গেছে। আরেকবার টেস্ট করতে হবে। এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোনো কারণে কি পজিটিভ রেজাল্ট দেখাতে পারে? দেরি করা যাবে না, কালই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
- হ্যালো, মিতু।
- বল
- আই থিঙ্ক আই অ্যাম প্রেগন্যান্ট। তুই কালই আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে পারবি?
- ওকে নো প্রবলেম! বাট ডোন্ট প্যানিক মাই লাভ, ওকে?
- ওকে
ফোনটা ছেড়ে সোফাতেই গা এলিয়ে দিলাম। খুব ক্লান্ত লাগছে। হাতটা অটমেটিক চলে গেলো পেটের ওপর। আমার পেটে সত্যিই কি সুমনের বাচ্চা? প্রথম বাচ্চা পেটে আসার অনুভূতিটা কেমন হওয়ার কথা? ভয়, আতঙ্ক, উদ্বেগ ছাড়া আমার মধ্যে আর কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না।
মিতুর সাথে অদ্ভুত একটা হাসপাতালে গেলাম পরদিন। আমি জানি, ও এসব জায়গা ভালো চেনে। ওর অভিজ্ঞতা আছে। হাসপাতালে পরীক্ষা করেও একই রিপোর্ট পেলাম। ডাক্তার লোকটা দুলেদুলে হেসে বললো, ডোন্ট ওয়ারি, আমাদের সব ব্যবস্থা আছে। শুধু একটা স্ক্যান করে জেনে নিন প্রেগনেন্সি কতদিনের হলো তিন-চার মাসের হলে সহজেই ব্যবস্থা করা যাবে। খুবই পরিষ্কার ইঙ্গিত। অবশ্য আমি মোটামুটি মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে এসেছি, বিয়ের আগে এই মুহূর্তে বাচ্চা পেটে আসলে অ্যাবরশন করাবো। এছাড়া আর কীই বা উপায়? সুমনের এখনও পড়াশোনাই শেষ হয় নি। বিয়ে করার মতো কোনো সামর্থ্য ওর এখনও নেই। আর আমার বাবা-মায়ের কাছেও সুমনের কথা তোলার প্রশ্নই আসে না! একটা বেকার সমবয়সী ছাত্রের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে -- এতোটা পাগল তারা এখনও হন নি। হাসপাতাল থেকে বের হয়েই প্রথমে সুমনকে ফোন দিলাম।
- দেখা করতে পারবে? খুবই আর্জেন্ট।
সুমন আধ ঘণ্টার মাঝেই চলে এলো। আমি ডাকলে সব ছেড়ে হলেও ও ঠিকই আসবে। আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে সুমন। ওর সাথে কথা না বলে একা একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই না আমি।
মিতু সাথেই ছিল। সুমনের কাছে ব্যাপারটা ও-ই খুলে বললো। দেখতে পেলাম সঙ্গে সঙ্গেই ওর মুখের রঙ বদলে গেলো। কিন্তু দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো সুমন। আমি একপাশে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছি। সুমন ডেকে আমাকে কাছে নিলো। খুবই আদর করে বললো, চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমার মুখ দিয়ে স্বগতোক্তির মতো একটা কথা বেরিয়ে এলো, “আমরা এখন কী করবো?”
- দেখো জান, বিয়ে করা এখন আমাদের জন্য ‘ওয়াইজ’ হবে না। তুমি তো জানো আমি এখনও স্টুডেন্ট, আর আংকেল-আন্টিও এখন তোমাকে বিয়ে দিবে না। তাছাড়া এখন বিয়ে করলে তোমার পড়াশোনা, ক্যারিয়ারের কী হবে! সো, আসো আমরা অ্যাবরশন করে ফেলি। বিয়ে হলে আমরা দুইজন রেডি হয়ে আমাদের বেবি নিবো, কেমন?
আমি সুমনের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলাম। আমাদের বাচ্চা অ্যাবোর্ট করার কথা ভেবে হঠাৎ খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। যদিও বুঝতে পারছি এমন দুঃখ পাওয়ার কোনো কারণই নেই। সুমন একদম প্র্যাকটিকাল কথাটাই বলেছে। আমাদের পক্ষে এখন বিয়ে করাটা অসম্ভব ব্যাপার! আর এই সমাজে এমন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার কথা ভাবাই যায় না.. কেউ মেনে নেবে না।
আমি রাজি হলাম। মানুষের হাতে সব ইচ্ছা পূরণের ক্ষমতা সবসময় থাকে না, একটা না একটা দিকে ছাড় দিতেই হয়।
[৩]
তিনদিন পরে স্ক্যান করার জন্য হাসপাতালে এসেছি। এবার সাথে সুমনও আছে। রিপোর্ট ঠিকঠাক থাকলে আজই অ্যাবোর্ট করে ফেলবো। কিন্তু হাসপাতালে আমার জন্য এতো বড়ো চমক অপেক্ষা করছিলো কে জানতো।
আমার রিপোর্টে দেখাচ্ছে আমি প্রায় ছ মাসের গর্ভবতী! সুমনকে সাথে দেখে নার্স ধরেই নিয়েছে যে আমরা বিবাহিত। হেসে হেসে বললো, আপনি ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট আর আপনি জানেনও না? খুব লাকি আপু আপনে, আমার বাচ্চা পেটে আসার সাথে সাথে এমুন বমি আরম্ভ হইছিলো…
আর কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না আমি। মাথাটা ভো-ভো করছে। সুমনের দিকে তাকালাম, দেখি ওর চোখেমুখেও থমথমে ভাব। ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম আবারও। আজকে তাকে বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে। আমাদেরকে বুঝিয়ে বললো, প্রেগনেন্সি এন্ড করা এখন আর সম্ভব না, বেশি দেরি হয়ে গেছে। এখন অ্যাবোরশন করলে আমি মারাও যেতে পারি।
এরপর আর কোনো কথা চলে না, তবুও সুমন যতোভাবে পারলো ডাক্তারের কাছে অনুনয়-বিনয় করে অনুরোধ করতে লাগলো। খালি পা দুইটা ধরা বাকি ছিল। কিন্তু ডাক্তার কোনোভাবেই অ্যাবরশন করতে রাজি হলো না। এইসব ধরা পড়লে পুলিশ কেইস নিয়ে টানাটানি।
বাসায় ফিরে আমি পুরো ইন্টারনেট তন্ন-তন্ন করে ফেললাম। পড়ে যা বুঝলাম, এখন আর ওষুধ খেয়ে গর্ভপাতের সময় নেই। টাকাপয়সা দিয়ে যদি কোথাও সার্জারি করা ম্যানেজ করতেও পারি, তাহলে আমার মারা যাওয়ার সম্ভাবনাই সর্বোচ্চ। যদিও আত্মহত্যার কথা অনেকেই ভাবে, কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু যখন এভাবে চোখের সামনে অপশন আকারে হাজির হয়, তখন সেটা সহজে বরণ করে নেওয়া যায় না। আমার সামনে বিশাল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে! এতোদিন কষ্ট করে এই পর্যন্ত এসেছি, কতো স্বপ্ন, কতো প্রত্যাশা! বাচ্চা এখন নিবো না দেখে মারা যাবো - এই পরিণতিটা ঠিক মেনে নেওয়ার মতো না।
কিন্তু আশঙ্কা আর ভয়ে আমি অস্থির হয়ে আছি! মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যাই করে ফেলি! মিতুকে ডাকলাম, ও আমার মাথা থেকে আত্মহত্যার কথা একেবারে ঝেড়ে ফেললো। “জোর করে অ্যাবোরশন করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। সুমনও এই পরিস্থিতির জন্য ইকুয়ালি দায়ী। তুই এতো স্যাক্রিফাইস কেন করবি? তোর লাইফটা কেন নষ্ট করবি?”
আমি অসহায়ের মতো মিতুর মুখের দিকে চেয়ে থাকলাম। ও বললো, “এখন বিয়েই একমাত্র পথ।”
[৪]
সুমনকে বিয়ের কথা বলতেই ও বিগড়ে গেলো। কোনোদিন ও আমার সাথে রাগ করে কথা বলে নি, কিন্তু দুইদিন বিয়ের কথা বলতেই ওর নম্রতার মুখোশ কোথায় চলে গেলো! জানু, বেইবি, সুইটহার্ট ছাড়া আগে কথাই বলতে পারতো না, আর এখন বেশ্যা, স্লাট, মাগী, কুত্তার বাচ্চা বলতেও বাঁধে না।
প্রথমে আমি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, এও কি সম্ভব! আমি হয়তো নিজেকেও অবিশ্বাস করতে পারি, কিন্তু সুমন যে এভাবে বদলে যাবে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। মিতুই ঠিক বলেছিলো, ছেলেদেরকে কোনো বিশ্বাস নেই। কিন্তু আমি সুমনের ভালোবাসায় বিশ্বাস করেছি। ওকে বিশ্বাস করে নিজের সমস্ত ওর কাছে সঁপে দিয়েছি। কখনও মনে হয় নি আমি ভুল কিছু করছি। তাহলে কি সত্যিকার ভালোবাসা বলে কিছুই নেই? আমি কি ভালোবেসে, বিশ্বাস করে ভুল করলাম?
সুমন ইদানিং আমার ফোনও এভয়েড করছে। কয়েক দিন আগে ওর সাথে দেখা হয়েছিল। ও খুব ঠাণ্ডা মাথায় বলেছে, ঠিক আছে, বাচ্চা অ্যাবোর্ট করতে না পারো, জন্ম দাও, এরপর মেরে ফেলো। লাগলে বইলো, আমি কোথাও ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো….
সুমনের কথা শুনতে ঘৃণায় গা রি-রি করছে। অপমানে চোখ জ্বলছে। তবুও কাঁদতে কাঁদতে মানানোর অনেক চেষ্টা করলাম।
আমার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলতেই ওর সমস্ত ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো।
একই কথা নিয়ে বারবার প্যানপ্যান করবা না। আমার ডিসিশন জানায় দিছি, এখন আমার পক্ষে বিয়ে করা পসিবল না। ইফ ইউ ওয়ান্ট উই ক্যান বি লাইক বিফোর: বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড। দ্যাটস ইট!
কতো সহজেই এসব কথা বলে দিতে পারে একটা ছেলে! অথচ একটা মেয়ে-- কতো বড়ো দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যায় সেটা কি কল্পনাও করতে পারে? আমি বুঝে ফেলেছি, এই পরীক্ষা আমার একার। সেদিন রাতটা মনে হচ্ছিলো দুঃস্বপ্নের মতো দীর্ঘ। কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছি, শরীর-মন একদম অবসন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু এখন নিজের জন্য হলেও বাচ্চাকে জন্ম দিতে হবে। এরপর বাকি চিন্তা। মিতুর সহযোগিতায় বনানির একটা ফ্ল্যাটে সাবলেটে ভাড়া নিলাম। ওর পরিচিত কয়েকজন সিনিয়র আপু আর জুনিয়র ছাত্রী একসাথে থাকে। বাবা-মা’কে বানিয়ে বললাম, ছাত্রী হোস্টেলে থাকতে হবে পরীক্ষার জন্য, অনেক পড়াশোনা - বাসায় বসে একা একা ম্যানেজ করতে পারছি না।
এর পরের কয়েকটা মাস গেলো বিভীষিকার মতো। জামাকাপড় ঢোলা করে বানিয়ে নিলাম, যেন পেট বোঝা না যায়। ছয় মাসের পর থেকে পেটটা আস্তে আস্তে বড়ো হচ্ছিল। আমি নিদেনপক্ষে বাইরে বেরোতাম না, পরিচিত কারো নজরে পড়তে চাই না। একান্তই বের হওয়া লাগলে গায়ের ওপর শীতে পড়ার একটা বড়ো খদ্দরের চাদর জড়িয়ে নিই। বাসার আপুদেরকে মিতু আগে থেকেই সব বলে রেখেছিল। মৌমিতা আপু, রোকসানা আপা আর রাহেলা। ওরা সবাই অনেক কেয়ারিং, অনেক ফ্রেন্ডলি! আমার পাশে ওরা যেভাবে ছিল, কোনোদিনও সেই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না!
এদের মধ্যে মৌমিতা আপু আর রাহেলাই বেশি করেছে, বিশেষ করে রাহেলা। এই মেয়েটা এতো লক্ষ্মী আর হৃদয়বান! রোকসানা আপুও যখন যা পারতো করতো। কিন্তু চাকরি নিয়ে ব্যস্ততার কারণে বেশি সময় দিতে পারতো না। রাহেলা মেয়েটা বাসার বাকিদের চেয়ে আলাদা, বয়সেও আমাদের মধ্যে সবচেয়ে জুনিয়র। প্রচণ্ড গরমেও দেখি কালো একটা বোরকা, নিকাব, হাতমোজা, পা মোজা ছাড়া বাইরে বেরোয় না। কে বলবে বাসার মধ্যে এই মেয়েটাই সবচেয়ে উচ্ছল! ওকে না চিনলে এরকম একটা বোরকাওয়ালি মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করার কথা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবতাম না! এতো তফাত আমাদের মধ্যে!
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার গরম লাগে না?
- খুব লাগে!
তাহলে এতোকিছু পরে জোকার সাজো কেন?
রাহেলা হাসতে হাসতে জবাব দিলো, আল্লাহকে ভালোবাসি আপা, তাই আল্লাহর জন্য কষ্ট করতেও ভালো লাগে।
ওর উত্তরটা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলাম। হায় ভালোবাসা! এই ভালোবাসার জন্য আমিও কতো কী করেছি! কিন্তু রাহেলার কথায় যুক্তি আছে, ভালোবাসলে সবই করা সম্ভব। মানুষ শরীর-মন সব বিকিয়ে দেয়, আর একটা কাপড় পরা আর এমন কী। আসলেই আগে ব্যাপারটা এভাবে ভেবে দেখি নি..
প্রায় রাতেই মাঝরাত পর্যন্ত আড্ডা বসতো, সেদিনও আড্ডা বসেছে। রোকসানা আপু বললেন, আমি বাবা-মায়ের কথা ছাড়া এক পাও এদিক-সেদিক করবো না। পড়াশোনা কম্প্লিট, চাকরি পেয়েছি ব্যাস। আমার ইচ্ছা সমাপ্ত। এখন আব্বা-আম্মা যেই পাত্রের সন্ধান আনবেন, সেখানেই কবুল।
মৌমিতা আপা সবচেয়ে মডার্ন। বলে উঠলেন, সুপাত্রই যে আনবেন তার নিশ্চয়তা কী? তুমি বড্ড বেশি আইডিয়াল চাইল্ড রোকসু… আমি তো হাসানকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ের কথা ভাবতেই পারি না! আর যাকে ভালোবাসি না, তার সাথে সংসার! ইম্পসিবল! হাসান হচ্ছেন মৌমিতা আপার ফার্স্ট লাভ - পাঁচ বছরের প্রেম, এখন পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় চলছে সবকিছু। কিন্তু আমার এখন আর এইসব ফার্স্ট লাভ, দীর্ঘদিনের প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাস নেই। সুমনও আমার ফার্স্ট লাভ ছিল, আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যাও ছিল না। তবুও …
চিন্তার সুতো কেটে দিয়ে রাহেলা বলে উঠলো, আপুরা আমার চিন্তাভাবনার সাথে তোমার মিল হবে না জানি। কিন্তু আমি বিয়ের পরের ভালোবাসাতেই বিশ্বাসী। যে ছেলেটা বিয়ের আগেই একটা মেয়ের সুন্দর চেহারা আর শরীর দেখে ফেলেছে, সে আসলে ঠিক কোন কারণে মেয়েটাকে ভালোবাসলো কোনো চিন্তা করতে পারো, সৌন্দর্য্য নাকি মেয়েটার মানসিকতা? তাছাড়া আমার সাথে প্রেম করার অর্থ অন্য কোনো মেয়ের সাথেও সে রিলেশন করতে পারতো, আমি বিয়ের পর তাকে কীভাবে বিশ্বাস করবো?
তাহলে তুমি বিয়েটা করবা কীভাবে? এটা তো রোকসানার মতোই হলো, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। বাপ-মা ধরে বেঁধে একটা গাধা এনে দিলেও মালা পরিয়ে দিবে??
মৌমিতা আপুর খোঁচাটা গায়েই মাখলো না রেহালা। উল্টো প্রশ্ন করলো, যে ছেলেটা প্রেমিক হিসেবে অসাধারণ, সে যে স্বামী হিসেবেও দায়িত্ববান হবে - এটা কীভাবে বোঝা যায় আপু? দুনিয়ার প্রত্যেকটা ছেলের সাথে এক এক করে প্রেম করে দেখা তো সম্ভব না যে কে বেশি ভালো, কাকে হাজবেন্ড হিসেবে চুজ করা উচিত। পাত্রের ব্যাপারে আল্লাহর গাইডলাইনস ফলো করবো, আমার বাবা-মা অনেক ভালো হলেও উনারা আমার মতো করে সবকিছু দেখেন না, আমি বড়োলোক কোনো ছেলেকে বিয়ে করলেই সবাই খুশি। কিন্তু আমি চাই পরহেজগার কাউকে বিয়ে করতে। তাই এখন থেকেই মসজিদের ইমাম, পরিচিত বড়ো ভাই আর বোনদেরকে বলে রেখেছি যেন এমন কোনো পাত্রের খোঁজ পেলে আমাকে জানায়। আপু, ইসলামে ডেটিং বলে কিছু নেই, কিন্তু বিয়ের আগে জানাশোনার কথা বলা আছে। ডেটিং-এ তো আদর-আহ্লাদ ছাড়া কোনো কাজের কথা হয় না। বিয়ের জন্য যেসব প্রশ্ন জানা জরুরি, সেগুলো জানতে দুজন মিলে একাকী বদ্ধ-কেবিনে হাত ধরাধরি না করলেও হয়। আমি আমার বাবার সামনে বসেও সেই প্রশ্নগুলো জেনে নিতে পারি, যেগুলোর উত্তর শুনে আমি আমার ফিউচার হাজবেন্ড বাছাই করবো।
রাহেলার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম আমি। প্রতিটা কথাই সঠিক। প্রতিটা কথাই যুক্তিসঙ্গত। অন্তরের গহীনে এসে কোথায় যেন কড়া নাড়ে।
[৫]
রাহেলা আমার ওপর বেশ প্রভাব ফেলছিল। একদিন বাইরে যাওয়ার সময় ওর থেকে চেয়ে একটা বোরকা নিলাম। মিতু, আমার বান্ধবী, মাঝে একদিন এসেছিল। আমার বোরকা ধরার কাহিনি শুনে চোখ কপালে তুলে বললো, কীরে হুজুর হয়ে গেলি নাকি? আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে লজ্জা পেয়ে বললাম, না, না, পেটটা বড়ো হয়ে যাচ্ছিলো। আসলে পেট বড়ো হয়ে যাওয়াটাই একমাত্র কারণ ছিল না, কিন্তু কেন যে মুখ ফসকে মিথ্যে কথাটা বের হয়ে আসলো! বাসার বাকি সদস্যরা ধরেই নিলো পেট ঢাকার জন্যই বোরকা পরে বেরোচ্ছি। অবশ্য ওদের এই ভুল দ্রুতই ভাঙতে যাচ্ছিল…
দেখতে দেখতে ডেলিভারির দিন ঘনিয়ে আসলো। আমার মাথার মধ্যে দুঃস্বপ্নও চেপে বসতে লাগলো। কী করবো এই বাচ্চাকে নিয়ে? কোথাও ফেলে দিবো? নাকি মেরে ফেলবো? ভালোবাসার এই চিহ্ন এখন আমার জন্য অভিশাপের চিহ্নে পরিণত হয়েছে। একে কোথাও পুঁতে ফেলতে পারলে আমার শান্তি লাগতো। কিন্তু মাঝেই মাঝেই বেয়াড়া মা-বোধটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রাহেলার দেখাদেখি আমিও নামাজ ধরেছি। ফজর বাদে বাকি চার ওয়াক্ত-ই নিয়ম মতো পড়ছি। ফজরে রাহেলা ঠেলেঠুলে উঠিয়ে দেয়, ও না ডাকলে উঠতে পারিনা। গত আড়াই মাস বাসায় যাই নি, এই দুর্দিনে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। যদিও আমি মায়ের সাথে তেমন ক্লোজ না, তবু তো মা! আজকাল মায়ের জন্য মনটা খুব আনচান করে।
এমন বিপদের মধ্যে হঠাৎ একদিন সুমনের ফোন এলো। বেশ সাধারণ ভাবে কথা বলছিল ও। আমিও এতোদিনে নিজেকে সামলে নিয়েছি। আগের মতো কান্নাকাটি আর করলাম না, নিজেকে আর কতোই বা নিচু করবো। শীতল স্বরে শুধু বললাম, বলো কী বলবে। আমার গলার আওয়াজেই বোধ হয়, ও বেশি কিছু বলার সাহস করতে পারলো না। শুধু বললো, যদি কোনো দরকার হয় ডেকো। আমার পরিচিত এতিমখানার লোক আছে, সে ব্যবস্থা করতে পারবে। যদিও আমাদের জন্য এই বাচ্চার কোনো সাইন না রাখাটাই বেস্ট।
আমার মাথায় ধাই করে রক্ত চড়ে গেলো। কতো বড়ো দুঃসাহস যে আমাদের কথা বলতে এসেছে। দায়িত্ব নেবে না, আবার দেখাতে এসেছে সে আমাদের ব্যাপারে কতোই না চিন্তিত! কী পেয়েছে এই পশুটা? আমার বাচ্চার কোনো দায়িত্ব তো নেয়ই নি, এখন এসেছে আমার বাচ্চাকে খুন করতে! তোমার থেকে আমি কোনো অ্যাডভাইস চাই নি, বলে মুখের ওপর ফোনটা খট করে কেটে দিলাম।
এতোদিন মনের মধ্যে যা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল এখন সেটাও দূর হয়ে গেলো। এই বাচ্চা আমার বাচ্চা। ওকে আমি মেরে ফেলতে পারি না, না-না-না। আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। এই শিশুকে মেরে ফেলা হবে ঘোরতর পাপ। এক গুনাহর ভার এখনও বইছি, সন্তান-হত্যা করে আরেকটা জঘন্যতম অপরাধের ভাগীদার আমি হতে চাই না।
কিন্তু কোথায় যাবো এই শিশু নিয়ে, কী করবো? বাবা-মায়ের সামনে কী জবাব দেবো? মিতু, রাহেলা, রোকসানা আপু, কেউই সন্তোষজনক কোনো সমাধান দিতে পারলো না। জীবনের এক একটা পর্যায় এতো জটিল, যার সমাধান কোনো মানুষের কাছেই থাকে না। রাহেলা শুধু বললো, আপা, দুয়া করেন। আপনি আল্লাহর দিকে পা বাড়াইসেন, আল্লাহ আপনাকে কখনও ফেলে দিবে না।
আমি শুধু দুয়াই করলাম। ফজরের নামাজ এখন নিয়মিত পড়ি। রাতের বেলা ঘুমও আসতে চায় না এখন আর, তীব্র ব্যাকপেইন আর মাথাব্যথা নিয়ে জেগেই থাকা হয়। ভোর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি আর আল্লাহর দরবারে দুয়া চাই। বাচ্চাটাকে মারতে চাই না ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য উত্তম ব্যবস্থা করে দাও। ঘুরেফিরে এই একই দুয়া পাগলের মতো চাইতে থাকি…
[৬]
আমার পরিবর্তন দেখে ধীরে ধীরে সবাই বুঝে যাচ্ছিলো যে আমি সাময়িক বোরকা ধরি নি, আসলেই বদলে গেছি। আরও পরিষ্কার হলো যখন দেখলো আমি কিছুতেই পুরুষ ডাক্তারের কাছে অপারেশন করাতে রাজি নই! মিতু তার চিরাচরিত স্বভাবমত একটা লম্বা ঝাড়ি দিয়ে বললো, মরতে চাস নাকি? বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটাতে খারাপ লাগলো না, ডাক্তারের কাছে অপারেশন করাতে যতো লজ্জা।
মিতুটার মুখে কিছুই বাধে না। আমি দাঁতমুখ চেপে বললাম, দ্যাখ, সবকিছু মিলাস না। আগে এতো মেনে চলতাম না। পুরুষ ডাক্তারের কাছেও অপারেশন করবো যদি আর কোনো অপশন না থাকে। কিন্তু মহিলা ডাক্তারের খোঁজ করতে তো আর সমস্যা নেই। তুই পারলে আমাকে হেল্প কর--এতো ক্যানক্যান করিস না।
মিতু ঠোঁটকাটা হলেও অবিবেচক না। আমাকে আর বেশি ঘাটালো না।
বললো, চল ঘুরতে যাই। উদ্দেশ্য শপিং! বাচ্চা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে এখন মনটা বেশ ভারমুক্ত লাগে। শখও হয় অনেক রকমের। কিন্তু ভারি শরীর নিয়ে বেরোনো হয় না। মিতুই আমাকে টেনে বের করলো ঘর থেকে। ছোট্ট সোনার জন্য ফিডার, জামা, জুতো, একটা ছোট্ট বালিশ, কয়েক প্যাকেট ডাইপার, আর রেডিমেড কাঁথা কিনে আনলাম। সেই দিনটা কী যে ভালো লাগছিলো! মা হওয়ার ব্যাপারটা যে এতো আনন্দদায়ক এতোদিন উপভোগই করতে পারি নি। শুধু দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। কিন্তু এখন চিন্তা হলেই মনে মনে বলি, “হাসবি আল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল” আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, এরচেয়ে মন ভালো করা কথা আর আছে কোথাও?
ডিউ ডেইটের প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই আমার ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। অস্বাভাবিক ব্যথা! আমাকে দৌড়ে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো রাহেলা আর রোকসানা আপু। মিতুও এলো কিছুক্ষণের মধ্যে। মাঝের পুরো তিন ঘণ্টা আমার কোনো হুঁশ ছিল না।
হুঁশ ফিরে শুনলাম, আমার ডেলিভারি হয়ে গেছে। জ্ঞান ছিল না, তাই সিজার করে বাচ্চা বের করা লেগেছে। আর সবচেয়ে আকস্মিক, সবচেয়ে ভয়ংকর, সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক খবরটা আমাকে ঠিক তখনই দেওয়া হলো। আমার বাচ্চাটা মারা গেছে। ব্রেইন হ্যামারেজের কারণে ডেলিভারির সময়ই ও মারা যায়।
আমি জমে গেলাম। অপ্রত্যাশিত হলেও বাচ্চাটাকে নিয়ে শেষপর্যন্ত অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। সব প্রতিকূলতার মধ্যে ওকে জন্ম দিয়েছি, পুরো পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে হলেও ওকে ভালোমত বড়ো করতে চেয়েছি। আমার মনের কুঠিরে জায়গা করে নিয়েছিল পাখিটা। চলে গেলো এভাবে? আমাকে একা ফেলে রেখে? খুব কষ্ট হলো, এই কষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তীক্ষ্ণ একটা বেদনা আমাকে চিরে ফেললো।
অথচ অদ্ভুত পৃথিবী, এই ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে কয়েকটা অবিবাহিত মেয়ে ছাড়া আমার পাশে আর কেউই নেই। এরা কী বুঝবে আমার কষ্ট! ছাদের দিকে চোখ চলে গেলো। আল্লাহকে ডেকে বললাম, হে আল্লাহ তুমিই সবচেয়ে উত্তম অভিভাবক। আমার বাচ্চাটাকে তুমি দেখে রেখো।
[৭]
রাস্তার ধারের কোনো ডাস্টবিনে না, নর্দমার বর্জ্যতে না, টয়লেটে ফ্লাশ করেও না--আমার সন্তানকে আমি সবচেয়ে সুন্দরভাবে বিদায় জানালাম। হুজুর ডেকে ওর দাফন সম্পন্ন হলো, আমি বাদে বাকিরা সবাই নামাজ পড়লো। যে শিশুর মৃত্যু লেখা আছে, সে মারা যাবেই। বাবা-মা হয়ে নিজের হাতে সন্তানকে খুন করা তো জানোয়ারও পারে না। আর মানুষ শরীরের ক্ষুধা, প্রেমের তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে শেষমেশ সেটাই করে…
এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর আমি বাসায় ফিরে গেলাম। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে রিকাভার করতে অনেক সময় লাগছিল। বাসা থেকে মিতু বুদ্ধি করে আগেই বাচ্চার জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলেছে। যেন আমার চোখে পড়লে আমি দুঃখ না পাই, অবশ্য এতোকিছুর দরকার ছিল না। আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি আর আল্লাহকে মেনে চলি। এখন আমার সাথে যেটাই হোক, আমি আর ভয় পাই না। ভেঙেও পড়ি না। রোকসানা আপু বদলি হয়ে গেছেন শুনলাম, আমারও এই বাসা থেকে বেরোনোর সময় হয়ে গেছে। নিজের বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে হবে এবার…
মনে হলো যেন একটা যুদ্ধ শেষ হলো। কিন্তু ফিরতে হলো খালি হাতে। আসলে খালি হাতে না, হাতে ইসলামের আলো নিয়ে ফিরছি - এটাই তো সবচেয়ে বড়ো পাওয়া!
বাসায় বাবা-মা আমাকে প্রায় তিন মাস পর দেখছেন। আমার পরিবর্তনে খুব হতবাক সবাই। যেন আমাকে চিনতে পারছে না কেউ।
এর প্রায় দুই মাস পরে হঠাৎ একদিন সুমন ফোন দিয়েছিল। গলা শুনে মনে হলো যেন খুব কান্নাকাটি করেছে। ভেক ভেক করে হেঁচকি তুলে আমাকে বললো, সে ‘মেইক আপ’ করতে চায়! যতো সব ভণ্ডামি। পুরো প্রেগন্যান্সির সময় আমাকে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দিয়ে এখন এসেছে আবার আমার শরীর এনজয় করতে! মানুষই পারে এতোটা নির্লজ্জ হতে।
আজ ভাবছিলাম, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। পৃথিবীর প্রতিটা ঘটনার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। এক একটা পরিস্থিতি তৈরি করে তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর কাছে আসার সুযোগ করে দেন। কেউ সেই সুযোগটা কাজে লাগায়, আর কেউ ছুঁড়ে ফেলে। প্রথমে বাচ্চা রাখার কোনো ইচ্ছাই ছিল না, অথচ বাচ্চা জন্ম দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না। এরপর আল্লাহর ভয়ে বাচ্চাটা রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন আল্লাহ অন্য ইচ্ছা করলেন। আর একদিক থেকে ভাবলে এভাবেই আল্লাহ আমাকে বেইজ্জত হওয়া থেকে রক্ষা করলেন। মাঝখান দিয়ে সুমন আর সুমনের মতো সব ছেলের চেহারা স্পষ্ট করে দিলেন। বিয়ের আগে প্রেমগুলো কতো সস্তা, কতো ঠুনকো, কতো মেকি! অথচ ছেলেমেয়েরা অন্ধের মতো এর পিছেই ছুটতে থাকে…
মিতু এখনও আগের মতোই আছে। কিছু মানুষ কখনোই শিক্ষা নেয় না। আমার এতো বড়ো ঘটনার পরেও ও ঠিক আগের মতো রয়ে গেলো। ছেলে ঘুরিয়ে মজা নিচ্ছে। খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যখন যার সাথে ইচ্ছা শুয়ে পড়ছে। ওর সাথে আগের মতো আর মিশতে পারিনা, বন্ধুত্ব আছে কিন্তু অশ্লীল রসিকতা নেই। ছেলেদের সাথে বসে আড্ডা দেই না দেখে দেখাসাক্ষাতও কম হয়। রোকসানা আপুর খবর অনেকদিন জানিনা। তবে মৌমিতা আপুর কথা মিতুর মুখেই শুনেছি, পাঁচ বছরের সেই ফার্স্ট লাভকে ছেড়ে তিনি কানাডার আরও উচ্চশিক্ষিত এক পাত্রকে বিয়ে করে এখন কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হায়রে ফার্স্ট লাভ! হায়রে মরার প্রেম!
রাহেলার সাথে বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে। যদিও ও আমার ছোটবোনের মতো। সামনের মাসে ওর বিয়ে। ছেলে ছাত্র, একই সাথে ব্যবসাও করছে। কম বয়সেই বিয়ে করতে চায়, রাহেলার দ্বীনদারিতা দেখে ওকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। রাহেলা বলে, একবার বিয়েটা করি, এরপর বরের সাথে মিলে তোর ঘটকালি করবো… হি হি।
আমি অনেক বদলে গেছি। অ-নে-ক। এখন রাহেলার মতোই হাত মোজা-পা মোজা পরি। দূর থেকে দেখে একদিন মিতু বলেছিল, তোকে দেখে ভেবেছি রাহেলা কী করে এইখানে! সো কনফিউজিং!
আমি মনে মনে হাসি। আল্লাহ আমাকে অনেক দিলেন। এক জীবনে আল্লাহকে খুঁজে পেলে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে…
লিখেছেন anika touba
[১]
পেটের মধ্যে হঠাৎ একটা গুঁতো খেয়ে চমকে উঠলাম, কদিন ধরেই দেখছি পেটের মধ্যে লাগে কী যেন মোচড়ামুচড়ি করছে। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। বড়ো কোনো অসুখ হলো না তো! কিছু একটা হলেই আমার প্রথমে মরার চিন্তা মাথায় আসে। ছোটবেলা থেকেই আমি একটু ভীতু প্রকৃতির। একবার জ্বর হলো ছোটবেলায়, সাথে দুইবার হড়হড় করে বমি করলাম, বমির সাথে রক্ত দেখে আমি ভয়ে শেষ! মনে মনে ভাবলাম ব্লাড ক্যান্সার, আমি বুঝি মারা যাচ্ছি। চোখ ঠেলে পানি বেরিয়ে এলো, যতোটা না অসুখের প্রকোপে, তারচেয়ে অনেক বেশি আশু মৃত্যুচিন্তায়। এই পৃথিবী থেকে এতো ছোট বয়সেই চলে যাবো? সে যাত্রা অবশ্য বেঁচে গেছিলাম… কিন্তু এবার কী হলো?
চিন্তায় ক্লিষ্ট হয়ে বসে আছি, এদিকে মিতু ফোন দিলো। মিতু আমার সাথেই পড়ে, এক নম্বরের বদ মেয়ে। দুনিয়ার সব ছেলেকে এক হাতে কিনে আরেক হাতে বেঁচতে পারবে। ছেলে পটাতেও সেরা, ছেলে নাচাতেও সেরা। ওর সামনে দুনিয়ার সকল প্লেবয় শিশু। তবে প্রেমিকা হিসেবে যেমনই হোক, বন্ধু হিসেবে অসাধারণ। এমন কোনো বিপদ-আপদ নাই যখন ওকে পাশে পাওয়া যায় না। একটা ডাক দিলে দিন নাই রাত নাই হাজির হবে। বাসা থেকেও প্রচুর স্বাধীনতা পায়। ধনীর ঘরের আদরের দুলালি, আমাদের মতো এতো রেস্ট্রিকশন নাই তাই বাপ-মায়ের সাথে অতো লুকোছাপা করতে হয় না।
- হ্যালো, হ্যাঁ বল।
- কীরে এতোক্ষণ লাগে ফোন ধরতে?
- একটু টেনশনে ছিলাম….
- ক্যান কী অইসে?
- মনে হয় বড়ো কোনো অসুখ। ফট কইরা মরে যাবো..
- ঢং করস? কী হইসে ঠিক করে বল
- পেটের মধ্যে কয়দিন ধরে কেমন জানি করতেসে,
- হাগু পাইসে ডারলিং? হি হি হি…
- আমি সিরিয়াস দোস্ত। একটু আগেই হঠাৎ মনে হইলো একটা শিং মাছ গুঁতা মারলো, এই যে এইমাত্র আবার!! খুবই টেনশনে আছি মিতু, অসুখ-টসুখ কী যে হইলো…
- ওহ নো! তুই এতো টেনশন করিস না, তোর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা আছে তো? না করে থাকলে টেস্ট করে আমাকে একটা কল দে।
আমার বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠলো! মিতুর মুখে কিচ্ছু আটকায় না। প্রেগনেন্সি টেস্ট ওর জন্য ছেলেখেলা। আমার তো কথাটা মাথাতেই আসে নাই।
আচ্ছা রাখি এখন, বলে কোনোমতে ফোনটা রেখেই দৌড় দিলাম। ড্রয়ারের মধ্যে কাপড়চোপড়ের তলে রাখা স্ট্রিপগুলো থেকে একটা স্ট্রিপ টেনে বের করে হাতে নিলাম। মাথা দপদপ করছে। সত্যিই যদি এমন কিছু হয়! কী করবো, কোথায় যাবো! সুমন! সুমনকে একটা ফোন দিতে হবে এক্ষুণি!
ফোনটা তুলে নিজের অজান্তেই আবার মিতুকেই লাগালাম।
- করেছিস?
- সাহস পাচ্ছি না। যদি সত্যি প্রেগন্যান্ট হই? আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম।
- তুই এখনও দাঁড়ায় আছিস স্টুপিড!! যা তুই, আগে হোক তারপর বাকি চিন্তা। আমি ফোন ধরেই আছি, তুই এক্ষুণি করে আয়।
- ওকে!
একটা দাগ একটু একটু করে ভেসে উঠছে। একটা মানে নেগেটিভ… মাথা কাজ করছে না। রাথরুমে বসেই মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি! “হে আল্লাহ, নেগেটিভ দাও, নেগেটিভ দাও…” একটা রেখা এখন পুরোটা ভেসে উঠেছে। আরেকটা রেখা না ভাসলেই হলো। “ওহ আল্লাহ! আমি ভালো হয়ে যাবো, নামাজ পড়বো পাঁচ ওয়াক্ত, আরেকটা দাগ যেন না উঠে… প্লীজ প্লীজ প্লীজ…” একি! আরেকটা দাগ.. আস্তে আস্তে দ্বিতীয় দাগটাও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। না, এ হতে পারে না। আমি আর সুমন সব সময় প্রোটেকশন ব্যবহার করেছি। তাহলে, কীভাবে!
[২]
ঠোঁট-মুখ শুকিয়ে গেছে। আরেকবার টেস্ট করতে হবে। এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। অন্য কোনো কারণে কি পজিটিভ রেজাল্ট দেখাতে পারে? দেরি করা যাবে না, কালই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
- হ্যালো, মিতু।
- বল
- আই থিঙ্ক আই অ্যাম প্রেগন্যান্ট। তুই কালই আমার সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে পারবি?
- ওকে নো প্রবলেম! বাট ডোন্ট প্যানিক মাই লাভ, ওকে?
- ওকে
ফোনটা ছেড়ে সোফাতেই গা এলিয়ে দিলাম। খুব ক্লান্ত লাগছে। হাতটা অটমেটিক চলে গেলো পেটের ওপর। আমার পেটে সত্যিই কি সুমনের বাচ্চা? প্রথম বাচ্চা পেটে আসার অনুভূতিটা কেমন হওয়ার কথা? ভয়, আতঙ্ক, উদ্বেগ ছাড়া আমার মধ্যে আর কোনো অনুভূতিই কাজ করছে না।
মিতুর সাথে অদ্ভুত একটা হাসপাতালে গেলাম পরদিন। আমি জানি, ও এসব জায়গা ভালো চেনে। ওর অভিজ্ঞতা আছে। হাসপাতালে পরীক্ষা করেও একই রিপোর্ট পেলাম। ডাক্তার লোকটা দুলেদুলে হেসে বললো, ডোন্ট ওয়ারি, আমাদের সব ব্যবস্থা আছে। শুধু একটা স্ক্যান করে জেনে নিন প্রেগনেন্সি কতদিনের হলো তিন-চার মাসের হলে সহজেই ব্যবস্থা করা যাবে। খুবই পরিষ্কার ইঙ্গিত। অবশ্য আমি মোটামুটি মানসিক প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে এসেছি, বিয়ের আগে এই মুহূর্তে বাচ্চা পেটে আসলে অ্যাবরশন করাবো। এছাড়া আর কীই বা উপায়? সুমনের এখনও পড়াশোনাই শেষ হয় নি। বিয়ে করার মতো কোনো সামর্থ্য ওর এখনও নেই। আর আমার বাবা-মায়ের কাছেও সুমনের কথা তোলার প্রশ্নই আসে না! একটা বেকার সমবয়সী ছাত্রের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবে -- এতোটা পাগল তারা এখনও হন নি। হাসপাতাল থেকে বের হয়েই প্রথমে সুমনকে ফোন দিলাম।
- দেখা করতে পারবে? খুবই আর্জেন্ট।
সুমন আধ ঘণ্টার মাঝেই চলে এলো। আমি ডাকলে সব ছেড়ে হলেও ও ঠিকই আসবে। আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে সুমন। ওর সাথে কথা না বলে একা একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাই না আমি।
মিতু সাথেই ছিল। সুমনের কাছে ব্যাপারটা ও-ই খুলে বললো। দেখতে পেলাম সঙ্গে সঙ্গেই ওর মুখের রঙ বদলে গেলো। কিন্তু দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো সুমন। আমি একপাশে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছি। সুমন ডেকে আমাকে কাছে নিলো। খুবই আদর করে বললো, চিন্তা কোরো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমার মুখ দিয়ে স্বগতোক্তির মতো একটা কথা বেরিয়ে এলো, “আমরা এখন কী করবো?”
- দেখো জান, বিয়ে করা এখন আমাদের জন্য ‘ওয়াইজ’ হবে না। তুমি তো জানো আমি এখনও স্টুডেন্ট, আর আংকেল-আন্টিও এখন তোমাকে বিয়ে দিবে না। তাছাড়া এখন বিয়ে করলে তোমার পড়াশোনা, ক্যারিয়ারের কী হবে! সো, আসো আমরা অ্যাবরশন করে ফেলি। বিয়ে হলে আমরা দুইজন রেডি হয়ে আমাদের বেবি নিবো, কেমন?
আমি সুমনের বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলাম। আমাদের বাচ্চা অ্যাবোর্ট করার কথা ভেবে হঠাৎ খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো। যদিও বুঝতে পারছি এমন দুঃখ পাওয়ার কোনো কারণই নেই। সুমন একদম প্র্যাকটিকাল কথাটাই বলেছে। আমাদের পক্ষে এখন বিয়ে করাটা অসম্ভব ব্যাপার! আর এই সমাজে এমন বাচ্চা জন্ম দেওয়ার কথা ভাবাই যায় না.. কেউ মেনে নেবে না।
আমি রাজি হলাম। মানুষের হাতে সব ইচ্ছা পূরণের ক্ষমতা সবসময় থাকে না, একটা না একটা দিকে ছাড় দিতেই হয়।
[৩]
তিনদিন পরে স্ক্যান করার জন্য হাসপাতালে এসেছি। এবার সাথে সুমনও আছে। রিপোর্ট ঠিকঠাক থাকলে আজই অ্যাবোর্ট করে ফেলবো। কিন্তু হাসপাতালে আমার জন্য এতো বড়ো চমক অপেক্ষা করছিলো কে জানতো।
আমার রিপোর্টে দেখাচ্ছে আমি প্রায় ছ মাসের গর্ভবতী! সুমনকে সাথে দেখে নার্স ধরেই নিয়েছে যে আমরা বিবাহিত। হেসে হেসে বললো, আপনি ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট আর আপনি জানেনও না? খুব লাকি আপু আপনে, আমার বাচ্চা পেটে আসার সাথে সাথে এমুন বমি আরম্ভ হইছিলো…
আর কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম না আমি। মাথাটা ভো-ভো করছে। সুমনের দিকে তাকালাম, দেখি ওর চোখেমুখেও থমথমে ভাব। ডাক্তারের চেম্বারে গেলাম আবারও। আজকে তাকে বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে। আমাদেরকে বুঝিয়ে বললো, প্রেগনেন্সি এন্ড করা এখন আর সম্ভব না, বেশি দেরি হয়ে গেছে। এখন অ্যাবোরশন করলে আমি মারাও যেতে পারি।
এরপর আর কোনো কথা চলে না, তবুও সুমন যতোভাবে পারলো ডাক্তারের কাছে অনুনয়-বিনয় করে অনুরোধ করতে লাগলো। খালি পা দুইটা ধরা বাকি ছিল। কিন্তু ডাক্তার কোনোভাবেই অ্যাবরশন করতে রাজি হলো না। এইসব ধরা পড়লে পুলিশ কেইস নিয়ে টানাটানি।
বাসায় ফিরে আমি পুরো ইন্টারনেট তন্ন-তন্ন করে ফেললাম। পড়ে যা বুঝলাম, এখন আর ওষুধ খেয়ে গর্ভপাতের সময় নেই। টাকাপয়সা দিয়ে যদি কোথাও সার্জারি করা ম্যানেজ করতেও পারি, তাহলে আমার মারা যাওয়ার সম্ভাবনাই সর্বোচ্চ। যদিও আত্মহত্যার কথা অনেকেই ভাবে, কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু যখন এভাবে চোখের সামনে অপশন আকারে হাজির হয়, তখন সেটা সহজে বরণ করে নেওয়া যায় না। আমার সামনে বিশাল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে! এতোদিন কষ্ট করে এই পর্যন্ত এসেছি, কতো স্বপ্ন, কতো প্রত্যাশা! বাচ্চা এখন নিবো না দেখে মারা যাবো - এই পরিণতিটা ঠিক মেনে নেওয়ার মতো না।
কিন্তু আশঙ্কা আর ভয়ে আমি অস্থির হয়ে আছি! মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যাই করে ফেলি! মিতুকে ডাকলাম, ও আমার মাথা থেকে আত্মহত্যার কথা একেবারে ঝেড়ে ফেললো। “জোর করে অ্যাবোরশন করতে গিয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেওয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। সুমনও এই পরিস্থিতির জন্য ইকুয়ালি দায়ী। তুই এতো স্যাক্রিফাইস কেন করবি? তোর লাইফটা কেন নষ্ট করবি?”
আমি অসহায়ের মতো মিতুর মুখের দিকে চেয়ে থাকলাম। ও বললো, “এখন বিয়েই একমাত্র পথ।”
[৪]
সুমনকে বিয়ের কথা বলতেই ও বিগড়ে গেলো। কোনোদিন ও আমার সাথে রাগ করে কথা বলে নি, কিন্তু দুইদিন বিয়ের কথা বলতেই ওর নম্রতার মুখোশ কোথায় চলে গেলো! জানু, বেইবি, সুইটহার্ট ছাড়া আগে কথাই বলতে পারতো না, আর এখন বেশ্যা, স্লাট, মাগী, কুত্তার বাচ্চা বলতেও বাঁধে না।
প্রথমে আমি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, এও কি সম্ভব! আমি হয়তো নিজেকেও অবিশ্বাস করতে পারি, কিন্তু সুমন যে এভাবে বদলে যাবে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। মিতুই ঠিক বলেছিলো, ছেলেদেরকে কোনো বিশ্বাস নেই। কিন্তু আমি সুমনের ভালোবাসায় বিশ্বাস করেছি। ওকে বিশ্বাস করে নিজের সমস্ত ওর কাছে সঁপে দিয়েছি। কখনও মনে হয় নি আমি ভুল কিছু করছি। তাহলে কি সত্যিকার ভালোবাসা বলে কিছুই নেই? আমি কি ভালোবেসে, বিশ্বাস করে ভুল করলাম?
সুমন ইদানিং আমার ফোনও এভয়েড করছে। কয়েক দিন আগে ওর সাথে দেখা হয়েছিল। ও খুব ঠাণ্ডা মাথায় বলেছে, ঠিক আছে, বাচ্চা অ্যাবোর্ট করতে না পারো, জন্ম দাও, এরপর মেরে ফেলো। লাগলে বইলো, আমি কোথাও ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো….
সুমনের কথা শুনতে ঘৃণায় গা রি-রি করছে। অপমানে চোখ জ্বলছে। তবুও কাঁদতে কাঁদতে মানানোর অনেক চেষ্টা করলাম।
আমার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলতেই ওর সমস্ত ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো।
একই কথা নিয়ে বারবার প্যানপ্যান করবা না। আমার ডিসিশন জানায় দিছি, এখন আমার পক্ষে বিয়ে করা পসিবল না। ইফ ইউ ওয়ান্ট উই ক্যান বি লাইক বিফোর: বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড। দ্যাটস ইট!
কতো সহজেই এসব কথা বলে দিতে পারে একটা ছেলে! অথচ একটা মেয়ে-- কতো বড়ো দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যায় সেটা কি কল্পনাও করতে পারে? আমি বুঝে ফেলেছি, এই পরীক্ষা আমার একার। সেদিন রাতটা মনে হচ্ছিলো দুঃস্বপ্নের মতো দীর্ঘ। কাঁদতে কাঁদতে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছি, শরীর-মন একদম অবসন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু এখন নিজের জন্য হলেও বাচ্চাকে জন্ম দিতে হবে। এরপর বাকি চিন্তা। মিতুর সহযোগিতায় বনানির একটা ফ্ল্যাটে সাবলেটে ভাড়া নিলাম। ওর পরিচিত কয়েকজন সিনিয়র আপু আর জুনিয়র ছাত্রী একসাথে থাকে। বাবা-মা’কে বানিয়ে বললাম, ছাত্রী হোস্টেলে থাকতে হবে পরীক্ষার জন্য, অনেক পড়াশোনা - বাসায় বসে একা একা ম্যানেজ করতে পারছি না।
এর পরের কয়েকটা মাস গেলো বিভীষিকার মতো। জামাকাপড় ঢোলা করে বানিয়ে নিলাম, যেন পেট বোঝা না যায়। ছয় মাসের পর থেকে পেটটা আস্তে আস্তে বড়ো হচ্ছিল। আমি নিদেনপক্ষে বাইরে বেরোতাম না, পরিচিত কারো নজরে পড়তে চাই না। একান্তই বের হওয়া লাগলে গায়ের ওপর শীতে পড়ার একটা বড়ো খদ্দরের চাদর জড়িয়ে নিই। বাসার আপুদেরকে মিতু আগে থেকেই সব বলে রেখেছিল। মৌমিতা আপু, রোকসানা আপা আর রাহেলা। ওরা সবাই অনেক কেয়ারিং, অনেক ফ্রেন্ডলি! আমার পাশে ওরা যেভাবে ছিল, কোনোদিনও সেই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না!
এদের মধ্যে মৌমিতা আপু আর রাহেলাই বেশি করেছে, বিশেষ করে রাহেলা। এই মেয়েটা এতো লক্ষ্মী আর হৃদয়বান! রোকসানা আপুও যখন যা পারতো করতো। কিন্তু চাকরি নিয়ে ব্যস্ততার কারণে বেশি সময় দিতে পারতো না। রাহেলা মেয়েটা বাসার বাকিদের চেয়ে আলাদা, বয়সেও আমাদের মধ্যে সবচেয়ে জুনিয়র। প্রচণ্ড গরমেও দেখি কালো একটা বোরকা, নিকাব, হাতমোজা, পা মোজা ছাড়া বাইরে বেরোয় না। কে বলবে বাসার মধ্যে এই মেয়েটাই সবচেয়ে উচ্ছল! ওকে না চিনলে এরকম একটা বোরকাওয়ালি মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করার কথা কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবতাম না! এতো তফাত আমাদের মধ্যে!
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার গরম লাগে না?
- খুব লাগে!
তাহলে এতোকিছু পরে জোকার সাজো কেন?
রাহেলা হাসতে হাসতে জবাব দিলো, আল্লাহকে ভালোবাসি আপা, তাই আল্লাহর জন্য কষ্ট করতেও ভালো লাগে।
ওর উত্তরটা শুনে একটু থতমত খেয়ে গেলাম। হায় ভালোবাসা! এই ভালোবাসার জন্য আমিও কতো কী করেছি! কিন্তু রাহেলার কথায় যুক্তি আছে, ভালোবাসলে সবই করা সম্ভব। মানুষ শরীর-মন সব বিকিয়ে দেয়, আর একটা কাপড় পরা আর এমন কী। আসলেই আগে ব্যাপারটা এভাবে ভেবে দেখি নি..
প্রায় রাতেই মাঝরাত পর্যন্ত আড্ডা বসতো, সেদিনও আড্ডা বসেছে। রোকসানা আপু বললেন, আমি বাবা-মায়ের কথা ছাড়া এক পাও এদিক-সেদিক করবো না। পড়াশোনা কম্প্লিট, চাকরি পেয়েছি ব্যাস। আমার ইচ্ছা সমাপ্ত। এখন আব্বা-আম্মা যেই পাত্রের সন্ধান আনবেন, সেখানেই কবুল।
মৌমিতা আপা সবচেয়ে মডার্ন। বলে উঠলেন, সুপাত্রই যে আনবেন তার নিশ্চয়তা কী? তুমি বড্ড বেশি আইডিয়াল চাইল্ড রোকসু… আমি তো হাসানকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ের কথা ভাবতেই পারি না! আর যাকে ভালোবাসি না, তার সাথে সংসার! ইম্পসিবল! হাসান হচ্ছেন মৌমিতা আপার ফার্স্ট লাভ - পাঁচ বছরের প্রেম, এখন পর্যন্ত ভালোয় ভালোয় চলছে সবকিছু। কিন্তু আমার এখন আর এইসব ফার্স্ট লাভ, দীর্ঘদিনের প্রেম-ভালোবাসায় বিশ্বাস নেই। সুমনও আমার ফার্স্ট লাভ ছিল, আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যাও ছিল না। তবুও …
চিন্তার সুতো কেটে দিয়ে রাহেলা বলে উঠলো, আপুরা আমার চিন্তাভাবনার সাথে তোমার মিল হবে না জানি। কিন্তু আমি বিয়ের পরের ভালোবাসাতেই বিশ্বাসী। যে ছেলেটা বিয়ের আগেই একটা মেয়ের সুন্দর চেহারা আর শরীর দেখে ফেলেছে, সে আসলে ঠিক কোন কারণে মেয়েটাকে ভালোবাসলো কোনো চিন্তা করতে পারো, সৌন্দর্য্য নাকি মেয়েটার মানসিকতা? তাছাড়া আমার সাথে প্রেম করার অর্থ অন্য কোনো মেয়ের সাথেও সে রিলেশন করতে পারতো, আমি বিয়ের পর তাকে কীভাবে বিশ্বাস করবো?
তাহলে তুমি বিয়েটা করবা কীভাবে? এটা তো রোকসানার মতোই হলো, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। বাপ-মা ধরে বেঁধে একটা গাধা এনে দিলেও মালা পরিয়ে দিবে??
মৌমিতা আপুর খোঁচাটা গায়েই মাখলো না রেহালা। উল্টো প্রশ্ন করলো, যে ছেলেটা প্রেমিক হিসেবে অসাধারণ, সে যে স্বামী হিসেবেও দায়িত্ববান হবে - এটা কীভাবে বোঝা যায় আপু? দুনিয়ার প্রত্যেকটা ছেলের সাথে এক এক করে প্রেম করে দেখা তো সম্ভব না যে কে বেশি ভালো, কাকে হাজবেন্ড হিসেবে চুজ করা উচিত। পাত্রের ব্যাপারে আল্লাহর গাইডলাইনস ফলো করবো, আমার বাবা-মা অনেক ভালো হলেও উনারা আমার মতো করে সবকিছু দেখেন না, আমি বড়োলোক কোনো ছেলেকে বিয়ে করলেই সবাই খুশি। কিন্তু আমি চাই পরহেজগার কাউকে বিয়ে করতে। তাই এখন থেকেই মসজিদের ইমাম, পরিচিত বড়ো ভাই আর বোনদেরকে বলে রেখেছি যেন এমন কোনো পাত্রের খোঁজ পেলে আমাকে জানায়। আপু, ইসলামে ডেটিং বলে কিছু নেই, কিন্তু বিয়ের আগে জানাশোনার কথা বলা আছে। ডেটিং-এ তো আদর-আহ্লাদ ছাড়া কোনো কাজের কথা হয় না। বিয়ের জন্য যেসব প্রশ্ন জানা জরুরি, সেগুলো জানতে দুজন মিলে একাকী বদ্ধ-কেবিনে হাত ধরাধরি না করলেও হয়। আমি আমার বাবার সামনে বসেও সেই প্রশ্নগুলো জেনে নিতে পারি, যেগুলোর উত্তর শুনে আমি আমার ফিউচার হাজবেন্ড বাছাই করবো।
রাহেলার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম আমি। প্রতিটা কথাই সঠিক। প্রতিটা কথাই যুক্তিসঙ্গত। অন্তরের গহীনে এসে কোথায় যেন কড়া নাড়ে।
[৫]
রাহেলা আমার ওপর বেশ প্রভাব ফেলছিল। একদিন বাইরে যাওয়ার সময় ওর থেকে চেয়ে একটা বোরকা নিলাম। মিতু, আমার বান্ধবী, মাঝে একদিন এসেছিল। আমার বোরকা ধরার কাহিনি শুনে চোখ কপালে তুলে বললো, কীরে হুজুর হয়ে গেলি নাকি? আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে লজ্জা পেয়ে বললাম, না, না, পেটটা বড়ো হয়ে যাচ্ছিলো। আসলে পেট বড়ো হয়ে যাওয়াটাই একমাত্র কারণ ছিল না, কিন্তু কেন যে মুখ ফসকে মিথ্যে কথাটা বের হয়ে আসলো! বাসার বাকি সদস্যরা ধরেই নিলো পেট ঢাকার জন্যই বোরকা পরে বেরোচ্ছি। অবশ্য ওদের এই ভুল দ্রুতই ভাঙতে যাচ্ছিল…
দেখতে দেখতে ডেলিভারির দিন ঘনিয়ে আসলো। আমার মাথার মধ্যে দুঃস্বপ্নও চেপে বসতে লাগলো। কী করবো এই বাচ্চাকে নিয়ে? কোথাও ফেলে দিবো? নাকি মেরে ফেলবো? ভালোবাসার এই চিহ্ন এখন আমার জন্য অভিশাপের চিহ্নে পরিণত হয়েছে। একে কোথাও পুঁতে ফেলতে পারলে আমার শান্তি লাগতো। কিন্তু মাঝেই মাঝেই বেয়াড়া মা-বোধটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রাহেলার দেখাদেখি আমিও নামাজ ধরেছি। ফজর বাদে বাকি চার ওয়াক্ত-ই নিয়ম মতো পড়ছি। ফজরে রাহেলা ঠেলেঠুলে উঠিয়ে দেয়, ও না ডাকলে উঠতে পারিনা। গত আড়াই মাস বাসায় যাই নি, এই দুর্দিনে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে। যদিও আমি মায়ের সাথে তেমন ক্লোজ না, তবু তো মা! আজকাল মায়ের জন্য মনটা খুব আনচান করে।
এমন বিপদের মধ্যে হঠাৎ একদিন সুমনের ফোন এলো। বেশ সাধারণ ভাবে কথা বলছিল ও। আমিও এতোদিনে নিজেকে সামলে নিয়েছি। আগের মতো কান্নাকাটি আর করলাম না, নিজেকে আর কতোই বা নিচু করবো। শীতল স্বরে শুধু বললাম, বলো কী বলবে। আমার গলার আওয়াজেই বোধ হয়, ও বেশি কিছু বলার সাহস করতে পারলো না। শুধু বললো, যদি কোনো দরকার হয় ডেকো। আমার পরিচিত এতিমখানার লোক আছে, সে ব্যবস্থা করতে পারবে। যদিও আমাদের জন্য এই বাচ্চার কোনো সাইন না রাখাটাই বেস্ট।
আমার মাথায় ধাই করে রক্ত চড়ে গেলো। কতো বড়ো দুঃসাহস যে আমাদের কথা বলতে এসেছে। দায়িত্ব নেবে না, আবার দেখাতে এসেছে সে আমাদের ব্যাপারে কতোই না চিন্তিত! কী পেয়েছে এই পশুটা? আমার বাচ্চার কোনো দায়িত্ব তো নেয়ই নি, এখন এসেছে আমার বাচ্চাকে খুন করতে! তোমার থেকে আমি কোনো অ্যাডভাইস চাই নি, বলে মুখের ওপর ফোনটা খট করে কেটে দিলাম।
এতোদিন মনের মধ্যে যা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল এখন সেটাও দূর হয়ে গেলো। এই বাচ্চা আমার বাচ্চা। ওকে আমি মেরে ফেলতে পারি না, না-না-না। আমার মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। এই শিশুকে মেরে ফেলা হবে ঘোরতর পাপ। এক গুনাহর ভার এখনও বইছি, সন্তান-হত্যা করে আরেকটা জঘন্যতম অপরাধের ভাগীদার আমি হতে চাই না।
কিন্তু কোথায় যাবো এই শিশু নিয়ে, কী করবো? বাবা-মায়ের সামনে কী জবাব দেবো? মিতু, রাহেলা, রোকসানা আপু, কেউই সন্তোষজনক কোনো সমাধান দিতে পারলো না। জীবনের এক একটা পর্যায় এতো জটিল, যার সমাধান কোনো মানুষের কাছেই থাকে না। রাহেলা শুধু বললো, আপা, দুয়া করেন। আপনি আল্লাহর দিকে পা বাড়াইসেন, আল্লাহ আপনাকে কখনও ফেলে দিবে না।
আমি শুধু দুয়াই করলাম। ফজরের নামাজ এখন নিয়মিত পড়ি। রাতের বেলা ঘুমও আসতে চায় না এখন আর, তীব্র ব্যাকপেইন আর মাথাব্যথা নিয়ে জেগেই থাকা হয়। ভোর রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে, আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি আর আল্লাহর দরবারে দুয়া চাই। বাচ্চাটাকে মারতে চাই না ইয়া আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য উত্তম ব্যবস্থা করে দাও। ঘুরেফিরে এই একই দুয়া পাগলের মতো চাইতে থাকি…
[৬]
আমার পরিবর্তন দেখে ধীরে ধীরে সবাই বুঝে যাচ্ছিলো যে আমি সাময়িক বোরকা ধরি নি, আসলেই বদলে গেছি। আরও পরিষ্কার হলো যখন দেখলো আমি কিছুতেই পুরুষ ডাক্তারের কাছে অপারেশন করাতে রাজি নই! মিতু তার চিরাচরিত স্বভাবমত একটা লম্বা ঝাড়ি দিয়ে বললো, মরতে চাস নাকি? বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটাতে খারাপ লাগলো না, ডাক্তারের কাছে অপারেশন করাতে যতো লজ্জা।
মিতুটার মুখে কিছুই বাধে না। আমি দাঁতমুখ চেপে বললাম, দ্যাখ, সবকিছু মিলাস না। আগে এতো মেনে চলতাম না। পুরুষ ডাক্তারের কাছেও অপারেশন করবো যদি আর কোনো অপশন না থাকে। কিন্তু মহিলা ডাক্তারের খোঁজ করতে তো আর সমস্যা নেই। তুই পারলে আমাকে হেল্প কর--এতো ক্যানক্যান করিস না।
মিতু ঠোঁটকাটা হলেও অবিবেচক না। আমাকে আর বেশি ঘাটালো না।
বললো, চল ঘুরতে যাই। উদ্দেশ্য শপিং! বাচ্চা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে এখন মনটা বেশ ভারমুক্ত লাগে। শখও হয় অনেক রকমের। কিন্তু ভারি শরীর নিয়ে বেরোনো হয় না। মিতুই আমাকে টেনে বের করলো ঘর থেকে। ছোট্ট সোনার জন্য ফিডার, জামা, জুতো, একটা ছোট্ট বালিশ, কয়েক প্যাকেট ডাইপার, আর রেডিমেড কাঁথা কিনে আনলাম। সেই দিনটা কী যে ভালো লাগছিলো! মা হওয়ার ব্যাপারটা যে এতো আনন্দদায়ক এতোদিন উপভোগই করতে পারি নি। শুধু দুশ্চিন্তা আর দুর্ভাবনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। কিন্তু এখন চিন্তা হলেই মনে মনে বলি, “হাসবি আল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল” আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, এরচেয়ে মন ভালো করা কথা আর আছে কোথাও?
ডিউ ডেইটের প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই আমার ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। অস্বাভাবিক ব্যথা! আমাকে দৌড়ে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে গেলো রাহেলা আর রোকসানা আপু। মিতুও এলো কিছুক্ষণের মধ্যে। মাঝের পুরো তিন ঘণ্টা আমার কোনো হুঁশ ছিল না।
হুঁশ ফিরে শুনলাম, আমার ডেলিভারি হয়ে গেছে। জ্ঞান ছিল না, তাই সিজার করে বাচ্চা বের করা লেগেছে। আর সবচেয়ে আকস্মিক, সবচেয়ে ভয়ংকর, সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক খবরটা আমাকে ঠিক তখনই দেওয়া হলো। আমার বাচ্চাটা মারা গেছে। ব্রেইন হ্যামারেজের কারণে ডেলিভারির সময়ই ও মারা যায়।
আমি জমে গেলাম। অপ্রত্যাশিত হলেও বাচ্চাটাকে নিয়ে শেষপর্যন্ত অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম। সব প্রতিকূলতার মধ্যে ওকে জন্ম দিয়েছি, পুরো পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে হলেও ওকে ভালোমত বড়ো করতে চেয়েছি। আমার মনের কুঠিরে জায়গা করে নিয়েছিল পাখিটা। চলে গেলো এভাবে? আমাকে একা ফেলে রেখে? খুব কষ্ট হলো, এই কষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। তীক্ষ্ণ একটা বেদনা আমাকে চিরে ফেললো।
অথচ অদ্ভুত পৃথিবী, এই ভয়ঙ্কর দুঃসময়ে কয়েকটা অবিবাহিত মেয়ে ছাড়া আমার পাশে আর কেউই নেই। এরা কী বুঝবে আমার কষ্ট! ছাদের দিকে চোখ চলে গেলো। আল্লাহকে ডেকে বললাম, হে আল্লাহ তুমিই সবচেয়ে উত্তম অভিভাবক। আমার বাচ্চাটাকে তুমি দেখে রেখো।
[৭]
রাস্তার ধারের কোনো ডাস্টবিনে না, নর্দমার বর্জ্যতে না, টয়লেটে ফ্লাশ করেও না--আমার সন্তানকে আমি সবচেয়ে সুন্দরভাবে বিদায় জানালাম। হুজুর ডেকে ওর দাফন সম্পন্ন হলো, আমি বাদে বাকিরা সবাই নামাজ পড়লো। যে শিশুর মৃত্যু লেখা আছে, সে মারা যাবেই। বাবা-মা হয়ে নিজের হাতে সন্তানকে খুন করা তো জানোয়ারও পারে না। আর মানুষ শরীরের ক্ষুধা, প্রেমের তৃষ্ণা মেটাতে গিয়ে শেষমেশ সেটাই করে…
এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর আমি বাসায় ফিরে গেলাম। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে রিকাভার করতে অনেক সময় লাগছিল। বাসা থেকে মিতু বুদ্ধি করে আগেই বাচ্চার জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলেছে। যেন আমার চোখে পড়লে আমি দুঃখ না পাই, অবশ্য এতোকিছুর দরকার ছিল না। আমি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি আর আল্লাহকে মেনে চলি। এখন আমার সাথে যেটাই হোক, আমি আর ভয় পাই না। ভেঙেও পড়ি না। রোকসানা আপু বদলি হয়ে গেছেন শুনলাম, আমারও এই বাসা থেকে বেরোনোর সময় হয়ে গেছে। নিজের বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে হবে এবার…
মনে হলো যেন একটা যুদ্ধ শেষ হলো। কিন্তু ফিরতে হলো খালি হাতে। আসলে খালি হাতে না, হাতে ইসলামের আলো নিয়ে ফিরছি - এটাই তো সবচেয়ে বড়ো পাওয়া!
বাসায় বাবা-মা আমাকে প্রায় তিন মাস পর দেখছেন। আমার পরিবর্তনে খুব হতবাক সবাই। যেন আমাকে চিনতে পারছে না কেউ।
এর প্রায় দুই মাস পরে হঠাৎ একদিন সুমন ফোন দিয়েছিল। গলা শুনে মনে হলো যেন খুব কান্নাকাটি করেছে। ভেক ভেক করে হেঁচকি তুলে আমাকে বললো, সে ‘মেইক আপ’ করতে চায়! যতো সব ভণ্ডামি। পুরো প্রেগন্যান্সির সময় আমাকে মাঝ সমুদ্রে ফেলে দিয়ে এখন এসেছে আবার আমার শরীর এনজয় করতে! মানুষই পারে এতোটা নির্লজ্জ হতে।
আজ ভাবছিলাম, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। পৃথিবীর প্রতিটা ঘটনার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে। এক একটা পরিস্থিতি তৈরি করে তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর কাছে আসার সুযোগ করে দেন। কেউ সেই সুযোগটা কাজে লাগায়, আর কেউ ছুঁড়ে ফেলে। প্রথমে বাচ্চা রাখার কোনো ইচ্ছাই ছিল না, অথচ বাচ্চা জন্ম দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না। এরপর আল্লাহর ভয়ে বাচ্চাটা রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। তখন আল্লাহ অন্য ইচ্ছা করলেন। আর একদিক থেকে ভাবলে এভাবেই আল্লাহ আমাকে বেইজ্জত হওয়া থেকে রক্ষা করলেন। মাঝখান দিয়ে সুমন আর সুমনের মতো সব ছেলের চেহারা স্পষ্ট করে দিলেন। বিয়ের আগে প্রেমগুলো কতো সস্তা, কতো ঠুনকো, কতো মেকি! অথচ ছেলেমেয়েরা অন্ধের মতো এর পিছেই ছুটতে থাকে…
মিতু এখনও আগের মতোই আছে। কিছু মানুষ কখনোই শিক্ষা নেয় না। আমার এতো বড়ো ঘটনার পরেও ও ঠিক আগের মতো রয়ে গেলো। ছেলে ঘুরিয়ে মজা নিচ্ছে। খোলামেলা ঘুরে বেড়াচ্ছে। যখন যার সাথে ইচ্ছা শুয়ে পড়ছে। ওর সাথে আগের মতো আর মিশতে পারিনা, বন্ধুত্ব আছে কিন্তু অশ্লীল রসিকতা নেই। ছেলেদের সাথে বসে আড্ডা দেই না দেখে দেখাসাক্ষাতও কম হয়। রোকসানা আপুর খবর অনেকদিন জানিনা। তবে মৌমিতা আপুর কথা মিতুর মুখেই শুনেছি, পাঁচ বছরের সেই ফার্স্ট লাভকে ছেড়ে তিনি কানাডার আরও উচ্চশিক্ষিত এক পাত্রকে বিয়ে করে এখন কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হায়রে ফার্স্ট লাভ! হায়রে মরার প্রেম!
রাহেলার সাথে বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে। যদিও ও আমার ছোটবোনের মতো। সামনের মাসে ওর বিয়ে। ছেলে ছাত্র, একই সাথে ব্যবসাও করছে। কম বয়সেই বিয়ে করতে চায়, রাহেলার দ্বীনদারিতা দেখে ওকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। রাহেলা বলে, একবার বিয়েটা করি, এরপর বরের সাথে মিলে তোর ঘটকালি করবো… হি হি।
আমি অনেক বদলে গেছি। অ-নে-ক। এখন রাহেলার মতোই হাত মোজা-পা মোজা পরি। দূর থেকে দেখে একদিন মিতু বলেছিল, তোকে দেখে ভেবেছি রাহেলা কী করে এইখানে! সো কনফিউজিং!
আমি মনে মনে হাসি। আল্লাহ আমাকে অনেক দিলেন। এক জীবনে আল্লাহকে খুঁজে পেলে আর কী চাওয়ার থাকতে পারে…
Thursday, May 19, 2016
গনতন্ত্র সেক্যুলারিজমের জারজ প্রোডাক্ট ||গনতন্ত্র কুফফারদের খেজুরের তৈরি মুর্তি!!
গনতন্ত্র সেক্যুলারিজমের জারজ প্রোডাক্ট ||গনতন্ত্র কুফফারদের খেজুরের তৈরি মুর্তি!!
গনতন্ত্র সেক্যুলারিজমের জারজ প্রোডাক্ট ||গনতন্ত্র কুফফারদের খেজুরের তৈরি মুর্তি!!
Statement1 : আধুনিক পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র হচ্ছে সেক্যুলারিজমের জারজ প্রোডাক্ট।
Statement 2 : গণতন্ত্র হচ্ছে কুফফারদের ‘খেজুরের তৈরি মূর্তি’।
গণতন্ত্র সম্পর্কে উপরের দুটি Statement এর ১মটি Theoretical এবং ২য়টি Practical..
Justification: ১ নং Statement নিয়ে আগে বলি। Secularism শব্দের
বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা‘ যেটা একটা ডাহা মিথ্যা এবং সূক্ষ্ম
প্রতারণা। প্রকৃতপক্ষে Secularism এর অর্থ হওয়া উচিত ‘ধর্মহীনতা’।
মূলত Secularism বলতে ২টি Concept কে বুঝায়- 1. Naturalism 2. Rationalism
অর্থাৎ Secularism = Naturalism + Rationalism
নাস্তিক্যবাদী চিন্তাধারার প্রসারের সাথে সাথে দুটো প্রশ্ন গাঢ় হতে লাগলো।
প্রথমত, বিশ্বজগত কিভাবে সৃষ্টি হল?? ধর্মতাত্ত্বিকরা ধর্মগ্রন্থের আলোকে
ব্যাখ্যা দিলো। কিন্তু নাস্তিক সেক্যুলাররা তো আর তা মেনে নিতে পারে না।
তাই তারা প্রস্তাব করলো Naturalism মতবাদের। এই মতবাদের সারকথা হল স্রষ্টা
বলে কিছু নেই, Nature নিজে নিজেই পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ।
২য় যে প্রশ্নটি আসলো তা হল সমাজ রাষ্ট্রের আইন কিভাবে তৈরি হবে??
ধার্মিকরা না হয় ধর্মগ্রন্থ ফলো করে। নাস্তিকরা কি করবে?? নাস্তিকরা
মীমাংসা দিল যে তারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তি ও যুক্তি কাজে লাগিয়ে আইন তৈরি
করবে, কোন Holy Scripture এর ধার ধরবে না। এটাকে বলা হয় Rationalism. এই
Rationalism প্রয়োগ করে সমাজের আইন তৈরির কারখানাই হল আধুনিক পার্লামেন্ট,
যেখানে MP দের হ্যাঁ-না-সংখ্যাধিক্যই হল আইন তৈরির প্রক্রিয়া। কাজেই বুঝা
গেল Secularism হল নাস্তিকতাবাদের জারজ প্রোডাক্ট, আর আধুনিক
পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র হল Secularism এর জারজ প্রোডাক্ট।
২নং Statement টি বেশ কৌতূহলীদ্দীপক।
জাহেলী যুগে উমার (রাঃ) একদিন কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর পূজা অর্চনা
করার ইচ্ছে হল। কিন্তু আশেপাশে কোন মূর্তি পেলেন না। অগত্যা খেজুর দিয়ে
মূর্তি তৈরি করলেন। তারপর অঢেল ভক্তি শ্রদ্ধা নিয়ে পূজা-অর্চনা করলেন।
কিছুক্ষণ পর ক্ষুধা লাগলো। তখন তিনি সেই মূর্তিটিই (??) ভেঙে খেয়ে
ফেললেন!! এটাই হচ্ছে কুফফারদের খেজুরের তৈরি মূর্তি, যখন ইচ্ছা তারা এটাকে
ভক্তি করে, পূজা করে, নিজেকে নিবেদন করে আবার যখন ইচ্ছে হয়, যখন প্রবৃত্তি
তাড়না দেয়, তখন এটাকে খেয়ে ফেলে!! এবার আসা যাক গণতন্ত্রের ব্যাপারে। এ
যমানার কুফফাররা ও তাদের প্রভু আমেরিকা দেশে দেশে গণতন্ত্রের ফেরি করে
বেড়ায়। এই গণতন্ত্রকে তারা পূজা করে, অর্চনা করে। এমনকি এই গণতন্ত্রের
জন্য তারা যুদ্ধও করে।
আমরা যখন বলি ‘আল্লাহ যেটা দিয়েছেন, সেটাই আইন’, তখন ওরা বলে “না, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা যা দিয়েছে তাই আইন।”
[{ আল্লাহ বলেন, “আম লাহুম শুরাকায়ু শারায়ু লাহুম মিনাদ দ্বীন মা লাম
ইয়াহযান বিহিল্লাহ” অর্থাৎ “তাদের কি এমন কতগুলো শরীক (উপাস্য/বিধানদাতা)
আছে যারা তাদেরকে এমন কতগুলো বিধান দিয়েছে যার নির্দেশ আল্লাহ দেন নি???”
(সূরা আশ শূরা : ২১) }]
*** আমাদের বিধানদাতা আল্লাহ আর ওদের বিধানদাতা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা!!
কিন্তু যখন দেখা যায় ওদের ফর্মুলা মেনেই ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় আসে, যখন
ওদের পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও ইসলামী শরীআকে সাপোর্ট করে, তখন ওরা
তাদের পূজিত গণতন্ত্রকে খেজুরের মূর্তির মতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলে!! তখন ওরা
ওদের ব্যালটের উপাস্যকে মনে রাখে না, মনে রাখে না ওদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার
উপাস্যকে!! ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে আলজেরিয়া ও মিশরে। এ কারনেই শাইখ আইমান আল
জাওয়াহিরি হাফিঃ বলেছেন- “গণতন্ত্র হল কুফফারদের খেজুরের তৈরি মূর্তি, যখন
খুশি তারা এটাকে পূজা করে আবার যখন খুশি তারা এটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে!!
শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরি হাফিঃ এর লেখা ‘শুকনো খেজুর দিয়ে তৈরী গণতন্ত্রের মূর্তি’ বইটি ডাউনলোড করুন-
গনতন্ত্রের বিচার মানেই ধোকা!!
-আব্রাহমতন্ত্র যদিও জনগনের জন্য বলে থাকে কিন্তু সব কিছু প্রয়োগ করে কিছু মাথামোটা গোষ্ঠী! জনগনের মতামতের কোন মূল্য থাকেনা। এই তন্ত্রে বিচার ব্যবস্থা কখনো ন্যায় ভাবে সম্পন্ন হয়না! বিচার বিভাগে সবসময় থাকে দলীয়প্রীতি, হিংসা,ক্ষমতায় ঠিকে থাকার প্রয়াস ও একপাক্ষীক!অনেক নির্দোশ ব্যক্তি এখানে দোষী সাব্যস্ত হয় আর দোষী ব্যক্তি নির্দোশ সাব্যস্ত হয়। এই তন্ত্রে গরীবেরা সুস্থ বিচার পায়না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের অর্থসম্পদ আছে, বিত্তশালী, হাই লেভেলে কিছু ব্যক্তি আছে তাহলে তার হাজার অপরাধ থাকলেও সে পার পেয়ে যায়! এখানে যদিও আদালত নামে একটা আনুষ্ঠানিকতা আছে কিন্তু সেটা সবসময় একটা সামান্য সংখ্যক মানুষের কথামত রায় ছাড়া স্বাধীন বিচার করতে পারেনা।
.
-এভাবে হাজারো যুক্তি আছে যে,আমাদের কে আব্রাহম তন্ত্র যুগ যুগ ধরে শোষন করে আসছে সম্পুর্ন অন্যায় ভাবে।
-কিন্তু শরীয়াহ সম্পুর্ন এই তন্ত্রের ভিন্ন। এখানে গরীব হোক, আমির হোক, মুসলিম হোক আর অমুসলিম
হোক সবাই হক্ব বিচার পাবে!এক পাক্ষীক বা স্বজন প্রীতি থাকবেনা। যে-ই অন্যায় করবে সে শাস্তি পাবে।
.
.
#ধোকাতন্ত্রvsশরীয়াহ।।
.
-এভাবে হাজারো যুক্তি আছে যে,আমাদের কে আব্রাহম তন্ত্র যুগ যুগ ধরে শোষন করে আসছে সম্পুর্ন অন্যায় ভাবে।
-কিন্তু শরীয়াহ সম্পুর্ন এই তন্ত্রের ভিন্ন। এখানে গরীব হোক, আমির হোক, মুসলিম হোক আর অমুসলিম
হোক সবাই হক্ব বিচার পাবে!এক পাক্ষীক বা স্বজন প্রীতি থাকবেনা। যে-ই অন্যায় করবে সে শাস্তি পাবে।
.
.
#ধোকাতন্ত্রvsশরীয়াহ।।
Tuesday, May 17, 2016
আমাদের অন্ধত্ব ও সত্যের ব্যাপারে সত্য(২)
আমাদের অন্ধত্ব ও সত্যের ব্যাপারে সত্য (২)
আমাদের_অন্ধত্ব
Truth_PartTwo
সত্যের_ব্যাপারে_সত্য
.
সত্য কী?
“যেটা যেরকম, সেটাকে ঠিক সেভাবেই বলা” অথবা “যা কোনকিছুর প্রকৃত অবস্থাকে বর্ণণা করে” সেটাই সত্য।
.
আমাদের সমাজে ইদানীং সত্যকে আপেক্ষিক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়, অথচ যা সত্য, তা সবসময়েই সত্য। সত্য কারো মতামতের উপরে নির্ভরশীল নয়। কোন বিষয়ে একজন জ্ঞানী মানুষের মতামত মিথ্যে হতে পারে, আবার একজন অজ্ঞের মতামতও সত্য হয়ে যেতে পারে। মতামত আর চলতি বিশ্বাস যাই হোক না কেনো, সত্য সত্যই থাকে। বিশ্বাস পরিবর্তনশীল হতে পারে, মতামত আর দৃষ্টিভঙ্গী বদলে যেতে পারে, কিন্তু সত্য অপরিবর্তনশীল।
.
মানুষ একসময় বিশ্বাস করতো পৃথিবী একটা বিছানো সমতল ভূমি। সত্যটা প্রকাশ পাওয়ার পর দেখা গেলো মানুষের বিশ্বাসে ভুল ছিলো। ঐ সময়ের মানুষের বিশ্বাস, মতামত আর বিশ্লেষণের ক্যানভাসে পৃথিবীর ছবি চারকোণা সমতল হলেও, আসলেই কি পৃথিবী চারকোণা সমতল ছিলো? মোটেও না। পৃথিবী গোলাকারই ছিলো সবসময়। দৃঢ়বিশ্বাস আর ব্যক্তিগত মতামত সত্যের উপরে কোন প্রভাবই ফেলে না, তা যতো লক্ষ বছরের বিশ্বাস আর প্রতিষ্ঠিত মতামতই হোক না কেনো।
.
সত্যের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা সবসময়ের জন্যেই সত্য। সত্য আপেক্ষিক না। সত্য সবসময়েই পরম (absolute)। আর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সত্যের উল্টোটা সবসময়েই মিথ্যা। ঠান্ডা মাথা নিয়ে একটু ভেবে দেখা যাক তাহলে। ধরা যাক, “সূর্য গোল” এই কথাটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এর উল্টো কথা হচ্ছে “সূর্য গোল না”। প্রথম কথাটা সত্যি হলে, সেটা সবসময়ের জন্যেই সত্যি, এবং সেইক্ষেত্রে দ্বিতীয় কথাটা সবসময়েই মিথ্যা। এটাই ফ্যাক্ট। সব সত্যের উল্টো কথাই মিথ্যা। এটা ধর্মীয় সত্যের ক্ষেত্রেও সত্যি। আশা করি বুঝা গেছে। তাও গোলমেলে মনে হচ্ছে? তাহলে পড়তে থাকুন। একটু পরে একদমই ফকফকা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
.
অনেকক্ষণতো ভারী ভারী কথা হলো। এখন একটা হালকা গল্প কল্পনা করি। আজাদ আর হামজা। দুই ত্যাঁদড় টাইপের বন্ধু গলার সবকটা রগ ফুলিয়ে তর্ক করছে। চায়ের কাপে সুনামি চলছে। আড্ডার অন্যান্য বন্ধুরা হা করে চুপচাপ এই দুই ট্যালেন্টের তর্ক শুনছে গালে হাত দিয়ে। কারো মুখে কোন কথা নেই। এক পর্যায়ে আজাদ দাঁড়িয়ে শ্রোতা বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলোঃ
.
“তোরা দ্যাখ, এই মুসলিমগুলা কত্তো সংকীর্ণমনা! আমি হামজার সব কথা শুনলাম। তোরা জানিস হামজা কী বিশ্বাস করে? ও বিশ্বাস করে যে ইসলামই সত্য আর যেটা ইসলামের উল্টা কিংবা সাংঘর্ষিক সেটা মিথ্যা। এই মুসলিমগুলা সব আসলেই সংকীর্ণমনা!”
.
হামজা মিটিমিটি হাসছিলো আজাদের কথা শুনে। আজাদের কথা শেষ হবার পর সে উঠে দাঁড়িয়ে সবার দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস একটা মুখ বানিয়ে বললোঃ
.
“তোরা দ্যাখ, এই এথিইস্টরা (atheists) কত্তো সংকীর্ণমনা! আমি আজাদের সব কথা শুনলাম। তোরা জানিস আজাদ কী বিশ্বাস করে? ও বিশ্বাস করে যে এথিইজমই (atheism) সত্য আর যেটা এথিইজমের উল্টা কিংবা সাংঘর্ষিক সেটা মিথ্যা। এই এথিইস্টগুলা সব আসলেই সংকীর্ণমনা!”
.
আড্ডার বন্ধুরা প্রথমে একটু চমকে উঠলো, তারপরেই বুঝতে পেরে ঠাঠা করে হাসতে শুরু করলো। আসলেইতো! এথিইস্টদের সত্যের দাবীটাওতো মুসলিমদের সত্যের দাবীর মতোই সংকীর্ণ! যদি মুসলিমদের কথা সত্য হয়, তাহলে উল্টো হবার কারণে এথিইস্টদের দাবী মিথ্যে। একইভাবে, এথিইস্টদের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে মুসলিমদের দাবীটা মিথ্যে হতে হবে। মজা না?
.
সত্যের ব্যাপারে আরো কিছু সত্য এখানে দেয়া হলোঃ
.
১. কেউ জানুক বা না জানুক সত্য সত্য হিসেবেই অস্তিত্বে থাকে। সত্যকে খুঁজে বের করতে হয়, সত্যকে তৈরী যায় না। যেমনঃ নিউটন সাহেবের আগেও গ্র্যাভিটি ছিলো।
.
২. সত্য টাইম-স্পেসের উপরে নির্ভর করে না। যা সত্য, তা সকল সময়ের সকল স্থানের জন্যেই সত্য। যেমনঃ ২ আর ৩ এ যোগ করলে ৫ হয়, এটা সকল সময়ের সব জায়গার সব মানুষের জন্যেই সত্য।
.
৩. সত্যের ব্যাপারে আমাদের “বিশ্বাস” বদলাতে পারে, “বিশ্বাসে” ভুল থাকতে পারে, কিন্তু সত্য সবসময়েই অপরিবর্তনশীল। সত্য বদলায় না। যেমনঃ মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবীকে কেন্দ্রে রেখে সূর্য ঘুরছে। এতে কিন্তু সত্যটা বদলে যায়নি, বরং সত্যটা বুঝতে পারার পর মানুষের বিশ্বাস বদলেছে।
.
৪. বিশ্বাস কখনো সত্যকে বদলে দিতে পারে না, সেটা যতোই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা হোক না কেনো! একজন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে পৃথিবীর চারপাশে সূর্য ঘুরছে। তার এই মনেপ্রাণে বিশ্বাসের কারণে সত্যটা বদলে যাবে না।
.
৫. কারো চরিত্র বা আচার-আচরণের কারণেও সত্য বদলে যায় না। আচার-আচরণে ভালো একজন মানুষ যেমন ভুল করতে পারেন, আবার একজন অহংকারী মানুষের কথাও সত্যি হতে পারে। সত্য কারো ব্যক্তিগত চরিত্রের উপরে নির্ভরশীল নয়।
.
৬. সকল সত্যই পরম সত্য। এমনকি যেগুলোকে আপেক্ষিক সত্য বলে ভ্রম হয়, সেগুলোও আসলে সত্য। উদাহরণস্বরুপ, “আমি, মোহাম্মদ তোয়াহা আকবর, আজ ১৩ই জানুয়ারী, ২০১৬ তে বড্ড মন খারাপ অনুভব করছি” কথাটাকে আপাতদৃষ্টিতে খুবই আপেক্ষিক অর্থাৎ শুধু আমার জন্যেই সত্য বলে মনে হলেও, এটা আসলে সব জায়গার সব সময়ের সব মানুষের জন্যেই পরম সত্য যে মোহাম্মদ তোয়াহা আকবরের ঐ নির্দিষ্ট দিনে আসলেই মন খারাপ ছিলো।
.
সারকথা হলো, ভুল বিশ্বাস থাকা সম্ভব, কিন্তু ভুল বা আপেক্ষিক সত্য থাকা সম্ভব না। আমরা বিশ্বাস করতেই পারি যে আমাদের চোখের আকৃতি কলার মতো, কিন্তু আমাদের সেই বিশ্বাস চোখের সত্যিকার আকৃতিকে কখনোই বদলে দেবে না। চোখের আকৃতির সত্যটা সত্যই থেকে যাবে।
.
এতোক্ষণে ফকফকা ক্লিয়ার হয়েছে, তাই না? কিন্তু আধুনিক সেক্যুলার, লিবারেলিস্ট, এগনস্টিক আর এথিইস্টরা “সত্য বলে কিছু নাই” বলে যখন দাবী করে তখন আমরা কী করবো?
.
এই ব্যাপারে পরবর্তী পর্বটা হেল্প করবে ইন শা আল্লাহ। [যদি কখনো লিখতে পারি আর কি!]
লিখেছেন :-mohammed touahaakbat
Sunday, May 15, 2016
আমাদের অন্ধত্ব ও সত্যের ব্যাপারে সত্য (১)
আমাদের অন্ধত্ব সত্যের ব্যাপারে সত্য (১)
#আমাদের_অন্ধত্ব
.
#Truth_PartOne
.
“সত্যি করে বলো, আজ তোমাকে বলতেই হবে, তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসো না?”
জীবনসাথীর কাছ থেকে আসা উত্তরটা যেনো অবশ্যই সত্য হয়- এই চাওয়ার পেছনের দাবীটা আর বুকের ধুকপুকানিটা একদমই নিখাঁদ।
.
সত্যকে জানতে চাওয়ার এই তীব্র আকুতিটা আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই একেবারে লতাপাতায় জড়ানো। ডাক্তার সাহেব সত্যি কথা বলবেন, চাকুরীর নিয়োগদাতা মিথ্যা বলবেন না, বই আর প্রবন্ধে সত্যি কথা লেখা থাকবে এই চাওয়াগুলো কার ভেতরে নেই? সংবাদ সংস্থা থেকে শুরু করে বিচারালয়, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, পরিবহন ব্যবস্থা, ওষুধের বোতল, বিজ্ঞাপনদাতা কিংবা খাবারের প্যাকেটের গায়ে উপাদানের পরিমাণেও যেনো সত্য কথা লেখা থাকে এটাই আমাদের চাওয়া। টাকা-পয়সার লেনদেন, সম্পর্ক, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষা প্রতিটা ক্ষেত্রেই আমাদের দাবী, আমাদের চাওয়া একটাই। সেটা হলো “সত্য”। এইসব ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার, আপোষ করার প্রশ্নই আসে না। কক্ষনো না।
.
সত্যের প্রতি আমাদের এই সুতীব্র দাবী আর সুন্দর ভালোবাসাটাই কেমন যেনো ম্যাটম্যাটে, নিরস, মেরুদন্ডহীন আর অসৎ হয়ে পড়ে, যখন নৈতিকতা আর ধর্মের সত্যের বিষয়টা সামনে এসে দাঁড়ায়। আমরা তখন আনমনা হয়ে মুখ উদাস করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কেটে পড়ার ধান্দা করি, কিংবা চুপ মেরে যাই। নিজের ভেতরটাকেও “চোওওপ” বলে একটা কড়া ধমক দিয়ে থামিয়ে দিতে চাই।
.
ধর্ম বা নৈতিকতার ব্যাপারে আমাদের ভেতরের এই নেতিবাচক মনোভাবটা খুব কম মানুষই স্বীকার করে। এই নেতিবাচক মনোভাবের ভিত্তিটা যে যৌক্তিক আর বুদ্ধিবৃত্তিক নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবেই এড়িয়ে যাওয়া- এটা বলার মতো সাহসী আর সৎ মানুষ খুব কমই দেখা যায়। এইসব ক্ষেত্রে আমরা কিছু না বুঝেই ঝটাপট রেডিমেইড উত্তর ঝেড়ে দিই। “সামাজিক জীব” হিসেবে আমরা প্রায় সবসময়ই কিছু স্ববিরোধী তথা আত্মঘাতী বক্তব্যকে অন্ধভাবে অনুসরণ করি, যেমনঃ
.
“আরে ধম্মো-টম্মো এইসব মানুষের বানানো ব্যাপার, এর মাঝে সত্যের কিছু নেই।”
“এটা তোমার জন্যে সত্যি, আমার জন্যে নারে ভাই।”
“সত্য বলে কিছু নাই।”
“আরে, সবকিছুই আপেক্ষিক।”
“বুঝলা মিয়া, পরম সত্য বলে কিছু নাই।”
“হুম, এইসব আসলে দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপার।”
“এইটা তুমি জাজ করার কে?”
“ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যাপার। এখানে কোন ফ্যাক্টের ব্যাপার নাই।”
দিনশেষে আমরা আসলে ঐ সত্যটাকেই পছন্দ করি, যেটা আমাদেরকে আলোকিত করে, স্বস্তি দেয়। কোন সত্য যখনই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে আমরা দোষী, তখন আমরা সেই সত্যকে আর পছন্দ করি না। দূরে দূরে থাকতে চাই। যেনো দূরে থাকলেই সত্যটা পাল্টে যাবে। মিথ্যে হয়ে যাবে। সম্ভবত এটাই সত্য যে, সত্যকে হজম করবার মতো শক্তি আমাদের নেই।
.
আমাদের হৃদয় আর মননে গেঁথে যাওয়া এই অশুভ সাংস্কৃতিক অসততা সমাধানের জন্যে সত্যের ব্যাপারে কয়েকটা প্রশ্নের সমাধান করা অতীব জরুরী। কী সেগুলোঃ
.
১. সত্য কী?
২. সত্যকে কি জানা সম্ভব?
৩. ঈশ্বর সম্পর্কিত সত্যকে জানা সম্ভব?
৪. এসবে কী আসে যায়? সত্য নিয়ে এতো প্যানপ্যানানির কী আছে?
.
পরবর্তী লেখাগুলোতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই কথা বলা হবে (যদি লিখতে পারি)।
.
likhechen ঃ-
#MohammedTouahaAkbar
সুরাহ লুকমান ও সম্পুর্ন লাইফের জন্য গুরুপ্তপূর্ন নাসিহা।
-হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন।
-হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ।
-অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
-পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।
-হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।
[[সুরাহ লুকমান :১৬-১৯ও ৩৩আয়াত]]
.
.
-সুরাহ লোকমানের এই আয়াত গুলা অন্তরকে মোচড় দিয়ে উঠে। আয়াতের প্রতি ওয়ার্ড যেন ভূ-কম্পন সৃষ্টি হয়। কোন ব্যাখ্যা ছাড়াও শুধু একটু খেয়াল করে পড়লেই আমাদের কম্পিলিট লাইফের জন্য যথেষ্ট নাসিহা।
.
.
-Gias Ahmad
Friday, May 13, 2016
Subscribe to:
Posts (Atom)